গাছ আমাদের বন্ধু | Trees Are Our Friends

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

গাছ আমাদের বন্ধু

গাছ আমাদের বন্ধু : সুপ্রিয় বিদ‍্যার্থীরা আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম গাছ আমাদের বন্ধু প্রবন্ধ রচনা-টি। মাধ‍্যমিক এবং অন‍্যান‍্য ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের এই রচনাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

গাছ আমাদের বন্ধু :

ভূমিকা :

গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা কথা বলতে পরেনা ঠিকই কিন্তু গাছেরও রয়েছে প্রাণ। তারা আঘাতে সারা দেয় বেদনা অনুভব করতে পারে এবং বিষ প্রয়োগে মারা যায়। এই গাছ নানাভাবে মানুষ ও অন‍্যান‍্য জীবজন্তুর প্রাণ রক্ষা করে। শ্বাস প্রশ্বাসের জন‍্য মানুষ বা প্রাণীজগতের বেঁচে থাকার জন‍্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জোগান দেয় এই গাছ।

“ অন্ধভূমি গর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে , তুমি বৃক্ষ , আদিপ্রাণ ”

ধরিত্রীর বক্ষে প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বৃক্ষ। ভূমিগর্ভের অন্ধকার বিদীর্ণ করে বৃক্ষই প্রথম প্রণাম জানায় প্রভাত সূর্যকে। ধরিত্রীর বন্ধ্যাদশা ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে তার বক্ষকে সবুজায়িত করেছে বৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষকে উদ্দেশ করে বলেছেন,   “ মৃত্তিকার বীর সন্তান । ”

আশ্রয় :

ধরিত্রীতে মানুষের আবির্ভাবলগ্নে বৃক্ষই ছিল মানুষের প্রধান আশ্রয় স্থল। আদিম মানুষকে বৃক্ষই দিয়েছে খাদ্য , পরিধেয় আর আশ্রয়। সভ্যতার অগ্রগতিতেও গাছ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়নি বরং তার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃক্ষকে আশ্রয় করেই মানুষের জীবনচক্র আজও আবর্তিত হয়ে চলেছে।

তপোবন : প্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ

তপোবনের মধ্যে প্রাচীন ভারতবর্ষে একদিন সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল । এখানেই ভারতীয় ঋষিরা বৃক্ষের বাণী শুনতে পেয়েছিলেন। তপোবন ছিল তাদের সাধনক্ষেত্র । আরণ্যক পরিবেশে তাঁরা মহৎ জীবনসত্য উপলব্ধি করেছিলেন। এখানেই রচিত হয়েছিল ‘ বেদ – উপনিষদ ’। এখানেই আর্য ঋষিরা সামগান করেছিলেন । তাই দেখা যায় রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যে অরণ্যের প্রভাব এত বেশি । রামচন্দ্রের চোদ্দো বছর বনবাস , মহাভারতের বনপর্ব সবই অরণ্যের সঙ্গে নিবিড় যোগ ঘোষণা করেছে।

নগরসভ্যতার নির্মমতা :

অতীতের সে আরণ্যক জীবন আর পাওয়া যায় না । এসেছে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। বনভূমির অভাবে বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে , বেড়েছে মরুভূমি। যার জন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-

“ দাও ফিরে সে অরণ্য
লহ এ নগর । ”

বৃক্ষের নিত্যব্যবহার্য :

গাছ আমাদের বন্ধু নয় শুধু পরম উপকারী বন্ধু। বৃক্ষ থেকে পশুর খাদ্য , মানুষের খাদ্য , নানা রোগ নিরাময়ের ওষুধপত্র পাওয়া যায় । রং , তেল , চিনি– এ সবই হল বৃক্ষের দান । সভ্য মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হল কাগজ । গাছ থেকেই এই কাগজ তৈরি হয় । স্থলযান , নৌযান , গৃহনির্মাণ , গৃহসজ্জার আসবাব নির্মাণে গাছের অবদান সর্বাধিক।

ঔষধ তৈরিতে গাছের ভূমিকা :

আমাদের চারপাশে এমন কিছু গাছপালা আছে যাদের আমরা ভেষজ উদ্ভিদ বলে থাকি। সেই গাছগুলির ছাল, লতাপাতা, শিকড় প্রভৃতি ঔষুধ তৈরিতে ব‍্যবহৃত হয়। যেমন সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে কুইনাইন তৈরি হয় যা ম‍্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধ করে। কলমেঘ, নয়নতারা, শ্বেতচন্দন প্রভৃতি উদ্ভিদ ভেষজ গুন সম্পন্ন।

অরণ‍্যবৃদ্ধি :

সবুজ রং মানুষের দৃষ্টিকে নন্দিত করে । শ্যামল প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে মানুষের মন সতেজ হয় । সুন্দরবন অঞ্চলে যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন হওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে । পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য বনবৃদ্ধির প্রয়োজন । আর বনবৃদ্ধি হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয়।

বনমহোৎসব :

বনবৃদ্ধির মানসে রবীন্দ্রনাথ শ্রাবণ মাসে শান্তিনিকেতনে ‘ বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন — ‘ মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে / হে প্রবল প্রাণ । … মাধুরী ভরিবে ফুলে ফলে পল্লবে / হে মোহন প্রাণ ‘ -মরুবিজয় করতে এবং ফুল – ফলে – পল্লবে মাধুরী ভরে তুলতেই বনমহোৎসবের সূচনা । সরকারও এই উৎসবকে গ্রহণ করেছে।

বৃক্ষচ্ছেদন নয় বৃক্ষরোপণ :

বনমহোৎসবে বৃক্ষরোপণই শেষ কথা নয় । শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে পরম যত্নে লালনপালন করে মা তাঁকে বড়ো করে তোলেন । তেমনি শিশু বৃক্ষকেও সযত্ন পালনে বড়ো করে তোলা প্রয়োজন । সরকারি , বেসরকারি স্কুলকলেজ , সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বনমহোৎসব প্রতি বছর প্রতিপালিত হয় । পরম পরিতাপের বিষয় এই যে , সাড়ম্বরে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের পর রোপিত বৃক্ষ যাতে বিনষ্ট না – হয় , সেদিকে কারও লক্ষ থাকে না । তাই আজকের দিনের মন্ত্র হওয়া উচিত ‘ গাছ লাগাও , প্রাণ বাঁচাও ‘।

মূল‍্যায়ন :

মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় গাছের কোন তুলনা নেই।কিন্তু বর্তমানে আমরাই নির্বিচারে গাছকেটে হারিয়ে ফেলছি আমাদের পরম বন্ধুকে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছ তাই গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। স্লোগানের কথা মনে রেখে আমাদের সবাইকে শপথ নিতে হবে গাছ আমাদের বন্ধু তাই গাছকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের এবং আমাদের আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন : 

বাংলার উৎসব রচনা 

আমার প্রিয় ঋতু রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

বনসৃজন প্রবন্ধ রচনা 

●  বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল 

 বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

1 thought on “গাছ আমাদের বন্ধু | Trees Are Our Friends”

Leave a Comment