দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল PDF | Second World war Causes And Consequences

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল PDF

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পরবর্তীতে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবতকাল পর্যন্ত সংগঠিত সর্ববৃহৎ সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছর দ্বিতীয় যুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের পূর্বে এশিয়ার সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষ কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে ধরা হয়।চলুন দেখে নেওয়া যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল গুলি । 

Table of Contents

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

ভূমিকা :

প্রচলিত মত অনুযায়ী ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (Second World War) সূচনা হয়। অপর একটি মত অনুযায়ী ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব ইউরোপে জার্মানির সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দ্বন্দ্বের সঙ্গে লিপ্ত হয় সেই মুহূর্ত থেকে ইউরোপের যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধের মোর নেই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ২১ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘন্টা বেজে ওঠে।১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ এবং বিধ্বংসীপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলি কারণ বিদ্যমান ছিল। এই কারণগুলি মূলত হল- পরোক্ষ কারণ ও প্রত্যক্ষ কারণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরোক্ষ কারণ :

1. ভার্সাই সন্ধির অবমাননা :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরাজিত জার্মানির উপর মিত্রশক্তি ভার্সাই চুক্তি বলপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থায় অমর্যাদাকর চুক্তির শর্তগুলি জার্মানির উপরে প্রতিশোধের আগুনের জাগরণ ঘটিয়ে যুদ্ধমুখী করে তুলেছিল।

2. জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ :

জার্মানির উগ্ৰ জাতিয়তাবাদ এবং হিটলারের আগ্রাসী নীতির সংমিশ্রণে বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি  করেছিল। হিটলারের নির্দেশে জার্মান, চোকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের জার্মান অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রকাশ‍্যে বা গোপনে আন্দোলন গড়ে তোলার ইন্ধন জুগিয়েছিল।

3. আদর্শগত মতবিরোধ :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে আদর্শগত মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ; জার্মানি, জাপান, ইতালি ছিল স্বৈরতন্ত্রী দেশ, আবার সোভিয়েত রাশিয়া ছিল সাম্যবাদী দেশ। এমত আদর্শগত মত বিরোধের কারণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।

4. ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি :

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ভ্রান্ত তোষননীতির ফলে হিটলার এবং মুসোলিনীর নেতৃত্বে যথাক্রমে ইতালি ও জার্মানি নিজ শক্তির বৃদ্ধি ঘটেছিল। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মনে করেছিল ইতালি ও জার্মানিকে শক্তি অর্জনের সুযোগ দিলে তারা সাম্যবাদী সোভিয়েত রাশিরকে দুর্বল করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তবে এই তোষণ নীতি ইতালি ও জার্মানিতে আরও সাম্রাজ্যবাদী করে তুলেছিল।

5. ইতালি ও জাপানের আগ্রাসী নীতি :

ইতালি ও জাপানের আগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা ছিল। ইতালি ও আবিসিনিয়া এবং জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চুপ থাকে। ফলে ইতালিও জাপানের পররাষ্ট্র গ্ৰাসের প্রবণতা বৃদ্ধি ঘটে।

6. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সারা পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা নেতিবাচক প্রভাব আরোপ করেছিল। ফলে বাণিজ্য এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিশ্বের অনেকাংশ দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চরম আকার ধারণ করে। এমত জটিল পরিস্থিতি পরোক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ প্রশস্ত করে

7. একনায়ক তন্ত্রের উত্থান :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েকটি দেশে একনায়কতন্ত্র শাসকের উদ্ভব হয়।এর মধ্যে অন্যতম ছিল ইতালির শাসক মুসোলিনি এবং জার্মানির শাসক হিটলার। এরা তাদের উগ্র সাম্রাজ্যবাদ এবং যুদ্ধবাদী নীতি গোটা পৃথিবীতে একটা ভয়ানক অশান্তির সৃষ্টি করেছিল।

8. জাতিসংঘের ব্যর্থতা :

পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলির অন্যায় সিদ্ধান্ত সমূহের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্ৰস্ত ছিল। ইটালির আবিসিনিয়া ও  জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের ব্যাপারে জাতিসংঘ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ :

রোম, বার্লিন, টোকিও অক্ষশক্তি গঠিত হওয়ার পর হিটলার পোলিশ করিডর দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের এমত সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ১ লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল‍্যান্ডের উপর অক্রমন চালায়। হিটলারের এই সিদ্ধান্তের যথাযৌগ‍্য উত্তর দিতে ৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড, পোল‍্যান্ডের পক্ষ অবলম্বন করে।এই ভাবেই সৃষ্টি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল :

1. পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিকাশ :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্ব রাজনীতিতে যে সুদূর প্রসারি ফলাফল লক্ষ‍্য করতে পারি তার মধ‍্যে অন‍্যতম ছিল পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদের বিকাশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবী সমাজতান্ত্রিক দেশ ও পুঁজিবাদী দেশ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় । পশ্চিম ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে। আবার অন‍্য দিকে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ভাগে সমাজতন্ত্র বিকশিত হয়।

2.জার্মানির বিভক্তিকরণ :

হিটলারের পতনের পর জার্মানি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এর ফলে ১৯৪৯ সালের ২৩ মে পশ্চিম জার্মান ও ৭ অক্টোবর পূর্ব জার্মানির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

3.ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পতন :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন তার বিশ্বব‍্যপী সাম্রাজ্য হারায়। ব্রিটেনের অর্থনীতি ভেঙে পরে ও বিশ্বে পণ্য রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায় । অর্থনীতি পুনুরুদ্ধারের জন‍্য তাদেরকে স্থল ও নৌবহর হ্রাস করতে হয় যা তাদের সামরিক শক্তিকে খর্ব করে । অন‍্যদিকে ফ্রান্সেও অভ‍্যন্তরীন অর্থনীতি ও শিল্প ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ফ্রান্সকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

4. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উণ্থান :

ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পতনের সময় থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। উভয় দেশই প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামরিক শক্তির দিক থেকে এগিয়ে ছিল অন‍্যান‍্য দেশের তুলনায়।ফলে তারা পরবর্তী সময়ে বিশ্বের দুই মেরু শক্তিতে পরিণত হয়।

5. ঠান্ডা লড়াইয়ে সূচনা :

এই বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয় সৃষ্টি করে।এই দুই দেশই একসময় এক বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তোলে। দুই দেশই এই পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত ছিল ফলে সূচনা হয় এক নীরব যুদ্ধের যা ইতিহাসে ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।

6. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা :

১৯৪১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রূশভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী  আটলান্টিক মহাসাগরে অগাষ্টা যুদ্ধ জাহাজে আটলান্টিক সনদ সাক্ষর করে।১৯৪২ সালে আস্থা স্থাপনকারী ২৬ টি দেশর সম্মেলনে সর্বপ্রথম জাতিপুঞ্জ কথাটি ব‍্যবহৃত হয়। ১৯৪৫ সালে ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের ভূমিকা :

বিশ্বজয়ের স্বপ্নে উন্মুক্ত হয়ে জার্মানরা পোল্যান্ডের উপর আক্রমণ করে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এভাবেই সংঘটিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

পরে এডলফ হিটলার নরওয়ে ও ডেনমার্ক দখল করে নেই এবং দৃষ্টি ফেরায় ফ্রান্সের দিকে। পরে তিনি বেলজিয়াম আক্রমণ করে সেই দেশের মধ্য দিয়ে ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে। একে একে হিটলারের নির্দেশে জার্মান বাহিনী মহাদেশীয় ইউরোপের বেশ কিছু এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার কুড়িটিরও বেশি দেশ দখল করেছিল। যা হিটলার একটি রাজনৈতিক চাল ও কৌশল চিন্তাধারা ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জার্মানিকে চরম অপমান ভোগ করতে হয়েছিল।এই অপমান ঢেকে ফেলার জন‍্য জার্মানিকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জন‍্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ যুদ্ধ ঘটলো। পুরো বিশ্বজুড়ে হিটলারের যে ধ্বংসাত্মক কর্যাকলাপ চালিয়েছিল তা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তিন বছরে হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদীদের পরিকল্পিত ভাবে হত‍্যা করেছিল যা ইতিহাসে হলোকস্ট ঘটনা নামে পরিচিত।

১৯৪১ সালে ২২ জুন সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে হিটলার রাশিয়ার উপর আক্রমণ চালায়। তিনি ভেবেছিলেন রাশিয়া দখল করতে পারলে করে সমগ্ৰ ইউরোপ তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে কিন্তু সেটা ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল।ফলস্বরূপ রুশবাহিনীর কাছে জার্মান বাহিনী পরাজিত হয়। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হিটলার ১১ টি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র দখল করে যা ছিল রাজনৈতিক কৌশল ফ্রান্স, ইটালি, অষ্ট্রিয়া, চোকোশ্লোভাকিয়া, পোল‍্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ব্রিটিশ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। জার্মান বাহিনীর পয়াজয়ের পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। 

আরও পড়ুন :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

PDF Details

File Name : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
Language : বাংলা
Size: 97 KB
Clik Here To Download

1.দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে সংগঠিত হয়েছিল ?

উ: ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর

2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল ?

উ: ৫ থেকে ৮ কোটি মতো।

3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে সমাপ্তি ঘটেছিল ?

উ: ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর।

4.দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কতদিন চলেছিলে ?

উ: ৬ বছর ১ দিন