খরা কাকে বলে | What is Drought : আজকের আলোচ্য বিষয়টি খরা কাকে বলে এবং খরা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে। সুতরাং আলোচ্য বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য নিচের দেওয়া তথ্যগুলি ভালোকরে পড়ুন।
খরা কাকে বলে
কোন এলাকায় দীর্ঘকাল বৃষ্টির অভাবে অথবা পর্যাপ্ত পরিমানে বৃষ্টির অভাবে যে শুষ্ক অবস্থার আবির্ভাব হয় তাকে খরা বলা হয়।
Indian Meteorological Department )(IMD) এর নির্দেশিত সংজ্ঞা অনুসারে, কোন অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের থেকে 75 % কম বৃষ্টিপাত হলে যে স্বাভাবিক শুস্ক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলে।
খরা কত প্রকার ও কি কি
খরা কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা- 1. মুখ্য খরা এবং 2. গৌণ খরা ।
মুখ্য খরা কাকে বলে :
যেসকল খরা সরাসরি মানবজীবনকে প্রভাবিত করে , তাকে মুখ্য খরা বলে । এই খরার শ্রেণিবিভাগগুলি নীচে আলোচনা করা হল-
A. জলবায়ুগত খরা : দৈনিক , মাসিক অথবা বাৎসরিক ভিত্তিতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হলে আবহাওয়াগত খরার সৃষ্টি হয় । এটি দু – প্রকার যথা-
i. মধ্যম খরা : 25-50 শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি।
ii. চরম খরা : 50 শতাংশ – এর বেশি বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ।
B. জলগত খরা : দীর্ঘকাল বৃষ্টির অভাবে জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়ার ফলে এই জাতীয় খরার সৃষ্টি হয় । এই খরা দুই প্রকার যথা-
i.ভূপৃষ্ঠস্থ জলের খরা : বৃষ্টির অভাবে পুকুর , নদী , প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠস্থ জলভাণ্ডার শুকিয়ে যাওয়ায় এই খরার সৃষ্টি হয়।
ii. ভৌমজলস্থিত খরা : বৃষ্টির অভাবে ভূগর্ভে ভৌমজলতলের হ্রাস হলে এই খরার সৃষ্টি হয়।
C. কৃষিগত খরা : বৃষ্টির অভাবে মাটি শুষ্ক হলে শস্যের বৃদ্ধির জন্য জল না পাওয়া গেলে শস্য বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় , একে কৃষিগত খরা বলে । এই জাতীয় খরাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যথা-
i. ঋতুভিত্তিক খরা : ঋতুর ওপর নির্ভর করে এই খরা হয় । এই খরা আবার তিন প্রকার যথা-
a. প্রাকৃঋতু খরা : বর্ষার আগে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে শস্য চাষ ব্যাহত হয়।
b.ঋতুমধ্যম খরা : শস্য ফলনের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বৃষ্টির অভাবে শস্য চাষ ব্যাহত হয় ।
c. বিলম্বঋতু খরা : শস্য ফলনের শেষ পর্যায়ে বৃষ্টির অভাবে এই খরা হয় ।
ii. বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব অনুযায়ী : এই খরাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
a. আপাত খরা : একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ
বৃষ্টিপাত সকল শস্যের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত না হলে , এই খরা হয় ।
b. স্থায়ী খরা : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নগণ্য হলে এবং খরার স্থায়িত্ব অনেক বেশি হলে , এই খরা হয় ।
D. দুর্ভিক্ষ খরা : খরার সময়ে জলের অভাবে শস্যের ক্ষতি হলে জনগণের একঅংশের জীবনযাপন ব্যাহত হয় , এই অবস্থাকে দুর্ভিক্ষ খরা বলে ।
গৌণ খরা কাকে বলে:
যেসকল খরা পরোক্ষভাবে মানবজীবনকে প্রভাবিত করে , তাকে গৌণ খরা বলে । এই খরার শ্রেণিবিভাগগুলি নিম্নরূপ-
i. বাস্তুতান্ত্রিক খরা : স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে কোনো বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা কমে গেলে সেই বাস্তুতান্ত্রিক কাঠামো তথা পরিবেশের অবক্ষয় ঘটে , তখন তাকে বাস্তুতান্ত্রিক খরা বলে।
ii. আর্থ – সামাজিক খরা : খরার সময় শস্যহানি ও মানবজীবন বৃষ্টিপাতের অভাবে ব্যাহত হয়ে আর্থ – সামাজিক ক্ষেত্রের যে পতন ও ক্ষতিসাধন হয় তাকে বলে আর্থ – সামাজিক খরা । এর ফলে মানবজীবনে সামাজিক নিরাপত্তাও কমে।
খরা সৃষ্টির কারণ
সাধারণত দুটি কারণে খরার সৃষ্টি হয় , যথা— 1. প্রাকৃতিক কারণ এবং 2. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ।
প্রাকৃতিক কারণ :
1. দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে দেরিতে প্রবেশ করলে অথবা সময়ের আগে প্রত্যাবর্তন করলে।
2. গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে খরার সৃষ্টি হয়।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :
1.অতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদনের কারণে রাতাসে জলীয়বাষ্প হ্রাস পেলে।
2 অতিরিক্ত নগরায়ণ ইত্যাদি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে খরার সৃষ্টি হয়।
খরা সৃষ্টির ফলাফল বা প্রভাব
প্রাকৃতিক ও আর্থ – সামাজিক পরিবেশের ওপর খরা সৃষ্টির ফলাফল গুলি হল –
1.পরিবেশের ওপর প্রভাব :
i. খরার সময় জলের অভাবজনিত কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায় ও উর্বরতা হ্রাস পায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় ।
ii. খরার ফলে জলের অভাবে উদ্ভিদ মারা যায় , উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
2. বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব :
i . জলের অভাবে গাছপালা শুকিয়ে যায় এবং পাতা ঝরে যায়।
ii. উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে।
iii. তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যসঙ্কট দেখা যায় , বহু পশুপাখি জলের অভাবে মারা যায়।
iv. তীব্র উত্তাপের কারণে দাবানল সৃষ্টি হয় যা বনভূমির বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে।
3. অর্থনীতির ওপর প্রভাব :
i. জলের অভাবে কৃষিজ উৎপাদন ( যেমন— খাদ্যশস্য , ফলমূল প্রভৃতি ) ও গৃহপালিত প্রাণীজ উৎপাদন ( যেমন— ডিম , দুধ , মাংস প্রভৃতি ) হ্রাস পায়।
ii. জল ও কৃষিজ কাঁচামালের অভাবে বিভিন্ন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেগুলির উৎপাদন কমে যায়।
4. জনসংখ্যার ওপর প্রভাব :
i. খরার ফলে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে জলের অনুস্রবণ কম হয় । যার ফলে ভৌমজলের সঞ্চয় কম হয় এবং ভৌমজলস্তর নেমে যায় । এর ফলে জলসেচ অপ্রতুল হয়ে কৃষিকার্যের অসুবিধা হয় এবং কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে।
ii. খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় , খরাকবলিত এলাকার মানুষ অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়।
iii. পুষ্টিহীনতা এবং তীব্র তাপপ্রবাহের কারণেও মানুষের মৃত্যু ঘটে।
iii. খরার ফলে অন্তদেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন ঘটে।
আরও পড়ুন :
2 thoughts on “খরা কাকে বলে ? What is Drought | খরা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল”