খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা PDF | খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা PDF | খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা টি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। চলো দেখে নেওয়া যাক খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা-টি।

রচনা -১ 

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা :

ভূমিকা : মানুষের সহজাত আকাঙ্ক্ষা হলো এক সুন্দর ও সুস্থ জীবন। health is wealth’- স্বাস্থ্যই সম্পদ। ব্যাক্তিগত জীবনে পারিবারিক জীবনে, জাতীয় জীবনে শক্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় সুঠাম দেহ- ললাট দেশে এঁকে দেয় সাফল্যের জয় তিলক।

খেলাধূলার উদ্ভব ও প্রকারভেদ : ধারণা করা হয়, আজকে থেকে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে প্রথম কুস্তি খেলার উদ্ভব ঘটে প্রাচীন ইরাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে মিশরে শিকার খেলা এবং খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছর আগে প্রথম হকি খেলার প্রচলন ঘটে। তারও আগে প্রাচীন গ্রিসে সূচনা ঘটে অলিম্পিক খেলার।

খেলাধুলার প্রকৃতি : প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে খোলা আকাশের নীচে মুক্ত বাতাসে যে খেলা হয় তা-ই খেলাধুলা। যেমন- ফুটবল, ক্রিকেট, দৌঁড়, লাফ, টেনিস, প্রভৃতি।

খেলাধুলার উপযোগিতা : সুস্থ সবল দেহে সুস্থ সবল মন বিরাজ করে। অসুস্থ শরীরে পরিশ্রম ক্ষমতা কমার সাথে সাথে মন ও খিট খিটে হয়ে যায়। সুস্থ সবল দেহে বিরাজ করে কঠোর শক্তি, মনে থাকে দুর্জয় ক্ষমতা, অপরিমিত উৎসাহ ও উদ্দীপনা।

স্বাস্থ্যগঠনে খেলাধুলা : পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি খেলাধূলা করলে শরীরের পেশী শক্ত ও সুঠাম হয়। এতে শরীরের কোষগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পৌঁছে, হৃদপিন্ড সঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে ফলে শরীরে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন ঘটে, পরিপাক যন্ত্র আরো বেশি শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম হয়।

মানসিক স্বাস্থ্যে খেলাধুলার প্রভাব : শরীর সুস্থ্য থাকলে মানসিক সুস্থ্যতাও সহজে অর্জন হয়। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়। শিশুকাল থেকে খেলাধুলার অভ্যাস একজন মানুষকে সব সময় আনন্দমুখর থাকতে সহায়তা করে।

খেলাধুলো ও চরিত্র গঠন : যেকোনো খেলাতেই কৃতিত্ব অর্জন করতে হলে প্রয়োজন শৃঙ্খলাবোধ তাই খেলাধুলার মধ্য দিয়েই জন্ম হয় শৃঙ্খলাবোধ। খেলাধুলো শুধু শরীর গঠন করে না, গঠন করে স্বভাব চরিত্র। পুরুষ চৈতন্যের প্রাথমিক অভ্যুদয় ঘটে খেলার মাঠে – Sportsman like spirit নামে অভিহিত করা হয় তাকে।

স্কুল জীবনে খেলাধুলো : বাল্য কাল থেকে তরুণ বয়স শরীর গঠনের প্রধান সময় বলে শরীরচর্চা ও ব্যায়ামের পাঠক্রম গৃহীত হয়েছে সকল সভাদেশের স্কুল কলেজীয় শিক্ষা পর্যায়ে। ছাত্র ছাত্রীদের শরীরচর্চার জন্য খেলাধুলো ও ব্যায়াম বহুরকম – দৌড়ঝাপ, ক্রিকেট, ফুলবল, হাডুডু, সাঁতার, যোগাসন ইত্যাদি।

খেলাধূলা ও ভাতৃত্ববোধ : মানুষকে প্রীতির বন্ধনে বাঁধে খেলাধুলো। ভাতৃত্ববোধের সহৃদয় এক উষ্ণ আনন্দের বাতাবরণে হারিয়ে যায় জয় পরাজয়ের হিসেব। খেলোড়ার এর প্রতি থাকে সমর্থকদের ভালোবাসা। খেলার মাঠ ভিন্ন দেশের খেলোয়াড়ের সাথে খেলোয়াড়ের বন্ধুত্ব স্থাপনের জায়গা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি স্থাপনে খেলাধূলা : প্রাচীনকাল থেকেই খেলাধূলা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আন্তঃরাষ্ট্র বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বিভিন্ন জাতির মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। খেলাধুলা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মাধ্যম।

খেলাধুলার মান : দিনদিন বাড়ছে খেলা ধুলোর মান। প্রত্যেক খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত নিজেকে দক্ষ করতে ব্যাস্ত। প্রতিবছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙছে নতুন নতুন খেলোয়াড়। খেলাধূলা- কে আজ দেশ ও জাতির অগ্রগতির দর্পণ বলে মনে করা হয়।

খেলাধূলার নেতিবাচক দিক : নিয়মমাফিক খেলাধূলার কোনো অপকারিতা নেই। মাত্রাতিরিক্ত খেলাধূলায় অনেক সময় অনেকের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে পারে, পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে অতিরিক্ত খেলাধূলা শরীরকে আরো বেশি দুর্বল করে দেয়। ফুটবল, কাবাডি, কুম্ভি ইত্যাদি খেলায় কখনো কখনো মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। এধরণের খেলাধূলায় জীবননাশেরও রেকোর্ড আছে পৃথিবীতে।

উপসংহার : খেলাধূলা মানুষের মন ও শরীরকে অনেক দৃঢ় করে। সুন্দরভাবে বাঁচতে শরীর ও মনের সুস্থ্যতার বিকল্প কিছু নেই। খেলাধূলা আমাদের উভয় জিনিসেরই উন্নতি সাধন করে।

রচনা -২ 

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা :

ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ যে শক্তি কর্মের উদ্যোগে আপনাকে সর্বদা প্রবাহিত করিতেছে সেই শক্তিই খেলার চাঞ্চল্যে আপনাকে তরঙ্গায়িত করিতেছে। শক্তির এই প্রাচুর্য্যকে বিজ্ঞের মতো অবজ্ঞা করিতে পারি না । ইহাই মানুষের ঐশ্বর্যকে নব নব সৃষ্টির মধ্যে বিস্তার করিয়া চলিয়াছে, সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম দেহ, সুস্থ মানসিকতার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা। সত্যিই তো, খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু শরীরচর্চা নয়, নেতৃত্বশক্তি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব প্রভৃতি চারিত্রিক গুণের প্রকাশ ঘটে।

খেলাধুলার গুরুত্ব : সুস্থ জীবনলাভের জন্য চাই খেলাধুলা। শরীর ঠিক রাখার জন্য চাই শরীরচর্চা। উন্নত দেশে ( জাপানে ) কলকারখানায় কাজ শুরুর আগে এই ব্যায়ামচর্চা করা হয়ে থাকে। এর দ্বারা কর্মশক্তির বিকাশ হয়, কাজে মন আসে। সেজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিফিনের সময় বা অন্য সময়ে খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই জানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যবান দেহ সুখ সম্পদের অধিকারী। যারা অসুস্থ, দুর্বল, রুগ্ন তারা জীবনযুদ্ধে পদে পদে পরাভূত হয়।

পাশ্চাত্য দেশে খেলাধূলা : পাশ্চাত্য দেশে খেলাধুলা জাতীয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গীভূত। কেননা তারা মনে করে খেলাধুলা লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্লান্তিনাশ, আমোদ উপভোগ ও মানসিক পরিতৃপ্তির উৎস। জার্মানি খেলাধুলাকে জাতির চরিত্র গঠনের অন্যতম প্রধান উপায় হিসাবে গুরুত্ব দিয়েছে। জার্মানিতে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং এদের উৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রপতি স্বয়ং পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের।

কিশোর বয়সে খেলাধূলা : কিশোর বয়সে শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট। তাই সবদেশের বিদ্যালয় শিক্ষায় খেলাকে পাঠ্যক্রমে রাখা হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ছাত্র- ছাত্রীদের খেলাধুলার বিষয়টিকে বিদ্যালয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দৌড়ঝাঁপ, ড্রিল, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, হা-ডু-ডু, সাঁতার, যোগব্যায়াম, খো খো প্রভৃতি খেলাধুলা ভারতবর্ষের স্কুলগুলিতে অবশ্য করণীয়। এইসব খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু শরীর গঠনই হয় না, চারিত্রিক গঠনও হয়। খেলার মাঠে খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব সৃষ্টি হয়।

