মাটি কাকে বলে ? What is Soil | মাটির প্রকারভেদ, উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মাটি কাকে বলে ? What is Soil | মাটির প্রকারভেদ, উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

মাটি কাকে বলে – what is Soil : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম মাটি কাকে বলে ? মাটি কত প্রকার ও কি কি ? মাটির উপাদান এবং মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

◆ মাটি কাকে বলে :

বহুকাল ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনক শিলার পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে জৈব ও অজৈব পদার্থসমৃদ্ধ যে পাতলা ভঙ্গুর স্তর সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদ জন্মানোর অনুকূল, তাকে মাটি বলা হয়। যেমন- চারনোজেম, পডসল, চেস্টনাট ইত্যাদি।

◆ মাটির প্রকারভেদ :

মাটি তিন প্রকার যথা- এঁটেল মাটি, বেলে মাটি ও দোআঁশ মাটি।

1. এঁটেল মাটি কাকে বলে : যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি, বালির ভাগ কম তাকে এঁটেল মাটি বলে। এঁটেল মাটির জল ধারণ ক্ষমতা সবথেকে বেশি

উৎপাদিত ফসল : এই মাটিতে ধান, পাট ইত্যাদি ফসল ভালো হয়।

2. বেলে মাটি কাকে বলে : যে মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বেলে মাটি বলে। বেলে মাটির জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম

উৎপাদিত ফসল : তরমুজ, ফুটি, কুমড়ো শশা ইত্যাদি ফসল ভালো হয়।

3. দোআঁশ মাটি কাকে বলে : যে মাটিতে কাদা ও বালির ভাগ প্রায় সমান সমান থাকে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। এ মাটির জল ধারণ ক্ষমতা মাঝা মাঝি।

উৎপাদিত ফসল : দোআঁশ মাটি সব থেকে বেশি উর্বর তাই এই মাটিতে বিভিন্ন রকম শাকসবজি ও ফলসহ ধান, গম, ডাল, ভুট্টা, সরষে ইত্যাদি ফসলের ফলন ভালো হয়।

◆ মৃত্তিকার বিভিন্ন উপাদান :

পরিপূর্ণ মৃত্তিকা গঠনে চারটি প্রধান উপাদান লক্ষ করা যায়। এগুলি হল-খনিজ পদার্থ (45%), জৈব পদার্থ (5%), মৃত্তিকার জল (25%) ও মৃত্তিকার মধ্যে বাতাস (25%)।

1. মৃত্তিকার খনিজ পদার্থ : মৃত্তিকা গঠনকারী খনিজগুলি প্রধানত অ্যালুমিনোসিলিকেট জাতীয়। মৃত্তিকায় উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ উপাদানগুলি হল- ফেলসপার, অ্যাম্ফিবোল ও পাইরক্সিন, কোয়ার্টজ, অভ্র, লোহাজাতীয় ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি।

2. মৃত্তিকার জৈব উপাদান : গাছ ও অন্যান্য জীবের অবশিষ্টাংশ, জীর্ণ দেহ ও তাদের দেহাবশেষের মিশ্রণে উদ্ভূত জটিল পদার্থই মৃত্তিকার জৈব উপাদান। এই পদার্থগুলি সর্বদাই মৃত্তিকাতে বসবাসকারী জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর ফলে জৈব উপাদানগুলি অনবরত ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কণায় পরিণত হয়। মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ এবং জীবাণুর দেহকোশ- মৃত্তিকার জৈব পদার্থের প্রধান উৎস। জৈব পদার্থ মৃত্তিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অজৈব পদার্থকে দানাবদ্ধ করতে সাহায্য করে। এই জৈব পদার্থই ফসফরাস ও সালফারের প্রধান উৎস। জৈব পদার্থ মৃত্তিকার জীবাণু শক্তির মূল উৎস। জৈব পদার্থ না থাকলে মৃত্তিকাতে অনেক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সংঘটিত হত না।

● মৃত্তিকার জৈব পদার্থকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় যথা- i. আংশিক বিশ্লেষিত জৈব পদার্থ ও ii. হিউমাস।

প্রথম ভাগটি হল উদ্ভিদ এবং প্রাণী দেহাবশেষের আংশিক বিশ্লিষ্ট ও সংশ্লেষিত জটিল উপাদান সমূহ। উদ্ভিদ এবং জীবাণুকুল তাদের খাদ্য, শক্তি ও বৃদ্ধির জন্য এই উপাদানের ওপর বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল। উত্তমরূপে বিশ্লিষ্ট ও সংশ্লেষিত জটিল জৈব উপাদানকে বলা হয় হিউমাস

মাটির কাদাকণা ও হিউমাস দুই উপাদানই কলয়েড অবস্থায় থাকে। কাদাকণা ও হিউমাস মৃত্তিকার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মকে প্রভাবিত করে এবং এদের মাধ্যমে মাটির অধিকাংশ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। খাদ্য মৌলগুলি ভূপৃষ্ঠের ওপরে থাকায় নীচে ধুয়ে চলে যায় না। উদ্ভিদ পুষ্টি হিসেবে এইসব মৌল সংগ্রহে সক্ষম হয়।

3. মৃত্তিকার জল : মৃত্তিকার আর একটি প্রধান উপাদান হল-জল। জল মৃত্তিকাকে দ্রবীভূত করে। উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে জলের সাহায্যেই পুষ্টি মৌল সংগ্রহ করে। জল মৃত্তিকার ভৌত-রাসায়নিক এবং জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। মৃত্তিকাঙ্খিত জলে মৃত্তিকার লবণকণা দ্রবীভূত হয়। এই দ্রবণ ক্রিয়ার ফলেই উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে শিকড়ের সাহায্যে পুষ্টিমৌল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

4. মৃত্তিকার বায়ু : মৃত্তিকার বায়ু প্রকৃতিগতভাবে আবহাওয়ার বায়ুর থেকে ভিন্ন। মৃত্তিকার বায়ু মৃত্তিকার মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে অবস্থান করে। মৃত্তিকার বায়ু স্থানীয় অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। মৃত্তিকায় যখন জলের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে, তখন এর আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় 100 শতাংশ হয়। এই আবদ্ধ বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেশি, অক্সিজেনের পরিমাণ কম। বৃষ্টির জলে মৃত্তিকা রন্ধ্রগুলি ভর্তি হয়ে যায়। উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে জল ব্যবহার করতে শুরু করলে এবং বাষ্পীভবনের ফলে জল কমতে শুরু করলে মৃত্তিকার মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রন্ধ্রগুলি আবার বায়ুতে পূর্ণ হয়ে যায়। বায়ুর এই গতিময়তা বন্ধ হলে কেবলমাত্র উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, জীবাণুকুলের অস্তিত্বকেও বিপন্ন করে। মৃত্তিকার বায়ু উদ্ভিদ ও জীবাণুকুলের জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য।

◆ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

মৃত্তিকার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

1 ভূত্বকের সর্বোচ্চ স্তর : মৃত্তিকা ভূত্বকের ওপরে অবস্থিত সর্বোচ্চ স্তর। মৃত্তিকা শিলাস্তরের ওপর আচ্ছাদন হিসেবে অবস্থান করে।

2. বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা দীর্ঘকালীন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়।

3. দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। একটি পরিণত মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে কয়েক শত বছর থেকে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

4. জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ : জৈব পদার্থ মৃত্তিকার একটি অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যুর পর তাদের দেহাবশেষ মৃত্তিকার সাথে যুক্ত হয়।

5. স্তরবিন্যাস : মৃত্তিকার মধ্যে একাধিক স্তর লক্ষ করা যায়। উল্লেখযোগ্য স্তরগুলি হল O, A, B, C, D । মৃত্তিকার স্তরগুলির উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদ মৃত্তিকার পরিলেখ নামে পরিচিত।

6. উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলস্থল : মৃত্তিকার মধ্যে থেকেই উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিমৌলগুলি গ্রহণ করে।

7. জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক : মৃত্তিকার উৎপত্তিতে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক লক্ষ করা যায়।

8. অঞ্চলগত পার্থক্য: সৃষ্টির বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকের পার্থক্যের দরুণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন-নিরক্ষীয় বৃষ্টিঅরণ্য অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার নাতিশীতোয় সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন :

জলনির্গম প্রণালী কাকে বলে এবং নিয়ন্ত্রকসমূহ

প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে ? প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার কারণ, উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য ? 

ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ?

গিজার কাকে বলে ? গিজারের উৎপত্তি ?