মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমি সৃষ্টির কারণ, প্রকারভেদ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ | What is Plateau And How Many Types

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমি সৃষ্টির কারণ, প্রকারভেদ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য

মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমি সৃষ্টির কারণ, প্রকারভেদ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ | What is Plateau And How Many Types: আজকের পর্বটিতে আমরা আলোচনা করবো মালভূমি কাকে বলে মালভূমি সৃষ্টির কারণ, মালভূমি কত প্রকার ও কি কি ও মালভূমি গুলি র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

একটি মালভূমি হল একটি সমতল উঁচু ভূমিরূপ, যা আশেপাশের এলাকার এক পাশ তীব্রভাবে উপরে ওঠে। মালভূমি প্রতিটি মহাদেশ রয়েছে এবং পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ ভূমি দখল করে রয়েছে এই মালভূমি গুলি। অনেক মালভূমি পর্বত শ্রেণীর মধ্যে বা কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত। যেখানে টেকটোনিক উত্থান সমতল ভূমির বিস্তৃত অঞ্চলকে একক হিসেবে উত্থাপন করেছে। একটি গোষ্ঠী হিসেবে তাদের বলা হয় অন্তবর্তী মালভূমি

পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি গঠিত হয়েছিল যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এগুলি অনেক উপরে ওঠার কারণে এগুলো উচ্চ মালভূমি বলা হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি হল দক্ষিণ মধ্য এশিয়ার তিব্বতীয় মালভূমি যদি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত, যা দক্ষিণে হিমালয় যারা বিস্তৃত। চলুন দেখে নেওয়া যাক মালভূমি কাকে বলে

Table of Contents

মালভূমি কাকে বলে

সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০ মিটারের বেশি উঁচু, প্রায় সমতল মাথাযুক্ত, পার্শ্বদেশ খাড়া ঢালযুক্ত টেবিলের ন্যায় ভূমিরূপকে মালভূমি (Plateau) বলে। মালভূমির শীর্ষ দেশ টেবিলের মতো দেখতে হয় বলে মালভূমির অপর নাম টেবিলল্যান্ড। এর উপর অনেক সময় ছোট ছোট পাহাড় থাকে।

উদাহরণ : ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি, দক্ষিণাত্যের মালভূমি, তিব্বতের মালভূমি, লাদাখ মালভূমি ইত্যাদি।

মালভূমি সৃষ্টির কারণ :

প্রধানত তিনটি কারণে মালভূমির সৃষ্টি হয় যথা-

1. ভূ – আলোড়ন : ভূ – আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন । স্থলভাগগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে এক একটি মালভূমিরূপে অবস্থান করে , একে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। উদাহরণ -দাক্ষিণাত্য মালভূমি , আরবের মালভূমি ইত‍্যাদি।

2.প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহের কার্য : সৌরতাপ , বায়ুপ্রবাহ , নদী , হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা অন্য কোনো উচ্চভূমিকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে প্রায় সমতল শিখরদেশবিশিষ্ট মালভূমিতে পরিণত করে। উদাহরণ- ছোটোনাগপুরের মালভূমি।

3.লাভা সঞ্চয় : ভূ – অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে ক্রমশ সঞ্চিত হয়েও মালভূমির সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর – পশ্চিমাংশ হল লাভা মালভূমি।

মালভূমি কত প্রকার ও কি কি :

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মালভূমি রয়েছে মালভূমি গুলি কিভাবে গঠন করে এবং কোথায় পাওয়া যায় সেগুলোর উপর ভিত্তি করে মালভূমিকে প্রকৃতপক্ষে চার ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 1. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি 2. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি 3. লাভা মালভূমি 4. মহাদেশীয় মালভূমি।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে :

ভূ আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হওয়ার সময় দুটি সামান্তরাল পর্বতশ্রেনীর মাঝখানের জায়গা গুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি হয়। এই মালভূমির চারদিকে পর্বত থাকে বলে একে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উৎপত্তি :

পাত সঞ্চালনের ফলে ভঙ্গিল পর্বত উত্থানের সময় পর্বতের মধ্যবর্তী কোন অংশ উঁচু হয়ে এই মালভূমির সৃষ্টি হয়।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

1.পর্বদৃষ্টিতে মালভূমির উচ্চতা খুব বেশি হয়।

2. ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তির সঙ্গে এই মালভূমির উৎপত্তির সম্পর্কযুক্ত।

3. মালভূমি গুলির বিস্তার অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

উদাহরণ : তিব্বত মালভূমি, ইরানের মালভূমি, পামির মালভূমি প্রভৃতি। তিব্বতের মালভূমি উত্তরে কুয়েনলুন এবং দক্ষিণে কাকাকোলাম হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কাকে বলে :

নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয় কারী শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এর উচ্চতাও হ্রাস পায়। নদনদী এবং সেগুলির শাখা-প্রশাখা মালভূমিটিকে ধীরে ধীরে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে। এইভাবে কোন বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ব্যাবচ্ছিন্ন মালভূমি বা ক্ষয়জাত মালভূমি বলে।

ব‍্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উৎপত্তি :

