বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাদম্বিনী বসুর অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাদম্বিনী বসুর অবদান

বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাদম্বিনী বসুর অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাদম্বিনী বসুর অবদান সম্পর্কে। দ্বাদশ শ্রণির ছাত্রছাত্রীদের জন‍্য এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাদম্বিনী বসুর অবদান :

ভূমিকা : উনিশ শতকের নবজাগরণের ইতিহাসের চাদরে পুরুষরা যেমন অগ্রগতির ধ্বজা উড়িয়েছিল ; নারীরা কিন্তু পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিবর্গ ছিল না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে কাদম্বিনী ( বসু ) গঙ্গোপাধ্যায় তারই জীবন্ত উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মবর্ষেই এই প্রতিভার আবির্ভাব।

চিকিৎসাবিদ‍্যায় অবদান : কাদম্বিনীর পিতা ব্রজকিশোর বসু ভাগলপুরের স্কুলের প্রধানশিক্ষক হলেও কাদম্বিনীর শিক্ষাজীবন মসৃণ পথে চলেনি। সমস্ত বন্ধুরতা সামলে 1882 খ্রিস্টাব্দে তিনি এবং চন্দ্রমুখী বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে অবদান সম্মানিত হন। স্নাতক হওয়ার পর অনেক লড়াই করে 1883 খ্রিস্টাব্দে ভরতি হন এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষাকেন্দ্র বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে। 1886 – তে তিনি ‘ গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ‘ ( GBMC ) শংসাপত্রের ভিত্তিতে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করার স্বীকৃতি পান। তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় কলেজ থেকে উত্তীর্ণ প্রথম ভারতীয় মহিলা ডাক্তার।

কৃতিত্ব : কাদম্বিনী যখন ডাক্তারি করার সুযোগ পেলেন সেইসময় কেবলমাত্র মহিলা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডাফরিন হাসপাতাল কলকাতায় চালু হয়ে গিয়েছে। 1888 খ্রিস্টাব্দে 300 টাকা মাসিক বেতনে কাদম্বিনী এই হাসপাতালে যোগ দিলেও মেমসাহেব ডাক্তাররা কাদম্বিনীকে সরাসরি চিকিৎসার সুযোগ দেন না। বিলিতি ডিগ্রি না থাকলে বাড়ির কর্তারা কাদম্বিনীর কাছে মহিলা রোগীদের নিয়ে আসতে চায় না। কট্টর হিন্দুরা তাকে সমাজছাড়া জীবন হিসেবে দেখতে শুরু করে। কাদম্বিনীও বুঝতে পারছিলেন বিলিতি ডিগ্রির কদর কতখানি।

স্বীকৃতি : স্বামী দ্বারকানাথের উৎসাহে পাঁচ ছেলেমেয়েকে কলকাতায় রেখে 1892 খ্রিস্টাব্দে বিলেতে গেলেন কাদম্বিনী। সেখান থেকে LRCC ( এডিনবরা ), LRCS ( গ্লাসগো ) ও GFCS ( ডাবলিন ) উপাধি নিয়ে স্বদেশে ফিরলেন। এবার তিনি হলেন মহিলা ডাক্তার যিনি বিলিতি ডিগ্রিধারী প্রথম ভারতীয়। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সমাজসেবা : 1895 খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজমাতার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি নেপাল যান ৷ সেখানে এই মহৎপ্রাণ মানবীর হাত ধরে আধুনিক জনচিকিৎসার সূত্রপাত হয়৷ চিকিৎসা ছাড়াও বহু সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। 1921 খ্রিস্টাব্দে কাদম্বিনী দেবী খনি শ্রমিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বিহারে যাত্রা করেন।

মূল‍্যায়ন : মনের দিক থেকে যুগের তুলনায় কাদম্বিনী ছিলেন অনেক এগিয়ে। সমাজে নারী ও পুরুষের সমান দায়িত্ব, সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন। তাই কাদম্বিনী চিকিৎসক হলেও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে তাঁর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। 1923 খ্রিস্টাব্দে 2 রা অক্টোবর কলকাতায় প্রথম ভারতীয় মহিলা চিকিৎসকের জীবন অবসান ঘটে।

আরও পড়ুন :

বাংলা বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে মেঘনাথ সাহার অবদান 

বাংলা বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান