সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী | সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রচনা | Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী | সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান রচনা | Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। চলো দেখে নেওয়া যাক ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী সম্পর্কে।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী :

ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এমন একজন ব‍্যক্তি যার নাম ভারতীয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। আমরা ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনীর সম্পর্কে জানার আগে বলতে চাই যে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন একজন শিক্ষক ছাড়াও, ভারতীয় দর্শনের একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন। তার জম্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী সম্পর্কে। 

জীবনী-১

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী :

ভূমিকা : ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, পন্ডিত, অধ্যাপক এবং রাজনীতিবিদ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ও যুব সম্প্রদায়কে গড়ে তোলাই তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল। তাঁর জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে ভারতবর্ষে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে।

জন্মপরিচয় : ১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুত্তানিতে এক তেলেগু ভাষী নিয়োগী ব্রাহ্মণ পরিবারে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সর্বপল্লী বীরাস্বামী যিনি স্থানীয় এক জমিদারের অধীনস্থ রাজস্ব বিভাগে স্বল্প বেতনের একজন কর্মচারী ছিলেন। তাঁর মাতার নাম সীতাম্মা। তাঁদের পরিবার অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোর জেলার সর্বপল্লী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁদের সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী।

শিক্ষাজীবন : সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় তিরুত্তানির কে. ভি. হাইস্কুলে। ছোটোবেলা থেকেই রাধাকৃষ্ণাণ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। জীবনে কোনো পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তি তাঁর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। ১৮৯৬ সালে তিনি তিরুত্তানির হার্মেনসবার্গ ইভানজেলিক্যাল মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং তারপর তিনি ওয়ালাজাপেটের সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। এরপর ভেলোরের ভুরহিস কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৬ বছর বয়সে স্নাতক স্তরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাজ খ্রীস্টান কলেজে ভর্তি হন।

স্নাতক স্তরে ভৌতবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবের কারনে পড়তে পারেননি। তাঁর এক খুড়তুতো দাদা তখন ঐ কলেজ থেকেই দর্শন নিয়ে পাস করেছেন। ফলস্বরূপ তাঁর পুরোনো বইগুলিও রাধাকৃষ্ণাণ পেয়েছিলেন। এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিনি কলেজে ভর্তি হন দর্শন শাস্ত্রের ছাত্র হিসাবে। ১৯০৭ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রীস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ঐ কলেজ থেকেই দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

দর্শনে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘বেদান্তের নীতিশাস্ত্র এবং তার অধিবিদ্যাগত অনুমান’। তিনি মনে করেছিলেন তাঁর গবেষণামূলক এই প্রবন্ধ দর্শনের অধ্যাপক বাতিল করে দেবেন। কিন্তু অধ্যাপক অ্যালফ্রেড জর্জ হগ তাঁর প্রবন্ধ পড়ে খুবই খুশি হন। গবেষণামূলক এই প্রবন্ধ যখন প্রকাশিত হয় তখন রাধাকৃষ্ণাণের বয়স মাত্র ২০ বছর।

কর্মজীবন : এম.এ. পাস করে রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রাদেশিক শিক্ষা পরিষেবায় যোগ দিয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯১১ সালে সহকারি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯১৬ সালে তিনি অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রী কলেজে। ১৯১৮ সালের জুলাই মাসে রাধাকৃষ্ণাণ মহীশূরের মহারাজা কলেজে যোগ দেন। তিন বছর পর ১৯২১ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম জর্জ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন।

এই পদটি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় অধ্যাপকের পদ। এরপর ১৯৩১ সালের ১লা মে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি উপাচার্য পদে যোগ দেন। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাধাকৃষ্ণাণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ধর্ম ও নীতিবিদ্যার স্প্যালডিং অধ্যাপক পদে নিযুক্ত ছিলেন। একজন ভারতীয় হিসাবে তিনিই প্রথম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৬, ১৯২৯ এবং ১৯৩০ সালে অক্সফোর্ডের ম্যানচেস্টার কলেজের আপটন লেকচারার ছিলেন তিনি।

১৯৩০ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ধর্ম বিভাগে হ্যাস্কেল লেকচারার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছর ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন।

গ্রন্থরচনা : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাধাকৃষ্ণাণের দার্শনিক বিষয়ক বক্তৃতা খুবই প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একাধিক দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করেন, যা আলোড়ন সৃষ্টি করে পন্ডিত মহলে। তাঁর ‘অ্যান আইডিয়ালিস্ট ভিউ অফ লাইফ’ গ্রন্থটির জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্যও বিবেচিত হয়েছিলেন যদিও শেষ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার প্রাপক হিসাবে তাঁর নাম নির্বাচিত হয়নি। ১৯৭৫ সালে ‘প্রগতিতে ধর্মের অবদান’ বিষয়ক রচনার জন্য পেয়েছিলেন ‘টেম্পলটন’ পুরস্কার।

বিশ্বের দরবারে তিনি একজন জনপ্রিয় দার্শনিক ও অধ্যাপক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লেখালিখি করতেন। সেইসময়েই তিনি লেখেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য ফিলোজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’। ১৯২০ সালে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ “দ্য রেইন অফ রিলিজিয়ন ইন কনটেমপোরারি ফিলোজফি’ প্রকাশিত হয়।

তুলনামূলক ধর্ম ও দর্শনের ব্যাখ্যা : রাধাকৃষ্ণাণ তুলনামূলক ধর্ম ও দর্শনে বিংশ শতাব্দীর ভারতের অন্যতম সেরা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর হিন্দু ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা এবং ‘আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উপর জোর দেওয়া হিন্দু ধর্মকে পাশ্চাত্যের মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল। তাঁর মতে, “যদি ধর্মের দর্শনকে বৈজ্ঞানিক হতে হয়, তবে তা অবশ্যই অভিজ্ঞতামূলক হয়ে উঠতে হবে”। তিনি বেদে এই অভিজ্ঞতাবাদের উদাহরণ দেখেছেন।

ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব : ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ইউনেস্কোতে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং পরে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ভারতের গণপরিষদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৬২ সালে তিনি ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন।

বৈবাহিক জীবন : পারিবারিক রীতি অনুযায়ী মাত্র ১৬ বছর বয়সে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়া শিবাকার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ কন্যা সন্তান এবং এক পুত্র সন্তান ছিল। তাঁদের একমাত্র পুত্রের নাম সর্বপল্লী গোপাল যিনি ইতিহাসবিদ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। অবশ্য রাধাকৃষ্ণাণের স্ত্রী শিবাকামু ১৯৫৬ সালের ২৬শে নভেম্বর পরলোক গমন করেন।

পুরস্কার ও সম্মান : দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ বারবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। ১৯৩১ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধি পান। ১৯৩৮ সালে তিনি ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির ফেলো হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান “ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালে তিনি জার্মান বুক ট্রেডের শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৬৩ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকার দ্বারা ‘অর্ডার অফ মেরিট’এ সম্মানিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম সাহিত্য অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ পান।

১৯৭৫ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেমপ্লেটন পুরস্কার পান, কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার মূল্যের সমস্ত অর্থই তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে দেন। ১৯৮৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাধাকৃষ্ণাণ স্কলারশিপ’ প্রদান করা শুরু করে, পরবর্তীকালে সেই স্কলারশিপের নামান্তর হয়ে ‘রাধাকৃষ্ণাণ সিভেনিং স্কলারশিপ’ নামে পরিচিত হয়। এছাড়া তিনি মোট ১৬ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ১১ বার মনোনীত হন।

শিক্ষক দিবস : ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ নিজের সমস্ত জীবন শিক্ষার জন্য, প্রগতির জন্য এবং মানবকল্যাণের কাজে নিবেদন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ‘হেল্পএজ ইন্ডিয়া’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই ‘হেল্পএজ ইন্ডিয়া’ সংস্থাটি দেশের অসহায় বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা করার জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা। তাই ‘জাতীয় শিক্ষক সংস্থা’ ১৯৬২ সালে তাঁর জন্মদিনটি দেশজুড়ে পালন করার জন্য উদ্যোগী হয়। তিনি তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন।

