বৃষ্টিপাত কাকে বলে ? বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ও কি কি | What is Rainfall

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বৃষ্টিপাত কাকে বলে ? বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ও কি কি | What is Rainfall : আজকে এই পর্বটিতে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক বৃষ্টিপাত কাকে বলে এবং বৃষ্টিপাতের শ্রেনিবিভাগ সম্পর্কে।

তথ‍্য্য- weekipedia

বৃষ্টিপাত কাকে বলে ? বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ও কি কি

Table of Contents

বৃষ্টিপাত কাকে বলে (What is Rainfall)

ভূপৃষ্ঠের জলভাগ থেকে সৃষ্ট হওয়া জলীয়বাষ্প উপরে উঠে ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে সম্পৃক্ত ও ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানে পৃথিবীর বুকে তা ফোটার আকারে নেমে আসে তখন তাকে বৃষ্টিপাত বলে।

অপরভাবে বৃষ্টিপাত কাকে বলে

পৃথিবীর অভিকর্ষণ টানে বায়ুমণ্ডল থেকে জলকণা তরল অবস্থায় এবং বরফকণা কঠিন অবস্থায় ভূপৃষ্ঠ নেমে এলে তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। আমাদের সবচেয়ে পরিচিত অধঃক্ষেপণ হল বৃষ্টিপাত। আকাশে ভেসে থাকা মেঘ হল আসলে ধূলিকণাকে আশ্রয় করে থাকা অসংখ্য ছোট ছোট জলকণার সমষ্টি।

এই মেঘ ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে শুরু করলে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে আরও ঘনীভূত হয়। এইভাবে ছোট ছোট জলকলাগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে বড়ো জলকণার সৃষ্টি করে। বড়ো জলকণাগুলি বেশি ভারী হওয়ায় বাতাসে ভাসতে পারে না। তখন পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে বৃষ্টি রুপে পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে তখন তাকে বলা হয় বৃষ্টিপাত।

বৃষ্টিপাতের শ্রেণীবিভাগ

বৃষ্টিপাত প্রধানত তিন প্রকারের হয়ে থাকে যথা- 1.পরিচলন বৃষ্টিপাত 2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত 3.ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত।

পরিচলন বৃষ্টিপাত কাকে বলে

ভূপৃষ্ঠের অধিক উষ্ণতার ফলে পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্প পূর্ণ উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে তাকে বলে Convectional Rainfall বা পরিচলন বৃষ্টিপাত

পরিচলন বৃষ্টিপাত কিভাবে ঘটে :

ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত অঞ্চলের জলভাগের বিস্তার বেশি এবং সূর্য লম্ব ভাবে কিরণ দেয় সেখানে জলভাগ থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প বায়ুর সংস্পর্শে আসে। এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে যাই। উপরে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে এই বায়ুস্তিত জলীয় বাষ্প পূর্ণ বায়ু শীতল ও ঘনিভূত হয়ে ছোট ছোট জলকণায় পরিণত হয় এবং মেঘের সৃষ্টি করে। এই জলকণা পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্রমশ বৃহৎ আকার ধারণ করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পরিচলন বৃষ্টি রূপে ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে।

পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য :

1. পরিচলন বৃষ্টিপাত দুপুরের পর বা বিকেলের সময় হয় তাই একে 4’O Clock Rain বলা হয়।

2. বজ্রবিদ্যুৎ সহ মুসলধারে পরিচালন বৃষ্টিপাত হয়।

3.এই বৃষ্টিপাত খুব কম সময় ধরে অল্প জায়গার মধ্যে পরে।

4. এই বৃষ্টিপাতের পর আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যায়।

5. সবচেয়ে কম পরিমাণ মেঘাচ্ছন্নতা থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত পরিচলন বৃষ্টিপাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পরিচলন বৃষ্টিপাতের উদাহরণ :

পরিচলন বৃষ্টিপাতের উদাহরণ বলতে গেলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছর পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কাকে বলে

শৈল‍্য শব্দের অর্থ পর্বত এবং উৎক্ষেপ শব্দের অর্থ হচ্ছে উপরে ওঠা। সাধারণত জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বা Orographic Rainfall বলে।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়া :

সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর প্রবাহপথে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থিত কোন পর্বত বাধা পেলে পর্বতের গা বেয়ে ওই বায়ু উপরে উঠে যায়। ঊর্ধ্বগামী এই বায়ু প্রসারিত ও শীতল হতে থাকে এবং বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। ওই জল কণাগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্রমশ বড়ো হতে থাকে। এবং পর্বতের যে ঢাল বেয়ে বায়ু উপরে উঠে এসেছে সেই প্রতিবাত ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের উদাহরণ :

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ে প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জির মৌসিনরামে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাধা পেয়ে পৃথিবীর সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায় কিন্তু শিলং বিপরীত পাশে থাকায় বৃষ্টিপাত কম হয়।

ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত কাকে বলে

ঘূর্ণবাতের ফলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উপরে উঠে ভনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত বা Cyclonic Rainfall বলে।

ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়া :

ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত মূলত দুইভাবে সৃষ্টি হয় ক্রান্তীয় ঘূর্ণবৃষ্টি এবং নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণি বৃষ্টি।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণ বৃষ্টি কাকে বলে :

ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্বল্প পরিসর স্থানে উষ্ণতা বেড়ে গেলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় তখন চারিদিকের উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবল ছুটে আসে এবং উষ্ণ হয়ে কুন্ডল আকারে ঘুরতে ঘুরতে উপরে ওঠে। এই ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও আদ্র বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় একেই ক্রান্তীয় ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত বলে।

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণ বৃষ্টি কাকে বলে :

নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের কোন স্থানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে মেরু অঞ্চল থেকে শীতল শুষ্ক বায়ু এবং ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উষ্ণ ও আদ্র বায়ু এই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবল বেগে ছুটে আসে। এই দুই বায়ু পরস্পর মুখোমুখি হওয়ার ফলে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি হয় তখন উষ্ণ বায়ু হালকা হাওয়াই  ভারী ও শীতল বায়ু ধীরে ধীরে উপরে উঠে যায় এবং উষ্ণ বায়ুস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত ও শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় একেই নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণ বৃষ্টি বলে।

আরও পড়ুন : 

পরিবেশ দূষণ কাকে বলে ? ধারণা, শ্রেণীবিভাগ, কারণ, ফলাফল

শিলা কাকে বলে এবং শিলার প্রকারভেদ

PHD কি ,কারা করে, যৌগ‍্যতা, সময়সীমা,চাকরি, বেতন 

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :

1. পরিচলন বৃষ্টিপাত দিনের কোন সময় ঘটে ?

উ: বিকেল বেলায়

2. নিরক্ষীয় অঞ্চলে কোন ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা যায় ?

উ: পরিচলন বৃষ্টিপাত

3. মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে কোন ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা যায় ?

উ: শৈলোৎক্ষেপ

4. বৃষ্টিপাত মাপক যন্ত্রের নাম কি ?

উ: রেইন গজ

5. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে ?

উ: পর্বতের প্রতিবাত ঢালের বিপরীতে কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অনুবাত ঢালকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।

6.প্রতিবাত ঢাল কাকে বলে ?

উ: আড়াআড়ি ভাবে অবস্থিত কোন পর্বত বা উচ্চভূমির যে ঢালে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উপরে উঠে গিয়ে ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় সেই ঢালকে ওই পর্বতের প্রতিবাত ঢাল বলা হয়।

7. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের নাম কি ?

উ: মেঘালয় মালভূমির শিলং