পিটের ভারত শাসন আইন কি ? এই আইনের ধারা, শর্ত এবং গুরুত্ব PDF

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পিটের ভারত শাসন আইন কি ? এই আইনের ধারা, শর্ত এবং গুরুত্ব PDF

পিটের ভারত শাসন আইন PDF : আজকে তোমাদের প্রদান করলাম পিটের ভারত শাসন আইন কি ? পিটের ভারত শাসন আইনের শর্ত ?এবং পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব সম্পর্কে।

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটি বণিক প্রতিষ্ঠান । এই বণিক প্রতিষ্ঠান বাংলায় আধিপত্য বিস্তার করলে এবং বিভিন্ন সমস্যার ( আর্থিক , প্রশাসনিক ) সম্মুখীন হলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বাংলায় তথা ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যকলাপের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বিভিন্ন আইন পাস করে । এর মধ্যে অন্যতম ছিল 1784 সালের পিটের ভারত শাসন আইন।

পিটের ভারত শাসন আইন :

উইলিয়ম পিট ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী । তিনি রেগুলেটিং অ্যাক্টের ( 1773 সাল ) ত্রুটিগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে ভারত শাসন আইন ( India Act , 1784 ) পাস করেন । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠনতন্ত্র এবং কোম্পানির ভারতীয় প্রশাসনকে নির্দিষ্ট কাঠামো দান , ভারতের আঞ্চলিক পরিষদগুলির ( Council ) এবং গভর্নর জেনারেল – এর ক্ষমতা ও এক্তিয়ার এবং ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতীয় প্রশাসনের সম্পর্ক এই আইন দ্বারা নির্ধারিত হয় । সেজন্য এই আইন পিট – এর ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।

পিটের ভারত শাসন আইনের ধারা :

পিটের ভারত শাসন আইনের ধারাগুলি ছিল দুটি পর্যায়ে বিন্যস্ত এবং এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

ধারাসমূহ : পিট – এর ভারত শাসন আইনের ( 1799 সাল ) গঠনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ধারাগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

গঠনতান্ত্রিক ধারাসমূহ : পিটের ভারত শাসন আইন প্রধানত কোম্পানির গঠনতন্ত্র সম্পর্কে রচিত হয়েছিল । এই আইনের ধারাগুলি হল-

1. লন্ডনে ৬ জন সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড অব কন্ট্রোল নামে একটি সভা গঠন করা হবে । ব্রিটিশ অর্থসচিব , ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ইংল্যান্ডের রাজার মনোনীত চারজন প্রিভি কাউন্সিল সদস্য ( মোট 6 জন ) এই বোর্ড অব কন্ট্রোলের সদস্য হবেন । এই সভার উপর কোম্পানির সমস্ত সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতা সমর্পিত হবে।

2. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অংশীদারদের ভোটে নির্বাচিত 24 জন ডাইরেক্টর সমবায়ে ডাইরেক্টর সভা ( Court of Directors ) গঠিত হবে । এই সভার সদস্যদের কার্যকাল হবে 4 বছর । প্রতি বছর এই সভার সদস্যদের 1/4 অংশ পদত্যাগ করবেন এবং নতুন সদস্য নির্বাচিত হবেন । সদস্যদের ভারত বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক ছিল।

3. তিন জন ডাইরেক্টরকে নিয়ে একটি সিক্রেট কমিটি ( Secret Committee ) গঠিত হবে । বোর্ড অব কন্ট্রোলের গোপন নির্দেশ ও মতামত কোম্পানির ভারতীয় কর্মচারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ভারত থেকে আসা কোম্পানির প্রশাসনিক ও রাজস্ব বিষয়ক চিঠিপত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে উপস্থাপন করা এই কমিটির কাজ ছিল।

4. বোর্ড অব কন্ট্রোল এবং সিক্রেট কমিটির যুগ্ম সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা সংশোধন করার ক্ষমতা অংশীদার সভার ( Court of Proprietors ) থাকবে না।

পিটের ভারত শাসন আইনের শর্ত :

