DNA কাকে বলে ? DNA এর কাজ, গঠন, প্রকারভেদ, আকার ও তাৎপর্য

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

DNA কাকে বলে ? DNA এর কাজ, গঠন, প্রকারভেদ, আকার ও তাৎপর্য

ডিএনএ কাকে বলে – what is DNA : সুপ্রিয় পাঠকবন্ধুরা আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা DNA কাকে বলে এবং DNA এর গঠন, প্রকারভেদ, আকার, কাঝ ও তাৎপর্য সম্পর্কে নিখুঁত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে। নীচে DNA এর তিনটি সংজ্ঞা প্রদান করা হল। চলুন দেখে নেওয়া যাক DNA কাকে বলে।

DNA কাকে বলে :

ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে তাকে DNA বলে।

■ সজীব কোশে অবস্থিত স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম সমস্ত প্রকার জৈবিক কার্যের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রক যে নিউক্লিক অ্যাসিডকে DNA বলে।

■ নাইট্রোজেন বেস, ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা এবং ফসফোরিক অ্যাসিড সহযোগে গঠিত যে দীর্ঘ জৈব অণু স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম এবং জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক তাকে DNA বলে।

সজীব কোশের জিনবস্তু DNA হওয়ায় DNA ছাড়া সজীব কোশ প্রায় বিরল। প্রাণী ও উদ্ভিদদেহে কোশের ক্রোমাটিন বস্তুতে DNA থাকে। কোনো কোনো অঙ্গাণুতে (যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাসটিড ইত্যাদি) DNA-এর উপস্থিতি দেখা যায়। কোশে এই বৃহৎ জৈব যৌগটি প্রোটিনের সাথে সংবদ্ধ থাকে। প্রোটিনবিহীন DNA সাধারণভাবে দুটি নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল সমন্বিত যৌগ। এটি দ্বিতন্ত্রী DNA প্যাচানো সিঁড়ির আকারে অবস্থান করে।

DNA-এর গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ধারণা দিয়েছেন জেমস ওয়াটসন  ও ফ্রান্সিস ক্রিক। DNA-এর গঠন নিয়ে যে মডেল বা নকশা তাঁরা তৈরি করেন তাকে DNA ডবল হেলিক্স বা প্যাচানো দ্বিতন্ত্রী মডেল বলে। 1953 খ্রিষ্টাব্দের এই মডেলের জন্য ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিন্‌স 1962 খিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওয়াটসন ও ক্রিকের এই নকশা তৈরিতে উইলকিনস্ ও ফ্রাঙ্কলিনের DNA-এর এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফ বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। এ ছাড়া চারগফ্ -এর DNA-এর রাসায়নিক বিশ্লেষণও এই মডেল তৈরিতে অনেকাংশে সাহায্য করে।

DNA এর গঠন :

ওয়াটসন ও ক্রিকের DNA মডেল :

DNA ডবল হেলিক্স মডেল অনুযায়ী DNA অণুর গঠনভঙ্গি নিম্নরূপে বর্ণনা করা যায়-

1. DNA দুটি নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলযুক্ত একটি বৃহৎ জৈব যৌগ।

2. নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল দুটি পাশাপাশি অবস্থান করে ও প্যাচানো সিঁড়ির আকারে একটি কাল্পনিক অক্ষ বরাবর ডানাবর্তী পাকে বিন্যস্ত থাকে।

3. দুটি নিউক্লিওটাইড তত্তুর একটি অপরটির পরিপূরক। একটি তত্তুর পিউরিন ও পিরিমিডিন সজ্জা অপর তন্তুর পিরিমিডিন ও পিউরিন সজ্জা ঠিক করে। একটি তত্ত্বতে ঠিক যতগুলি পিউরিন থাকে অপর তন্তুতে ঠিক ততগুলি পিরিমিডিন থাকে অর্থাৎ দ্বিতন্ত্রী DNA-তে পিউরিন ও পিরিমিডিনের অনুপাত সাধারণত এক। পিউরিন ও পিরিমিডিনের এই সমতাকে বলে চারগফের নীতি।

4. দুই নিউক্লিওটাইড তন্তুর পাশাপাশি অবস্থান এক তন্তুর পিউরিন ও অপর তন্তুর পিরিমিডিনের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধনী তৈরি হয় বলে সম্ভব হয়। হাইড্রোজেন বন্ধনী তৈরির সময় অ্যাডেনিন ও থাইমিনের  মাঝে সর্বদা দুটি হাইড্রোজেন বন্ধনী জোড় বাঁধে ও পাশাপাশি অবস্থান করে। অপরদিকে গুয়ানিন ও সাইটোসিনের মাঝে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধনী জোড় বাঁধে ও পাশাপাশি অবস্থান করে। পিউরিন ও পিরিমিডিনের এই জোড় বাঁধার রীতিকে ওয়াটসন-ক্রিকের বেস জোড়ীভবন নীতি বলা হয়।

5. পাশাপাশি নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল দুটি বিপরীতমুখী আণবিক সজ্জায় অবস্থান করে, সে জন্য দুই তন্তুর অবস্থানকে বিপরীত সমান্তরাল বলা হয়। সুতরাং DNA-এর একটি তত্ত্বকে 5’–3′ ভাবে চিহ্নিত করলে অপর তত্ত্বকে 3′ – 5′ রূপে চিহ্নিত করা যায়।

6. প্যাচানো দ্বিতন্ত্রী DNA-তে নিউক্লিওটাইডগুলি একে অপরের উপর থাকে থাকে সাজানো থাকে। এতে বেসগুলি কুণ্ডলীর ভিতরের দিকে এবং শর্করা ও ফসফেট কুণ্ডলীর বাইরের দিকে অবস্থান করে।

7. কুন্ডলীভূত DNA-এর নিউক্লিওটাইড তন্তু দুটি কাল্পনিক অক্ষ থেকে প্রায় 10Å দূরে অবস্থান করে। এই কারণে কুণ্ডলীর সব জায়গার ব্যাস 20Å। প্যাচানো কুণ্ডলীতে একটি পাক প্রায় 34Å-এ সম্পূর্ণ হয়। একটি পূর্ণ পাকে প্রায় 10 জোড়া বেস অবস্থান করে। এই কারণে পার্শ্বস্থ দুই বেস জোড়ের ভিতরের দূরত্ব প্রায় 3.4Å।

DNA এর প্রকারভেদ :

ওয়াটসন ও ক্রিক বর্ণিত DNA-এর গঠন B-DNA হিসেবে পরিচিত। স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় অবস্থায়, 92% আর্দ্রতায় ও স্বাভাবিক লবণ মাত্রায় এই DNA গঠন দেখা যায়। শারীরবৃত্তীয় অবস্থার পরিবর্তন হলে ও আর্দ্রতার হ্রাস কিংবা লবণের আধিক্য দেখা দিলে DNA-এর এমন গঠনের পরিবর্তন আসে। এই কারণে DNA-এর রূপভেদও সম্ভব। মোটামুটি ছয় রকমের DNA বহুরূপতার কথা জানা গেছে। এদের A, B, C, D, T ও Z DNA নামে অভিহিত করা হয়। হেলিক্স এর কুন্ডলীর প্রকৃতি, প্রতিপাকে বেস জোড়ের সংখ্যা, কুন্ডলী অক্ষে বেস জোড়ের উন্নতি, বড়ো ও ছোটো খাদের বা গ্রুভের প্রশস্ততা ও গভীরতা প্রভৃতির তারতম্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন DNA আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে ।

বিশেষ অবস্থার ভিত্তিতে B-DNA, A-DNA কিংবা Z-DNA-তে রূপান্তরিত হতে পারে। তত্ত্বর উপস্থিতি অনুসারে DNA দুরকমের হয়, যথা- i. একতন্ত্রী DNAii. দ্বিতন্ত্ৰী DNA

DNA এর আকার :

বিভিন্ন জীবে DNA-এর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। পোলিও ভাইরাসে DNA বলয়াকার ও এর পরিমাপ প্রায় 1.7 um এবং এতে প্রায় 5,100 বেসজোড় থাকে। এদের DNA-তে মোট জিনসংখ্যা 6টি। T2 ভাইরাসের DNA দন্ডাকার, দৈর্ঘ্য প্রায় 55 um ও এতে প্রায় 1,60,000 বেসজোড় থাকে। এর জিনসংখ্যা প্রায় 100। Escherichia coli নামক ব্যাকটেরিয়াতে একটিমাত্র দ্বিতন্ত্রী বলয়াকার DNA থাকে ও এর পরিমাপ প্রায় 1 mm । 4,000 জিন সম্বলিত E. coli DNA-তে প্রায় 40 লক্ষ বেসজোড় বর্তমান। ইউক্যারিওটিক কোশের DNA দন্ডাকার ও এক একটি DNA এক একটি ক্রোমোজোমে নিহিত থাকে। মানুষের দেহকোশের 23 জোড়া ক্রোমোজোমে DNA যোগ করলে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় 1.9 মিটার।

DNA এর কাজ :

DNA এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি হল-

i. DNA বংশগত-বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক রূপে কাজ করে।

ii. DNA প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোশের সমস্ত জৈবিক ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

iii. প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ করা DNA-র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

iv. DNA নিজ প্রতিলিপি গঠন করে অপত্য DNA সৃষ্টি করে।

DNA এর জৈবিক তাৎপর্য :

i. কোশের বৃদ্ধি ও বিভাজনকালে DNA নির্ভুল প্রতিলিপি গঠন করতে সক্ষম।

ii. প্রতিটি জীবে DNA-র গঠনকাঠামো নির্দিষ্ট। তবে DNA-তেও হঠাৎ পরিব্যক্তি ঘটতে পারে।

iii. DNA-র মধ্যে কোশের সমস্ত রকমের জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি নিহিত থাকে।

GPqqS কি ? GPS এর ব্যবহার, অবস্থান ও অংশ?