বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান

বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রী আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান সম্পর্কে। এখানে দুটি উত্তর প্রদান করা হলো তোমাদের পছন্দমতো যেকোনো একটি পড়লে হবে। চলো দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান :

জম্ম : পেশায় ব্যারিস্টার গীতরসিক অতুলপ্রসাদ সেন লখনউয়ের সংগীত ঘরানায় অনবদ্য সুরের ডালি নিয়ে বাংলা গানের জগতে এক নবদিগন্তের উন্মোচন করেন। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক এই গীতিকার সংখ্যায় দু-শোর সামান্য বেশি গান লিখেও বৈচিত্র্যে এবং গভীরতায় বাংলা গানের জগতে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর গানগুলি  ‘অতুলপ্রসাদী সংগীত’ নামে পরিচিত। অতুলপ্রসাদের গানগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা চলে। প্রতিটি বিভাগেই রয়েছে তাঁর ভাষার গভীরতা, সূক্ষ্ম সুরের কারুকার্য।

গানসমূহ : রাগাশ্রয়ী গানে তাঁর সংগীত নির্মাণের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। ভাষায়, ছন্দে, সুরের বন্ধনে তিনি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন অনেক রসোত্তীর্ণ বাংলা রাগাশ্রয়ী গান। এই পর্যায়ে গানসমূহ তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল- ‘কে আবার বাজায় বাঁশি‘ , ‘মুরলী কাঁদে রাধে রাধে‘, ‘ডাকে কোয়েলা বারে বারে‘,, ‘ যাব না যাব না যাব না ঘরে‘ ইত্যাদি।

ঢং এর প্রয়োগ : হিন্দুস্থানি গানের ঢং তিনি আয়ত্ত করেছিলেন এবং তা সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। বাংলা গানে তিনি অন্যতম বাংলা ভাষার গজল নির্মাতা। ‘কত গান তো হল গাওয়া’ , ‘কে গো তুমি বিরহিনী’ ইত্যাদি গান যার নিদর্শন। অতুলপ্রসাদের লখনউবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর গানে টপ্পা ও ঠুংরির প্রভাব এনেছে। ‘কে যেন আমারে বারেবারে চায়’ , ‘কাঙাল বলিয়া করো না হেলা ’ ইত্যাদি গানে টপ্পা এবং ‘ওগো আমার নবীন সাথী’ গানে ঠুংরির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন পর্যায়ের গান : অতুলপ্রসাদের ‘বলো বলো বলো সবে’ , ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’ স্বদেশবোধের গানগুলি বর্তমান সময়েও সমান জনপ্রিয়। এ ছাড়া তিনি ঋতুপর্যায়ের বিভিন্ন গানেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখি পাতে’ ( মল্লার রাগে বর্ষার গান ) ইত্যাদি গানে তাঁর রোমান্টিক মনের পরিচয় ধরা পড়ে। বাংলার বাউল, কীর্তন, ভাটিয়ালি ইত্যাদি গান তাঁর হাতে অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাঁর গানগুলি সংকলিত হয়েছে ‘গীতগুঞ্জ‘, ‘কাকলি’ , ‘ কয়েকটি গান গ্রন্থে।

রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেলে তিনি লিখেছিলেন- ‘মোদের গরব , মোদের আশা’ । বাংলা গানের ইতিহাসে তিনিও বাঙালির গর্ব হয়েই রয়েছেন ; থাকবেনও। সংগীতশিল্পী রেণুকা দাশগুপ্ত, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, সবিতাব্রত দত্ত প্রমুখ অতুলপ্রসাদী গানকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন।

দ্বিতীয় উত্তর : 

বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান :

বাংলা গানের ইতিহাসে অন্যতম গীতরচয়িতা এবং সুরকার অতুলপ্রসাদ সেন। রবীন্দ্রপ্রভাবিত এই গীতিকার তাঁর সৃষ্টিতে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন প্রাচীন বাংলা গানের ভক্তি এবং প্রেমগীতির ধারার সাথে রবীন্দ্রদর্শনের।

তাঁর ভক্তিমূলক গানগুলি আত্মনিবেদনের আর্তি আর আন্তরিকতায় পূর্ণ। প্রেমের গানে রয়েছে বিরহবেদনা। ভারতীয় সংগীতের ধারা তাঁর গানে ছায়া ফেলেছে। তাঁর ভক্তি ও প্রেমগীতিগুলি অনুধাবন করলেই এ কথার প্রমাণ মেলে। তাঁর সমস্ত গান সংকলিত রয়েছে গীতিগুঞ্জ (1931) নামক সংকলনে। ভক্তি , প্রেম এবং দেশাত্মবোধ- এই তিনটি পর্যায়েই অতুলপ্রসাদ সেনের গান রয়েছে।

দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে ‘বল বল বল সবে’ অথবা ‘হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর’ ইত্যাদি জনপ্রিয়। তাঁর রচিত ‘একা মোর গানের তরী’ , ‘আমারে ভেঙে ভেঙে নাও’ অথবা ‘কে তুমি নদীকূলে’ বাংলা গানের ঐশ্বর্য। হিন্দুস্থানী গানের সুর ও ঢঙ কীর্তন ও বাউল সুর তিনি তাঁর গানে এনেছিলেন। তাঁর গানের সংখ্যা দুশোর কিছু বেশি। তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান- ‘উঠগো ভারতলক্ষ্মী’ , ‘তোমারি যতনে তোমারি উদ্যানে’ , ‘কে আবার বাজায় বাঁশি’ অথবা  ‘বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা’ প্রভৃতি। তাঁর গানের মধ্যে আছে সৌন্দর্যবোধ, ঈশ্বরানুভূতি আর ব্যক্তি – হৃদয়ের আকুতি।

আরও পড়ুন :

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান

1 thought on “বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান”

Leave a Comment