সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ ব‍্যাখ‍্যা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সমাস শব্দের অর্থ

সমাস একটি সংস্কৃত শব্দ সমাস শব্দের অর্থ হলো ‘সংক্ষেপ’ বা ছোট আকারে প্রকাশ, আবার সমাসকে মিলন ও সম্মিলনও বলা যেতে পারে কারন সমাসের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক পদের মিলন সংঘটিত হয়।

সমাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ ব‍্যাখ‍্যা

সমাস কাকে বলে

সুত্র: weekipedia

পরস্পরের মধ্যে অর্থ সম্বন্ধযুক্ত দুই বা ততোধিক পদের মিলনের ফলে  একটি পদে পরিণত হলে তাকে সমাস বলে।

সমাস কয় প্রকার ও কি কি

বর্তমানে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে নয়টি  সমাসের কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলি হল
1. দ্বন্দ্ব সমাস
2. কর্মধারয় সমাস
3. তৎপুরুষ সমাস
4. বহুব্রীহি সমাস
5. দ্বিগু সমাস
6. নিত্য সমাস
7. বাক্যাশ্রয়ী সমাস
8. অলুক সমাস
9. অব্যয়ীভাব সমাস

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে পূর্বেরপদ ও উত্তরপদ, দুই পদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে হয়ে থাকে।
উদাহরণ :পিতামাতা = পিতা ও মাতা, পাহাড় পর্বত= পাহাড় ও পর্বত। বাবামা = বাবা ও মা, ভাইবোন = ভাই ও বোন।

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

বিশেষ্য পদের সাথে বিশেষণ বা বিশেষণ পদের সাথে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় এবং সমস্ত পদে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

কর্মধারয় সমাস পাঁচ প্রকার : (১) সাধারণ কর্মধারয়, (২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, (৩) উপমান কর্মধারয়, (৪) উপমিত কর্মধারয়, (৫) রূপক কর্মধারয়।

1.সাধারণ কর্মধারয় সমাস কাকে বলে : যে কর্মধারয় সমাসে পরপদ বিশেষ্য ও পূর্বপদ বিশেষণ অথবা পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ই বিশেষণ বা বিশেষ্য, তাকে সাধারণ কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – মহারাজা = মহান যে রাজা, সজ্জন = সংযে ইতি ।

2.মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:  যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদটি সমস্তপদে লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – সিংহাসন = সিংহ চিহ্নিত আসন, বরযাত্রী = বরের অনুগামী যাত্রী।

3. উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে: যে কর্মধারয় সমাসে উপমানের সঙ্গে সাধারণ বর্ণবাচক পদের সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – তুষারশুভ্র = তুষারের ন্যায় শুভ্র, ঘনশ্যাম = ঘনের ন্যায় শ্যাম ।

4. উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে: যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয়ের সঙ্গে উপমানের সমাস হয়, কিন্তু সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে না, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – পুরুষসিংহ = পুরুষ সিংহের ন্যায়,  ফুলবাবু = বাবু ফুলের মতো ।

5. রূপক কর্মধারয় সমাস: যে কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – সুখসাগর = সুখ রূপ সাগর,  জ্ঞানালোক = জ্ঞান রূপ আলোক ।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে পূর্বপদে কর্ম, করণ, নিমিত্ত প্রভৃতি কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোক পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণ- ধানের ক্ষেত = ধানক্ষেত, ভাতকে রাঁধা = ভাতরাঁধা।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ : তৎপুরুষ সমাসকে 11 ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 1. কর্ম তৎপুরুষ 2. ব্যাপ্তি তৎপুরুষ
3.করন তৎপুরুষ 4. নিমিত্ত তৎপুরুষ 5. অপাদান তৎপুরুষ
6. অধিকরণ তৎপুরুষ 7. সম্বন্ধ তৎপুরুষ 8. উপপদ তৎপুরুষ
9. না তৎপুরুষ 10. উপসর্গ তৎপুরুষ 11. অলোপ তৎপুরুষ ।

1.কর্ম তৎপুরুষ  : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে কর্মকারকের বিভক্তির চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায়, তাই হল কর্ম তৎপুরুষ। উদাহরণ- ঘরমোছা = ঘরকে মোছা, লোকহাসানো = লোককে হাসানো।

2. ব্যাপ্তি তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে স্থান বা কালের ব্যাপ্তি বোঝায়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ – চিরসুখী = চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী, আকন্ঠ = কন্ঠ পর্যন্ত।

3.করণ তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে করণকারকের বিভক্তি চিহ্ন থাকলেও সবপদে তা বিলোপ পায়, তা হল করণ তৎপুরুষ সমাস । উদাহরণ- মধুমাখা = মধু দ্বারা মাখা, শ্রমলব্ধ = শ্রম দ্বারা লব্ধ ।

4. নিমিত্ত তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে নিমিত্ত কারকের চিহ্ন সবপদে লোপ পায়, তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । উদাহরণ- শান্তিনিকেতন = শান্তির জন্য নিকেতন, রান্নাঘর = রান্নার নিমিত্ত ঘর।

5. অপাদান তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অপাদান কারকের চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায় তাকে বলা হয় অপাদান তৎপুরুষ সমাস। উদাহরণ- জলাতঙ্ক = জল হইতে আতঙ্ক, স্নাতকোত্তর = স্নাতক হইতে উত্তর।

6. অধিকরণ তৎপুরুষ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অধিকরণ কারকের বিভক্তি চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায় তাকে বলা হয় অধিকরণ তৎপুরুষ। উদাহরণ- গাছপাকা = গাছে পাকা, রাতকানা = রাতে কানা, সত্যা= সত্যে আগ্রহ।

7. সম্বন্ধ তৎপুরুষ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে সমৃদ্ধ পাদের চিহ্ন সর্বপদে লোপনীয় তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। উদাহরণ-  রাজমিস্ত্রি = মিস্ত্রিদের রাজা, দলপতি = দলের পতি।

 8.উপপদ তৎপুরুষ: উপপাদের সঙ্গে কুদস্তপদের মিলনে যে সমাস গঠিত হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। বৃদন্তপদের পূর্ববর্তী পদকে উপপদ বলে। উদাহরণ- জলদ = জল দেয় যে, দিশাহারা = দিশা হারিয়েছে যে।

9.না-তৎপুরুষ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে না-বাচক শব্দ থাকে এবং পরবর্তীপদে বিশেষ্য বা বিশেষণ হয়, তাকে না-তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। উদাহরণ- অমঙ্গল = অ (নয়) মঙ্গল,  অনামী = অ (নয়) নামী।

10. উপসর্গ তৎপুরুষ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে উপসর্গ সংযুক্ত থাকে এবং পরপদ বিশেষ্য হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ-  উপমুখ্যমন্ত্রী = মুখ্যমন্ত্রীর সদৃশ, প্রতিবাদ = বাদের বিপরীত।

11.অলোপ তৎপুরুষ : যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে বিভক্তির বিলোপ হয় না এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়, তাকে অলোপ তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ- খেলার মাঠ = খেলার মাঠ, ভোরের পাখি = ভোরের পাখি।

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান না হয়ে সর্বপদটির দ্বারা তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- নীলকণ্ঠ = নীলকণ্ঠ যাঁর, এখানে ‘নীলকণ্ঠ’ বলতে যার কণ্ঠ নীল রঙের তাকে না বুঝিয়ে পৃথিবীর হলাহল ধারণকারী মহাদেবকে বোঝায়।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ: বহুব্রীহি সমাসকে 6 ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 1. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি 2. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি 3. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি 4. ব্যতিহার বহুব্রীহি
5. সদার্থক বহুব্রীহি 6. নঞর্থক বহুব্রীহি ।

1. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় এবং এদের কোনো একটি পদ ‘এ’ বা ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়, তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- পদ্মনাভ = পদ্ম নাভিতে যাঁর, পাদপদ্ম = পদ্ম পড়ে যাঁর।

