পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প | Cottage industry of West Bengal

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প : সুপ্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পর্বটিতে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্পে প্রসিদ্ধ স্থান গুলি সম্পর্কে।

পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প | Cottage industry of West Bengal

◆ পশ্চিমবঙ্গের কুটির শিল্প :

পোশাক তৈরি শিল্প : এই রাজ্যে প্রায় 713 টি নথিভুক্ত পোশাক তৈরির কারখানা রয়েছে। যথা- হাওড়া, ডোমজুর, মেটিয়াব্রুজ, বজবজ, সন্তোষপুর, মহেশতলা, বাঁকুড়া যেখানে আধুনিক ডিজাইইনের জামা, প্যান্ট প্রস্তুত করা হয়।

তাঁত শিল্প : রাজ্যের প্রধান কুটির শিল্প হল হ্যান্ডলুম। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রায় 3.5 লক্ষ তাঁতকল আছে। নদিয়ার ফুলিয়া ও শান্তিপুর, হুগলির বেগমপুর, ফরাসডাঙা ও ধনেখালি, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, উত্তর 24 পরগণার বসিরহাট প্রভৃতি ।

রেশম শিল্প : ভারতীয় সিল্ক বোর্ডের অধীনে রেশমকীট পালন, রেশন সংগ্রহ (সেরিকালচার), সিল্কের শাড়ি তৈরি হয় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ, মালদহের সুজাপুর, কালিয়াচক, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম প্রভৃতি।

চর্ম শিল্প : এই রাজ্যে প্রায় 53৪টি চর্ম শিল্প কারখানা রয়েছে যথা- পার্কসার্কাস, বানতলা, বাটানগর, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি ।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প : পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্যের বিভিন্ন খাদ‍্য প্রস্তুত কারখানা গুলি হল- চালকল হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়ায় । আটা/ময়াদা কল – কলকাতা ও হাওড়া । ডেয়ারি শিল্প – ডানকুনি, হরিণঘাটা, মাদারিহাটে। জ্যাম, জেলি, আচার, চাটনি, স্কোয়াশ, সস – মালদহ, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি প্রভৃতি। হালকা পানীয় শিল্প – তারাতলা, ডানকুনি, কল্যাণী, বহরমপুর প্রভৃতি। মাংস ও পোলট্রি শিল্প হুগলির আরামবাগে গড়ে উঠেছে।

ক্ষুদ্র ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : পশ্চিমবঙ্গের যে জায়গা গুলিতে ক্ষুদ্র ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের প্রসার ঘটেছে সেগুলি হল- হাওড়া, বেলঘরিয়া, উলুবেড়িয়া, বাঁকুড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া, পুরুলিয়া, ডানকুনি, শ্রীরামপুর, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জ, মেদিনীপুর, খড়গপুরে ছোট ইস্পাত ও যন্ত্রপাতি তৈরি শিল্পের প্রসার লাভ করেছে।

মৃৎ শিল্প : পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা মৃৎ শিল্পের জন‍্য প্রসিদ্ধ যেমন- কলকাতার কুমোরটুলি মাটির মূর্তি, নদিয়ার কৃষ্ণনগর মাটির পুতুল, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পোড়া মাটির বিভিন্ন মূর্তি (টেরাকোটা) জগৎ বিখ্যাত। কমবেশি সব জেলাতেই কুমোরেরা  মাটির হাঁড়ি, কলসি, ভাঁড়, টব, সরা তৈরি করে থাকেন।

বিড়ি শিল্প : পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্যের বিভিন্ন জায়গা বিড়ি শিল্পের জন‍্য বিখ্যাত যথা- ঝাড়গ্রামের বিনপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ী, মুর্শিদাবাদের ঔরঙ্গাবাদ, রঘুনাথগঞ্জ, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, বাঁকুড়া এছাড়াও পুরুলিয়াতে কেন্দুপাতা শুকিয়ে বিড়ি তৈরি করা হয়।

গালা শিল্প : পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্যের পুরুলিয়ার ঝালদা, বাঁকুড়ার সোনামুখী এছাড়াও লাক্ষাকীট থেকে গালার বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়।

শঙ্খ ও ঝিনুক : পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, দিঘাতে শামুক ও ঝিনুক থেকে শাঁখ, ল্যাম্পশেড, পর্দা, পুতুল তৈরি হয়।

গুড় শিল্প : বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার খেজুর, তাল ও আখের রস থেকে গুড় তৈরি শিল্প ব‍্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এছাড়াও কিছু কিছু সময় খেজুর গুর উৎপাদনে নদীয়া জেলার মাজদিয়ার নামও শোনা যায়।

লৌহ দ্রব্য শিল্প : কৃষ্ণনগর ও কাঞ্চনপুরে লোহার ছুরি, কাঁচি, ছেনি, হাতুড়ি, দা, কাস্তে, কোদাল, কুড়ুল ইত‍্যাদি তৈরি করা হয়।

ধাতু শিল্প : বাঁকুড়া জেলার খাতড়া ও বিষ্ণুপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটল, পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর, মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর, খাগড়ায় পিতল ও কাঁসার বাসনপত্র, ঘট, প্রদীপ, পুতুল। বীরভূমের বোলপুরে তামা ও ব্রোঞ্জের শৌখিন দ্রব্য, দেবদেবীর মূর্তি, পুতুল (ডোকরা শিল্প) তৈরি হয়।

মাদুর শিল্প : পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, পিংলাতে মাদুর কাঠি চাষ ও মাদুর বোনা, শীতলপাটি তৈরি করা হয়। সুন্দরবনে হোগলা ও বেত থেকে মাদুর ও পাটি তৈরির কাজ প্রসার লাভ করেছে এছাড়াও তরাই অঞ্চলে বাঁশ ও বেতের অসবাসপত্র তৈরি করা হয়।

স্বর্ণ শিল্প : কলকাতার বউবাজার, সিঁথি, দমদমে স্বর্ণশিল্প প্রসিদ্ধ।

অন্যান্য শিল্প : মুর্শিদাবাদে হাতির দাঁত থেকে শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি শিল্প। দার্জিলিং, কার্শিয়াং-এ পশম ও পশমবস্ত্র শিল্প। পিংলা, সবং, নন্দীগ্রাম, নন্দকুমার পটচিত্রে শিল্প। ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, চন্দ্রকোণায় শালপাতায় বাসন শিল্প। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজুবাদাম শিল্প এছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর ও সুন্দরবনে লবণ শিল্প বিকাশ লাভ করেছে।

আরও দেখুন :

পশ্চিমবঙ্গের নদনদীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Leave a Comment