কিন্তু তিনি নিজের জন্মদিন পালনে আপত্তি জানান এবং বলেন তাঁর জন্মদিন উদযাপন করতে হলে, তা শিক্ষক দিবস হিসাবে উদ্যাপিত করা হোক। সে দিন প্রথম ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসাবেই তাঁর জন্মদিনটি পালন করা হয়। তারপর থেকেই এই দিনটিকে সমগ্র ভারতবর্ষে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। যদিও ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয় ৫ই অক্টোবর। কিন্তু ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন হিসাবে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে ভারতবর্ষে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।

জীবনাবসান : অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল ভারতের চেন্নাইয়ে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

জীবনী -২

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী :

জন্ম ও ব্যক্তি জীবন : এই মহান শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর পল্লী অঞ্চলের তিরুতান্নি গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সর্বপল্লী বীরস্বামী পেশায় একজন বিদ্বান ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন এবং মাতা সীতাম্মা ছিলেন গৃহপত্নী। তিনি একে একে শৈশব, কৈশোর জীবন পার করে যৌবন পর্যায়ের প্রথম ভাগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯০৪ সালে শিরুকামু দেবীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হন। তিনি পাঁচ কন্যা ও এক পুত্রের পিতা হন। মহান শিক্ষাবিদ সর্বপল্লী গোপাল ছিলেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের একমাত্র পুত্র।

শিক্ষা জীবন : সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান প্রথম থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিরুতান্নি গ্রামে শিক্ষায় হাতে খড়ি করার পর তাঁর পিতা তাকে তিরুপতিতে লুথারাণ খ্রিষ্টান মিশন স্কুলে ভর্তি করেন। সেখানেই ১৮৯৪ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা অর্জনের পর ভেলোরের এক কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। এরপর মাদ্রাজ খ্রিষ্টান কলেজে।পরবর্তী শিক্ষা শেষ করেন। ১৯০৬ সালে দর্শন শাস্ত্র বিষয়ের ওপর M.A করেন। তাঁর বিষয় ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমুর্ত পূর্বকল্পনা’। তিনি জীবনের কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি৷

কর্ম জীবন : কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের অত্যন্ত মেধাবী শান্ত ছেলেটি ১৯০৯ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের শিক্ষক হন ও ১৯১৬ সালে দর্শনের সহকারী অধ্যাপক হন। ১৯২৮ সালে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি মাদ্রাজের যে কলেজ থেকে M. A ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন,পরবর্তীতে সেই কলেজের উপাচার্য হন। তিনি বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হন। এমনকি তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন : পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত গণপরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি কাজ সম্পাদন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছিলেন। সংসদে তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৫২ সালে ১৩ ই মে স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের
১৩ ই মে পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর অর্থাৎ দু-বার দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন। এরপর তিনি ওই বছরই দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন।

১৯৬৭সালের ১৩ই মে পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে শিক্ষক দিবস উদযাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই থেকে অর্থাৎ ১৯৬২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে তার জন্মদিনটিকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তাঁকে বিভিন্ন ঘাত- প্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন- একদিকে চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারতের যুদ্ধে চীনের কাছে ভারতের পরাজয় অন্যদিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে রাষ্ট্রে অচল অবস্থা।

পুরস্কার ও সম্মান : আদর্শ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনৈতিকবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা ‘নাইট উপাধি’ লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৩৩-১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ৫বার সাহিত্য বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ একাডেমীর ‘ফেলো’ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কার পান। ঐ বছরই পান জার্মানি বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের ‘সাম্মানিক’ পুরস্কার। ১৯৬১ সালে German Book Trade তত্ত্বাবধানে পান ‘শান্তি’ পুরস্কার। ১৯৬৮ সালে পান ‘সাহিত্য একাডেমী’ পুরস্কার।

লেখনী : ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকাতেও লেখালেখি করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলির মধ্যে প্রথম গ্রন্থ ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore’ এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘The Reign of Religion in Contemporary Philosophy’s’ প্রকাশিত হয়।

জীবনাবসান : একাধিক প্রতিভার অধিকারী ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কার প্রাপ্ত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ মহাশয় ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।

PDF DOWNLOAD ZONE
File Name : সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জীবনী
Language : বাংলা 
Size : 110 KB
Clik Here To Download

আরও পড়ুন :

বেগম রোকেয়া জীবনী 

ভগিনী নিবেদিতা জীবনী

প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবনী 

শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা 

Leave a Comment