পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা PDF | পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা PDF

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা PDF : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার  রচনা টি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। চলো দেখে নেওয়া যাক পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি ।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা :

আমরা জানি পরিবেশ দূষণ জীবনের সবচেয়ে বড়ো হুমকি। আমরা যে বাতাস নিঃশ্বাস হিসেবে নিই, যে জল পান করে এবং যে বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভর করি তা প্রস্তাবিত করে দূষণ। আজকে আমরা জানবো পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি সম্পর্কে। নীচে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি PDF সহ প্রদান করা হলো।

নীচে তিনটি পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা প্রদান করা হয়েছে তোমাদের পছন্দমতো যে কোন একটি পড়লেই হবে।

রচনা -১

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা :

“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল,চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা : উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সহ যে প্রাকৃতিক পরিবেষ্ঠনের মধ্যে আমরা বাস করি,সাধারণভাবে তাকেই বলা হয় পরিবেশ। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশের একান্ত প্রয়োজন। মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখল সেদিন থেকেই শুরু হল পরিবেশ দূষণ। প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলে থাকি।বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের তীব্রতার ফলে মানব সভ্যতা একবিংশ শতাব্দীতে এক গভীর সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও দূষণের সূত্রপাত : মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত। আগুন আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব সভ্যতা কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেও সূচিত হল প্রাণের ধাত্রী অক্সিজেনের ধ্বংসলীলা। নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন এবং নগরায়ন ধরিত্রীকে করে তুলল মরূর মত রুক্ষ, পবিত্র নদী বক্ষে নিক্ষেপিত হল কলকারখানার বিষাক্ত বজ্র পদার্থ। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে পরলো আকাশে-বাতাসে। তাই বড় দুঃখ ও ব্যথ্যায় মর্মস্পর্শী আবেদন –

      ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।”

পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ : সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়- ১- প্রাকৃতিক দূষণ ২. মনুষ্য সৃষ্টি দূষণ। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, দাবানল,বালুঝড় প্রভৃতি কারণগুলি হল প্রাকৃতিক দূষন। এইসব প্রাকৃতিক দূষণের প্রতিকার সাধারনত প্রকৃতি নিজের হাতে করে দেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্টি দূষণ হল মারাত্মক। যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ, রাসায়নিকের ব্যবহার, পারমাণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, যুদ্ধ, আরও নানা কারণে পৃথিবী ভয়ংকরভাবে দূষিত হয়ে চলেছে। দূষণ বলতে তাই মনুষ্যসৃষ্ট দূষনকে বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা বলতে পারি- “God made the country and man made the town.” মনুষ্য সৃষ্টি এই পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণী তে বিভক্ত করা যায়। যথা- বায়ু দূষণ, জল দূষণ, ভূমি দূষণ, শব্দদূষণ প্রভৃতি।

বায়ুদূষণ : বিশুদ্ধ বাতাস ছাড়া মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না।অসংখ্য যানবাহন ও কলকারখানা থেকে প্রতি মুহূর্তে নির্গত দূষিত ধোঁয়া বাতাসের মধ্যে CO2 এর মতো দূষিত গ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে বায়ুমন্ডলকে দূষিত করে চলেছে। এর ফলে কমে যাচ্ছে জীবনদায়ী
O2 এর পরিমাণ।

জল দূষণ : জলের অপর নাম হলো জীবন। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ, শস্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ- এইসব নানা কারণে প্রতিনিয়ত জল দূষণ ঘটে চলেছে। এর পরিণামে মানুষ ও জীবজগৎ নানাবিধ রোগের শিকার হচ্ছে। এমনকি পানীয় জল মানুষের প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

ভূমি দূষণ : কৃষি ও শিল্প বিপ্লবই ভূমি দূষণের প্রধান কারণ। কৃষিতে নানাভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ভূমি দূষিত হচ্ছে। শিল্প কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ ও শহর এলাকার আবর্জনার স্তুপ মাটিকে দূষিত করছে।

শব্দ দূষণ : দূষণ শুধু বায়ুতে নয়, জলে নয়, শব্দেও। যানবাহনের হর্ণ,কলকারখানার আওয়াজ,মাইকের আওয়াজ,বাজি পটকার শব্দ, আধুনিক জীবনের এক বড় সমস্যা। শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণ ক্ষমতার বিলোপ ঘটে, এমনকি মানসিক বিপর্যয় দেখা যায়।

বিশ্ব উষ্ণায়ন : পরিবেশ দূষণের চরমতম রূপ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। সমগ্র বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে চির হিমানির দেশেও বরফ গলবে। সমুদ্র উঠবে ফুলে ফেঁপে। আর শুষ্ক অঞ্চল হবে আর শুষ্কতর। এই – সংকটের মুহূর্তে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় বলা যায় –

“এই নদী, এই মাটি বড় প্রিয় ছিল
এই মেঘ, এই রৌদ্র, এই বাতাসের উপভোগ
আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি?”

প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।কলকারখানা,যানবাহন প্রভৃতি আধুনিক জীবনের উপকরণ গুলিকে আজ আর বর্জন করা সম্ভব নয়,সুতরাং অগ্রগতিকে বজায় রেখে কীভাবে দূষণ রোধ করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার : সুস্থ পরিবেশের উপরই নির্ভর করছে সুস্থ্যজীবন। সভ্যতার অগ্রগতির অন্ধ প্রতিযোগিতা থেকে ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দের মরিয়া তাগিদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে। প্রত্যেক বছর ৫ জুন পরিবেশ দিবস পালন করলেই হবে না, পরিবেশ দূষণের করাল গ্রাসকে প্রতিহত করার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে প্রতি মুহূর্তে। আমাদের শপথ নিয়ে সংকল্প করতে হবে-

‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সুকান্ত ভট্টাচার্য

রচনা -২

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা :

ভূমিকা : এই পৃথিবীতে বাস করে মানুষ, তার সঙ্গে রয়েছে আকাশ-বাতাস, সূর্য-তারা, পাহাড় -পর্বত, গাছপালা, ফুল-ফল, কত জীবজন্তু। এই সে সব জিনিস, যা দিয়ে আমাদের পৃথিবী সাজানো হয়েছে, তা সবই আমাদের প্রয়োজনীয়। পৃথিবীর বা প্রকৃতির কোনো- কিছুই তুচ্ছ নয়, যেখানে যেটা থাকলে মানায়, সেখানে ঠিক সেটাই আছে। এভাবে পৃথিবীতে জীব মাত্রই একে অন্যের জীবন ধারনে, অস্তিত্ব রক্ষায়, বৃদ্ধিতে-ধ্বংসে সাহায‍্য করছে। সুবিন্যস্ত এই পরিশের জন্যই পৃথিবী এত সুন্দর।

পরিবেশ বলতে কী বোঝায় : আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে – ঘরবাড়ি, গাছপালা, অজস্র জীবজন্তু, প্রাকৃতিক নানা জিনিস – সকলকে নিয়েই গঠিত হয়েছে আমাদের পরিবেশ। নানা কারণে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ দিন দিনই কলুষিত হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম প্রধান কারন পৃথিবীতে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যতই বাড়ছে তাদের জন্য তত বেশি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান যানবাহন ইত্যাদির প্রয়োজন হচ্ছে। এসবের সংস্থান করতে গিয়ে মানুষ পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। মানুষ সবুজ বনভূমি কেটে ফেলায়, এবং সেখানে বসতি ও কলকারখানা স্থাপন করা পরিবেশ হচ্ছে দুষিত।

গাছপালা আমাদের অক্সিজেনের যোগাল দেয়, তাই গাছ কেটে ফেলায় অক্সিজেনের পরিমান কমছে, বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বাড়ছে, কলকারখানা গুলি থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলিকনা ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করছে। পরিবেশ দূষণের ফলে বাতাসে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য ক্রমশই নষ্ট হচ্ছে। ফলে জল-মাটি-বায়ু দূষিত হচ্ছে, ফল, ফুল, ফসল দূষণের শিকার হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ দূষনের কুফল : খাদ‍্য বা জল না পেলে মানুষ কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু বাতাস ছাড়া তার পক্ষে এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এমন প্রয়োজনীয় বাতাস নানা কারণে দূষিত হাওয়ায় মানুষ তো বটেই, সমগ্র প্রাণীকূল ও উদ্ভিদজগত বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এর বিষময় প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের বর গলতে শুরু করেছে। বরফ গলার পরিমাণ আরও বেরে গেলে পৃথিবীর বহু অঞ্চলে আগামী দিনে প্লাবন ঘটতে পারে।

পৃথিবীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার উপরে আকাশে ওজোন গ্যাসের একটি স্তর ছাতার মতো আমাদের পৃথিবীকে ঘিরে আছে। এই স্তর সূর্য থেকে আসা অতি- বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জীবজন্তু তথা প্রাণী- কুলকে রক্ষা করে। আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার যত প্রসার ঘটছে, ওজোন গ্যাসের স্তরটি ততই ছিন্ন হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই মানুষ ও অন্যান্য জীব বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন হবে। ব্যাপারটা তাই বিজ্ঞানীদের রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে।

