প্রোটিন কাকে বলে ? প্রোটিনের উৎস, কাজ, গঠন, শ্রেণীবিভাগ, ধর্ম ও পুষ্টিগত গুরুত্ব | What is Protein

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

প্রোটিন কাকে বলে – what is protein : সুপ্রিয় পাঠকবন্ধুরা আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা প্রোটিন কাকে বলে এবং প্রোটিনের, উৎস, কাজ, গঠন, শ্রেণীবিভাগ, ধর্ম ও পুষ্টিগত গুরুত্ব সম্পর্কে নিখুঁত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রোটিন কাকে বলে।

প্রোটিন কাকে বলে ? প্রোটিনের উৎস, কাজ, গঠন, শ্রেণীবিভাগ, ধর্ম ও পুষ্টিগত গুরুত্ব | What is Protein

প্রোটিন :

কোশীয় গঠনে প্রোটিনই সবচেয়ে বেশি থাকে। কোশের শুষ্ক ওজনের প্রায় 50% প্রোটিন’। গ্রিক শব্দ প্রোটিওস থেকে প্রোটিন কথার উৎপত্তি ঘটেছে। এর অর্থ প্রথম সারিতে অবস্থান। অর্থাৎ কোশীয় পদার্থগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে যার অবস্থান তাই প্রোটিন। জীবদেহের জন্য অত্যন্ত আবশ্যকীয় এই পদার্থের প্রোটিন হিসাবে নামকরণ করেন ডাচ রসায়নবিদ মাল্ডার (1838 সালে)। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ যে রাসায়নিক পদার্থগুলি উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট ও যেগুলি প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে তাদেরই তিনি প্রোটিন নামে অভিহিত করেন।

পেশি, হাড়, চামড়া, চুল প্রভৃতি দেহের বিভিন্ন অংশে প্রোটিন থাকে। দেহের বিভিন্ন উৎসেচক এমনকি রক্তের হিমোগ্লোবিনও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। আমাদের শরীরে প্রায় 1000 ধরনের প্রোটিন থাকে। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের মতে প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রতি এক কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য 0.8 gm প্রোটিন দরকার। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এমন মত পোষন করা হয় যে একজন 19 বছরের মহিলার প্রতিদিন 46 গ্রাম প্রোটিন দরকার ও 19 বছরের পুরুষের 56 গ্রাম প্রোটিন দরকার। সারা পৃথিবী থেকে তথ্য পাওয়া যায় লক্ষ লক্ষ লোক প্রোটিনের চাহিদা পুরণ করতে পারে না। এজন্য তাদের বৃদ্ধি প্রতিহত হয় অনেকে আবার কোয়াশিওরকর বলে মারাত্মক রোগের কবলে পড়ে।

প্রোটিন কাকে বলে :

কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সহযোগে গঠিত অ্যামাইনো অ্যাসিডের মনোমার পেপটাইড বন্ধনী দিয়ে পরস্পর আবদ্ধ হয়ে যে জটিল জৈব যৌগ (পলিমার) গঠন করে তাকে প্রোটিন বলে। প্রোটিন কুড়িটি বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত সরল অশাখ নাইট্রোজেনঘটিত পলিমার।

প্রোটিনের উৎস :

মাছ, মাংস, ডিম, ছানা প্রভৃতিতে প্রাণীজ প্রোটিন এবং সয়াবিন, ডাল, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থাকে।

প্রোটিনের গঠন :

প্রধানত এক বা একাধিক পলিপেপটাইড শৃঙ্খল দ্বারা প্রোটিন গঠিত হয়। প্রতিটি পলিপেপটাইড আবার অনেক অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে সৃষ্ট। কখনো-কখনো পলিপেপটাইডের সাথে কোনো অপ্রোটিন অংশও যুক্ত থাকে। তবে কার্যকরী কোনও প্রোটিনকে শুধু অ্যামাইনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল বললেও কিছু ত্রুটি থেকে যায়। কার্যকরী প্রোটিন সাধারণত ত্রিমাত্রিক গঠনে থাকে। এই গঠনে একটি সরল অ্যামাইনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল গৌণ অবয়ব সৃষ্টি করে ভাঁজপ্রাপ্ত হয়। আবার কোনো প্রোটিনে চতুর্মাত্রিক গঠনও লক্ষ করা যায়। এই সকল কারণে একটি কার্যকরী প্রোটিন গঠনের কয়েকটি ধাপ লক্ষ করা যায়।

প্রথমত কতগুলি অ্যামাইনো অ্যাসিড পরস্পর জোড়া লেগে রৈখিক সজ্জায় একটি পলিপেপটাইড সৃষ্টি করে। এইরকম পলিপেপটাইড গঠনকে প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন বলে। প্রাথমিক গঠনের পলিপেপটাইড α-হেলিক্স বা β-প্লিটেড বা শিট গঠন করে গৌণ অবয়ব সৃষ্টি করে। গৌণ গঠন হতে আবার ত্রিমাত্রিক ও কখনো-কখনো চতুর্মাত্রিক সৃষ্টি হয়।

অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন অণুতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক- উভয় প্রকার আয়নীয় অবস্থা দেখা যায়। তাই এদের অ্যাম্ফিপ্যাথিক অণু বলে। এক্ষেত্রে ধনাত্মক অংশটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের অ্যামাইনো (NH2) গ্রুপ থেকে এবং ঋণাত্মক অংশটি কার্বক্সিল (−COOH) গ্রুপ থেকে আসে।

যে pH-মাত্রায় উভয় আয়নের পরিমাণ সমান হয় তাকে Isoelectric pH বলে। ঐরূপ আয়নকে জুইটার আয়ন বলে। এই সময় অ্যামাইনো অ্যাসিডের মোট আধানের পরিমাণ ‘শূন্য’ থাকে। বলা বাহুল্য যে কোনো প্রোটিনই মূলত কোয়াটারনারি গঠনে থাকা অবস্থাতেই সক্রিয়তা লাভ করে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টারসিয়ারি গঠনে থাকা অবস্থাতেই এটি সক্রিয় থাকে।

প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ :

জীবদেহে প্রাপ্ত প্রোটিনের নানাভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়, যথা-সরল প্রোটিন, যুগ্ম প্রোটিন এবং ডিরাইভড বা আহৃত প্রোটিন।

A. সরল প্রোটিন কাকে বলে :

কেবলমাত্র অ্যামাইনো অ্যাসিড সংযোজিত হয়ে যে প্রোটিন গঠিত হয় তাকে সরল প্রোটিন বলে। অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইড গঠন করে। এই পলিপেপটাইডই প্রোটিনকে কার্যকরী রূপদান করে। তবে সরল প্রোটিনে এক বা একাধিক পলিপেপটাইডের সমাবেশ দেখা যায় ও পলিপেপটাইডের সংখ্যা অনুযায়ী সরল প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ করা যায়, যেমন-

i. মনোমেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে একটিমাত্র পলিপেপটাইড শৃঙ্খল থাকে, উদাহরণ-সাইটোক্রোম C ।

ii. ডাইমেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে দুটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল থাকে, উদাহরণ- ট্রান্সঅ্যামাইলেজ।

iii. ট্রাইমেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে তিনটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল থাকে, উদাহরণ- হিমেরিনি ।

iv. টেট্রামেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে চারটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল থাকে, উদাহরণ- হিমোগ্লোবিন। সুতরাং, প্রোটিনে পলিপেপটাইডের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তার নামও পরিবর্তিত হয়।

v. অলিগোমেরিক প্রোটিন : যে সকল প্রোটিনে পলিপেপটাইডের সংখ্যা 2-10, তাদের সাধারণভাবে বলা হয় অলিগোমেরিক প্রোটিন।

vi. মাল্টিমেরিক প্রোটিন : অধিক অ্যামাইনো অ্যাসিড সহযোগে (10-এর বেশি) গঠিত প্রোটিনকে মাল্টিমেরিক প্রোটিন বলে। আবার এই প্রোটিন দু-শ্রেণির হয়ে থাকে, যথা-

a. হোমোমেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে সকল পলিপেপটাইড একই জাতীয়, যেমন-β-গ্যালাক্টোসাইডেজ।

b. হেটারোমেরিক প্রোটিন : যে প্রোটিনে একাধিক রকমের পলিপেপটাইড থাকে, যেমন- হিমোগ্লোবিন।