2.সমানাধিকরণ বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ-বিশালাক্ষী = বিশাল অভি যার, সুগন্ধি = সুগন্ধ যার।

3.মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের ব্যাখ্যামূলক মধ্যবর্তী পদটি লোপ হয়ে যায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ-  কপোতাক্ষ = কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার, মৃগনয়না = যুগের নয়নের মতো নয়ন যার।

4.ব্যতিহার বহুব্রীহি: যে বহুরীহি সমাসে একই শব্দের পুনরুক্তি দ্বারা পরস্পর কাজ করা বোঝায়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- মারামারি = পরস্পরকে মারা, কোলাকুলি = কোলে কোলে যে আলিঙ্গন।

5.সদার্থক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সমাসবদ্ধ পদের পূর্বে সহিত অর্থ বোঝানোর জন্য ‘স’ শব্দটি পূর্বে বসে তাকে সদার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- সবান্ধব = বান্ধবের সহিত বর্তমান, সার্থক = অর্থের সহিত বর্তমান।

6.নঞর্থক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ নঞর্থক অর্থাৎ না -বাচক হয়, তাকে নর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- অজ্ঞান= অ (নাই) জ্ঞান যার, নিরাশ = নি (নাই) আশ যার।

দ্বিগু সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস সংগঠিত হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। উদাহরণ- পঞ্চনদ = পঞ্চ নদের সমাহার, শতাব্দী = শত আব্দের সমাহার।

নিত্য সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসের ব্যাসবাক্য করতে হলে অন্য পদের প্রয়োজন পড়ে এবং যে সমাসের ব্যাসবাক্য প্রধানত হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। উদাহরণ- জন্মান্তর = অন‍্য জম্ন, নীলাভ = ঈষৎ নীল।

বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাস একটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা খন্ড বাক্যকে আশ্রয় করে যে সমাজ তৈরি হয় হয়, তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। উদাহরণ- রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী = রবীন্দ্রনাথের জন্ম উপলক্ষ্যে জয়ন্তী, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা = বসে আঁকার প্রতিযোগিতা।

অলুক সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসের সমস্তপদে পূর্বপদে বিভক্তির চিহ্ন লুপ্ত হয় না, তাকে অলুক সমাস বলে। ‘অ’ অর্থে নয় ‘লুক’ বা ‘লোপ’ অর্থে বিলুপ্ত হওয়া। তবে জেনে রাখতে হবে অলোপ সমাস আলাদা বা স্বতন্ত্র কোনো সমাস নয়। দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, সমাসে অলুক সমাস হয় ‌।

অলুক দ্বন্দ্ব :  ঘরে-বাইরে = ঘরে ও বাইরে, হাটে-বাজারে = হাটে ও বাজারে,  দিনেরাতে = দিনে ও রাতে, হাতে-কলমে = হাতে ও কলমে, দেশে-বিদেশে = দেশে ও বিদেশে।

অলুক তৎপুরুষ: গোরুর গাড়ি = গোরুর গাড়ি, পথে দেখা = পথে দেখা, মুড়ির চাল = মুড়ির জন্য চাল, অস্তেবাসী = অন্তে বাস করে যে,গানেভরা = গান দ্বারা ভরা, অরণ্যেরোদন = অরণ্যে রোদন, পড়ারঘর = পড়ার জন্য ঘর।

অলুক বহুব্রীহি: গায়ে হলুদ = গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে, মুখেভাত = মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে, গলায়মালা = গলায় মালা যার ।

অব‍্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসের ভিতরে অব্যয়ের ভাবটাই বা অর্থটাই হল প্রধান তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । উদাহরণ- হাঘর = ঘরের অভাব , নিরামিষ = আমিষের অভাব ।

আরও পড়ুন: 

বর্ণ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ? 

বিভক্তি কাকে বলে ? কত প্রকার কি কি উদাহরণ সহ ? 

 কারক কাকে বলে কয় প্রকার ও কি কি