চন্দ্রযান ৩ রচনা PDF |Chandrayaan 3 Rachana in Bengali

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

চন্দ্রযান ৩ রচনা PDF | চন্দ্রযান ৩ প্রতিবেদন রচনা | Chandrayaan 3 Rachana in Bengali

 সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আমাদের এই নতুন পর্বটিতে স্বাগতম, এই পর্বটিতে চন্দ্রযান ৩ রচনা টি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। নীচে চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে তিনটি রচনা প্রদান করা হয়েছে তোমাদের পছন্দমতো যেকোনো একটি পড়লেই হবে। চলো দেখে নেওয়া যাক চন্দ্রযান ৩ রচনা টি। 

রচনা -১ 

চন্দ্রযান ৩ রচনা :

ভূমিকা: আয় আয় চাঁদ মামা টি দিয়ে যা’—ছেলে ভুলানো ছড়া- র চাঁদমামা আজ বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে নতুন দিগন্তের সূচক হতে চলেছে। কেননা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় অতি সম্প্রতি এক অভিনব মাইলফলক হল চন্দ্রযান-৩।

উৎক্ষেপণ : ১৪ জুলাই শুক্রবার নির্ধারিত সময় দুপুর ২:৩৫ মিনিটে এলভিএম থ্রি রকেট কমলা-সাদা ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে চাঁদের মাটির স্পর্শের লক্ষ্যে রওনা দিল। এই চন্দ্রযান ৩ এর সফল উৎক্ষেপণে সারা ভারত বর্ষ এক ইতিহাস রচনা করলো। মাত্র ১৬ মিনিট সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে মহাকাশযানটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে যায়। ২৩শে আগস্ট ঠিক সন্ধে ৬ টা বেজে ৪ মিনিটে বিক্রম সফট ল্যান্ডিং করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা : ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে নামার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যান্ত্রিক গোলযোগে ল্যান্ডার থেকে বিক্রম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতা থেকে ইসরোর বিজ্ঞানীগণ নিজেদের ভুলগুলি বুঝতে পারেন এবং তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে তাঁরা চন্দ্রযান-৩ জন্য কাজ শুরু করে দেন। তবে চন্দ্রযান-২-এর আংশিক সাফল্য যে গর্বিত করবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কারণ চন্দ্রযান-২ এর অরবিটর এখনও সক্রিয় রয়েছে বলেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

উদ্দেশ্য : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ইসরোর ল‍্যান্ডিং এর মূল কারণ ছিল- ১. চাঁদের দক্ষিণ মেরুর গর্তগুলিতে কয়েকশো কোটি বছর ধরে সূর্যের আলো পড়েনি, তাই সৌরজগতের সৃষ্টির নানা তথ্য পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ২. গর্তগুলি সবসময় ছায়ায় আচ্ছন্ন থাকায় সেখানে ১০০ মিলিয়ন টন জল থাকার সম্ভাবনা। ৩. থাকতে পারে হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, মিথেন, সোডিয়াম, মার্কারি, সিলভারের মতো বিশাল ভাণ্ডার। ৪. চাঁদের মাটিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মহাকাশ অভিযানের ঘাঁটি করা।

সাফল্য : উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় স্পেস রিসার্চ প্রোগ্রাম কয়েক কদম এগিয়ে গেল, ঠিক তেমনই ভারত বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে দিল স্পেস রিসার্চের ক্ষেত্রে। চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে আমেরিকা, রাশিয়া, চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত সাফল্য পেল । চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এই প্রথম কোন দেশ নিজেদের চন্দ্রযান পাঠাতে পেরেছে আর এইখানেই ভারতের চূড়ান্ত সাফল্য।

প্রযুক্তিগত দিক : সোনায় মুড়ে প্রায় চার লক্ষ কিমি. দূরে গেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। এই সোনা আসলে পলিমাইড ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি মিশ্র ধাতু যার সামনের দিকটায় রয়েছে পলিমাইড পদার্থ ও পেছনের দিকে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম। বিক্রম’ ও ‘প্রজ্ঞানকে সচল রাখতে সূর্যের বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা। না হলে মহাজাগতিক রশ্মির ঝড়- ঝাপটায় গরম হয়ে যন্ত্রগুলি বিকল হয়ে পড়বে।

সম্ভাবনা : বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা মেটাবে চাঁদ, শক্তির প্রয়োজন মেটাতে কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাস লাগবে না। পৃথিবীর উষ্ণায়নের বিপদ থেকে রক্ষা করবে চাঁদের শক্তি। আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই চাঁদ পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির চাহিদা মেটাতে পারবে। কেননা পৃথিবীতে ৫ হাজার কিগ্রা. ওজনের কয়লা পোড়ালে যতটা শক্তি উৎপাদন হয়, চাদের মাত্র ৪০ গ্রাম হিলিয়াম মৌল থেকে তৈরি হবে ততটা শক্তি। পৃথিবীর পুরু বায়ুমণ্ডলে বাধা পেয়ে সূর্যের হিলিয়াম-৩ মৌলটি আর পাওয়া যায় না। চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় সূর্য থেকে আসা হিলিয়াম-৩ মৌল অবিকৃতই থেকে যায়। চাঁদে আমেরিকা যতগুলি ‘অ্যাপোলো’ মিশন পাঠিয়েছে, তাদের সকলেরই লক্ষ্য ছিল, আমাদের উপগ্রহে ওই তেজস্ক্রিয় মৌলগুলির সন্ধান ও সেগুলি কী পরিমাণে রয়েছে তার খোঁজখবর করা।

উপসংহার : কল্পবিজ্ঞানের গল্পে চাঁদের বাসিন্দাদের খুব একটা উল্লেখ নেই। চাঁদ-যাকে খালি চোখে দেখা যায় ছাদ থেকে, ওটা যে প্রাণহীন, তা প্রমাণিত হবে মিথ্যা বলে। চাঁদ সদাগর বাণিজ্যে গিয়েছিলেন অর্থের সন্ধানে আর চন্দ্রযান-৩ যন্ত্ৰ হলেও নতুন জগতের শক্তিসন্ধানী নাবিক একালের চাঁদ সদাগর।

রচনা-২ 

চন্দ্রযান ৩ রচনা :

ভূমিকা : চন্দ্রযান-৩ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ভারতের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচীর অন্তর্গত তৃতীয় চন্দ্র অন্বেষণ অভিযান। এই অভিযানের লক্ষ‍্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ ও সুরক্ষিত অবতরণ, রোভারের নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণস্থল হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে চিহ্নিত করা হয়।

অভিযানের প্রধান লক্ষ্য : ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩ প্রধান তিনটি লক্ষ্য, নির্ধারণ করেছেন যথা- ১. চাঁদের পৃষ্ঠে ল্যান্ডারটিকে নিরাপদ এবং নমনীয়ভাবে অবতরণ করা। ২. চাঁদে রোভারের লোটারিং ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ এবং প্রদর্শন করা। ৩. চাঁদের গঠন আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে উপলব্ধ উপকরণগুলির উপর ইন-সাইট পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা চালানো।

অভিযানের রূপরেখা : অভিযানে প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার ও রোভার ব্যবহৃত হয়েছে, তবে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরিত হয়নি। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণাগার থেকে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপন করা হয়েছিল ১৪ই জুলাই ২০২৩। চন্দ্রযান-৩ ২০২৩ সালের ২৩শে আগস্ট ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬:০৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে। অভিযানের মাধ্যমে পূর্বসূরী ইউ.এস.এস.আর, নাসা ও সি. এন. এস.এ – এর পরে ইসরো চাঁদে সুরক্ষিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ মহাকাশ সংস্থায় পরিণত হয়।

অবতরণ স্থল নির্বাচন : চন্দ্রযান-৩ এর সম্ভাব‍্য অবতরণ স্থানগুলির জন্য কঠোর পরিস্থিতি ছিল, যেখানে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ একটি কারণ ছিল, স্থানগুলিকে চাঁদের মেরু অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত হতে হয়েছিল, পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চন্দ্রপৃষ্ঠের অংশের পরিধিগুলিতে নয়, এগুলি তুলনামূলকভাবে সমান ছিল। এবং ল্যান্ডার অবতরণ স্থলের কাছে পৌঁছানোর পর যাতে আশেপাশের স্থানগুলি থেকে উড়ে আসতে না পারে এমন কোনো প্রকার বস্তুর অনুপস্থিতি ল্যাংমুয়ার প্রোব দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল।

উৎক্ষেপন যান ও মহাকাশ যান : চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণকারী এল.ভি. এম-৩ রকেটকে এম-৪ হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছিল। এই মহাকাশযানটি প্রপালশন মডিউল, ল্যান্ডার ও রোভার নিয়ে গঠিত ছিল।

উৎক্ষেপণ : চন্দ্রযান- ৩ ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটা  ভারতীয় সময় ২ টো বেজে ৩৫ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। চাঁদে পৌঁছাতে যে ট্র্যাজেক্টোরির প্রয়োজন সেই পথেই মহাকাশযানটিকে কার্যকরভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

বহির্মুখী যাত্রা ও চাঁদে অবতরণ : প্রপালশন মডিউল দ্বারা ট্রান্স লুনার ইনজেকশন বানটি ৩১শে জুলাই ২০২৩ আরাম্ভ হয়েছিল, যা মহাকাশযানটিকে চাঁদের দিকে নিয়ে যায়। মহাকাশযানটি ২০২৩ সালের ৫ই আগস্ট ১৮৩৫ সেকেন্ডের প্রচেষ্টায় চাঁদের ১৬৪ কিমি x ১৮০৭৪ কিমি কক্ষপথে দ্রুততার সাথে প্রবেশ করে।

অর্থায়ন : ইসরো প্রকল্পটির প্রাথমিক অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করেছিল ৭৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬০ কোটি টাকা যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদ্রি ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য এবং বাকি ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব ব্যয়ের জন্য। প্রকল্পের অস্তিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরো সভাপতি কে. সিভান জানান অভিযানে ব্যয় হবে প্রায় ৬১৫ টাকা।

উপসংহার : ২৩শে আগস্ট ২০২৩ দিনটি ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, চদ্ৰযান-৩ এর সাফল্যের পর উজ্জীবিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংখ্যা ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এই সাফল্যের নেপথ্যে যে সমস্ত বিজ্ঞানীগণ অগ্রগণ্য তাঁরা হলেন শ্রীধর পানিকর সোমনাথ (ইসরোর চেয়ারম্যান) মুথাইয়া বনিতা (প্রজেক্ট ডিরেক্টর), ভি নারায়নন, ভি ভিরামুথুভেল প্রমুখ।

রচনা -৩

চন্দ্রযান ৩ রচনা :

ইতিহাস গড়ে চাঁদের মাটি ছুঁল চন্দ্রযান

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৩ আগষ্ট : বিশ্ব ছাড়িয়ে একদিকে এবার ব্রহ্মাণ্ডে ইতিহাস গড়ল ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল চন্দ্রযান-৩। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন ছুঁল চাঁদের মাটি। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে তার কপালে নিজের জয়টিকা এঁকে দিল ভারত।

বুধবার সকাল থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। গত বছর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল চন্দ্রযান ২। এবার তাই … আগে থেকেই সতর্কতা নিয়েছিল ইসরো। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান ৩-কে সফলভাবে অবতরণ করিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে ইসরো।

চন্দ্রযানটির ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করে। ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দুয়ারে পৌঁছন মাত্রই উচ্ছ্বাসে ভাসল গোটা দেশ। চল্লিশ দিনের উৎকণ্ঠার শেষ হল। শঙ্খধ্বনি, করতালি, জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল ভারত। আতশবাজির আলোয় ভারতেও চাঁদের হাসি বাঁধ ভাঙল। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ঘোষণা করলেন ‘ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। সফট ল্যান্ডিং করতে পেরেছে চন্দ্রযান-৩। এখনও পর্যন্ত পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে তাদের মহাকাশযান নামাতে পেরেছিল। চন্দ্রযান-৩ সফল হওয়ার ভারত এই তালিকায় চতুর্থ দেশ হল।

PDF DOWNLOAD ZONE 
File Name : চন্দ্রযান ৩ রচনা
Language : বাংলা 
Size : 93 KB 
Clik Here To Download

আরও পড়ুন :

চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর 

চন্দ্রযান ১ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর 

1 thought on “চন্দ্রযান ৩ রচনা PDF |Chandrayaan 3 Rachana in Bengali”

Leave a Comment