ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য | Characteristics of bacteria

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য – Characteristics of bacteria : সুপ্রিয় বন্ধুরা, আজকে তোমাদের সাথে আরও একটি পর্ব শেয়ার করলাম। এই পর্বটিতে আমরা জানবো ব‍্যাকটেরিয়া কি ? ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য ও ব‍্যাকটেরিয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য | Characteristics of bacteria

ব‍্যাকটেরিয়া কি :

ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব (অর্থাৎ এগুলোর অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না)। বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়ার কোষ গোলাকার, দণ্ডাকার, কমা আকার, প্যাঁচানো ইত্যাদি ধরনের হতে পারে। নিম্নে ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হলো-

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য :

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

১. কোষীয় জীবদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া হলো সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এবং সরলতম আণুবীক্ষণিক জীব। এদের দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে প্রায় 0.15um – 80um পর্যন্ত হয়।

২. ব্যাকটেরিয়ার কোষ পর্দার বাহিরে স্থূল এবং জড় কোষপ্রাচীর উপস্থিত যা পেপটাইডোগ্লাইকেন দিয়ে গঠিত।

৩. প্রায় অধিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের বাইরে একটি পিচ্ছিল স্লাইম স্তর থাকে। এই স্তরটি অনেকক্ষেত্রে শক্ত হয়ে ক্যাপসুল গঠন করে।

৪. প্রোটোপ্লাজম 7-8 nm পুরু প্রোটিন ও লিপিড স্তর দিয়ে গঠিত কোষ পর্দা দিয়ে আবৃত হয়। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় কোষ প্রাচীর এর বাহিরের দিকে একটি অতিরিক্ত কোষ পর্দা থাকে যাকে বহিঃপর্দা বলে।

৫. ব‍্যাকটেরিয়া কোষ পর্দার কোনো কোনো স্থানে ভাঁজযুক্ত হয়ে মেসোজোম গঠন করে।

৬. বহিরাকৃতির ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়া গোলাকার বা কক্কাস , দন্ডাকার বা ব্যাসিলাস, সর্পিলাকার বা স্পাইরিলাম, কমা আকৃতির বা ভিব্রিও প্রকৃতির হয়।

৭. মিয়োসিস ও গ্যামেট উৎপাদন অনুপস্থিত বলে ব্যাকটেরিয়ার যৌন জনন অনুপস্থিত। তবে সংযুক্তি বা সংশ্লেষ, রূপান্তর ভবন এবং ট্রান্সডাকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিনের পুনঃসংযোজন ঘটে।

৮. ব্যাকটেরিয়া একাধিক পরিবেশে বসবাস করতে সক্ষম। নানান ধরনের তাপমাত্রায় বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-

i. সাইক্রোফিলস : এটি হল নিম্ন তাপমাত্রায় বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া।
ii. মেসোফিলস : এটি হল সাধারণ তাপমাত্রায় বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া।
iii. থার্মোফিলস : এই ব‍্যাকটেরিয়া হল উচ্চ তাপমাত্রায় বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া।

৯. ব্যাকটেরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি লক্ষ্য করা যায় । Chlorobium জাতীয় ব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষকারী বা ফটো অটোট্রপ রাসায়নিক পদার্থ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে অর্থাৎ কেমো অটোট্রফ। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া মৃতজীবী, পরজীবী বা মিথোজীবী প্রকৃতির হয়।

১০. সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে একক পর্দা বেষ্টিত চ্যাপ্টা থলির মতো ল্যামেলি বা গোলাকার ভেসিকেল থাকে। এই অঙ্গানুর মধ্যে সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক বা ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল থাকে।

১১. সাইটোপ্লাজমে একক পর্দ৷ বৃত সমস্ত কোষীয় অঙ্গানু (মাইটোকনড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা প্রভৃতি) অনুপস্থিত। রাইবোজোম 70S প্রকৃতির যার দুটি অধঃএকক 30S ও 50S প্রকৃতির হয়।

১২. প্রজাতিগত দিক থেকে এই ব্যাকটেরিয়া অবাত বা সবাত শ্বসন সম্পন্ন করে থাকে, অর্থাৎ এরা অবায়ুজীবী বা বায়ুজীবী প্রকৃতির হয়।

১৩. প্রোক্যারিওট হওয়ায় ব্যাকটেরিয়ায় সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস থাকে না। প্রোটোপ্লাজম এর মধ্যে সচরাচর একটি দ্বিতন্ত্রী চক্রাকার DNA থাকে।

১৪. ক্রোমোজোম ও বেমতন্তু গঠন করতে পারে না বলে ব্যাকটেরিয়া অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়।

১৫. ব্যাকটেরিয়া প্রধানত অনুপ্রস্থ দ্বিবিভাজন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন করে। এছাড়া কোরকোদগম প্রক্রিয়ায় এবং সূত্রাকার ব্যাকটেরিয়ায় খন্ডীভবন পদ্ধতিতেও অযৌন জনন সম্পন্ন করতে পারে। অন্তরেণু গঠন ব্যাকটেরিয়ার বিশেষ প্ৰজনন প্রক্রিয়া।

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা :

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য এর পাশাপাশি কিছু উপকারিতাও রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া আমাদের অনেক রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে, এটা সত্যি। কিন্তু সেগুলোর অনেক উপকারী ভূমিকাও আছে। যেমন:

১. বিভিন্ন প্রকার জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি হয়।

২. একমাত্র ব্যাকটেরিয়াই প্রকৃতি থেকে মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে। পরিবেশের নাইট্রোজেন সাধারণত নিষ্ক্রিয় থাকে, সহজে কোনো যৌগ গঠনে অংশ নেয় না। সংবন্ধকরণ প্রত্রিয়া নাইট্রোজেন অণুকে বিক্রিয়াযোগ্য করে তোলে। এর ফলে মাটির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩. পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে।

৪. দই তৈরি করতে ও ব‍্যাকটেরিয়ার সাহায্য নিতে হয়।

আরও পড়ুন : 

ভাইরাস কাকে বলে ? ভাইরাসের প্রকৃতি, উৎপত্তি, অবস্থান, আকার ও বৈশিষ্ট্য ?

শৈবাল কাকে বলে ? শৈবালের শ্রেণীবিভাগ, বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ?

Leave a Comment