সুস্থ পরিবেশ গঠনের উপায় : পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বাগ্রে মানুষকে হতে হবে পরিবেশ সচেতন। মাটি যাতে দূষিত না হয় সেজন্য বর্জ্য পদার্থ যাতে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া না মেশে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সর্বোপরি নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করতে হবে। বনসৃজনের উপর জোর দিতে হবে। এতে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষিত হবে। কলকারখানাগুলি ও যানবাহনগুলি যাতে পরিবেশ দূষণ-সংক্রান্ত নিয়মগুলি মেনে চলে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এইজন্য কেবল সরকারি পদক্ষেপই যতেষ্ট নয়, জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।

উপসংহার : সুখের কথা, সাধারণ মানুষ এখন অনেকটাই পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। এই সচেতনতা যাতে আরো বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। নিদ্যালয় স্তর থেকে ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। বনসৃজনে উৎসাহ দিতে হবে এবং পরিবেশ দূষণের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। মানুষের সচেতনতা যত বাড়বে ততই নতুন করে পরিবেশ দূষনের সম্ভাবনা কমবে।

রচনা -৩ 

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা :

ভূমিকা : সুস্থ পরিবেশে সুস্থ জীবন এখন আর নেই। স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতির রাজা আজ বিপন্ন। সেই সাথে মানবজীবন ও প্রাণিজগৎ, আজ ধ্বংসবিমুখ। কিন্তু এমনটি পূর্বে কখনো ছিল না। মানুষ নামের যন্ত্রদানব প্রকৃতির শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে ফেলেছে । তাদের কারণেই শান্ত পৃথিবী আজ দূষণের ছোবলে আক্রান্ত।

পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী : মানুষ চারপাশের যা কিছু নিয়ে বাস করে তা – ই তার পরিবেশ। অর্থাৎ, মানুষের জীবনযাপনের উপকরণ ও ক্ষেত্র সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত আর যে পরিবেশে মানবজীবনের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হয় এবং প্রাণিকুল বিপন্নবোধ করে তাকেই দূষিত পরিবেশ বলা হয়।

পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব : জলে – স্থলে – অন্তরীক্ষে এবং অসীম বায়ুমণ্ডলে আজ দূষণ প্রক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে । মানুষের মল-মূত্র যেমন জল ও বাতাসকে দূষিত করছে তেমনি কারখানার বর্জ্য, নদী ও সমুদ্রের জলকে প্রাণিকুলের বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। তাছাড়া সাবমেরিনে রাসায়নিক ও পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের জলরাশিকে বিষিয়ে তুলেছে । আজ বাতাসে বৃদ্ধি পেয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আবহাওয়ামণ্ডল। উত্তপ্ততার কারণে – ফুলে উঠেছে সমুদ্রবক্ষ,দেখা দিয়েছে গ্রিন হাউস ইফেক্ট। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অকালবন্যা বা ঝড় – জলোচ্ছ্বাসে মর্তবাসী প্রায়শ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যানবাহন ও কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে মানুষ ক্যান্সার শ্বাসকষ্টের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া শব্দদূষণের কারণে মানুষের স্নায়ুবিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে।

পরিবেশ দূষণের কারণ : পরিবেশ দূষণের কারণ অনেক । তবে নিম্নলিখিত কারণগুলোকে মুখ্য হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।

১. অবাধ শিল্পায়ন : শিল্পায়নের কারণে প্রতিদিন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বাড়ছে। এ বর্ধিত বর্জ্য পদার্থ বিশ্বের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। বর্জ্য অপসারণ ও নির্মলে শিল্প মালিকদের দায়িত্বহীনতা এ সমস্যাটিকে গুরুতর করে তুলেছে।

২. জনসংখ্যার বিস্ফোরণ : অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্যে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর মুখের আহার যোগাড় করার জন্যে বন জঙ্গল সাফ করে আবাদি জমিতে পরিণত করতে হচ্ছে । এতে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের মল মূত্র, কফ কাশি প্রভৃতি বাতাস ও জলকে দূষিত করছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করছে।

৩. অস্ত্র প্রতিযোগিতা : পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার পরিবেশের জন্যে হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রায়ই সমুদ্র ও ভূগর্ভে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে । যুদ্ধের সময় পরমাণু বা রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। পরমাণু চুল্লির বর্জ্য ও পরিত্যক্ত অসামগ্রী আজ সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার চেরনোবিলে পরমাণু দুর্ঘটনা থেকে প্রচুর পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪. যান্ত্রিক যানবাহনের ব্যবহার : তরল জ্বালানিচালিত যানবাহনের অবাধ ব্যবহার আবহাওয়াকে দুষিত করে তুলেছে । যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছে । তাছাড়া যানবাহনের চালকদের কাণ্ডজ্ঞানহীন হর্ণ বাজানো তীব্র শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিরোধ : যেহেতু পরিবেশকে আমরা নিজেরাই দূষিত করি, সেহেতু একে দূষণমুক্ত রাখার জন্য আমাদেরকেই সচেষ্ট হতে হবে । বায়ুদূষণ প্রতিরোধকল্পে অধিক পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিহার করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে, ইটের ভাটায় লম্বা চিমনী ব্যবহার করতে হবে । এবং জীবজন্তুর মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। জলদূষণ রোধের জন্য কল কারখানার বর্জ্য পদার্থ নদ- নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ওষুধ যাতে খাল- বিল বা নদীতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শব্দদূষণ রোধে জনবসতি এলাকায় বিকট শব্দে হর্ণ বাজান যেমন নিষিদ্ধ করতে হবে, তেমনি বিকট শব্দে লাউডস্পিকার, মাইক, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি বাজানো নিষিদ্ধ করতে হবে যাতে জনসাধারণের অসুবিধার উৎপত্তি না ঘটে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার : নিম্নে পরিবেশ দূষণের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ―

১. সচেতনতা বৃদ্ধি : প্রথমেই পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে । যাতে তারা অবাধে বৃক্ষনিধন, অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার ও যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ থেকে বিরত থাকে।

২. যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার : বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যদি অত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার করেন তাহলে পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রজনিত পরিবেশ দূষণ থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা পাবে।

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ : বিশ্বের লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। জনসংখ্যাকে কাম্য সংখ্যার মধ্যে রাখতে পারলে পরিবেশ সুস্থতা ফিরে পাবে।

৪. বৃক্ষরোপণ : বৃক্ষনিধন বন্ধ ও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের সুস্থতা ফিরিয়ে আনা যায়। সেজন্য বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

৫. উন্নত যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার : শিল্পক্ষেত্রে আরো উন্নত যান্ত্রিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হবে যাতে বর্জ্যে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কম থাকে। তাছাড়া বর্জ্য নির্মূল ও অপসারণেও উন্নততর ব্যবস্থাপনার জন্যে গবেষণা চালাতে হবে।

৫. যান্ত্রিক গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ : পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্যে তরল জ্বালানিচালিত যান্ত্রিক যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। কেননা, শহরে পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক গাড়ির ধোয়া সবচেয়ে বড়ো ভুমিকা পালন করে। যন্ত্রবিহীন যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

৬. সামাজিক আন্দোলন : পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এক দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসল কথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবাদী সংগঠন গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে।

পরিবেশ দূষণের কুফল : পরিবেশ দূষিত হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড় ঝঞা ইত্যাদি প্রাকৃতিক – বিপর্যয় দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে মাটিতে জলের স্বাভাবিক স্তর অনেক নিচে চলে যায় । ফলে ওপরের স্তরের মাটি রসহীন হয়ে পড়ে। মাটি রসহীন হয়ে পড়লে গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং ফসলাদি ঠিকমত হয় না। ফসলাদি ঠিকমত না হলে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। আবার গাছপালার অভাবে জীবজন্তুরও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে । সুতরাং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে মানুষ ও জীবজন্তু উভয়ের জীবন ধারণের পক্ষে ব্যাঘাত ঘটে ।

ইদানিং জানা যাচ্ছে, বায়ুমণ্ডলের ওপরের ওজোন স্তর বায়ু দূষণের ফলে ক্রমেই অধিক পুরু হয়ে যাচ্ছে । ফলস্বরূপ, সূর্যের তাপ ঠিকমত বিকিরিত হতে না পেরে পৃথিবীর স্থলভাগ আরো অধিক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় দুই মেরু প্রদেশের পুঞ্জীভূত বরফের স্তর গলে গিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবন ঘটবে।

উপসংহার : এই বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে বসবাসের উপযোগী করে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে পরিবেশ সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবী একটাই এবং এই ছোট্ট পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের দায়িত্ব। কবি সুকান্তের ভাষায়-

“এ বিশ্বকে সবার কাছে বাসযোগ্য করে যাব আমি-
এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

PDF DOWNLOAD ZONE
File Name : পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
Language : বাংলা
Size : 119 KB
Clik Here To Download

আরও দেখুন :

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

আমার প্রিয় ঋতু রচনা 

দুর্গাপূজা রচনা

বাংলার উৎসব রচনা 

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা

3 thoughts on “পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা PDF | পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment