চিকিৎসা বিজ্ঞানে নীলরতন সরকারের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম চিকিৎসা বিজ্ঞানে নীলরতন সরকারের অবদান সম্পর্কে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নীলরতন সরকারের অবদান :
ভূমিকা : বাংলার বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন শাখায় যাঁরা তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করে আজও অমর হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নীলরতন সরকারের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। 1861 সালের 1 লা অক্টোবর দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার নেতরা গ্রামে এক দরিদ্র কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন : নীলরতন সরকার 1876 খ্রিঃ জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স ও ক্যাম্বেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। এরপর তিনি মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে এল এ ও বি এ পাশ করেন।
অবদান : আগাগোড়া সমস্ত পরীক্ষাতেই অসামান্য কৃতি ছাত্র নীলরতন সরকার স্বদেশ ও বিদেশ উভয়ক্ষেত্রেই তাঁর কৃতিত্বের সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন। ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর সঙ্গে একযোগে তিনি ‘কলকাতা মেডিক্যাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘বেলগাছিয়া আলবার্ট ভিক্টর মেডিক্যাল কলেজ’ ( বর্তমান আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অন্যতম।
চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শী চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সেবাকার্যে নিয়োজিত করার ব্যাপারে তিনি উদ্যোগী ছিলেন। এ দেশে তিনিই প্রথম দূষণমুক্ত বিজ্ঞানসম্মত ট্যানারি, সার ও সাবানের কারখানা স্থাপন করেন। বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি ‘ক্যালকাটা মেডিক্যাল ক্লাব’ ও প্রতিষ্ঠা করেন। ‘সিরোসিস অব লিভার ইন চিলড্রেন ‘ শিরোনামে তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণাপত্রটির গুরুত্ব অপরিসীম।
এ ছাড়া ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ পত্রিকাটি দীর্ঘ বারো বছর ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন। এই পত্রিকায় প্রকাশিত
বিষয় ও আলোচনাগুলি চিকিৎসাশাস্ত্রের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হয়েছিল। এইভাবে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা, বিশেষত চিকিৎসাবিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে নীলরতন সরকারের অবদান যে কতখানি তা বলা দুষ্কর।
সম্মান ও উপাধি : চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার সারা জীবন অবদানের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাকে দিয়েছিলেন ডক্টরেট অফ সিভিল ল ডিগ্রী । ড. নীলরতন সরকারের চিকিৎসা জীবনের 50 বছর পূর্তিতে বিধানচন্দ্র রায় বলেন- Still he is young amongst the old . His spirit is young . His heart is young . He is able to adapt himself to changing circumstances of life .
মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় যে অশিক্ষা কুশিক্ষা দারিদ্র থেকে মুক্ত এক নতুন ভারতবর্ষ তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই 1943 সালের 18 মে তার মৃত্যু হলেও তিনি চিরকাল আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকবেন।