বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান | চিত্রশিল্পী হিসেবে যামিনী রায়ের শিল্পী প্রতিবার পরিচয় দাও

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান | চিত্রশিল্পী হিসেবে যামিনী রায়ের শিল্পী প্রতিবার পরিচয় দাও

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে আমরা বাংলা চিত্রশিল্পের ইতিহাসে যামিনী রায় এর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এখানে দুটি উত্তর প্রদান করা হলো তোমাদের পছন্দমতো যেকোনো একটি উত্তর পড়লেই হবে।

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান :

ভূমিকা : বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে ছোটবেলা থেকে গ্রামোজ পরিবেশে, গ্রাম্য প্রকৃতি ও মৃৎশিল্পীদের অতি সাধারণ অথচ মায়াময় শিল্পসঙ্গ তাঁর শিল্পীমনকে আলোড়িত করে। লৌকিক চিত্রকলাকে আয়ত্ত করে তাকে নিজস্ব চিত্রচর্চার অংশ করে নিয়ে তিনি চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচয় প্রতিষ্ঠা পান।

চিত্রশিল্প শিক্ষা : স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তিনি কলকাতার আর্ট কলেজে ভরতি হন। প্রথমে ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির স্বাভাবিকতাবিরোধী রীতিকে অনুসরণ করেন, পরে ফরাসি ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের মতো শিল্পচর্চা শুরু করেন। কিন্তু কোথাও মৌলিকতার প্রতিফলন না পেয়ে পটচিত্রে আকৃষ্ট হন।

চিত্রশিল্প চর্চা : চিত্রচর্চায় প্রবল স্বাজাত্যাভিমান তাঁকে বাংলা লোকশিল্পের বিস্তৃত অঙ্গনে নিয়ে গেল। পটচিত্রের প্রতি প্রবল আকর্ষণে বিভিন্ন স্থান থেকে পট সংগ্রহ করে তিনি চিত্রভাষা অর্জন করেন। ভারতীয় চিত্রকলায় তাঁর ছবির ভাব – বিষয় – অঙ্কনরীতি সমকালীন অন্যান্য শিল্পীদের থেকে স্বতন্ত্র চিত্ররীতি প্রতিষ্ঠা করে।

চিত্রবৈশিষ্ঠ‍্য : যামিনী রায়ের ছবিগুলো সমতল জলরঙে আঁকা। চিত্রিত মানুষজন, পশুপাখির অবস্থান পূর্ণ পট জুড়ে। লীলায়িত স্বচ্ছন্দ স্থল তাদের শরীরের বহিরেখা আর সমতল ব্যাকগ্রাউন্ডে ছোটো – বড়ো অলংকরণ দেখা যায়।

ছবির বিষয় : তাঁর ছবির বিষয় ছিল রামায়ণ মহাভারতের নারী ও পুরুষ, ছবির বিষয় জিশুখ্রিস্ট, আদিবাসী সমাজ, বাউল-বৈয়ব, পশুপাখি ইত্যাদি। 1955 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।

মূল‍্যায়ন : পরিশেষে বলা যায়, লোক শিল্পের আঙ্গিকে তিনি তার শিল্প কর্মকে এক অভিনবত্ব দান করেছিলেন। সেই কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সমকালীন শিল্পীদের চেয়ে এক স্বতন্ত্র পর্যায়ের চিত্রকার। যার ফলে এই বিশাল গুণধারী চিত্রশিল্পী যামিনী রায় তার অপরূপ চিত্রাঙ্কন এর মাধ্যমে আপামর বাঙালির হৃদয়ে এক ভালোবাসার জায়গা সৃষ্টি করে নিতে পেরেছে।

দ্বিতীয় উত্তর : 

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান :

বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী যামিনী রায়। গ্রামে মাটির মূর্তি – শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েই তাঁর শিল্পীজীবনের সূচনা হয়। গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করার পর তিনি ফাইন আর্ট বিভাগে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতির চিত্রবিদ্যা শেখেন।

1918-19 থেকে তাঁর ছবি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। গ্রামবাংলার নিসর্গচিত্র, আদিবাসী জীবন ও জীবিকা, ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকাহিনিনির্ভর ছবি আর পটচিত্র অঙ্কনে তিনি ছিলেন অনবদ্য। 1934 খ্রিস্টাব্দে তাঁর ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক লাভ করে।

1955 খ্রিস্টাব্দে যামিনী রায় ‘ পদ্মভূষণ ” উপাধিতে ভূষিত হন। আর্ট স্কুলে গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেলরঙে আঁকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে যামিনী রায় জলরঙে অসামান্য সব ছবি এঁকেছেন। কালীঘাটের পটুয়াদের শৈলীর দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন।
ফরাসি চিত্রধারার মধ্যে যাঁরা সরলরেখার পরিবর্তে ছবিতে ‘কার্ভ’ ব্যবহার করেন , তাঁদের চিত্রকলা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।

সেজান , ভ্যান গগ আর গগ্যার মতো পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের ছবি দেখে তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাঁর মূল লক্ষ্যটিকে তিনি নিজেই নির্দিষ্ট করেছেন, তা যেন ‘অন্য সকলের ছবির থেকে আলাদা হয় তা সে ভালোই হোক বা মন্দই হোক। ‘ পরবর্তী শিল্পীদের অনেকেই তাঁর দেখানো পথে নিজের নিজের চিত্রভাষা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়ুন :

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

6 thoughts on “বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান | চিত্রশিল্পী হিসেবে যামিনী রায়ের শিল্পী প্রতিবার পরিচয় দাও”

Leave a Comment