বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান

বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান সম্পর্কে। এখানে আমারা দুটি ভিন্ন ভিন্ন উত্তর প্রদান করলাম। তোমাদের ইচ্ছে মতো যে কোন একটি উত্তর পড়লেই হবে।

বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান :

অনুপ্রেরণা : 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচিত এই গান আজও বাঙালির চেতনায় ‘ প্রত্যেক নিভৃত ক্ষণে মত্ততা ছড়ায় যথারীতি। এই গান এবং আরও অনেক গান নিয়ে বাঙালি মননে যিনি আজও বেঁচে আছেন তিনি রজনীকান্ত সেন (1865-1910)। ভক্তিমূলক, দেশাত্মবোধক এবং হাস্যরসাত্মক গানে তাঁর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। যৌবনে রাজশাহিতে থাকাকালীন অক্ষয়কুমার মৈত্রের বাড়ির গানের আসরে গান গেয়ে বাহবা পাওয়াই পরবর্তীতে তাঁর সংগীত নির্মাণের অনুপ্রেরণা। রবীন্দ্র – অনুজ এই স্বভাব কবি ও সুরকার সমসাময়িক সংগীতস্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কর্তৃকও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

কান্তকবি : রজনীকান্ত সেনের ভক্তিমূলক গানে আত্মনিবেদনের আর্তি ও আন্তরিকতার পরিপূর্ণতা লক্ষ করা যায়। তাঁর রচিত উমাসংগীতগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে ভক্তহৃদয়ের আকুতি ও আনন্দ। ‘আমি অকৃতি অধম’ , কিংবা ‘তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে‘ ইত্যাদি ভক্তিমূলক গান তাঁর রচনার সারল্যে, করুণ রসের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে বাংলা গানের ইতিহাসে বিশিষ্ট হয়ে আছে। এই পর্যায়ের গানে তাঁর ভক্তির প্রাবল্য, গভীরতা এবং সারল্যমণ্ডিত কান্তির জন্য বাঙালি সমাজ তাঁকে ‘কান্তকবি’ নামে মনে রেখেছে। ‘

স্বদেশপ্রীতি পরিচয় : নমো নমো নমো জননী বঙ্গ’, ‘শ্যামল শস্যভরা চিরশান্তি বিরাজিত’ ইত্যাদি গানে রজনীকান্তের স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। আবার ‘যদি কুমড়োর মতো চালে ধরে রত পানতোয়া শত শত’ কিংবা ‘ বাজার হুদ্দা কিন্যা আইন্যা ঢাইলা দিছি পায়’ ইত্যাদি গানে প্রকাশিত হয়ে পড়ে রজনীকান্তের হাস্যরসিক মন।

রজনীকান্তের গানগুলি সংকলিত হয়েছে ‘বাণী’ (1902 খ্রিঃ ) ও ‘কল্যাণী’ (1905 খ্রিঃ ) গ্রন্থ দুটিতে। তাঁর গান সহজসরল বাংলার নিজস্ব সুরে গড়া। বাউল, কীর্তন, টপ্পা ইত্যাদি সুরের প্রভাব রয়েছে তাঁর গানে। তিনি স্বভাবকবি এবং সুর তাঁর সহজাত। বাঙালির আপন প্রাণের স্পর্শ আজও তাঁর গানকে জীবন্ত রেখেছে। পান্নালাল ভট্টাচার্য, অনুপ ঘোষাল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন প্রমুখ সংগীতশিল্পী রজনীকান্তের গানকে আপামর বাঙালির কাজে পৌঁছে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় উত্তর : 

◆ বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান :

মূলত ভক্তিগীতি এবং রজনীকান্ত সেন দেশপ্রেমমূলক গান রচনা করেছেন । বেশ কিছু হাসির গানও লিখেছিলেন। তাঁর কৈশোরে শ্যামাসংগীত রচনার মাধ্যমে তিনি আপন প্রতিভার প্রকাশ ঘটান। রাজশাহীতে থাকবার সময় তাঁর পরিচয় ঘটে অক্ষয়কুমার মৈত্রের সঙ্গে।

অক্ষয়কুমারের বাড়ির গানের আসরে তিনি নিজের তৈরি গানগুলি গাইতেন। এখানেই তিনি কবি দ্বিজেন্দ্রলালের রচিত হাসির গানগুলি শোনেন। তাঁর কবিসত্তা এবং গীতিকারসত্তা একসাথে তাঁর সৃষ্টিকে পূর্ণ করে তুলেছে। অক্ষয়কুমার মৈত্র রজনীকান্ত সম্পর্কে বলেছেন- “ কাহারও বাণী গদ্যে, কাহারও পদে, কাহারও বা সঙ্গীতে অভিব্যস্ত। রজনীকান্তের কান্ত পদাবলী কেবল সঙ্গীত। ” তাঁর আধ্যাত্মিক গান-  ‘কেন বঞ্চিত হব চরণে’ , ‘তুমি অরূপ, স্বরূপ, সগুণ, নির্গুণ’ , ‘তুমি আমার অন্তঃস্থলের খবর জান’ ইত্যাদি।

রজনীকান্তের রচিত সংগীতগ্রন্থ কল্যাণী (1905 খ্রিঃ), অমৃত (1910 খ্রিঃ), আনন্দময়ী (1910 খ্রিঃ), বিশ্রাম (1910 খ্রিঃ), অভয়া (1910 খ্রিঃ), সদ্ভাবকুসুম (1913 খ্রিঃ), শেষদান (1927 খ্রিঃ) ইত্যাদি। তাঁর ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’ গানটি সম্বন্ধে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বলেছেন- “ ইহাতে মিনতির অণু আছে – নিয়তির বিধান আছে। ” বাঙালির মনে গাথা রজনীকান্তের গানগুলি। তাঁর ভক্তিমূলক গানের আত্মনিবেদনের আকুতি আজও বাঙালি শ্রোতাকে মুগ্ধ করে।

আরও পড়ুন :

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা গানের ধরায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

Leave a Comment