মালভূমি সাধারণত কঠিন ও কোমল শিলা দ্বারা গঠিত হয়। প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তি যেমন নদীর জল, বায়ু প্রভৃতি দ্বারা কমল শিলা ক্ষয় পেয়ে যায় এবং গভীর খাঁজ বা উপত্যাকার সৃষ্টি হয়। কঠিন শিলায় গঠিত অংশগুলি তখন বিচ্ছিন্নভাবে মালভূমির মতো অবস্থান করে।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

1. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূম মূলত ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট মালভূমি।

2. এই মালভূমির উচ্চতা মাঝারি প্রকৃতির হয়।

3. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ‘মেসা’ ও ‘বিউট’ সৃষ্টি করে

উদাহরণ : ছোটনাগপুরের মালভূমি, কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ অঞ্চল, মধ্য ভারতের বুন্দেলখন্ড এবং বাঘেলখন্ড ইত‍্যাদি।

লাভাগঠিত মালভূমি কাকে বলে :

অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোন ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে সঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা ও কঠিন হয় মালভূমি সৃষ্টি করে এই ধরনের মালভূমিকে লাভাগঠিত মালভূমি বলা হয়।

লাভাগঠিত মালভূমির উৎপত্তি :

অগ্নুৎপাতের ফলে ভূগর্ভের ম‍্যাগমা ভূপৃষ্ঠের ফাটল পথে বাইরে বেরিয়ে এসে লাভা হিসেবে সঞ্চিত হয়। একাধিকবার লাভা সঞ্চয় সমগ্র অঞ্চলটি উঁচু হয়ে এই মালভূমির উৎপত্তি হয়।

লাভাগঠিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

1. এটি এক ধরনের সঞ্চয়জাত মালভূমির ফলে সৃষ্টি হয়।

2. এই মালভূমি অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

3. ব্যাসল্ট জাতীয় শিলার আধিক্য থাকে এই মালভূমিতে।

4. মালভূমির মধ্যে অবস্থিত পাহাড়ের মাথা চ্যাপ্টা হয়।

উদাহরণ : ভারতের দক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ মালব মালভূমি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া-স্নেক মালভূমি।

মহাদেশীয় মালভূমি কাকে বলে :

ভূ আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন অংশসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করলে তাকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে।

মহাদেশীয় মালভূমির উৎপত্তি :

ভূ আন্দোলনের ফলে প্রাচীন উচ্চভূমি পরস্পর পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে ক্ষয় পেয়ে মালভূমি রূপ নেয়। মহাদেশের উপর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এইসব মালভূমি অবস্থান করে বলে এদের মহাদেশীয় মালভূমি বলে। মহাদেশীয় মালভূমির অপর নাম শিল্ড বা প্রচীন মালভূমি

মহাদেশীয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

1. এই মালভূমি গুলি বয়সে অনেক প্রাচীন। (প্রায় ১০০ কোটি বছরেরও বেশি)

2. প্রাচীন উচ্চভূমির ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট হয় এই মালভূমি।

3. মহাদেশীয় মালভূমি অঞ্চলে ভূমিভাগ সুস্থিত প্রকৃতির হয়।

4. এই মালভূমি গুলি খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ হয়।

উদাহরণ : ব্রাজিল মালভূমি কানাডীয় (শিল্ড) মালভূমি প্রভৃতি। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, অ্যান্টর্কটিকা, গ্রিনল্যান্ডে বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে মহাদেশীয় মালভূমি অবস্থিত রয়েছে।

আরও পড়ুন : 

পরিবেশ দূষণ কাকে বলে? শ্রেণীবিভাগ কারণ ও ফলাফল

ভারতের রামসার সাইট তালিকা

দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য

বৃষ্টিপাত কাকে বলে এবং শ্রেণীবিভাগ

শিলা কাকে বলে? শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

গুরুত্বপূর্ণ মালভূমি :

1.পিডমন্ট মালভূমি কাকে বলে ?

উ: পর্বতের পাদদেশে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে মালভূমি সৃষ্টি হয় তাকে পিডমন্ট মালভূমি বলে। উদাহরণ-কলোরাডো মালভূমি

2. ক্ষয়জাত মালভূমি কাকে বলে ?

উ: কোন উচ্চ ভূমিভাগ বা কোন উচ্চ মালভূমি অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয় কারী শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চতা হারিয়ে যখন মালভূমি আকার ধারণ করে তখন তাকে ক্ষয়জাত মালভূমি বলে। উদাহরণ-ফিজেল্ড মালভূমি

3.অধিত‍্যকা মালভূমি কাকে বলে ?

উ: সম প্রকৃতির শিলা দ্বারা গঠিত প্রায় সমতল মালভূমিকেই অধিত‍্যকা মালভূমি বলে। উদাহরণ- সিনাই মালভূমি

4. তুষার মালভূমি কাকে বলে ?

উ: কুমেরু বা আন্টার্কটিকা মহাদেশে তুষার সঞ্চারের ফলে যে মালভূমির সৃষ্টি হয় তাকে তুষার মালভূমি বলে। উদাহরণ- অ্যান্টর্কটিকা মালভূমি।

5. শিল্ড মালভূমি কাকে বলে ?

উ: ভূ আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন অংশসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যে মালভূমি সৃষ্টি করে তাকে শিল্ড মালভূমি বলে। উদাহরণ-আরব মালভূমি ও ভারতের দাক্ষিণাত‍্য মালভূমি।

1 thought on “মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমি সৃষ্টির কারণ, প্রকারভেদ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ | What is Plateau And How Many Types”

Leave a Comment