ভূমিধস কাকে বলে – Landslide : আজকের পর্বটিতে ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ভূমিধস কাকে বলে এবং ভূমিধসের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। চলুন দেখে নেওয়া যাক ভূমিধস কাকে বলে।
ভূমিধস কাকে বলে
ভূপৃষ্ঠের ঢাল বরাবর প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে ঢালের উপরিস্থিত পদার্থের হঠাৎ নিম্নপতনকে ভূমিধস বলে।
ভূমিধসের কারণ
ভূমিধস মূলত দুটি কারণে ঘটে থাকে যথা- 1. প্রাকৃতিক কারণ এবং 2. মানবীয় কারণ ।
ভূমিধসের প্রাকৃতিক কারণ
1. প্রচুর বৃষ্টিপাত: পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের ফলে ভারী শিলা আলগা হয়ে যায় ফলে ভূমিধসের প্রবণতা বাড়ে। অতএব বলা যায় ভূমিধসের সাথে বৃষ্টিপাতের ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন – দার্জিলিং , সিকিমে প্রতি বর্ষায় অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ধস নামে।
2. শিলার আকৃতি : দুর্বল শিলাগঠনে খুব সহজেই ধসের সৃষ্টি হয় , যেমন — পার্বত্য অঞ্চলে জল , বায়ু , সূর্যতাপে শিলাস্তর আলগা ও দুর্বল হয়ে ধসের প্রবণতা বেশি থাকে।
3. মাটির ক্ষমতা : মাটিতে যদি বালির মাত্রা বেশি থাকে , তখন সেই মাটির কণাগুলির মধ্যে কোনো সংঘবদ্ধতা কম থাকে ফলে মাটি দুর্বল হয় এবং সেই মাটিতে জল সহজে প্রবেশ করে ধস সৃষ্টি করতে পারে।
4. ভূমির ঢাল : খাড়া ঢালের উপরিস্থিত পদার্থসমূহ অতি সহজেই মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে নীচের দিকে অপসারিত হয় এবং সেজন্যই পার্বত্য অঞ্চলে ধসের প্রবণতাও বেশি ।
5. মাধ্যাকর্ষণ শক্তি : যেসকল অঞ্চলে মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বেশি সেখানে ধস প্রবণতাও অনেক বেশি , আবার মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব যেখানে কম সেখানে ধসের প্রবণতাও কম।
6. ভূমিকম্প : ভূমিকম্পের ফলে কোনো অঞ্চল আন্দোলিত হলে সেই অঞ্চলে ধসের সৃষ্টি হয় ।
ভূমিধসের মানবীয় কারণ
1. বৃক্ষচ্ছেদন : গাছের শিকড় মাটিকে আঁকড়ে রাখে , ফলে মাটির গঠন দৃঢ় হয় । তবে মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত
বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে মাটি আলগা হয়ে পড়লে ধসের মাত্রা স্বাকা বৃদ্ধি পায় । সুতরাং বৃক্ষের পরিমাণের সাথে ধসের ঋণাত্মক সম্পর্ক।
2. নগরায়ণ : দুর্বল শিলা বা পার্বত্য এলাকার খাড়া ঢালে মানুষের নিজ প্রয়োজনে রাস্তাঘাট , বাড়িঘর তৈরি করলে পাহাড়ে ধস লক্ষ করা যায়।
4. ঝুমচাষ : পাহাড়ি উপজাতিগোষ্ঠীর অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ঝুমচাষ , ধাপচাষের ফলে সেই অঞ্চলে ধস প্রবণতা বৃদ্ধি পায।
5. পশুপালন : পাহাড়ি এলাকায় অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে গাছের পরিমাণ কমে , ভূমিক্ষয় হয় , ফলে ধস প্রবণতা বাড়ে।
উদাহরণ : 1997 সালের জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দার্জিলিং – হিমালয় অঞ্চলে ছিল 312-487 মিলিলিটার , যার ফলে , তিস্তা উপত্যকা , গ্যাংটক , মংপু , সিকিমের পূর্ব ও উত্তরের জেলাগুলির ব্যাপক ধস নামে যা প্রায় 67 জন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।
আরও পড়ুন :