বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান | বাংলা সংগীতের ধারায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান | বাংলা সংগীতের ধারায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অবদান

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সম্পর্কে। নীচে দুটি ভিন্ন ভিন্ন উত্তর প্রদান করা হল যেকোনো একটি উত্তর পড়লেই হবে। চলুন দেখে নিয়ে যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান :

রুচিশীল বাঙালির প্রবল তম সুখ আর গোপনতম দুঃখের চিরন্তন আশ্রয় রবীন্দ্রনাথের গান। আনুমানিক 2232 টি গান রচনা করেছিলেন তিনি, যা ‘ গীতবিতান ’-এ সংকলিত হয়েছে। 1931 টি গানের স্বরলিপি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন ‘ স্বরবিতান ’ গ্রন্থে।

বাংলা গানে ‘ সঞ্ঝারী’র প্রবর্তন রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য কীর্তি। ‘স্থায়ী’,  ‘আভোগ ’ ও ‘ অন্তরা’তেই বাংলা গানের সুর ছিল বাঁধা। রবীন্দ্রনাথ বাংলা গানে বাণী ও সুরের যে অবিচ্ছেদ্য অন্বয় তৈরি করলেন তা আজও দুর্লভ। প্রেম, প্রকৃতি, পূজা, স্বদেশ, বিবিধ ইত্যাদি পর্যায়ে বিষয়গতভাবে রবীন্দ্রসংগীতকে ভাগ করেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই।

রবীন্দ্রসংগীত ধ্রুপদ-ধামার, খেয়াল-ঠুংরি – টপ্পা, লোকসংগীত ইত্যাদির সুরকে নিজদেহে অঙ্গীভূত করেছে। আধ্যাত্মিক সংগীত, প্রেমসংগীত, ঋতু ও প্রকৃতি বিষয়ক গান, দেশাত্মবোধের গান, পদাবলি সংগীত, আনুষ্ঠানিক গীতি, হাস্যরসাত্মক গান, শিশুসংগীত ইত্যাদি বিষয়বৈচিত্র্য ধরা রয়েছে রবীন্দ্রসংগীত। গান নিয়ে আজীবন নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে রবীন্দ্রনাথ বাংলা গানকে পৌঁছে দিয়েছেন সমৃদ্ধির শিখরে। কয়েকটি নতুন তাল সৃষ্টি করেছেন তিনি- ঝম্পক, ষষ্ঠী, রূপকড়া, একাদশী, নবপঞ ইত্যাদি।

একটি প্রাদেশিক ভাষা- সংস্কৃতির উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণের সূত্রে বাঙালির হাজারো অগৌরব আর অপ্রাপ্তিকে মিটিয়ে দিতে পারে রবীন্দ্রসংগীতের পরম পরাক্রান্ত ক্ষমতা। বাংলা গান রবীন্দ্রস্পর্শেই বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে।

রবীন্দ্র সমসাময়িক দুজন বিশিষ্ট গীতিকার হলেন- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং রজনীকান্ত সেন।

দ্বিতীয় উত্তর : 

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান :

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (7.5.1861-7.8.1941) এক অবিস্মরণীয় নাম। রবীন্দ্র – সংগীত সময়ের সাথে সাথে সমসাময়িক হয়ে উঠেছে। বাঙালিসমাজে এই গানের গ্রহণযোগ্যতা চিরকালীন। বাংলার মানুষের আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, প্রতিবাদ, প্রকৃতিমুগ্ধতা, দেশ প্রেম, ঈশ্বর উপলব্ধি – সমস্ত কিছুর প্রকাশ যাকে আশ্রয় করে – তা রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর গান। হতাশাপূর্ণ জীবনে আলোর পথ দেখায় তাঁর গান। আর সব গানের থেকে এ গান আলাদা, অনন্য।  স্বাধীন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত ‘ জনগণমন – অধিনায়ক জয় হে ‘ এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ’। তাঁর গানের মোট সংখ্যা 1500 এর কিছু বেশি।

প্রায় সমস্ত গানের বাণী এবং সুর রবীন্দ্রনাথের। তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য রবীন্দ্রনাথের অল্প কিছু গানে সুর দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর গান সম্পর্কে বলেছেন- “ আমার গানের মধ্যে সঞ্চিত হয়েছে দিনে দিনে সৃষ্টির প্রথম রহস্য, আলোকের প্রকাশ, আর সৃষ্টির শেষ রহস্য, ভালোবাসার অমৃত ”। রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন বাংলা গানের বিষয়বিন্যাসের প্রচলিত রীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে গিয়ে। নতুনত্ব এনেছেন শুধু বিষয়ে নয়, গানের গঠনেও। যা পুরোপুরি নতুন গান সৃষ্টির সাথে সাথে তৈরি করেছিলেন একদল দীক্ষিত ছাত্রছাত্রী যাঁরা পরম্পরাবাহী হয়ে আজও তাঁর গানকে উজ্জীবিত রেখেছে প্রথম দিনের মতন। বাঙালি সমাজের গানের রুচিও তৈরি করে দিয়ে গেছেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছিলেন, প্রাচীন সংগীতের জড় পুনরাবৃত্তিতে নয়, বাংলা গানকে টিকে থাকতে হবে নিত্য নতুন সৃষ্টির মাধ্যমে। তবু তাঁর গান পরম্পরাহীন নয়। ভারতীয় প্রাচীন সংগীত ধারার সাথে তা সংযোগবাহী। ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুংরির সাথে পাশ্চাত্যের সুরধারাও এসে মিশেছে তাঁর গানে, আর আছে আমাদের বাউল, কীর্তন। সবটাই উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন করা যাবে না কিছুতেই। সমন্বয়বাদী ঋষির এটাই অনন্যতা। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য এবং গীতিনাট্যগুলিতেও বহু উল্লেখযোগ্য গান রয়েছে যা বিশেষ তাৎপর্যবাহী। বাংলা সিনেমার গান হিসেবে আজও রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক।

আরও পড়ুন :

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান