বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান | চিত্রকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান | চিত্রকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে চিত্রকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। নীচে দুটি ভিন্ন ভিন্ন উত্তর প্রদান করা হলো তোমাদের পছন্দমতো যে কোনো একটি উত্তর পড়লেই হবে।

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান :

ভূমিকা : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র, গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক তথা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পুরোধা পুরুষ। তাঁর তুলিতেই প্রথম ধরা পড়ে যে ইউরোপীয় চিত্ররীতির পাশাপাশি প্রাচ্য তথা ভারতীয় চিত্ররীতিরও অবদান কোনো অংশে কম নয়।

চিত্রশিল্প শিক্ষা : পাশ্চাত্য চিত্ররীতির প্রতি আকর্ষণে বিদেশি শিল্পীদের কাছে তিনি নিয়মিত আঁকা শিখেছিলেন। ইতালিয়ান গিলার্ডি, ইংরেজশিল্পী পামার এবং জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে তিনি অঙ্কনের প্রথাগত ও নিয়মানুগ শিক্ষাগ্রহণ করেন।

চিত্ররীতিতে দোলাচল : শিল্পচর্চার প্রথম পর্যায়ে ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেইন্টিং, জলরং বিবিধ মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন করেন। এরপর আইরিশ ইল্যুমিনেশন ও মুঘল মিনিয়েচারের কিছু নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হন। এই দুইয়ের প্রভাবে তাঁর শিল্পীসত্তায় দোলাচল দেখা দিল। রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈষ্ণব পদাবলিকে বিষয় হিসেবে নিয়ে আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পান।

শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য : অবনীন্দ্রনাথের শিল্পচর্চার প্রধান দক্ষতা জলরঙে ‘ ওয়াশ ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। দৃশ্যমানতার চেয়ে অনুভূতিগ্রাহ্যতা তাঁর ছবির মূল সুর হয়ে ওঠে। রঙের পেলব ব্যবহারে তাঁর আঁকা ছবিতে অনুভূতি জগতের এক আশ্চর্য আবহ চিত্রধর্মিতা নিয়ে বাঙময় হয়ে ওঠে।

শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা : রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈষ্ণব পদাবলিকে বিষয় করে আঁকলেন বিখ্যাত ‘শ্বেত অভিসারিকা’ । অতঃপর ‘কৃয়লীলা সিরিজ’ , ‘কচ ও দেবযানী’ , ‘ভারতমাতা’ , ‘অশোকের রানি’ , ‘দেবদাসী’ , ‘অন্তিমশয্যায় শাহজাহান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য চিত্রগুলি অঙ্কন করেন।

মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় উনিশ শতকের শেষের দিকে ভারতীয় চিত্রশিল্পকে সঞ্জীবনী সুধার পরশ দিয়েছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফলে তার অঙ্কিত চিত্র যেমন ভাবুকদের চিত্তে আকর্ষণ সৃষ্টি করে তেমনি বাংলা চিত্রশিল্পের প্রসারে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।

দ্বিতীয় উত্তর : 

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। অবনীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণে ইটালিয়ান গিলাৰ্ডি এবং ইংরেজ শিল্পী পামার এর কাছে প্যাস্টেল, জলরং, তেলরং এবং প্রতিকৃতি অঙ্কন শেখেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি ভারতীয় চিত্রাঙ্কন রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা শুরু করেন।

ভারতীয় রীতিতে আঁকা তাঁর প্রথম দিকের বজ্রমুকুট, ঋতুসংহার, বুদ্ধ, সুজাতা, কৃম্নলীলা প্রভৃতি বিষয়ক ছবিতেও ভারতীয় আঙ্গিকের অনুকরণ প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। 1898 খ্রিস্টাব্দে হ্যাভেল সাহেবের আগ্রহে অবনীন্দ্রনাথ কলকাতার আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ হন। তিনি জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে জাপানি অঙ্কনরীতি শিক্ষা করেন, যার প্রভাব ওমর খৈয়াম চিত্রাবলিতে দেখা যায়।

শিক্ষকরূপে সারা ভারতে ভারতীয় চিত্রাঙ্কন রীতি পুনরুদ্ধারের যে ব্যাপক আন্দোলন অবনীন্দ্রনাথ শুরু করেন, তার মাধ্যমেই ভারতীয় শিল্প নবজন্ম লাভ করে। শেষ জীবনে তিনি ‘কুটুম কাটাম’ নামে বিখ্যাত আকারনিষ্ঠ বিমূর্তরূপ সৃষ্টি করেন। ভগিনী নিবেদিতা, স্যার জন উদ্ভরক, হ্যাভেল প্রমুখের উদ্যোগে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পাদর্শ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে 1907 খ্রিস্টাব্দে ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি’ স্থাপিত হয়।

ভারত ছাড়াও লন্ডনে, প্যারিসে, জাপানে তাঁর ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আঁকা বিখ্যাত কিছু ছবির নাম- সাহাজাদপুর দৃশ্যাবলি, আরব্যোপন্যাসের গল্প, কবিকঙ্কন চণ্ডি, প্রত্যাবর্তন, জারনিস এন্ড, সাজাহান প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি বহু মুখোশের পরিকল্পনাও রচনা করেছিলেন।

আরও পড়ুন :

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান

বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান