বন্যা কাকে বলে ? What is Flood | বন্যা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বন্যা কাকে বলে ? What is Flood | বন্যা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল

বন্যা কাকে বলে ? What is Flood বন্যা সৃষ্টির কারণ গুলি কি : আজকের এই পর্বটিতে আলোচনা মূল বিষয়ে হল  বন্যা কাকে বলে ? বন্যা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বন্যা কাকে বলে এবং বন্যার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে।

বন্যা কাকে বলে

জল সংক্রান্ত দুর্যোগ গুলির মধ্যে বন্যা অন্যতম। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও মানবীয় উভয় কারণেই বন্যা সৃষ্টি হয়। মূলত স্থলভাগের কোন অংশের দীর্ঘদিন জলভাগ্ন থাকার প্রবণতা কে বলা হয় বন্যা (Flood)। অন্যভাবে বলা যায় নদী বা নদী বাঁধ থেকে মুক্ত অতিরিক্ত জল নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলকে জল দ্বারা প্লাবিত করলে সেই অবস্থা কে বন্যা নামে আখ্যা দেওয়া হয়। ভারতের প্রায় 12.5 শতাংশ ভৌগলিক অঞ্চল বন‍্যাপ্রবণ এলাকা।

উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদীয়া, বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা হল বন্যা প্রবণ এলাকা।

নদীয়া জেলা সর্বাপেক্ষা বন্যা প্রবণ এবং এই জেলার মোট বন্যা প্রবণ এলাকা হলো 3731 বর্গকিমি যার মধ্যে নবদ্বীপ, রানাঘাট, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর, কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার উল্লেখযোগ্য।

বন্যা সৃষ্টির কারণ :

বন্যা সৃষ্টির কারণগুলির মধ্যে দুটি কারণ হলো প্রাকৃতিক কারণ ও মানবীয় কারণ সেগুলি নিম্ন আলোচনা করা হল।

বন্যা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণ :

1. দীর্ঘস্থায়ী অতিবর্ষণ : কোন এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী অধিক বৃষ্টিপাত হলে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং নদীর জল ধারণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে সেই এলাকার জলপ্লাবিত হয়ে বন্যার রূপ ধারণ করে সুতরাং অতি দর্শনের সাথে বন্যার ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে।

2. নদীর গতিপথের আকৃতি : সরল নদীপথে জলের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা কম থাকে ফলে বন্যার প্রবণতা কম হয়। তেমনভাবে সর্পিল নদীর গতিপথে জলের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা বেশি থাকে ফলে নদী পথের জলধারণে অসুবিধার কারণে বন্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

3. হিমালয়ের বরফ গলন : গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে হিমালয় পর্বতে সঞ্চিত বরফ গলে যায়, তার ফলে অতিরিক্ত জল উপত্যকা এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করে।

4. নদী অববাহিকার আকৃতি : নদী অববাহিকার আকৃতি দীর্ঘ হলে নদীগুলোকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয় যা বন্যার প্রকোপ হ্রাস করে আবার বিপরীতক্রমে ক্ষুদ্র নদী অববাহিকায় নদীপথ কম হওয়ার বন্যা প্রবণতা অধিক হয়।

5. নদীঢালের বিচ্যুতি : কম ঢালযুক্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত জল সঞ্চিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে কিন্তু নদীর ঢাল যদি বেশি থাকে তাহলে সেই জল দ্রুত অপসারিত হয়ে যায়, যা বন‍্যার প্রকোপ লাঘব করে।

বন্যা সৃষ্টির মানবিক কারণ

1. বৃক্ষচ্ছেদন : গাছ যেমন মাটি ক্ষয় নিবারণ করে তেমনি বৃষ্টির পরিমাণকেও নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের অপরিহার্যভাবে গাছ কাটার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষয়িত মৃত্তিকা নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে জলধারণ ক্ষমতা কমালে বন‍্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বৃক্ষচ্ছেদনের সাথে বন্যার ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে।

2. নদী অববাহিকার পরিবর্তন : নদী অববাহিকায় মানুষের বসতি, নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষির বিস্তারের ফলে ভূমির ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে বন্যার সম্ভাবনা বাড়ে।

3. নদীপথের পরিবর্তন : মানবিক চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে যথা- নদীবাঁধ নির্মাণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রবৃতি ক্ষেত্রে নদীপথে কৃত্রিম পরিবর্তন ঘটানো হলে বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

4. নদী অববাহিকা আকার : কখনো কখনো নদী অববাহিকার আকার বৃদ্ধি পেলে নদীর জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আবার নদী অববাহিকার আকার হ্রাস পেলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

সুতরাং বলা যায় প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে বন্যা সৃষ্টি ব্যাপকভাবে পরিবেশ তথা মানবজীবনকে প্রভাবিত করে এক দুর্যোগের রূপ ধারণ করে থাকে।

বন্যা সৃষ্টির ফলাফল :

বন্যা সৃষ্টির প্রভাব গুলিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যার যথা- সুফল ও কুফল।

বন্যা সৃষ্টির কুফল :

বন্যা সৃষ্টির কুফল গুলি হল

1. প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রভাব:

a. বন্যার ফলে ফলে জল দূষণ ঘটে।

b. বন্যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

c. বন্যার ফলে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে এবং মৃত্তিকার উর্বর শক্তি হ্রাস পায়।

d. বন্যার ফলে ভূগাঠনিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

2. বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব :

a. প্রবল বন্যার স্রোতে ছোট ছোট গাছপালা, ধান, শাকসবজির, ফসলের বিপুল ক্ষতি হয়।

b. বন্যার ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হয়। ফলে তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যাভাব ঘটে।

c. বন্যার জলস্রোতে অসংখ্য পশু পাখির প্রাণহানি ঘটে।

3. মানুষের উপর প্রভাব :

a. বন্যার প্রভাবে কৃষি কার্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

b. বন্যার প্রভাবে বহু মানুষের প্রাণহানিও সম্পত্তিহানি ঘটে।

c. বন্যার প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে যেমন কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি।

d. বন্যার ফলে ঘরবাড়ি, পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা ক্ষেত্র বিঘ্নতি ঘটে ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বন্যা সৃষ্টির সুফল :

বন্যা সৃষ্টির কুফলের পাশাপাশি কিছু সুফলও লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল-

1. বন্যার ফলে জমিতে নতুন পলি জমা হয়।

2. বন্যার ফলে ধৌতপ্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাতে লবনের পরিমাণ কম হয়।

3. নীচু ভূভাগে সঞ্চিত জল জলসেচে এবং মৎস্যচাষে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন : 

পশ্চিমবঙ্গ ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে ? বৈশিষ্ট্য ও ব‍্যবহার

মালভূমি কাকে বলে ? সৃষ্টির কারণ ও প্রকারভেদ

বৃষ্টিপাত কাকে বলে ? শ্রেণীবিভাগ

শিলা কাকে বলে? শিলার প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য