রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে ? রাশিবিজ্ঞানের কাজ, কারণ এবং উপযোগীতা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে ? রাশিবিজ্ঞানের কাজ, কারণ এবং উপযোগীতা

রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে : আজকের এই পর্বটির মাধ‍্যমে আমরা শেয়ার করলাম রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে ? রাশিবিজ্ঞানের কাজ, কারণ ও উপাদান সম্পর্কে।

রাশিবিজ্ঞান :

ল‍্যাটিন শব্দ ‘Status‘ থেকে ইংরেজি ‘Statistics‘ শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। Statistics শব্দটির সর্বপ্রথম ব‍্যবহার করেন ব‍্যারান .জে. এফ. ভন বাইলফেল্ড নামক নামক একজন ব‍্যক্তি Elements Of Universal Erudition নামক গ্ৰন্থে। রাশিবিজ্ঞান হল এমন এক বিজ্ঞান যার সাহায্যে তথ্যগুলিকে সংগ্রহ করা যায়, সারণিপত্র তৈরি করা যায়, সেগুলিকে সুবিন্যস্ত করা যায় ও সেগুলির তাৎপর্যও নির্ণয় করা যায়।

রাশি বিজ্ঞানের অর্থ :

রাশি বিজ্ঞানের অর্থ হল যে কোনো বিষয়ের উপর সংগৃহিত রাশিতথ‍্য এবং সেই রাশি তথ্যের বিশ্লেষণের পদ্ধতিকে।

রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে :

যে কোনো ব‍্যক্তি, বস্তু বা পদ এর উপর রাশিতথ‍্য সংগ্ৰহ এবং বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সংখ্যাগত মান নির্ণয় করে এর উপর উপস্থাপনা, তুলনা, বিশ্লেষণ ও ব‍্যবস্থা যে বিজ্ঞানো আলোচনা করা হয় তাকে রাশিবিজ্ঞান বলে।

শিক্ষাগত রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে :

যে রাশিবিজ্ঞান শিক্ষার বিভিন্ন দিকে ব্যবহৃত হয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে কার্যকরী এবং উন্নত করে তাকে শিক্ষাগত রাশিবিজ্ঞান বলে।

পড়ুন : মিডিয়ান কি ? 

রাশিবিজ্ঞানের কাজ :

অধ্যাপক বডিংটন রাশিবিজ্ঞানের যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলি হল-

1. তথ্যের উপস্থাপন : বিভিন্ন তথ্যকে তুলনামূলকভাবে উপস্থাপনা করা রাশিবিজ্ঞানের অন‍্যতম কাজ।

2. ফলাফল আলোকপাত : ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের ফলাফল সম্পর্কে আলোকপাত করা যার রাশিবিজ্ঞানের সাহায‍্যে।

3. পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান : অতীত ও বর্তমান ফলাফলের মধ্যে তুলনা করে এর পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধানে সাহায‍্য করে।

পড়ুন : শিখন কাকে বলে ? শিখনের উপাদান, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য এবং স্তর

রাশিবিজ্ঞানের কারণ :

গিলফোর্ডের মতে রাশিবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কারণ গুলি হল-

1. নির্ভুল পথের দিশা : রাশিবিজ্ঞান আমাদের চিন্তাভাবনা এবং পদ্ধতি  সম্পর্কে সঠিক পথের দিশা দেখায়।

2. সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য উপস্থাপন : বিভিন্ন ফলাফল সংক্ষেপে যুক্তিগ্রাহ্য উপায়ে উপস্থাপিত করতে রাশিবিজ্ঞান আমাদের উৎসাহিত করে।

3. ফলাফল অনুমান : কোন বিষয়ের সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে রাশিবিজ্ঞান সে বিষয়ে যথাযথ অনুমান করাতে সাহায্য করে।

4. উপাদান ও কারণ সম্পর্কে অভিমত :কোনো জটিল বিষয় বা ঘটনার কতকগুলি উপাদান বা কারণ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশে সহায়তা করে রাশিবিজ্ঞান।

রাশিবিজ্ঞানের উপযোগিতা :

শিক্ষাক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা রাশিবিজ্ঞানের উপযোগীতা গুলি হল-

1. শিক্ষামূলক অভীক্ষা প্রস্তুত : শিক্ষা – রাশিবিজ্ঞানের কৌশল প্রয়োগের মাধ‍্যমে আমরা শিক্ষামূলক অভীক্ষাগুলিকে অপেক্ষাকৃত নির্ভুলভাবে তৈরি করতে পারি। যার ফলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষামূলক মূল্যায়নের উন্নতি করা সম্ভব হয়।

2. শিক্ষামূলক তথ্যের তুলনা : শিক্ষা – রাণিবিজ্ঞানের কৌশল প্রয়োগের মাধ‍্যমে শিক্ষামূলক তথ্যগুলির মধ্যে তুলনা করা সম্ভব, যেমন দু – দল ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত স্কোরের পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ কি না তা রাশিবিজ্ঞানের কৌশলের সাহায্যে সঠিকভাবে বিচার করা সম্ভব। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিমাপগুলিকে সমান এককে পরিবর্তন করা যায় রাশিবিজ্ঞানের কৌশল প্রয়োগ করে।

3. শিক্ষামূলক তথ্যের ভিত্তি : রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে প্রাপ্ত শিক্ষামূলক তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর প্রকৃত গুণ সহজভাবে প্রকাশ করা যায়। তথ্যের সংক্ষিপ্তকরণ, সুবিন্যাস ও অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্ত গঠনের জন্য রাশিবিজ্ঞান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

4. শিক্ষা পরিকল্পনা : শিক্ষা পরিকল্পনা করার জন‍্য নানান তথ্যের প্রয়োজন হয়।  যেমন আগামী দিনে প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী হতে পারে তাদের সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পনার জন্য কত অর্থ ব্যয় হতে পারে প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে শিক্ষা রাশিবিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হয়।

5. শিক্ষামূলক তথ্যের বিশ্লেষণ : রাশিবিজ্ঞানের জ্ঞান শিক্ষামূলক তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে সিদ্ধান্ত একটি নির্দিষ্ট স্থায়িত্ব সংগঠিত হয় এবং সিদ্ধান্ত অপেক্ষাকৃত নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হয়।

পড়ুন : প্রেষণা কাকে বলে ? প্রেষণার শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য 

6. শিক্ষার্থীর অগ্রগতি নির্ধারণ : শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি বা তাদের ব্যর্থতার কারণ নির্ধারণ করা। এই দুটি কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা এবং তাদের প্রয়োজনমতো উৎসাহ দান ও সংশোধনমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ অসম্ভব হয়ে যায়।

7. শিক্ষামূলক তথ্যের গুরুত্ব নির্ধারণ : শিক্ষামূলক তথ্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য আমরা সাধারণত দুটি মান ব্যবহার করি যথা- কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ এবং বিষমতার পরিমাপ। এরকম দুটি মান দ্বারা আমরা শিক্ষামূলক প্রাপ্ত তথ্যের তাৎপর্য নির্ণয় করতে পারি।

8. শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রেখা নির্ধারণ : আধুনিক শিক্ষা – রাশিবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড়ো অবদান হল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করা। যেমন – উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল দেখে কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কেমন সাফল্য অর্জন করতে পারবে কিংবা তার বুদ্ধির পরিমাপ থেকে শিক্ষা বা বৃত্তিতে সে কত পরিমাণ কৃতকার্য হবে প্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, রাশিবিজ্ঞানের কৌশল শিক্ষামূলক তথ্যগুলিকে অপেক্ষাকৃত সহজসরলভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রাপ্ত তথ্যগুলিকে অনেক বেশি অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা সম্ভব হয় যা দেশের সার্বিক শিক্ষা পরিকল্পনায় বিশেষভাবে প্রয়োজন।

আরও পড়ুন :

আগ্ৰহ কাকে বলে ? আগ্ৰহের শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

বুদ্ধি কাকে বলে ? বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ, কাজ ও বৈশিষ্ট্য 

2 thoughts on “রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে ? রাশিবিজ্ঞানের কাজ, কারণ এবং উপযোগীতা”

Leave a Comment