ঠান্ডা লড়াই কি ? ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও বৈশিষ্ট্য | What is Cold War

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ঠান্ডা লড়াই কি ? ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও বৈশিষ্ট্য | What is Cold War

ঠান্ডা লড়াই কি ? ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও বৈশিষ্ট্য | What is Cold War: আজকে আলোচনার বিষয় ঠান্ডা লড়াই কি  এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।চলুন অনুসরণ করে নেওয়া যাক ঠান্ডা লড়াই সম্পর্কে।

ঠান্ডা লড়াই কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি , ইটালি ও জাপানের অক্ষশক্তি জোটের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রশক্তি জোট যুদ্ধ করেছিল । এই সকল শক্তিজোটের সদস্যদের নিজেদের মধ্যেও মতভেদ ঘটে । যুদ্ধশেষে মতভেদ ক্রমশ বিরোধে পরিণত হয় । আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্যের ভিত্তিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউরোপ তথা বিশ্ব দুটি পরস্পরবিরোধী সামরিক জোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে । শুরু হয় অস্ত্র প্রতিযোগিতা । ঠান্ডা লড়াইয়ের বাতাবরণ তৈরি হয় ।

ঠান্ডা লড়াই কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে প্রকাশ্যে যুদ্ধ না ঘটলেও পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস , সন্দেহ , ভীতি ও আশঙ্কা এক সংঘাতময় অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করে । যুদ্ধ নয় , শান্তিও নয়— বিশ্বরাজনীতির এই পরিস্থিতিই ঠান্ডা যুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই ( Cold War ) নামে পরিচিত । – 1947 খ্রিস্টাব্দের 16 এপ্রিল দক্ষিণ ক্যারোলিনা প্রদেশের কলম্বিয়া শহরে এক ভাষণে মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচ ( Bernard Baruch ) প্রথম ঠান্ডা লড়াই কথাটি প্রকাশ্যে ব্যবহার করেন । মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmann ) তাঁর ‘ The Cold War ‘ নামক গ্রন্থের মাধ্যমে ‘ ঠান্ডা লড়াই ’ কথাটি জনপ্রিয় করে তোলেন ।

ঠান্ডা লড়াই এর বৈশিষ্ট্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সুদীর্ঘ কালব্যাপী চলা ঠান্ডা লড়াইয়ের একাধিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যথা-

1. কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই : ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দুই মহাশক্তির ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা । এই দুই মহাশক্তি হল আমেরিকা ও রাশিয়া । ঠান্ডা লড়াইয়ের রাজনীতি ‘ Bipolar Politics ‘ নামেও পরিচিত।

2. আদর্শগত সংঘাত : ঠান্ডা লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল আদর্শের সংঘাত । মাক্সিম লিটভিনভ ( Maxim Litvinov ) ঠান্ডা লড়াইকে আদর্শগত সংঘাত বলে উল্লেখ করেছেন । রাশিয়ার দৃষ্টিতে সাম্যবাদ শ্রেষ্ঠ , তাই বিশ্বে সাম্যবাদের প্রসার কাম্য ।

3. প্রভাব বলয় ও জোট গঠন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রভাব বলয় ( Sphere of Influence ) এবং জোট গঠন করে । সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ( পোল্যান্ড , পূর্ব জার্মানি , চেকোশ্লোভাকিয়া , বুলগেরিয়া , রুমানিয়া , হাঙ্গেরি , যুগোশ্লাভিয়া , আলবেনিয়া প্রভৃতি ) সোভিয়েতীকরণ করে । এর প্রত্যুত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিকে ( পশ্চিম জার্মানি , ফ্রান্স , ইংল্যান্ড , বেলজিয়াম , হল্যান্ড , স্পেন , পোর্তুগাল , ইটালি , গ্রিস ইত্যাদি ) নিয়ে সোভিয়েতবিরোধী প্রভাব বলয় গড়ে তোলে ।

মার্কিন নেতৃত্বে ইউরোপে উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তি সংস্থা ( North Atlantic Treaty Organisation বা NATO , 1949 খ্রিস্টাব্দ ) , মধ্যপ্রাচ্যে কেন্দ্রীয় চুক্তি সংস্থা ( The Central Treaty Organisation বা CENTO , 1955 খ্রিস্টাব্দ ) , দূরপ্রাচ্যে সিয়াটো চুক্তি ( The South – East Asia Treaty Organization বা SEATO , 1955 খ্রিস্টাব্দ ) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে আনজাস ( The Australia , New Zealand and United States Security Treaty বা ANZUS , 1951 খ্রিস্টাব্দ ) গঠিত হয় । এর প্রত্যুত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট ইনফরমেশন ব্যুরো বা কমিনফর্ম ( COMINFORM , 1947 খ্রিস্টাব্দ ) , পারস্পরিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা ( The Council for Mutual Economic Assistance বা COMECON , 1949 খ্রিস্টাব্দ ) , সামরিক সংহতি কমিটি ( 1952 খ্রিস্টাব্দ ) , ওয়ারশ জোট ( Warsaw Pact , 1955 খ্রিস্টাব্দ ) ইত্যাদি গঠন করে।

4. পারস্পরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে পোল্যান্ডের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা , পূর্ব ইউরোপে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা , বার্লিন অবরোধ , গ্রিস , তুরস্ক ও ইরানে হস্তক্ষেপ এবং ফালটন বক্তৃতা , বেষ্টনী নীতি , ট্রুম্যান নীতি , মার্শাল পরিকল্পনা , অস্ত্র পরীক্ষা , কোরিয়া , ভিয়েতনাম , কিউবা সংকট ইত্যাদি ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে যুদ্ধের কিনারায় উপস্থিত করে।

5. অস্ত্র প্রতিযোগিতা : ঠান্ডা যুদ্ধের ঘনীভূত রূপ প্রত্যক্ষ করে । উভয়পক্ষই নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1945 খ্রিস্টাব্দে প্রথম পরমাণু পরীক্ষার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন 1949 খ্রিস্টাব্দে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় । এরপর ক্রমান্বয়ে 1952 , 1953 , 1954 , 1955 খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় । এইভাবে দুটি শক্তির মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

6. প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ নয় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত রাশিয়া বিভিন্নভাবে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেও একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে অংশ নেয়নি । এই কারণে ঠান্ডা যুদ্ধকে ছায়া যুদ্ধ বা Proxy War বলা হয় । লুই হ্যাল ( Louis Hale ) এই দ্বন্দ্বকে কাঁকড়াবিছে ও মাকড়সার লড়াই বলেছেন । স্টিফেনসন ( Stephenson ) – এর মতে , সময়ের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে।

7. পরিবর্তনের প্রকৃতি : স্টিফেনসন ( Stephenson ) বলেন , ঠান্ডা লড়াই কোনো Systematic সংঘাত ছিল না । তাঁর মতে , সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে এবং এই পরিবর্তনের মূলে ছিল অভ্যন্তরীণ , সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ।

ঠান্ডা লড়াইয়ে কারণ | ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভবের পটভূমি

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঠান্ডা লড়াই । প্রায় অর্ধশতকব্যাপী বিশ্বরাজনীতি এই লড়াইয়ের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে । ঠান্ডা লড়াইয়ের উৎপত্তির পিছনে কোনো একটি বিশেষ কারণকে দায়ী করা যায় না । এর পিছনে বহুবিধ কারণ ও পরিস্থিতি সক্রিয় ছিল । ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণগুলি নিম্নরূপ-

1. আদর্শগত সংঘাত : ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের আদর্শগত সংঘাতের পরিণতি । অধ্যাপক এফ এইচ হার্টম্যান ( FH Hartmann ) – এর মতে , দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং তত্ত্বগত পার্থক্য থেকেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয় ( ” …. great differences in outlook and philosophy between the two superpowers . ” )।

2.বলশেভিক বিপ্লবের বিরোধিতা : 1917 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলশেভিক বিপ্লব ( Bolshevik Revolution ) সংঘটিত হয় । এই বিপ্লবের দ্বারা রাশিয়ায় সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । ইংল্যান্ড , ফ্রান্স ও আমেরিকার মতো ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি রুশ বিপ্লবের বিরোধী হওয়ায় তারা জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সৈন্য প্রেরণ করে । পশ্চিমি শক্তিবর্গের এহেন আচরণ রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সরকার সুনজরে দেখেনি । ফলে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে , যা ঠান্ডা যুদ্ধের পটভূমি রচনা করেছিল ।

3. তোষণনীতি : হিটলার তথা জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের তোষণনীতি ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে । মিত্রশক্তির কাছে রাশিয়ার সাম্যবাদ অপেক্ষা জার্মানির একনায়কতন্ত্র কম ক্ষতিকারক ছিল । আবার হিটলারও ছিলেন সাম্যবাদী শাসনের বিরোধী । এই কারণে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের প্রতি আপসমূলক নীতি গ্রহণ করে রাশিয়ার সমাজতন্ত্রকে প্রতিহত করতে সচেষ্ট হয়।

4. দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে পশ্চিমি অনীহা : হিটলার রুশ – ভ -জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ( Russo – German Non Aggression Pact ) অগ্রাহ্য করে 1941 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়া বিচলিত হয়ে পড়ে । এমতাবস্থায় , জার্মান আক্রমণের চাপ হ্রাস করার উদ্দেশ্যে রাশিয়া মিত্রশক্তির কাছে জার্মানির বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গন ( Second Front ) খোলার আহ্বান জানায় । মিত্রশক্তি নানা অজুহাতে এ বিষয়ে কালবিলম্ব করতে থাকে । রাশিয়া নিজ শক্তি দ্বারাই কিছুদিনের মধ্যে জার্মান আক্রমণ প্রতিহত করার পর মিত্রশক্তি ইউরোপে জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খুলে দেয় । এর ফলে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের আচরণ সম্পর্কে রাশিয়া সন্দিহান হয়ে পড়ে।

5. নেতৃত্বের পরিবর্তন : আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় নেতৃত্বের পরিবর্তন রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি দেশগুলির সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ( Roosevelt ) – এর মৃত্যুর পর ট্রুম্যান রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন । অপরদিকে ইংল্যান্ডে চার্চিলের জায়গায় আসেন ক্লিমেন্ট এটলি ( Clement Attlee ) । ফলে রুজভেল্ট এবং চার্চিলের সময় রাশিয়ার সঙ্গে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বোঝাপড়া ছিল , তা ট্রুম্যান এবং এটলির সময়ে নষ্ট হয়ে যায়।

6. পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত সম্প্রসারণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে ( পোল্যান্ড , চেকোশ্লোভাকিয়া , রুমানিয়া , হাঙ্গেরি , বুলগেরিয়া , যুগোশ্লাভিয়া ইত্যাদি ) রুশ প্রভাব বৃদ্ধি করে । পূর্ব ইউরোপের উপর রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পেলে পশ্চিমি শক্তিবর্গ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

7. ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা : মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস ট্রুম্যান ( Harry S Truman ) 1947 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় সাম্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গ্রিস ও তুরস্ককে আর্থিক সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি দেন , যা ট্রুম্যান নীতি ( Truman Doctrine ) নামে পরিচিত । ঐতিহাসিক আইজ্যাক ডয়েচার ( Isaac Deutscher ) ট্রুম্যান নীতিকে ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বলে উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে টুম্যান নীতির পরবর্তী অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রায়োগগত দিক হল মার্শাল পরিকল্পনা ( Marshall Plan ) । 1947 খ্রিস্টাব্দের 5 জুন মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জর্জ সি মার্শাল ( George C Marshall ) হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য যে পরিকল্পনা তুলে ধরেন , তা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত । এই পরিকল্পনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত প্রভাব রোধ করা । আমেরিকার ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে সংশয়ের কারণ হয়ে ওঠে।

8. পরস্পরবিরোধী জোট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনার জবাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে নিয়ে কমেকন ( COMECON ) জোট গঠন করে ( 1949 খ্রিস্টাব্দ ) । এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিকে নিয়ে উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তি সংস্থা ( NATO ) গড়ে তোলে ( 1949 খ্রিস্টাব্দ ) । এর প্রত্যুত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপে ওয়ারশ জোট ( Warsaw Pact ) গঠন করলে ( 1949 খ্রিস্টাব্দ ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনটো ( CENTO ) , সিয়াটো ( SEATO ) ইত্যাদি জোট গঠনের পথ সুগম হয় । এই পরস্পরবিরোধী শক্তিজোট ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি রচনা করে।

9.পারমাণবিক প্রতিরোধ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন— দু – পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করলেও কেউই পুরোপুরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায়নি । কারণ— তারা জানত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে উভয়েরই পতন অবশ্যম্ভাবী । এইভাবে দু – পক্ষের আণবিক শক্তির ক্ষমতা আণবিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে । অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং এই আণবিক প্রতিরোধ ঠান্ডা লড়াইয়ের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই সমস্ত কার্যকলাপের ফলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । এর পরিণামে জন্ম নেয় ঠান্ডা যুদ্ধ । লুই জে হ্যালে ( Louis J Hale ) একে কাঁকড়াবিছে ও মাকড়সার লড়াই বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন : 

শিল্প বিপ্লব কি ? শিল্প বিপ্লবের সময়, স্থান, কারণ ও ফলাফল 

সার্ক কি ? সার্কের উদ্দেশ্যে, সমস্যা ও সাফল্য

লোককথা কাকে বলে ? লোককথা বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব এবং শ্রেণীবিভাগ

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কি ? বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

3 thoughts on “ঠান্ডা লড়াই কি ? ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও বৈশিষ্ট্য | What is Cold War”

  1. ডাউনলোড কেনো করতে পারছি না স্যার। অবশান ও নেই।

    Reply

Leave a Comment