এই আইনের ভারতীয় প্রশাসন সম্পর্কে শর্তগুলি হল-

1. ভারতীয় প্রশাসনের আঞ্চলিক পরিষদ বা কলকাতা , মাদ্রাজ ও বোম্বাই কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা 4 জনের বদলে 3 জন করা হয় । বাংলার গভর্নর জেনারেল , একজন সেনাপতি এবং 2 জন কাউন্সিলার শাসনকাজে সাহায্য করবেন বলে স্থির হয়।

2. রেগুলেটিং অ্যাক্টের মতো এই আইনেও মাদ্রাজ ও বোম্বাই । কাউন্সিলকে কলকাতা কাউন্সিলের অধীনস্থ করা হয় । বাংলার গভর্নর জেনারেল ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসক হয়ে ওঠেন । যুদ্ধ , শান্তি , রাজস্ব এবং দেশীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সির কর্তৃত্ব সুস্পষ্টভাবে সম্পন্ন হয়।

3. রাজ্যজয় ও সাম্রাজ্যবিস্তার ইংল্যান্ডের জাতীয় মর্যাদা ও নীতির বহির্ভূত— এই আইনে সেটিই ঘোষণা করা হয়।

4. 1786 খ্রিস্টাব্দে একটি অতিরিক্ত আইন পাস করে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কাউন্সিলের মত অগ্রাহ্য করা এবং প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার ক্ষমতা গভর্নর জেনারেলকে দেওয়া হয়।

এইভাবে 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটিগুলি অনেকাংশে দূর করে ভারত শাসন আইন প্রণীত করা হয় । এই আইন 1857 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিল।

পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব :

এই আইন দ্বারা গঠিত বোর্ড অব কন্ট্রোল ডাইরেক্টর সভাকে নিয়ন্ত্রণ করলেও বোর্ডের স্বাধীন কার্যনির্বাহী কোনো ক্ষমতা ছিল না । ব্রিটিশ সরকারের অনুগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোর্ড ভারতে কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করত । ভারতে বাণিজ্য ছাড়া সমস্ত বিষয়ে কোম্পানি – ব্যবস্থা এই বোর্ড অব কন্ট্রোলের অনুমোদন প্রত্যাশী ছিল । ভারতীয় প্রশাসনের উপর একদিকে ব্রিটিশ সরকার ও বোর্ড অফ কন্ট্রোলের যুগ্ম নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে কোম্পানির দ্বারা ভারতের প্রশাসনিক কার্যাবলি ও দায়িত্ব নির্বাহের সুবাদে ভারতে এক ধরনের দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই আইনের নিম্নলিখিত গুরুত্ব গুলি হল –

1. পিট – এর ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ( Pitts India Act ) ভারতে প্রশাসনিক ব্যবস্থার যে কাঠামো তৈরি করেছিল , সেই কাঠামো ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিল । প্রয়োজনে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এই আইনের সংশোধন বা রদবদল ঘটায়— তবে তা ব্যাপক পরিবর্তন ছিল না।

2. এই আইন ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সরকার , ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় ও এক্তিয়ার নির্ধারণ করে ।

3. মাদ্রাজ ও বোম্বাই কাউন্সিল – এর উপর কলকাতা কাউন্সিল – এর প্রাধান্য এবং বাংলার গভর্নর জেনারেলের সর্বময় প্রভুত্ব এই আইনে ঘোষিত হয়।

4. ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও বোর্ড অব কন্ট্রোলের যৌথ নিয়ন্ত্রণ কোম্পানিকে ভারতীয় প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করে । অধ্যাপক বিপানচন্দ্রের মতে , পিট – এর ভারত শাসন আইন এদেশে ব্রিটিশ আধিপত‍্য প্রতিষ্ঠার এক নতুন অধ‍্যায় সূচিত হয়।

আরও পড়ুন :

নেহরু রিপোর্ট বলতে কি বোঝ ? 

বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণ ও ফলাফল 

রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য ও শর্ত 

PDF DOWNLOAD ZONE

File Name : পিটের ভারত শাসন আইনের ধারা, শর্ত এবং গুরুত্ব
Language : বাংলা
Size: 100 KB 
Clik Here To Download

1 thought on “পিটের ভারত শাসন আইন কি ? এই আইনের ধারা, শর্ত এবং গুরুত্ব PDF”

Leave a Comment