ছাত্রদের চরিত্র গঠনে খেলাধূলা : খেলাধুলা ছাত্রদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। খেলার মাঠে পারস্পরিক সহযোগিতা, উদার মনোভাব নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণগুলি জাগ্রত হবার অবকাশ পায়। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়াশোনার একঘেয়েমি দূরীভূত হয় খেলাধুলার মাধ্যমে। তাছাড়া জীবন যেখানে একটা খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, সেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে একটা উদার মনোভাব বা ‘ স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ গড়ে ওঠে যার – দ্বারা তাদের জীবন হয় সুন্দর।

জাতিগঠনে খেলাধুলা : সুস্থ সবল জাতিগঠনে খেলাধুলা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই জীবনের ঊষাকাল থেকে প্রতিটি মানুষের শরীরচর্চার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলাধুলা মানে সমবেত ব্যায়াম। শরীরচর্চা ও শরীর গঠন যেমন তাতে হয়, তেমনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতায়ও শিক্ষা লাভ করা যায়। একের সংকল্প তখন মিশে যায় দলগত সংকল্পে। খেলাধুলা আমাদের জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করে। খেলাধুলায় দেশের সাফল্যে দেশবাসী জাতীয়তাবোধে গর্বিত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অভিনব বিন্দ্রার স্বর্ণপদক লাভ কিংবা ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়লাভ দেশবাসীর জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপ্ত করেছে। সুতরাং খেলায় যারা অংশগ্রহণ করে অথবা দর্শক হিসাবে যারা খেলা দেখে খেলার প্রভাব কেবল তাদের মধ্যেই সীমিত নয়, বিস্তৃত হয় বর্ণসম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসীর উপর।

জাতীয় জীবনে খেলাধূলা : জাতীয় জীবনে খেলাধুলার বিশিষ্ট প্রভাব আছে ঠিকই কিন্তু সে প্রভাব যদি উপকারের পথে চালিত না হয়ে ভিন্ন পথে চালিত হয় তখন তার ক্ষতির পরিমাণও হয় ভয়াবহ। যেমন, খেলাধুলায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন খেলাধুলাকেও করেছে কলঙ্কিত। ক্রিকেটে কোন খেলোয়াড় প্রথম একাদশে খেলবে সেখানেও রাজনীতি প্রবেশ করেছে। দল গঠনে গোষ্ঠীবাজীও চোখে পড়ছে – যা মোটেই কাম্য নয়।

আধুনিক জীবনে খেলাধুলা : আধুনিক যুগ যান্ত্রিকতার যুগ, কৃত্রিমতার যুগ। প্রাচীনকালে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। কিন্তু এখন জীবনের সর্বক্ষেত্রে যন্ত্রের আধিপত্য। যন্ত্রই কাজ করে, মানুষ দাঁড়িয়ে বা বসে তা চালনা করে। ফলে কায়িক পরিশ্রম হয় নিতান্ত অল্প। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি হয়। মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে সমতা রেখে শরীর চালনা না হলে বিভিন্ন ধরনের অসুখের কবলে পড়তে হয়। অনিদ্রা, ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতি লক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাবজনিত। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত হতে গেলে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা একান্ত জরুরি।

উপসংহার : খেলাধুলা মানুষকে শক্ত সমর্থ করে তোলে, মানুষকে জীবন সংগ্রামে জয়ী করে, তার চরিত্র গঠন করে খেলাধুলা মানুষকে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত করে। সুতরাং নিয়মিত ও পরিমিত শরীরচর্চা সুস্থ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই জাতীয় জীবনে খেলাধুলার চর্চা হওয়া অবশ্য প্রয়োজন। খেলাধুলায় জাতি শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে বাধা বিপত্তিকে সরিয়ে জীবনকে উপভোগ করার মানসিকতা।

PDF DOWNLOAD ZONE 
File Name : খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
Language : বাংলা 
Size : 61 KB
Clik Here To Download

আরও পড়ুন :

আমাদের বিদ‍্যালয় রচনা 

বনমহোৎসব রচনা 

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

চন্দ্রযান ৩ রচনা 

2 thoughts on “খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা PDF | খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment