বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান সম্পর্কে। এখানে দুটি উত্তর প্রদান করা হলো তোমাদের পছন্দ মতো যে কোন একটি উত্তর পড়লেই হবে।
বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান :
বাংলা গানের ধারায় কল্লোল কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক উল্লেখযোগ্য নাম। বাংলা গানের দিক পরিবর্তনের নবীন কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। তাঁর সৃষ্ট গানের সংখ্যা আনুমানিক 3239 টি। তাঁর গানের বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্ভারের নিরিখে গানগুলিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে।
1. প্রেম ও প্রকৃতিমূলক গান : কবির ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’ , ‘ আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো ’ প্রভৃতি গানে প্রেম ও প্রকৃতির বিষয়ভাবনাই প্রাধান্য পেয়েছে।
2. ঋতুসংগীত : কবির বহু গানেই ঋতুপ্রসঙ্গ স্মরণীয় । যেমন- ‘নিদাঘের খরতাপে’, ‘আজি দোলপূর্ণিমাতে দুলবি তোরা আয়’ ইত্যাদি।
3. রাগাশ্রয়ী গান : কবির বহু গানে রামকেলি, ঠুংরি, শঙ্করী, ভৈরবী, খাম্বাজ, ভূপালী প্রভৃতি রাগরাগিণীর ব্যবহার তাঁর গানগুলিকে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। যেমন- ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ , ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ ইত্যাদি গানে রাগের মিশ্র প্রয়োগে কবির মুনশিয়ানা অনস্বীকার্য।
4. গজল গান : কবি রচিত বাংলা গজল – এ মধ্যপ্রাচ্যের আরবি ফারসি শব্দের ব্যবহার নিঃসন্দেহে রসসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ’ গানটি স্মরণ করা যায়।
5. স্বদেশ সংগীত : কবির বহু গানে তাঁর স্বদেশপ্রীতির প্রকাশ ঘটেছে। এইসকল সংগীত ইংরেজ শাসকদলের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। প্রসঙ্গত ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ , ‘ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ ইত্যাদি গানের কথা উল্লেখযোগ্য।
6. ইসলামী সংগীত : পরমেশ্বর আল্লাহ কিংবা নবীকে কেন্দ্র করে কবির লেখা বহু ইসলামী গানের অন্যতম হল ‘আমি আল্লা নামের বীজ বুনেছি’ , ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ ইত্যাদি।
7. অন্যান্য ভক্তিগীতি : কবি বিভিন্ন সময়ে শ্যামাসংগীত, শিবসংগীত, কৃষ্ণসংগীত, চৈতন্য ও রামকৃষ্ণ বিষয়ক নানা গান রচনা করেছিলেন। ‘বল্রে জবা বল্ , ’বাঁশি বাজাবে কবে’ প্রভৃতি গানে সে- কথা স্মরণ করা যায়।
8. লোকসংগীত : পালাগান, লেটোগানের পাশাপাশি ‘ঐ রাঙামাটির পথে লো’ , ‘আমার গহীন গাঙের নদী’ ইত্যাদি লোকসংগীতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
9. হাস্যরসাত্মক ও প্যারোডি সংগীত : কবির হাস্যরসাত্মক ও প্যারোডি গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ‘আমার হরিনামে রুচি কারণ পরিণামে লুচি’ একদিকে যেমন হাস্যরসের ফোয়ারা ছোটায় তেমনি কবিগুরুর ‘তোমারই গেহে পালিছ স্নেহে’ গানটির প্যারোডি ‘তোমারই জেলে পালিছ ঠেলে’ সমভাবে উল্লেখযোগ্য।
দ্বিতীয় উত্তর :
◆ বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান :
একাধারে প্রেমিক কবি এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্র যুগে তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রভাববৃত্তের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে গান রচনা করেছেন ও সুরারোপ করেছেন। বাংলার সুরের আকাশে অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। তাঁর রচিত গানগুলি ‘নজরুলগীতি’ নামে পরিচিত।
নজরুলের কবিতা এবং গানগুলিতে তাঁর চিরবিদ্রোহী সত্তার দৃপ্ত ঘোষণা আমরা পাই। অন্যদিকে, আবার বহু গানে তাঁর রোমান্টিকতা, আবেগমুগ্ধতার আভাস আছে। তাঁর চিন্তায় আর প্রকাশভঙ্গিতে ছিল এক নতুন বিরুদ্ধবাদ, এক বিদ্রোহের বাণী। তাঁর রচনাগুলি স্থবির সমাজের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধতা শুধু বিষয়ের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তা ছিল প্রকাশভঙ্গি এবং সুরের ক্ষেত্রেও।
গানের ভাষাকে গতি আর দ্যুতি দেবার জন্য তিনি শব্দসৃজনের পরীক্ষানিরীক্ষাও করেছেন। তিনি অজস্র আরবি, ফারসি, উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন গানে।
রবীন্দ্রনাথ থেকে সরে এসে সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রায় ভিন্ন মেরুতে পৌঁছেছিলেন নজরুল। তাতে সবথেকে খুশি হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। নজরুলকে ‘ উৎসর্গ ’ করেছিলেন ‘ বসন্ত ’ নাটকটি। জীবনানন্দ দাশ নজরুল সম্পর্কে বলেছেন- “ বাংলার এ মাটি থেকে জেগে, এ মৃত্তিকাকে সত্যিই ভালোবেসে আমাদের দেশে 19 শতকের ইতিহাস প্রান্তিক শেষ নিঃসংশয়বাদী কবি নজরুল ইসলাম। ” তাঁর ‘ কারার ঐ লৌহ কপাট ’ অথবা ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু’ গানগুলি ছিল সে সময়ের বিপ্লবীদের জীবনসংগীত, তিনি মূলত ‘ভাঙার গান’ গেয়েছেন। যে ভাঙনের পথেই আসবে নতুন দেশ, নতুন জাতি, নতুন এক সমাজব্যবস্থা। বাংলা গানের যাত্রাপথে নজরুল ইসলাম নামটি তাই অবিনশ্বর।
1 thought on “বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান”