শিখন কাকে বলে ? শিখনের উপাদান, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, পর্যায় বা স্তর

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

শিখন কাকে বলে ? শিখনের উপাদান, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, পর্যায় বা স্তর

শিখন কাকে বলে

সাধারণভাবে শিখন এর অর্থ হলো চেষ্টা বা অনুশীলনের দ্বারা নতুন আচরণ অর্জন করা বা অর্জিত আচরণের পরিবর্তন সাধন। কিন্তু জন্মসূত্রে প্রাপ্ত আচরণ শিখন নয়। শিখন হলো অভিজ্ঞতার দ্বারা আচরণের পরিবর্তন।

শিখনের সংজ্ঞা :

শিখনের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে মনোবিদ Smith বলেছেন – “Learning is the acquisition of new Behaviour for the strengthening of weakening of old behaviour as the result of experience.” অর্থাৎ “অভিজ্ঞতার দ্বারা নতুন আচরণ অর্জন বা পুরানো আচরণকে শক্তিশালী বা দুর্বল করাকে বলে শিখন ।”

শিখনের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে মনোবিদ Hilgard বলেন “Learning is the process by which an activity organates or is changed through reacting to an encountered situation.” অর্থাৎ শিখন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোন নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে আচরণের সৃষ্টি হয় বা আচরণের পরিবর্তন হয়।’

শিখনের উপাদান গুলি কি কি :

শিখনের প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম হল- পরিনমন, প্রেষনা, মনোযোগ, আগ্ৰহ ও মানসিক ক্ষমতা।

1.পরিনমণ কাকে বলে :

পরিণমন হল সেই বিশেষ প্রক্রিয়া যার দ্বারা জন্মগত সকল সম্ভাবনার স্বতঃস্ফুর্ত বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচরনের পরিবর্তন হয়। মনোবিদ স্পিনারের মতে, পরি বেশগত অবস্থার ব্যাপক তারতম্য থাকলেও মোটামুটিভাবে একইভাবে সংঘটিত হয়। গের্সেলের মতে, স্বকীয় ও আন্তর্জাত বৃদ্ধিই হল পরিনমণ।

2. প্রেষনা কাকে বলে :

প্রেষনা কথার অর্থ এক বিশেষ তাগিদ বা তাড়না। কোনো শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে শিশলাভের সময় তা সম্পন্ন করার যে বিশেষ তাড়না অনুভব করে তাই প্রেষনা। কেউ কেউ একে আশঙ্খা বা আপোনাত বলেন। প্রেষণার মধ্যে চারটি স্তর বর্তমান। যথা – চাহিদা, লক্ষ্যপূরণ, তারনা ও সহায়ক আচরণ।

3.আগ্রহ কাকে বলে :

কোন কাজে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আগ্রহ বা অনুরাগ। আগ্রহ ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ মানসিক অবস্থা যা কোনো বস্তু, বিষয় বা কাজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে।

4. মনোযোগ কাকে বলে :

শিখনে মনোযোগ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বললে ভুল হবে না। মনোযোগ করার অর্থ কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে নিজের চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা। শিক্ষার্থীর মনোযোগ ভীষনভাবে আয়োজন।

5.মানসিক ক্ষমতা :

প্রতিটি জীব যে বিশেষ উপাদানের সাহায্যে সকল কার্য সম্পাদন করে থাকে তা হলে দৈহিক বা মানসিক ক্ষমতা বা সামর্থ্য। কোনো শিক্ষার্থী শোনা বিষয়ে প্রবল ইচ্ছাশক্তি বা কায়িকভাবে পরিশ্রমের দ্বারা শিক্ষন সম্পন্ন করে থাকে।

শিখনের কয়টি স্তর বা পর্যায় :

শিখন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে শিখনের তিনটি স্তর বা পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল শিখনের প্রথম স্তর সংরক্ষণ, শিখনের দ্বিতীয় স্তর পুনরুদ্রেক, এবং শিখনের তৃতীয় স্তর বা শেষ স্তর প্রত্যাভিজ্ঞা

1. সংরক্ষণ :

যে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা বস্তুসম্পর্কিত অভিজ্ঞতাকে আমরা আমাদের মনে স্থায়িভাবে রাখছি তাকে বলা হয় সংরক্ষণ বা ধারণ। শিখনের প্রথম স্তর সংরক্ষণ। যখন আমরা মনোযোগ সহকারে কোন বিষয় শিখি, তখন বিষয়টি আমাদের মনে সংরক্ষিত হয়। উদ্দীপকের তীব্রতা, সুস্পষ্টতা,স্থায়িত্ব, সাম্প্রতিকতা, বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ, অনুরাগ ইত্যাদির উপর সংরক্ষণ বা ধারণ নির্ভর করে।

2. পুনরুদ্রেক :

শিখনলব্ধ অভিজ্ঞতাকে পুনরায় চেতন মনে আনাই হল পুনরুদ্রেক। শিখনের দ্বিতীয় স্তর এটি। এটি শিখন ও সংরক্ষণের একটি বিশিষ্ট প্রমান। এই প্রক্রিয়া নির্ভর করে সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর। সংরক্ষণ যত ভালো হবে পুনরুদ্রেকও তত ভালো হবে।

3.প্রত‍্যাভিজ্ঞা :

প্রত্যভিজ্ঞা কথার অর্থ হল পুনরায় চিনতে পারা। কেবল মাত্র অতীত অভিজ্ঞতার পুনরুদ্রেক হলেই শিখন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা, যেটির পুনরুদ্রেক হল সেটিকে সঠিকভাবে চেনা দরকার। প্রত্যভিজ্ঞা অতীত অভিজ্ঞতাটিকে চিনতে সাহায্য করে। যেমন- পথের মাঝে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা হল। পরে মনে হল ছেলেটি আমার কলেজের সহপাঠী এবং তার নাম সুকান্ত। এই যে ছেলেটিকে চিনতে পারলাম আমার সহপাঠী বলে, একেই বলে প্রত্যভিজ্ঞা। প্রত্যভিজ্ঞার ফলে আমাদের মনে একটা তৃপ্তিবোধ জাগে।

সুতরাং শিখনের স্তর বা পর্যায় বলতে মনোবিদরা ইতি পূর্বে উল্লেখিত শিখনের  তিনটি স্তর বা পর্যায় যথা- সংরক্ষণ, পুনরুদ্রেক এবং প্রত্যভিজ্ঞার কথা বলে থাকেন। এই স্তর বা পর্যায় গুলি ক্রমান্বয়ে সংগঠিত হয়ে শিখনকে সম্পূর্ণ করে তোলে।

শিখনের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করোশোনা

1.শিখন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া : শিখন সকল প্রাণীর ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে জ্ঞান অর্জন করে। এবং তাদের শিখন হয়।

2. বিকাশমান: শিখনলব্ধ জ্ঞান ক্রমশ ও ব্যক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। যা পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন ও আর উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই শিখনকে ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া বলা যায়

3. শিখন একটি সচেতন প্রক্রিয়া: শিখন হলো একটি সচেতন প্রক্রিয়া। মানুষ বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তার আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। যেকোনো ধরনের শিখন এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে।

4. সমস্যা সমাধানমূলক প্রক্রিয়া : শিখনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সমস্যা সমাধানের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। কোন ব্যক্তি বা প্রাণী শিক্ষামূলক পরিস্থিতিতে পরলে আর  পুর্নঃআচরণ ধারার বদলে নতুন আচরণ ধারা আয়ত্ত করে।

5. শিখন হলো অভিযোজনমূলক প্রক্রিয়া: শিখন হলো এক ধরনের উন্নত অভিযোজন প্রক্রিয়া শিখনমূলত্মক অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজনের সহায়তা করে। এবং পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।

6. পূর্ব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক : যে কোন শিখনে আচরণের যে পরিবর্তন হয় তা পূর্ব ফলশ্রুতি। শিখন হলো অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করতে সাহায্য করে।

7. চাহিদা নির্ভর : শিখন চাহিদার উপর নির্ভরশীল। যখন কোন ব্যক্তি কোন কিছুর চাহিদা অনুভব করে তখন তার চাহিদা মেটানোর জন্য নানারকম উদ্দেশ্য মূলক আচরণ করে। যা ব্যক্তিকে চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।

8. অনুশীলন সাপেক্ষ : শিখনের জন্য অনুশীলন প্রয়োজন  পুরানো আচরণকে বাদ দিয়ে সব সময় নতুন আচরণের অনুশীলন করতে হবে। যেমন একটি শিশু যখন নতুন কিছু শেখে তখন তাকে পাঠ্যপুস্তকের এই অংশটি বার বার অনুশীলন করাতে হবে।

9. ব্যক্তি নির্ভরতা : শিখন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। শিশু যখন নতুন কিছু শেখে বা নতুন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন সে তার অতীত অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের উপর নির্ভর করে আচরণ করে।

10. সঞ্চালনমূলক : শিখন একটি সঞ্চালন মূল প্রক্রিয়া। একটি বিষয়ে শিখনের ফলাফল পরবর্তী বিষয়ের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করে। যেমন বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সময় অনেক অনেক নতুন আচরণ করে। পরবর্তীকালে তারা সেগুলি পরিবার বা সমাজের অন্য কোন পরিস্থিতিতে সঞ্চালিত করে।

 

1. শিখন ফল কাকে বলে ?

উ: কোন একটি নির্দিষ্ট পাঠ শেষে শিক্ষার্থী কি ধরনের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে যা তার আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট সুনির্দিষ্ট বিবৃত বাক্য হল শিখন ফল।

2. সামাজিক শিখন কাকে বলে ?

উ: মানুষ সমাজবদ্ধ জীব ব্যক্তির আশা,আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা শিক্ষার মাধ্যমে সে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে সমাজের মধ্যেই বড়ো হয়ে ওঠে তাকে সামাজিক শিখন বলে।

3. অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন কাকে বলে ?

উ: শিখনের সমগ্রতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হলো অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন। যে বিশেষ ধরনের হঠাৎ প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে সমস্যা মূলক পরিস্থিতিতে ব্যক্তির কাছে সামগ্রিক বোধ নিয়ে আসে তাকে অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন বলে। অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন এর প্রবক্ত হলেন কোহলার।

1 thought on “শিখন কাকে বলে ? শিখনের উপাদান, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, পর্যায় বা স্তর”

Leave a Comment