বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান | Dwijendralal Ray

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান :সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সম্পর্কে। নীচে  তোমাদের জন্য দুটি উত্তর প্রদান করা হলো তোমাদের সুবিধামতো যেকোনো একটি উত্তর পড়লেই হবে।

বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান :

ভূমিকা : উত্তর উনিশ শতকের মননের ক্ষেত্রে চেতনার যে জোয়ার এসেছিল তার আবহে এক ঐতিহাসিক যুগ সন্ধিক্ষণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আপন প্রতিভাবলে শ্রোতাকে সুরের প্রবাহে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন সুর ও বাণীর বৈচিত্র্যে । ভারতীয় সংগীতের গভীরতার সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রাণশক্তি মিশ্রিত করে এক নতুন সুরধারা সৃষ্টি করলেন।

গানের পরম্পরা : কৃষ্ণনগরের রাজসভার দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলালের পিতা, যিনি উনিশ শতকের খেয়ালচর্চাকারী একজন শিল্পী ছিলেন। পিতৃসূত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় মার্গসংগীতে অনায়াস বিচরণ করেছেন।

বাণী ও সুরের বৈচিত্র্য : ইংল্যান্ডে বসবাসকালে দ্বিজেন্দ্রলাল সহজাত প্রতিভাবলে বিদেশি সুরকে আত্মস্থ করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সুরের সমন্বয় ঘটান। ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, ঠুংরি, বাউল, কীর্তন, বৈঠকি, স্বদেশি গান, হাসির গান ও প্যারোডি- ( বিচিত্র ও বহুমুখী শাখায় বিবিধ সুরের প্রয়োগে প্রায় 300 টি গান রচনা করেন ) সংস্কৃত লঘুগুরু ছন্দে লেখা ‘এ কি মধুর ছন্দ’ , ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে’ , ‘ও কে গান গেয়ে চলে যায়’ ‘ধনধান্য পুষ্পভরা‘ , ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ইত্যাদি গান বাঙালি জীবনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে।

বিষয়বৈচিত্র : দ্বিজেন্দ্রলালের খ্যাতিমান সংগীতও পুত্র শ্রীদিলীপ রায় পিতার রচনাকে বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে পূজা, দেশ, প্রেম, প্রকৃতি ও বিবিধ- পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। নাট্যকার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর সমস্ত নাটকেই গানের ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ‘সোরাব রুস্তম’ , ‘সাজাহান’ , ‘ চন্দ্রগুপ্ত’ , ‘মেবার পতন’ ইত্যাদি নাটকে ব্যবহৃত গানগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর রচিত স্বদেশসংগীত তাঁকে গানের ভুবনে স্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর রচিত গানগুলি ‘আর্যগাথা’ গ্রন্থে দুটি খণ্ডে গ্রথিত হয়েছে, যাকে বাঙালি ধরে রাখতে পারবে চিরদিন।

দ্বিতীয় উত্তর :

◆ বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান :

বাংলার এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে দ্বিজেন্দ্রলাল সৃষ্টি করেছেন তাঁর নাটক এবং গানগুলি। যা আজও বহুলাংশে প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয়। সেই যুগে তাঁর রচিত নাটকগুলি সারা ভারতবর্ষেই প্রদর্শিত হত। ইতিহাসভিত্তিক সেই সমস্ত নাটকগুলির প্রয়োজনে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন প্রচুর গান। যার বেশিরভাগটাই ছিল দেশপ্রেমমূলক। তার সাথে রয়েছে বেশ কিছু প্রেম , প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক ভাবনার গানও।

তাঁর নাটকগুলির বিপুল জনপ্রিয়তার মূলে ছিল আদর্শবাদ এবং যুগের চাহিদা অনুসারী মঞ্চ উপস্থাপন। তাঁর গানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি সেই সময়ের সুর ধরতে পেরেছিলেন। সেই সুর এনেছিলেন তাঁর গানে ! সাজাহান নাটকের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা‘ গীতটি প্রায় জাতীয় সংগীত হয়ে উঠেছিল।

প্রতাপসিংহ নাটকের ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’ , দুর্গাদাস-এর ‘ পাঁচশো বছর এমনি করে অথবা মেবার পতন – এর মেবার পাহাড় মেবার পাহাড় ‘ সমস্ত ভারতবাসীর মন জয় করেছে। তাঁর রচিত অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান, চিরকালীন যেমন ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে’ অথবা ‘ভারত আমার ভারত আমার’ অপূর্ব। তাঁর গান সেই সময় থেকেই ‘ দ্বিজেন্দ্রগীতি ’ নামে খ্যাত।

রবীন্দ্র সমকালে অবস্থান করেও তাঁর গান আপন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কালজয়ী হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তাঁর গানের ভক্ত ছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানও বিখ্যাত যা ওই যুগে বাঙালি শ্রোতাদের নির্মল আনন্দের আস্বাদন এনে দিয়েছিল। তাঁর গানে তিনি দেশজ সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন, যা সুরের ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনে দিয়েছে। বাংলা গানের এক বিরাট স্তম্ভ দ্বিজেন্দ্রগীতি।

আরও পড়ুন :

বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

Leave a Comment