প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো ? Causes of first World War

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে তোমাদের সাথে আলোচনা করলাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি সম্পর্কে। আর দেরি না করে দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

ভূমিকা :

1870 – 1914 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় ইউরোপে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত। অনেকে এই সময়কালকে নয়া-সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে সর্বাধিক অগ্রগণ্য ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর উদ্যোগী হয়েছিল জার্মানি ও ইটালি।

অগ্রণী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে জার্মানি অল্পদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে রাশিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এসময় আত্মপ্রকাশ করে। ফলত, প্রাক্-প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপের রাজনীতি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ দ্বারা অনেকটাই সংশয় ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি নিম্নরূপ-

তথ‍্য: weekipedia

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ :

1914-18 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত প্রথম বৃহত্তর যুদ্ধ বা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পশ্চাতে একাধিক কারণ ছিল যেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি হল :

1.অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হল আহত ও অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ। বলকান, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া প্রভৃতি প্রতিটি রাজ্যই প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রচন্ড ক্ষুখ ছিল। যেমন অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বসনিয়া ও হারজিগোভিনা সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিল, আবার ফ্রান্স প্রাশিয়ার দখল থেকে আলসাস ও লোরেনকে মুক্ত করতে চেয়েছিল। এইসকল বিভিন্ন উত্তেজনা ও দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত পরিণতি হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

2. ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা :

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক প্রাধান্য স্থাপনের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স উপনিবেশ বিস্তারে এগিয়ে ছিল। জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম উপনিবেশ বিস্তারে আগ্রহী হলে এবং নৌবাহিনী বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করলে জার্মানি অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়।

3. সমরসজ্জা :

শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল। মিনিটে 20-30টি গুলি ছোড়ার মতো আধুনিক বন্দুক তৈরি হয়। 1900 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স, 1906 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি সাবমেরিন প্রস্তুত শুরু করে। 1906 খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় নৌবাহিনী নির্মাণের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জার্মানি ও ব্রিটিশ নৌবাহিনী পূর্বের তুলনায় দ্রুত গতিসম্পন্ন শক্তিশালী কামান বহনে সক্ষম জাহাজ নির্মাণ শুরু করে। এই সময়ই তৈরি হয়েছিল গ্রেভ নট নামক যুদ্ধজাহাজটি। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা দরকার সমরসজ্জা বৃদ্ধি কেবল জার্মানি বা তার মিত্ররা করেনি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সও একইভাবে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছিল।

4. কাইজার উইলিয়ামের দায়িত্ব :

জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম। শান্তিবাদী নীতি ত্যাগ করে সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানির নৌশক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে অন্যান্য দেশ আতঙ্কিত হয়। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইনসিওরেন্স চুক্তির নবীকরণ না করলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। এইসকল কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে জার্মানির দূরত্ব বাড়তে থাকে। কাইজারের এইসকল সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপকে অনেক ঐতিহাসিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন।

5. পরস্পরবিরোধী শক্তিজোট :

1870 থেকে 1914 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভীতি, বিদ্বেষ ও সন্দেহের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। একদিকে থাকে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইটালিকে নিয়ে গঠিত ত্রিশক্তি চুক্তি এবং অপরদিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে গঠিত ত্রিশক্তি মৈত্রী। দুই জোটের পারস্পরিক সন্দেহ, ভীতি ও ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রয়াস বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে। ত্রৈশক্তি চুক্তি ও ত্রিশক্তি মৈত্রীর পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

6. বলকান সমস্যা :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল বলকান অঞ্চলের উত্তেজনা। বিভিন্ন বলকানজাতি গণ আন্দোলন দ্বারা তুরস্কের অধীনতামুক্ত হলেও তাদের পারস্পরিক বিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা ঘটেনি। আবার বার্লিন চুক্তির শর্তভঙ্গ করে অস্ট্রিয়া, বসনিয়া ও হারজিগোভিনাকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। সার্বিয়ার নেতৃত্বে সর্ব-স্লাভ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বসনিয়া ও হারজিগোভিনার জনগণ। ইতোমধ্যে দার্দানেলিস প্রণালীতে রুশ যুদ্ধজাহাজ চলাচলকে কেন্দ্র করে অস্ট্রো-রুশ সম্পর্কের নিদারুণ অবনতি হয়েছিল। ফলে রাশিয়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সার্বিয়াকে মদত দিতে থাকে।

প্রত্যক্ষ কারণ :

বসনিয়ার জনগণের অবদমিত জাতীয় আশা থেকে জন্ম নিয়েছিল একাধিক গোপন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। সার্বিয়া এগুলিকে গোপনে মদত দিত। এইরকমই একটি সংস্থার নাম ছিল ব্ল্যাক হ্যান্ড। অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারী যুবরাজ ফার্দিনান্দ সস্ত্রীক বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো পরিদর্শনে এলে ব্ল্যাক হ্যান্ড সংস্থার জনৈক সদস্যের হাতে নিহত হন। অস্ট্রিয়া এই কাজের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে ও আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে কতকগুলি শর্তপূরণের দাবিসহ এক চরমপত্র পাঠায়।

সার্বিয়া চরমপত্রের অধিকাংশ শর্তই মেনে নেয়। কিন্তু যে শর্তগুলি মানলে সার্বিয়ার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে, সেগুলির মীমাংসার জন্য কোনো এক আন্তর্জাতিক বৈঠক আহ্বানের কথা জানায়। কিন্তু সার্বিয়ার উত্তর অস্ট্রিয়ার মনঃপুত হয়নি। ফলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়া আক্রমণ করে (28 জুলাই, 1914 খ্রিস্টাব্দ)। এই সূত্র ধরে ক্রমশ অন্যান্য শক্তিগুলি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড :

1914 খ্রিস্টাব্দের 28 জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ ও তাঁর পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে ভ্রমণ করতে এসে ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’ নামক সন্ত্রাসবাদী সংস্থার হাতে নিহত হন। এই ঘটনা ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনার জন্য অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে দায়ী করে এক চরম পত্র পাঠায়। যা মানতে সার্বিয়া রাজি না হওয়ায়, অস্ট্রিয়া সার্বিয়া আক্রমণ করে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এজন্য সেরাজেভো হত্যাকাণ্ডকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন : 

1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ?

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন : 

1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কত সালে সূচনা হয়েছিল ?

উ: 1914 সালে 18 ই জুলাই ।

2. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কবে শেষ হয়েছিল ?

উ: 1918 সালে 11 ই নভেম্বর ।

3. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কোনটি ছিল ?

উ: সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড

4. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ?

উ: মিত্র শক্তি ও কেন্দ্রীয় শক্তি দুই পক্ষের দেশগুলোর মধ্যে ।