বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের উদ্দেশ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করলাম। বিজ্ঞান এমন একটি জিনিস যা আমাদের জীবনে ভালো এবং খারাপ দুটির জন‍্যই দায়ী। বিজ্ঞান   আমাদের জীবনে আর্শীবাদ না অভিশাপ জানতে চলো দেখে নেওয়া যাক বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা-টি।

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা :

“ বিজ্ঞান চাই সবার মাঝেই প্রাণের কথা    বলতে
অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে।

” Science is becoming a direct productive force of society . ” বিজ্ঞান আধুনিক মানব সভ্যতায় আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ , যার সাহায্যে মানুষ অসম্ভবকে অনায়াসে আয়ত্ত করেছে । বৈজ্ঞানিক শক্তিতে বলিয়ান মানুষ তার যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে প্রকৃতির রহস্যের আবরণ একের পর এক উন্মুক্ত করে চলেছে । কিন্তু বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে আজ দুশ্চিন্তার ভাঁজ । বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের দ্বৈত রূপ – একদিকে সৃষ্টি তো অপরদিকে ধ্বংস । তাই মৌলিক প্রশ্ন হল বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ ?

“ সভ্যতা ধরেছে আগেই বিজ্ঞানের হাত।
রাত তাই দিন হল , দিন হল রাত। ”

‘ বিজ্ঞানমুচ্ছিষ্টম্ ইদম্ জগৎ ‘ অর্থাৎ বিজ্ঞানের দ্বারা এ জগৎ উচ্ছিষ্ট । সভ্যতা যদি হয় যন্ত্র , তবে বিজ্ঞান সেখানে যন্ত্রী। কিন্তু , বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে দুশ্চিন্তার কলঙ্কভাজ । বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাঝে একদিকে সৃজন , অপরদিকে ধ্বংস । বিজ্ঞানের মারণযজ্ঞে ত্রস্ত মানুষ তাই প্রশ্ন তুলেছে – ‘ বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ ?

বিজ্ঞান : কাল থেকে কালান্তরে

মানুষ যেদিন আগুন জ্বালতে শিখল , প্রকৃত অর্থে সেদিনই সভ্যতার প্রদীপ জ্বলল । সভ্যতার ক্রমবিকাশে দেখা দিল নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার । বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে , নিজ উদ্দেশ্যসাধন করছে মানুষ । বিজ্ঞান এই অর্থে মূলত মানবকল্যাণমুখী । বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ আজ পৃথিবীর সমস্ত অজ্ঞাত কুসংস্কার ও জড়তা কাটিয়ে উঠেছে । জীবনে এসেছে তাদের অফুরন্ত কর্মশক্তি , অপর্যাপ্ত গতিছন্দ । বিজ্ঞান আজ ঊষর মরুকে করেছে জলসিক্ত উর্বর , পৃথিবীকে করেছে শস্যশালিনী । ‘ নবীন জগৎ সন্ধানে ’ আজ মানুষ চলছে ‘ মেরু – অভিযানে।

বিজ্ঞান বনাম মানুষ :

জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের চলার পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে । রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধি অতিযান্ত্রিকতার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন । ‘ বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ , কেড়ে নিয়েছে আবেগ । ‘ অতিরিক্ত বিজ্ঞান – নির্ভরতা মানুষকে পঙ্গু করেছে । সে হয়ে উঠেছে আরামপ্রিয় , বিলাসী ও কর্মবিমুখ । যন্ত্রসভ্যতায় মানুষ আজ যন্ত্রতুল্য । মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাতে বসেছে।

বিজ্ঞান যেখানে অশুভ :

বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতায় পাশবিকতা রয়েছে , যে – বিজ্ঞান নিয়ত মানুষের কল্যাণকর্মে রত , সেই বিজ্ঞানকেই মানুষ কাজে লাগিয়েছে এই সুন্দর সৃষ্টিকে ধ্বংসের কাজে । খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল , মারণাস্ত্রের আবিষ্কার , নিত্যনতুন অশুভ আণবিক শক্তির উদ্ভাবনে মানুষ এখন এত পরিপক্ব যে , একটি ছোট্ট বোতাম টিপলেই মুহূর্তে পৃথিবীর একটি বৃহত্তম অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে । হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার যে বিষময় পরিণতি , তা আজও বিশ্ববাসী ভুলতে পারেনি । আজকের সন্ত্রাসবাদও বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করেছে।

বিজ্ঞান ও ধ্বংস :

যে বিজ্ঞান জীবনদায়ী ওষুধ ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে মানুষকে নবজীবন দান করেছে , সেই বিজ্ঞানই আবার মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে জীবনকে ধ্বংসের কাজে বহাল থাকছে । রাসায়নিক নানা রকমের দ্রব্যের বিষক্রিয়ার প্রভাবে পৃথিবীর বায়ু , জল , মৃত্তিকা আজ ব‍্যপকভাবে দূষিত।

মঙ্গল ও শুভবুদ্ধি :

বিজ্ঞানের ধ্বংসলীলার জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয় , দায়ী মানুষ । বিজ্ঞান যদি মানুষের শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয় , তাহলে বিজ্ঞান কেবলমাত্র মানবকল্যাণী রূপে মানুষের ভৃত্য হয়েই থাকবে । আইনস্টাইন বলেছেন , ‘ Religion without science is lame , science without religion is dead . ‘ তাই , শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত বিজ্ঞান মানবকল্যাণে ব্রতী হয়ে আশীর্বাদ রূপে দেখা দেবে । বর্তমান সভ্যতার যে – অগ্রগতি তা তো বিজ্ঞানেরই দান । সুতরাং , শুভবুদ্ধি দ্বারা চালিত বিজ্ঞান মানুষের সমাজ – সভ্যতার ক্ষেত্রে কল্যাণের বার্তাই বয়ে আনে , সে – কথা আজ প্রমাণিত সত্য।

মূল‍্যায়ন :

মানুষ যদি মানুষ হয় , বিজ্ঞানকে যদি মানবকল্যাণে প্রয়োগ করতে পারে , তাহলে বিজ্ঞান হবে আশীর্বাদ । আর যদি অমানুষ হয়ে বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে প্রয়োগ করে , তাহলে বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অভিশাপ । এজন্য জনৈক কবি বিজ্ঞানের হয়ে দুঃখ করে বলেছেন-

“ বিজ্ঞান বলে দোষ কি আমার
কেন মিছে দাও গালি।
প্রয়োগের গুণে সুন্দর মুখে
তোমরা মাখাও কালি। ”

আরও পড়ুন :

আমার প্রিয় ঋতু রচনা 

বাংলার উৎসব রচনা 

দূর্গাপূজা রচনা 

 বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ

 পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা

3 thoughts on “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা”

Leave a Comment