নেহরু রিপোর্ট বলতে কী বোঝ ? নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

নেহরু রিপোর্ট বলতে কী বোঝ ? নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া

নেহরু রিপোর্ট বলতে কী বোঝ-নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া : আজকের আলোচনা হল ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নেহরু রিপোর্ট সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

নেহরু রিপোর্ট কি

ভারতীয় রাজনীতিতে 1920 এর দশক বিভিন্ন দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল । এই সময় কংগ্রেস পরিচালিত অসহযোগ এবং খিলাফত কমিটি পরিচালিত খিলাফত আন্দোলন হিন্দু – মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে । আবার আন্দোলন শেষে সাম্প্রদায়িকতা ক্রমে প্রবল হয়ে ওঠে এবং মুসলিম লিগ ও জিন্নাহর উত্থান ঘটে । বামপন্থার আবির্ভাব হয় । ভারতীয় রাজনীতিতে বিভেদ ও শাসননীতি ফলপ্রসূ হয় এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে ।

নেহরু রিপোর্ট :

সাইমন কমিশন – এ কোনো ভারতীয় সদস্যকে গ্রহণ না করায় ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । প্রত্যুত্তরে ভারতসচিব লর্ড বার্কেহেড ( Lord Birkenhead ) ভারতীয়দের কটাক্ষ করে বলেন যে , ‘ সংবিধান রচনা এত সহজ কাজ নয় । ভারতীয় নেতারা একটি সংবিধান প্রস্তুত করে দেখান যে , সেই সংবিধানে ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থন আছে । এরকম সংবিধান যদি তাঁরা তৈরি করতে পারেন সেই সংবিধান আমি , ভারত সরকার ও কমিশন বিবেচনা করে দেখতে প্রস্তুত আছি । ‘ ভারতসচিবের এই চ্যালেঞ্জ কংগ্রেস গ্রহণ করে ।

1927 খ্রিস্টাব্দের মাদ্রাজ অধিবেশনে সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনার প্রস্তাব গৃহীত হয় । এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিল্লি ( 12 ফেব্রুয়ারি , 1928 খ্রিস্টাব্দ ) এবং লখনউ অধিবেশন ( আগস্ট , 1928 খ্রিস্টাব্দ ) অনুষ্ঠিত হয় । এই অধিবেশনের পরিপ্রেক্ষিতে মোতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস – এর উপর ভিত্তি করে যে সংবিধানের খসড়া – সহ রিপোর্ট প্রকাশিত হয় , তা নেহরু রিপোর্ট নামে পরিচিত।

1928 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই রিপোর্ট – এ দেশীয় রাজ্য সম্বন্ধে কোনো নীতির প্রতিফলন ছিল না । সর্বত্র যৌথ নির্বাচকমণ্ডলীর প্রস্তাব করা হয় । কেবল কেন্দ্রে এবং মুসলমান সংখ্যালঘু প্রদেশগুলিতে আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয় । হিন্দু সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পর বোম্বাই প্রেসিডেন্সি থেকে সিন্ধু প্রদেশ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয় । বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংক্রান্ত সব মালিকানা রক্ষা সম্বন্ধে মদনমোহন মালব্যের সংশোধনী প্রস্তাব যুক্ত হয় । মোতিলাল নেহরু ছাড়াও সংবিধান রচনা কমিটির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু , আলি ইমাম ( মুসলিম লিগ ) , সর্দার মঙ্গল সিং ( শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত ) তেজবাহাদুর সাপ্রু , এম আর জয়কার প্রভৃতি।

নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া :

দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলনে মুসলিম লিগের অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে মহম্মদ আলি জিন্নাহ যোগ দেন । তিনি এই অধিবেশনের বেশ কিছু বয়ান বদল করে নেহরু রিপোর্টে কিছু সংশোধনী যোগ করেন । জিন্নাহ নেহরু রিপোর্টের যে অংশগুলি সংশোধন করতে চেয়েছিলেন , সেগুলি হল –

1.1906 খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার সময় প্রধান দাবি ছিল পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী কিন্তু জিন্নাহ যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষণ ও যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের প্রস্তাব দেয় , মুসলিম লিগ তা মেনে নেয়।

2. ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের জন্য অপেক্ষা করেই জিন্নাহ দাবি করেন । – সিন্ধু প্রদেশকে বোম্বাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে পরিণত করতে হবে।

3. মূল ক্ষমতা বা Residuary Power কেন্দ্রের হাতে না রেখে প্রদেশের হাতে ছেড়ে দিতে হবে । দিল্লি প্রস্তাবে অবশ্য তিনি এই ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে রাখার কথাই বলেছিলেন।

4. কেন্দ্রে আইনসভার 1/3 আসন মুসলিম সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।

5. পাঞ্জাব ও বাংলায় মুসলিমদের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হবে । তিনি কিন্তু আগে এ কথা বলেননি।

6. মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশগুলিতে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার জন্য আইনসভায় নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করতে হবে।

হিন্দু মহাসভার নেতা এম আর জয়করের বিরোধিতায় জিন্নাহর প্রস্তাব বাতিল হয় । জিন্নাহ সর্বদলীয় সম্মেলন ত্যাগ করেন । অকালি শিখ দল , হিন্দু মহাসভা , মুসলিম লিগ এবং অন্যান্য অনুন্নত সম্প্রদায় নেহরু রিপোর্ট বর্জন করে । এমনকি বামপন্থী কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু এবং সুভাষচন্দ্র বসুও নেহরু রিপোর্টের বিরোধিতা করেন।

আরও পড়ুন : 

পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণ ও ফলাফল 

রাওলাট আইন কি ? রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য ও শর্ত 

প‍্যালেস্টাইন সমস্যার কারণ 

1 thought on “নেহরু রিপোর্ট বলতে কী বোঝ ? নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া”

Leave a Comment