আকৃতি ও দ্রাব্যতা অনুযায়ীও প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ হয়ে থাকে। আকৃতি অনুযায়ী দুই প্রকার প্রোটিন পাওয়া যায়, যেমন- ফাইব্রাস বা তত্ত্বময় প্রোটিন ও গ্লোবিউলার প্রোটিন ।

a. তত্ত্বময় বা ফাইব্রাস প্রোটিন কাকে বলে : যখন প্রোটিনে পলিপেপটাইডগুলি সমান্তরালভাবে একটি অক্ষ বরাবর সজ্জিত থাকে, তখন তা লম্বা তত্ত্বর আকার ধারণ করে। এমন আকৃতির প্রোটিনকে ফাইব্রাস প্রোটিন বলে। উদাহরণ- সিল্কের ফাইব্রোইন, কোলাজেন ও কেরাটিন। দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ।

b. গ্লোবিউলার প্রোটিন কাকে বলে : প্রোটিনের গঠন গোলাকার হলে তাকে গ্লোবিউলার প্রোটিন বলে। মায়োগ্লোবিন, ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন ও অ্যালকালাইন ফসফাটেজ এই জাতীয় প্রোটিন। উক্ত প্রোটিনগুলি বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় নিয়ন্ত্রণকারী কাজ করে থাকে।

B. যুগ্ম প্রোটিন কাকে বলে :

যখন প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিড ছাড়াও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ সহযোগে তৈরি হয়, তখন তাকে যুগ্ম প্রোটিন বা কনজুগেটেড প্রোটিন বলে। যুগ্ম প্রোটিনের অপ্রোটিন অংশকে প্রোস্থেটিক গ্রুপ বলে। প্রোস্থেটিক গ্রুপ প্রোটিনের পর্য ঠিক করে। অপ্রোটিন অংশের প্রকৃতি অনুযায়ী যুগ্ম প্রোটিনকে আবার কতকগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমন-

i. গ্লাইকোপ্রোটিন : অপ্রোটিন অংশটি যখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, উদাহরণ- ফাইব্রোনেকটিন, প্রোটিওগ্লাইকান ইত্যাদি।

ii. লাইপোপ্রোটিন : অপ্রোটিন অংশটি যখন লিপিড, উদাহরণ- সিরাম এল ডি এল।

iii. নিউক্লিওপ্রোটিন : প্রোটিন যখন নিউক্লিক অ্যাসিড যুক্ত হয়, উদাহরণ- ক্রোমাটিন।

iv. ফসফোপ্রোটিন : এই ক্ষেত্রে প্রোটিনের সাথে ফসফেট গ্রুপ যুক্ত থাকে। উদাহরণ- কেসিন ।

v. মেটালোপ্রোটিন : যখন প্রোটিন ধাতব পদার্থ সহযোগে গঠিত হয়, উদাহরণ- সাইটোক্রোম অক্সিডেজ, ফেরিটিন ও নাইট্রোজিনেজ এবং হিমোপ্রোটিন বা হিমগ্রুপ যুক্ত প্রোটিন, যেমন- হিমোগ্লোবিন, মেটালোপ্রোটিনের অর্ন্তত।

vi. ফ্ল্যাভোপ্রোটিন : যে সকল প্রোটিন ফ্ল্যাভিন গ্রুপ যুক্ত, উদাহরণ- সাক্সিনেট ডিহাইড্রোজিনেজ, NADH-ডিহাইড্রোজিনেজ ও সালফাইড রিডাক্টেজ ।

C. ডিরাইভড বা আহৃত প্রোটিন কাকে বলে :

কোশস্থ প্রোটিনগুলি অ্যাসিড, ক্ষার অথবা উৎসেচকের প্রভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে কিছু উপজাত পদার্থ উৎপন্ন করে। এদের ডিরাইভড বা আহৃত প্রোটিন বলে। এই প্রকার প্রোটিনকে আবার চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যেমন-

i. মুখ্য বা প্রাথমিক আহৃত প্রোটিন : অ্যাসিড বা উৎসেচকের প্রভাবে প্রোটিন থেকে প্রথম যে বস্তু উৎপন্ন হয় তাকে এই শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এরা সাধারণত জলে দ্রবণীয়। এদের প্রোটিয়ান -ও বলে।

ii. মেটাপ্রোটিন : অ্যাসিড বা ক্ষারের সঙ্গে প্রোটিনের অধিক সময় বিক্রিয়া ঘটলে মেটাপ্রোটিন উৎপন্ন হয়।

iii. কোয়াগুলেটেড প্রোটিন : তাপ অথবা অ্যালকোহলের প্রভাবে প্রোটিনের অবস্থান্তর ঘটে ও প্রোটিন জমে যায়। এমন অবস্থায় প্রোটিনের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় ও একে কোয়াগুলেটেড প্রোটিন বলে।

iv. গৌণ প্রোটিন : আর্দ্র বিশ্লেষণের ফলে প্রোটিন থেকে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু সৃষ্টি হয় তারা এই গোত্রীয়। প্রোটিওজ ও পেপটোন এই রকম প্রোটিন।

প্রোটিনের ধর্ম :

A. ভৌত ধর্ম :

i. প্রোটিন বৃহদাকার জৈব যৌগ ও এদের আণবিক গুরুত্ব 17,450 – 6,70,000 হতে পারে।

ii. প্রোটিন জলে দ্রবণীয় কিন্তু অ্যালকোহলে অদ্রবণীয়।

iii. তাপ প্রয়োগে প্রোটিন তঞ্চিত হয় ও তখন এর কার্যক্ষমতা থাকে না।

iv. X-ray, UV-rays ও উচ্চ চাপে প্রোটিন বিকৃতি লাভ করে।

v. প্রোটিনের বিশেষ তড়িৎ ধর্ম থাকে। এই অনুসারে কোনো প্রোটিন ঋণাত্মক ও কোনো প্রোটিন ধনাত্মক আধানযুক্ত হয়ে থাকে। কোনো কোনো প্রোটিনে দুই আধানই সমান সংখ্যায় থাকে, এদের অ্যাম্ফোটেরিক প্রোটিন বলে। এই কারণে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিনকে আলাদা করা যায়।

B.  রাসায়নিক ধর্ম :

i. প্রোটিন সাধারণত তড়িৎধর্মী ও বাফার দ্রবণ হিসাবে কাজ করে।

ii. ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, সোডিয়াম সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট দ্রবণে প্রোটিন অধঃক্ষিপ্ত হয়।

iii. যে সকল প্রোটিনে ফেনল বা ইন্ডোল গ্রুপ থাকে তারা ঘন HNO3-এর সঙ্গে অধিক উষ্ণতায় বিক্রিয়া ঘটিয়ে হলুদ অধঃক্ষেপ ফেলে।

iv. মিলন বিক্রিয়া, সাকাগুচি বিক্রিয়া ও বাই-ইউরেট পরীক্ষায় প্রোটিন সাড়া দেয়।

v. গাঢ় খনিজ অ্যাসিড, অ্যাসিটোন, অ্যালকোহল, ইউরিয়া, ভারী ধাতব আয়ন, সোডিয়াম ডোডেসাইল সালফেট প্রভৃতির ক্রিয়ায় প্রোটিন ভেঙে যায় ও তার স্বাভাবিক ক্রিয়া নষ্ট হয়।

C. জৈবিক ধর্ম বা প্রোটিনের কাজ :

i. জীবদেহের বিভিন্ন অংশ সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন কাজ করে।

ii. উৎসেচক ধর্মী প্রোটিন বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

iii. কোনো কোনো প্রোটিন বিভিন্ন পদার্থের পরিবহণে ব্যবহৃত হয়। যেমন- হিমোগ্লোবিন O2, CO2 পরিবহণে ব্যবহৃত হয়।

iv. কোনো কোনো প্রোটিন জিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। DNA-এর সঙ্গে আবদ্ধ হিস্টোন এই প্রকার প্রোটিন।

v. কোশীয় চলন অথবা প্রাণীদের গমন কার্যে প্রোটিনের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়। টিবিউলিন, অ্যাকটিন, মায়োসিন প্রভৃতি প্রোটিন চলনে সাহায্য করে।

vi. শরীরের বিভিন্ন প্রকার অঙ্গের কার্য নিয়ন্ত্রণেও কোনো কোনো প্রোটিনের ভূমিকা লক্ষ করা যায়। যেমন- প্রোটিন হরমোন। এইরকম হরমোনগুলি সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।

vii. অ্যান্টিবডি জাতীয় প্রোটিনগুলি রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে।

viii. প্রোটিন DNA-এর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে ক্রোমাটিন গঠনে সাহায্য করে।

ix. কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের অভাবে প্রোটিনই শক্তির জোগান দেয়।

প্রোটিনের পুষ্টিগত গুরুত্ব :

i. দেহগঠন : জীবদেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিন ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কোশের গঠনবস্তুর বেশিরভাগই প্রোটিনযুক্ত। দেহের অস্থি, তরুণাস্থি, কণ্ডরা, বন্ধনী, পেশি, কিউটিকল; পশু-পাখির পালক, রোম, নখ, ক্ষুর, শিং প্রভৃতি প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়।

ii. দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি : দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন- গমন, শ্বসন, রেচন, জনন ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য দেহের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পূরণ করার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া প্রাণীদের বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত চলে। এই বৃদ্ধি দশায় প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের অভাব হলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

iii. উৎসেচক সংশ্লেষ : জীবদেহে উৎসেচক জৈব অনুঘটকরূপে কাজ করে। এই উৎসেচক প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। দেহের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া অর্থাৎ বিভিন্ন জটিল যৌগের সংশ্লেষ কিংবা জটিল যৌগের ভাঙনের জন্য এনজাইম বা উৎসেচক আবশ্যক। অর্থাৎ প্রোটিন পরোক্ষভাবে জীবদেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

iv. হরমোন সংশ্লেষ : জীবদেহে হরমোন রাসায়নিক দূত হিসেবে কাজ করে। জীবদেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য হরমোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বিশেষ কয়েকটি হরমোন, যেমন- ইনসুলিন, সোমাটোট্রফিক হরমোন, লিউটিওট্রফিক হরমোন ইত্যাদি মূলত প্রোটিন দিয়ে তৈরি।

v. অ্যান্টিবডি উৎপাদন : দেহে রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ‘অ্যান্টিবডি’ সংশ্লেষের ক্ষেত্রে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

vi. হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষ : রক্তের হিমোগ্লোবিন একধরনের যুগ্ম প্রোটিন। এটি গ্লোবিন নামক প্রোটিন ও হিম নামক রঞ্জকের সমন্বয়ে গঠিত হয়। হিমোগ্লোবিন দেহে শ্বাসবায়ু অর্থাৎ O2 ও CO2 পরিবহণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

vii. শক্তির উৎস : বিশেষ প্রয়োজনে প্রোটিন দেহে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। 1 গ্রাম প্রোটিন জারণে 4.1 কিলোক্যালোরি শক্তি উৎপন্ন হয়। দেহে শর্করার অভাব হলে প্রোটিন জারণের দ্বারা শক্তি উৎপন্ন হয়।

এক গ্রাম প্রোটিনের শক্তিমূল্য 5.0-5.5 কিলোক্যালোরি। কিন্তু একগ্রাম প্রোটিনের শারীরবৃত্তীয় শক্তিমূল্য 4.1-4.2 কিলোক্যালোরি। কারণ সজীব কোশে অ্যামাইনো অ্যাসিড বিপাকের সময় কিছু নন্-প্রোটিন নাইট্রোজেন নির্গত হয় যেগুলি শক্তি উৎপন্ন করে না। তাই শারীরবৃত্তীয় শক্তিমূল্য কম হয়।

viii. অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ : দশটি অ্যামাইনো অ্যাসিড (লিউসিন, আইসোলিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, হিস্টিডিন, ফিনাইল অ্যালানিন, ট্রিপটোফ্যান, থ্রিওনিন, ভ্যালিন ও আর্জিনিন) দেহ তৈরি করতে পারে না, এদের বলা হয় অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড। বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের মাধ্যমে এই অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি দেহে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ix. প্রোটোপ্লাজম সংশ্লেষ : প্রতিটি সজীব কোশের প্রোটোপ্লাজম অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে সংশ্লেষিত হয়।

x. প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষ : যকৃতে অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে প্লাজমা প্রোটিন (অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোথ্রম্বিন, ফাইব্রিনোজেন) সংশ্লেষিত হয়।

আরও পড়ুন : 

ফল কাকে বলে ? ফলের প্রকারভেদ ও গঠন ?

ভাইরাস কাকে বলে ? ভাইরাসের আবিস্কার,প্রকৃতি, উৎপত্তি, অবস্থান, আকার ও বৈশিষ্ট্য ?