বনমহোৎসব রচনা PDF

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বনমহোৎসব রচনা PDF

বনমহোৎসব রচনা PDF : প্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে বনমহোৎসব রচনা টি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। নীচে দুটি বনমহোৎসব রচনা প্রদান করা হলো তোমাদের পছন্দমতো যে কোনো একটা পড়লেই হবে।

রচনা -১ 

বনমহোৎসব রচনা  :

ভূমিকা : বনমহোৎসব প্রথম শুরু হয় শান্তিনিকেতন। সভ্যতার বিকাশে বনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আদিম মানুষ বনে বাস করত। বন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত। আবার গাছের ছাল ও পাতা দিয়ে তাপ ও ঠাণ্ডার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাত। গাছের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অতি নিবীড়। একসময় সভ্যতা ছিল বনের উপর নির্ভরশীল।

বনমহোৎসব কি : বনমহোৎসব হল বন সৃষ্টি বা গাছ লাগানোর উৎসব রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে প্রথম বনমহোৎসবের সূচনা করেছিলেন। সরকারি সাহায্যে এবং সহযোগিতায় এটি বর্তমানে সাধারণের উৎসবে পরিণত হয়েছে গাছ লাগিয়ে বন সৃষ্টি করা এবং সেই বন রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ফলে নতুন নতুন বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে।

বনমহোৎসবের প্রয়োজনীয়তা : আধুনিক সভ্যতা প্রসারের ফলে মানুষ গাছপালা কেটে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলছে। তৈরি হচ্ছে বড়ো বড়ো বাড়ি রাস্তাঘাট, কলকারখানা। শহরের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু গাছপালা কেটে ফেলা ফল ভয়ানক। এর ফলে, মরুভূমি বাড়তে থাকে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়, মাটির ক্ষয় বেড়ে যায়, জমির উর্বরতা কমে যায়। পরিবেশ দূষণও বেড়ে যায়। গাছ কেটে ফেলার ফলে বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। অথচ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া পাতা, ফুল, ফল, আঠা, ওষুধ, মশলা, তেল, মধু, মোম, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে গাছ আমাদের নানাভাবে উপকার করে৷

উপসংহার : মানুষ বনভূমি ধ্বংস করে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। গাছপালা না থাকলে মানুষও বাঁচতে পারে না। বনমহোৎসবকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। গাছপালা লাগানোর গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। শুধু গাছ লাগানোই নয়, সেগুলির যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

রচনা -২

বনমহোৎসব রচনা :

” অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে তুমি বৃক্ষ আদিপ্রাণ”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা : বৃক্ষই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদিপ্রাণ। পৃথিবীতে প্রাণের সবুজ শিহরণ জাগিয়ে বৃক্ষ প্রথম রচনা করেছিল-” ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়”। মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে বৃক্ষের ভূমিকা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই গাছই পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রেখেছে। পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশকে একমাত্র আশ্রয় করে মানুষ জীবন ধারণ করত। এই গাছই মানুষের প্রাণের বন্ধু ও জননী স্বরূপা ।

অরণ্যের গুরুত্ব : বিজ্ঞানের যুগেও আমরা বৃক্ষের অপরিসীম গুরুত্ব কে স্বীকার করে নিয়েছি―

১. বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন বনভূমি পৃথিবীকে ধু ধু মরু প্রান্তর হতে দেয়নি। বনভূমি পৃথিবীর বুকে নামিয়ে আনে বৃষ্টিধারা।

২. জীব কুলের ত্যাগ করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন মনো অক্সাইড গাছ অনায়াসেই শোষণ করে মানুষকে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। গাছই জীবের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে।

৩. শিকড়ের কঠিন আবর্তে মাটি কে আটকে রেখে বৃক্ষ ভূমিক্ষয়
রোধ করে।

৪. আসবাপত্র নির্মাণ, গৃহ নির্মাণে গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।

৫. গাছই ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখে

৬. বন্যপ্রাণীর আশ্রয় হল বৃক্ষ বা অরণ্য। এই অরণ্যই খাদ্য শৃংখল বজায় রাখে এবং বিভিন্ন চক্রকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

অরণ্য ধ্বংসের কারণ : বর্তমানে নানা কারণে অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে। অরণ‍্য ধ্বংসের কারণ গুলি হল-

১. ক্রমবর্ধমান জনবিস্ফোরণ
২. সচেতনতার অভাব
৩. নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাব
৪. গাছকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা
৫. জুম চাষ ও পশুচারণ
৬. দাবানল

বৃক্ষ নিধনের পরিণাম : অরণ্য ধ্বংস পরিবেশের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে ও মানুষকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয় । অরণ্য ধ্বংসের ক্ষতিকারক দিক গুলি হল-

১. গাছ কাটার ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ে।

২. অরণ্য ধ্বংসের ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যা, খরা সহ সব রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।

৩. ভূমিক্ষয় ও ভূমি স্খলন ঘটে।

৪. বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে।

৫.  মরুভূমি সম্প্রসারিত হচ্ছে।

৬. পতঙ্গ বাহিত রোগ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন ফাইলেরিয়া, ম‍্যালেরিয়া, কালাজ্বর প্রভৃতি।

বনমহোৎসব : 1950 খ্রিস্টাব্দে ভারতে সরকারি উদ্যোগে প্রথম বৃক্ষরোপণ উৎসব এর সূচনা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বনমহোৎসবের আহ্বান করেছিলেন-
মরু বিজয়ের কেতন উড়াও হে শূন্যে
ওড়াও ওড়াও হে প্ৰবল প্রাণ।

শুধু বনভূমি রক্ষা নয় বৃক্ষরাজি সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বনোমহোৎসব বা বৃক্ষরোপণ উৎসব শুরু হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও শহরাঞ্চলে কেটে ফেলা গাছের জায়গায় নতুন চারা গাছ লাগানো
বাধ্যতামূলক। একটি গাছ একটি প্রাণ’- এই  নীতি অনুসরণ করে বনসৃজন এগিয়ে চলে।

অন্যান্য প্রচেষ্টা :

১. পতিত জমি গুলিকে বনভূমির উপযোগী করে রক্ষণাবেক্ষণ।

২. জ্বালানি কাঠের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. দাবানল নিয়ন্ত্রণ করে বন্যপ্রাণী প্রাণীকে বাঁচানো।

৪. জীবজন্তুর পরিবেশ সংরক্ষ ও খাদ্যের যোগান৷

৫. ক্রমবর্ধমান জনবিস্ফোরণের গতিকে নিয়ন্ত্রন করা।

৬. ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসুন্ধরা সম্মেলন। সেখানে প্রতিটি দেশকে বন সংরক্ষণ সম্বন্ধে সচেতন করা হয়।

উপসংহার : আধুনিক জীবনযাত্রায় যন্ত্রসভ্যতার যত বিস্তার লাভ করেছে তত কমেছে বনভূমি। তবু কিছু স্বার্থলোভী মানুষ সুযোগ ভোগের জন্য বনজ সম্পদের ক্ষতিসাধন করে চলেছে। সরকার ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে, বিশ্বকে সবুজের বন্যায় প্লাবিত করতে হবে।

“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর
দাও ফিরে সে তপবন পুৰ্ণ ছায়ারাশি।”

PDF DOWNLOAD ZONE
File Name : বনমহোৎসব রচনা
Language : বাংলা
Size : 81 KB
Clik Here To Download

আরও দেখুন :

বাংলার উৎসব রচনা

বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল

তোমার প্রিয় ঋতু রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার