মূল কাকে বলে ? মূলের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও কাজ | What is Root

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মূল কাকে বলে – What is Root : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম উদ্ভিদের একটি বিশেষ অংশ মূল সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক মূল কাকে বলে ? মূল কয় প্রকার ও কি কি ? মূলের কাজ কি কি ? মূলের বৈশিষ্ট্য কি ? প্রভৃতি সম্পর্কে।

মূল কাকে বলে ? মূলের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও কাজ | What is Root

মূল কাকে বলে :

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেকের পর গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়। গর্ভাশয়ের অন্তর্গত ডিম্বক বীজে এবং ডিম্বক মধ্যস্থ ডিম্বাণু ভ্রূণে পরিণত হয়। ভ্রূণ হল শিশু উদ্ভিদ। ভ্রূণ দুটি অংশে বিভক্ত। যথা- বীজপত্র এবং ভ্রূণাক্ষ । ভ্রূণাক্ষের ওপরের দিকের অংশকে বীজপত্রাধিকাণ্ড ও বীজপত্রাধিকাণ্ডের শীর্ষদেশকে ভ্রূণমুকুল এবং নীচের দিকের অংশকে বীজপত্রাবকাণ্ড ও এর শীর্ষদেশকে ভ্ৰূণমূল বলে। অঙ্কুরোদ্‌গমের সময় ভ্রূণমূলটি বীজ থেকে নির্গত হয়ে মাটির মধ্যে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে, মূল তন্ত্র গঠন করে। তবে ভ্রূণমূল ছাড়াও উদ্ভিদদেহের অন্য অংশ থেকেও মূল সৃষ্টি হতে পারে।

মূল কাকে বলে  :

ভ্রুণাক্ষের নিম্নগামী ভ্রূণমূল থেকে সৃষ্ট আলোক প্রতিকূলবর্তী ও অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী, পর্ব, পর্বমধ্য, পাতা ও মুকুলবিহীন অসবুজ অংশকে মূল বলে। তবে উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ থেকেও মূল উৎপন্ন হতে পারে।

মূলের প্রকারভেদ :

মূল প্রধানত দু-প্রকারের, যথা- প্রধান মূল বা স্থানিক মূল এবং অস্থানিক মূল ।

1. প্রধান মূল বা স্থানিক মূল কাকে বলে :

ভ্রণমূল থেকে উৎপন্ন শাখাপ্রশাখাযুক্ত স্থায়ী মূলকে প্রধান মূল বা স্থানিক মূল বলে। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, বট, লাউ, কুমড়ো প্রভৃতি।

2. অস্থানিক মূল কাকে বলে :

ভ্রূণমূল ছাড়া উদ্ভিদের অন‍্য কোনো অংশ থেকে সৃষ্ট মূলকে অস্থানিক মূল বলে।

মূলের বৈশিষ্ট্য :

মূলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হল

i. মূল উদ্ভিদের অধোগামী অঙ্গ ।

ii. মূল অভিকর্ষের অনুকূলে এবং আলোর প্রতিকূলে বৃদ্ধি পায়।

iii. মূলে পর্ব ও পর্বমধ্য থাকে না।

iv. মূলে পাতা ও ফুল সৃষ্টি হয় না।

v. মূলে সাধারণত অাজ মুকুল থাকে না [ব্যতিক্রম- পটল, শিশু, রাঙা আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের মূলে অঙ্গজ মুকুল বর্তমান]।

vi. মূলের কোশে ক্লোরোফিল না থাকায় মূল বর্ণহীন [ব্যতিক্রম- পানিফল , গুলঞ্চ প্রভৃতি উদ্ভিদের মূলে ক্লোরোফিল উপস্থিত]।

vii. মূলে কেবল পার্শ্বীয় শাখামূল জন্মায় এবং শাখামূলগুলি অগ্রোন্মুখভাবে উৎপন্ন হয়।

viii. শাখামূল অন্তর্জনিম্নভাবে অর্থাৎ মূলের ভিতরের অংশ (পরিচক্র) থেকে উৎপন্ন হয়।

ix. মূলের অগ্রভাগে মূল বা মূলজেব থাকে (ব্যতিক্রম- জলজ উদ্ভিদ, যেমন- পদ্ম) ।

x. মূলের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সূক্ষ্ম এককোশী মূলরোম থাকে। মূলরোমগুলি বহির্জনিম্ন অর্থাৎ মূলের বাইরের অংশ (ত্বক বা এপিব্লেমা) থেকে উৎপন্ন হয়।

xi. মূলে কিউটিকল-এর আবরণ থাকে না।

xii. মূলের নালিকা বান্ডিল অরীয় প্রকৃতির, অর্থাৎ জাইলেম ও ফ্লোয়েম কলাগুচ্ছ পৃথকভাবে অবস্থান করে।

xiii. মূলের জাইলেম এক্সার্ক প্রকৃতির ।

মূলের কাজ :

মূলের কাজ দুই ভাবে হয় যথা- A. সাধারণ কাজ ও B. বিশেষ কাজ ।

A. মূলের সাধারণ কাজ গুলি হলো –

1. যান্ত্রিক : শাখাপ্রশাখার সাহায্যে মূল উদ্ভিদকে দৃঢ়ভাবে মাটির সঙ্গে আটকে রাখে।

2. শারীরবৃত্তীয় : i. মূল মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে। ii. শোষিত জল ও খনিজ লবণকে জাইলেম কলার মাধ্যমে কাণ্ডে প্রেরণ করে।

B. মূলের বিশেষ কাজ গুলি হলো –

1. বিশেষ যান্ত্রিক কাজ : i. শাখাপ্রশাখার ভার বহন- বট, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছের স্তম্ভমূল। ii. খাড়া রাখা- কেয়া গাছের ঠেসমূল। iii. আরোহণে সহায়তা- পান, গজপিপুল প্রভৃতির আরোহী মূল। iv. ভাসমানে সহায়তা- কেশরদাম-এর ভাসমান মূল। v. আত্মরক্ষা- তাল জাতীয় উদ্ভিদের কণ্টক মূল।

2. বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কাজ : i. খাদ্য সঞ্চয়— মুলো, গাজর, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। ii. খাদ্যরস শোষণ—স্বর্ণলতা। iii. শ্বসনে সহায়তা—সুন্দরী। iv. জলীয় বাষ্প শোষণ—অর্কিড। v. আত্তীকরণ—গুলঞ্চ। vi. অঙ্গজ জনন—পটল, রাঙা আলু।

আরও পড়ুন :

শৈবাল কাকে বলে, শৈবালের শ্রেণীবিভাগ, বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ?