আরোহণ ও অবরোহণ পদ্ধতি : সুপ্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম আরোহণ ও অবরোহণ কাকে বলে এবং আরোহণ ও অবরোহণ পদ্ধতির পার্থক্য সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনা গুলি।
পড়ুন : ভূমিকম্প
আরোহণ ও অবরোহণ পদ্ধতি :
◆ আরোহণ কাকে বলে :
যে প্রক্রিয়ায় নদীর ক্ষয়জাত ও পরিবাহিত সমস্ত পদার্থের পুঞ্জীভবন ও সঞ্চয় ঘটে থাকে তাকে নদীর আরোহণ (Aggradation) বলে।
কারণ : নদীর আরোহণ ঘটে থাকে নদীর বিস্তৃত মৃদু ঢাল অংশে এবং প্লাবনভূমিতে। ঢাল খুব কম হওয়ায় বোঝা অপসারণের হার অপেক্ষা পলি দ্রুত নদীগর্ভে থিতিয়ে পড়ে। কোনো কারণে নদীতে বোঝার পরিমাণ বেড়ে গেলে নদীর বোঝা বহনক্ষমতা কমে যায়। তখন নদীগর্ভে পলি সঞ্চিত হয়। নদীবক্ষ ভরাট হতে হতে অনেক চর-এর সৃষ্টি হয়। তখন নদীর জল অনেকগুলি শাখায় ভাগ হয়ে বিভিন্ন খাতে বইতে থাকে, যাকে নদীর প্রতিসারী প্রবাহ (Divergent Flow) বলা হয়। এর ফলে নদীর বহনক্ষমতা আরও কমে যায় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।
ফলাফল :
আরোহন পদ্ধতির ফলাফল গুলি হল-
1. ভূমির ঢাল হ্রাস পায় ও সমভূমি গঠিত হয়।
2. নানান রকমের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ যথা- দ্বীপ, পলিগঠিত শঙ্কু, স্বাভাবিক বাঁধ এবং প্লাবনভূমি প্রভৃতি গড়ে ওঠে।
◆ অবরোহণ কাকে বলে :
বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে যেসব প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলিকে নগ্ন করার (Denudate) মাধ্যমে নিম্ন ক্ষয়ের শেষ সীমায় নিয়ে আসে অর্থাৎ ভূমিভাগের উচ্চতার হ্রাস ঘটায় তাকে অবরোহণ বলে। আবহবিকার, ভর অপসারণ বা পুঞ্জিত স্খলন ও ক্ষয়সাধন-অবরোহণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে অবরোহণ সবচেয়ে বেশি হয়। তাই অবরোহণ বলতে সাধারণত নদীর ক্ষয়কাজকে বোঝায়। নদী যান্ত্রিক (ঘর্ষণ, অবঘর্ষ, লম্বদান) ও রাসায়নিক (দ্রবণ) প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে থাকে।
কারণ : অবরোহণের মাত্রা নির্ভর করে নদীর শক্তির ওপর ও ভর সঞ্চলনের পরিমাণের ওপর। আবহবিকার এই প্রক্রিয়াগুলিকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি, উচ্চতা, ভূমির ঢাল, শিলার ধরন, মাটির প্রকৃতি, উদ্ভিদ আচ্ছাদনের পরিমাণ, অববাহিকার ভূ-আলোড়নজনিত উত্থান এবং বর্তমানে প্রবলভাবে মানুষের প্রভাব ইত্যাদি প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
ফলাফল :
অবরোহন প্রক্রিয়ার ফলাফল গুলি হল :
1. এখানে ভূমির উত্তল ও অবতল ঢালের সৃষ্টি হয়, এই ঢালের পশ্চাৎ অপসারণ ঘটে এবং এর মান বেড়ে যায়।
2. বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়জাত ভূমিরূপ তৈরি হয়।
3. ভূপৃষ্ঠের উঁচুনীচু অবস্থা ক্রমশ মসৃণতা লাভ করে।
আরোহণ ও অবরোহণ পদ্ধতির পার্থক্য :
পার্থক্যের বিষয় | আরোহণ | অবরোহণ |
1. ধারণা | নদীর ক্ষয়জাত ও পরিবাহিত সমস্ত পদার্থের পুঞ্জিভবন ও সঞ্চয় হলো আরোহণ। | বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের দ্বারা ভূমি ভাগের উচ্চতা হ্রাস ঘটানোর প্রক্রিয়া হলো আবরোহণ। |
2. অবস্থান | আরোহণ ঘটে থাকে নদীর মৃদু ঢালু অংশে ও প্লাবনভূমিতে | অবরোহন সাধারণত ঘটে থাকে নদীর খাড়া ঢালু অংশে। |
3. ফলাফল | আরোহণের ফলে সমতলভূমি গঠিত হয়। | অবরোহণের ফলে উত্তাল ও অবতল ঢাল তৈরি হয়। |
4. ভূমিরূপ | সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ যেমন- দ্বীপ, পলি গঠিত শঙ্কু, স্বাভাবিক বাঁধ ও প্লাবনভূমি ইত্যাদি গঠিত হয়। | বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়জাত ভূমিরূপ গঠিত হয়। |