ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ

ভৌমজল কাকে বলে : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ভৌমজল কাকে বলে।

ভৌমজল কাকে বলে :

ভূ-অভ্যন্তরে কিংবা মৃত্তিকা, রেগোলিথ এবং শিলারন্ধ্রে যে জল অবস্থান করে, তাকে ভৌমজল বলে। ভৌমজলের প্রধান উৎস হল বৃষ্টি ও তুষারগলা জল। বৃষ্টিপাত ও তুষারগলা জলের সামান্য অংশ পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানে মাটির মধ্য দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরে অপ্রবেশ্য স্তর পর্যন্ত পৌঁছোয়- এবং অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপরে মৃত্তিকা ও শিলারন্ধ্রকে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত করে রাখে।

ভৌমজলের উৎস :

ভৌমজল নানান মাধ‍্যমে সৃষ্টি হতে পারে। উৎপত্তির প্রকৃতি অনুযায়ী ভৌমজলকে প্রধানত 4টি ভাগে ভাগ করা হয়।

ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ

1. আবহিক জল : বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে বৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি রূপে নেমে আসার পর ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে উঠলে তাকে আবহিক জল বলে। আবহিক জলই ভৌমজলের প্রধান উৎস।

2. সহজাত জল : জলে নিমজ্জিত পলির স্তূপ পাললিক শিলায় পরিণত হওয়ার সময় সমুদ্র বা হ্রদের কিছু পরিমাণ জল আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একে সহজাত জল বলে।

4. উৎস্যন্দ জল : ম্যাগমার মধ্যে সঞ্চিত উত্তপ্ত ও খনিজ সমৃদ্ধ জল যখন অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে উৎস্যন্দ জল বলে। (‘উৎ’শব্দের অর্থ ‘উত্থান’ এবং ‘স্যন্দ’ শব্দের অর্থ ‘ক্ষরণ’)।

4. মহাসাগরীয় জল : অনেক সময় সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রের জল শিলার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ভূ-অভ্যন্তরে ভৌমজলের সৃষ্টি করে। একে মহাসাগরীয় বা সামুদ্রিক জল বলে।

ভৌমজলের গুরুত্ব :

মানবজীবনে ভৌমজলের গুরুত্ব অপরিসীম নীচে ভৌমজলের গুরুত্ব গুলি আলোচনা করা হল-

1. পানীয় জলের উৎস: ভৌম়জল মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস। গভীর ও অগভীর নলকূপ, কুয়ো থেকে আমরা পানীয় জল সংগ্রহ করি। প্রস্রবণের মধ্য দিয়ে নির্গত ভৌমজলও পানীয় হিসেবে অনেক সময় ব্যবহৃত হয়।

2. কৃষি ও শিল্পকর্মের উথ‍্যান : বহু অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয় নির্ভর কৃষিকাজ ও শিল্পকাজ গড়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের বহুস্থানে গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভৌমজল উত্তোলন করে বহুফসলি শস্যের উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

3. ভূতাপ বিদ্যুৎ উৎপন্ন : উয় প্রস্রবণ ও গিজারের উত্তপ্ত ভৌমজল়কে কাজে লাগিয়ে ভূতাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

4. জনবসতি স্থাপন : প্রস্রবণ থেকে নির্গত ভৌমজ়ল জনবসতি গড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গে শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রাপ্ত প্রস্রবণের জল ওই স্থানে জনবসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

5. পশুদের জলের জোগান : চুনাপাথর অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ শুষ্ক প্রকৃতির। এই অঞ্চলের তৃণই প্রধান উদ্ভিদ। পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় জল এই অঞ্চলে গঠিত ভৌমজলের ভাণ্ডার থেকে সংগ্রহ করা হয়।

6. রোগ নিরাময় : চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে উষ্ম প্রস্রবণের জলে কিছু কিছু রোগ নিরাময়কারী উপাদান থাকে। তাই, ওইসব স্থানে মানুষের সমাগম বাড়ে।

7. পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণ : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কিছু বিশেষ ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয় যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ফলে ওই অঞ্চলে বা স্থানে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে।

8. মরূদ্যানের সৃষ্টি : মরু অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুর দ্বারা বালুকারাশি অপসারিত হলে ভৌমজল়পীঠ উন্মুক্ত হয়।

ভৌমজলের নিয়ন্ত্রকসমূহ :

বৃষ্টির জল বা তুষারগলা জল চুঁইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে ভূত্বকের উপপৃষ্ঠীয় স্তর সম্পৃক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় ভৌমজল়স্তর। ভৌমজলের পরিমাণ নির্ধারিত হয় অনুস্রাবণের মাত্রার ওপর। অনুস্রাবণের মাত্রা কতকগুলি প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক ও মানুষের কার্যাবলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেগুলি হল-

1. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের প্রকৃতির ওপর ভৌমজলের পরিমাণ অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে এবং তা বহুদিন ধরে হতে থাকলে অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে, ভৌমজলের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে কিংবা অল্প সময় ধরে হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে যায়। ফলে, ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম হয়। শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম এবং অল্পক্ষণ বৃষ্টিপাত হয় বলে ওই অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও অনেক কম।

2. শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা : শিলার খনিজ কণা ও মাটির কণা সংঘবদ্ধভাবে বিন্যস্ত হলেও এদের মধ্যে ফাঁক বা শূন্যস্থান থেকে যায়। ওই রন্ধ্র বা ছিদ্রপথ দিয়ে বায়ু, জল প্রভৃতি চলাচল করে। একটি নির্দিষ্ট আয়তন মৃত্তিকায় মোট মৃত্তিকা রন্ধ্রের আয়তন ও মৃত্তিকার মোট আয়তনের অনুপাতকে সচ্ছিদ্রতা বলে। শিলারন্ধ্র বা মৃত্তিকা রন্ধ্রের ব্যাস বড়ো হলে জল সহজে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। রন্ধ্রের মধ্য দিয়ে জলের চলাচল ক্ষমতাকে শিলা বা মৃত্তিকার প্রবেশ্যতা বলে। শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা ভৌমজল সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

3. ভূমির চাল : ভূমির ঢাল বেশি হলে জল দ্রুত হারে নীচের দিকে গড়িয়ে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠের জল চুঁইয়ে মাটির নীচে বিশেষ প্রবেশ করতে পারে না। ভূমির ঢাল কম হলে জল ধীরে ধীরে নীচের দিকে গড়িয়ে যায়। তাই এই অবস্থায় অনুস্রাবণের মাত্রা বাড়ে। ফলে ভূত্বকের উপপৃষ্ঠীয় স্তরে জলের সঞ্চয়ে বাড়ে।

4. প্রবেশ্য শিলাস্তরের নীচে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থান : প্রবেশ্য শিলার নীচে অপ্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে জলের নিম্নগামিতা বাধা পায়। ফলে অপ্রবেশ্য শিলার ওপর প্রবেশ্য শিলাস্তরে জল সঞ্চিত হয়ে ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ায়।

5. ৰাষ্পীভবন : বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কমে। বাষ্পীভবনের মাত্রা কমলে ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ে।

6. ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি : কৃষিকাজের ফলে মাটি আলগা হয়, তাই অনুস্রাবণের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ভৌমজলের সঞ্চয় বেশি হয়। শহর অঞ্চলে পাকা রাস্তা ও ঘরবাড়ির অবস্থানের জন্য জলের অনুপ্রবেশ ব্যাহত হয়। তাই এই অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয় খুব কম হয় বললেই চলে।

আরও পড়ুন :

পর্যায়ন কাকে বলে ? বহির্জাত প্রক্রিয়ার পদ্ধতি কি ? 

আরোহণ অবরোহণ পদ্ধতির পার্থক্য ? 

1 thought on “ভৌমজল কাকে বলে ? ভৌমজলের উৎস, গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ”

Leave a Comment