পাতা কাকে বলে ? পাতার বৈশিষ্ট্য, কার্যাবলি ও অঙ্গসংস্থান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পাতা কাকে বলে – what is leaves : সুপ্রিয় বন্ধুরা এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম গাছের একটি বিশেষ অংশ পাতা । আজকে আমরা জানবো পাতা কাকে বলে ? পাতার বৈশিষ্ট্য ? পাতার কার্যাবলিপাতার অঙ্গসংস্থান সম্পর্কে।

পাতা কাকে বলে ? পাতার বৈশিষ্ট্য, কার্যাবলি ও অঙ্গসংস্থান

পাতা কাকে বলে :

বিটপতন্ত্রের অন্তর্গত কান্ড ও তার শাখাপ্রশাখার পর্ব থেকে যে চ্যাপটা, প্রসারিত, সাধারণত সবুজ বর্ণের পার্শ্বীয় অঙ্গ সৃষ্টি হয়, তাকে পাতা বলে। পাতা সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন অঙ্গ। পাতার কক্ষে একটি মুকুল থাকে। বিভিন্ন পরিবেশে বসবাসকারী উদ্ভিদের পাতার গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়। পাতা উদ্ভিদের প্রধান সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ। সালোকসংশ্লেষে সক্ষম পাতাকে পল্লবপত্র বলে। পল্লবপত্র ছাড়াও উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন রকমের পাতা দেখা যায়, যেমন- শল্কপত্র, মঞ্জুরিপত্র, বীজপত্র ও পুষ্পপত্র।

◆পাতা কাকে বলে :

কান্ড ও শাখাপ্রশাখার পর্ব থেকে উৎপন্ন অসদৃশ, সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন, চ্যাপটা, প্রসারিত সবুজ বর্ণের পার্শ্বীয় অঙ্গকে পাতা বলে।

◆পাতার বৈশিষ্ট্য :

পাতার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-

i. পাতা কান্ড বা শাখাপ্রশাখার পর্ব থেকে উৎপন্ন হয়।

ii. পাতা কাণ্ড বা শাখার পার্শ্বীয় অসদৃশ অঙ্গ।

iii. পাতা বহির্জনিয়ুভাবে উৎপন্ন হয়।

iv. এরা অগ্রোন্মুখভাবে সাজানো থাকে।

v. পাতার বৃদ্ধি সীমিত।

vi. পাতার কক্ষে সর্বদা কাক্ষিক মুকুল থাকে।

vii. পাতায় পত্রর থাকে।

viii. পাতার নালিকাবান্ডিল সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ প্রকৃতির।

ix. পাতা সালোকসংশ্লেষ ও প্রস্বেদনের প্রধান স্থান।

◆পাতার কার্যাবলি :

A. সাধারণ কার্যাবলি 

i. সালোকসংশ্লেষ : পাতা ক্লোরোফিলযুক্ত হওয়ায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে।

ii. গ্যাসীয় আদানপ্রদান : পত্ররন্ধ্র সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় পদার্থের আদানপ্রদানে সাহায্য করে।

iii. বাষ্পমোচন : পাতায় অবস্থিত পত্ররন্ধ্র উদ্ভিদের বাষ্পমোচনে সহায়তা করে। এই বাষ্পমোচনের ফলে রসের উৎস্রোত ঘটে এবং উদ্ভিদদেহ শীতল হয়।

iv. রেচন : উদ্ভিদ পাতায় রেচন পদার্থ জমা রাখে, পরে পত্রমোচনের মাধ্যমে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।

B. বিশেষ কার্যাবলি 

i. খাদ্য ও জল সঞ্চয় : পাতা ভবিষ্যতের জন্য জল ও খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে। যেমন- পুঁই গাছের পাতা, পেঁয়াজের শল্কপত্র ইত্যাদি।

ii. আরোহণ : সম্পূর্ণ পাতা বা পাতার অংশ বিশেষ আকর্ষে বা অঙ্কুশে পরিণত হয়ে দুর্বল উদ্ভিদকে আরোহণে সহায়তা করে। যেমন- মটর।

iii. আত্মরক্ষা : উদ্ভিদের সমগ্র পাতা বা পাতার অংশবিশেষ কণ্টকে পরিণত হয়ে উদ্ভিদকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে। যেমন- ফণীমনসা, খেজুর পাতা।

iv. পতঙ্গ ধরা : কলশপত্রী উদ্ভিদের পাতা কলশে রূপান্তরিত হয়ে পতঙ্গ ধরে প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। যেমন- কলশপত্রী।

v. বংশবিস্তার : কিছু উদ্ভিদ পাতার মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। যেমন- পাথরকুচি।

vi. পরাগযোগ : লাল পাতা উদ্ভিদে উজ্জ্বল বর্ণের কচি পাতা পতঙ্গদের আকর্ষণ করে পরাগযোগে সাহায্য করে।

vii. নাইট্রোজেন পুষ্টি: আর্ডিসিয়া, সাইকরসিয়া প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া বসবাসের জন্য বিশেষ জায়গা তৈরি করে দেয়, এরা উদ্ভিদের নাইট্রোজেন পুষ্টিতে সাহায্য করে।

◆পাতার অঙ্গসংস্থান :

একটি আদর্শ পাতার তিনটি প্রধান অংশ থাকে। যথা- পত্রমূল, পত্রবৃন্ত এবং পত্রফলক।

1. পত্রমূল : পাতা তার যে অংশ দিয়ে কান্ড বা শাখাপ্রশাখার পর্বের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে পত্রমূল বা হাইপোপোডিয়াম বলে। অনেক সময় পত্রমূল ও বৃত্তের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না। আম, কৃষ্ণচূড়া, অপরাজিতা, তেঁতুল প্রভৃতি পাতার পত্রমূল স্ফীত হয়, একে উপাধান বা পাভিনাস বলে। অনেক সময় পত্রমূল চ্যাপটা ও প্রসারিত হয়ে কান্ডকে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে বেষ্টন করে থাকে ; এরূপ পত্রমূলকে আবরণী পত্রমূল বলে। পানমরিচ, অ্যাথুসা ও কিছু ঘাস শ্রেণির উদ্ভিদের আবরণী পত্রমূল কান্ডকে সম্পূর্ণরূপে বেষ্টন করে থাকে, একে কান্ডবেষ্টক পত্রমূল বলে এবং কলা, তাল, নারকেল, সুপারি প্রভৃতি উদ্ভিদের আবরণী পত্রমূল কান্ডকে অর্ধেক বেষ্টন করে থাকে ; একে অর্ধ-কান্ডবেষ্টক বলে। কখনো কখনো আবরণী পত্রমূল কান্ড ছাড়াও পর্যায়ক্রমিকভাবে ভেতরের নবীন পাতাকে বেষ্টন করে থাকে।

কলা গাছের ক্ষেত্রে আপাত দৃষ্টিতে দৃশ্যমান কান্ডবৎ অংশটি হল একটির ভেতরে অবস্থিত একটি সারিবদ্ধ অর্ধ-কান্ডবেষ্টক পত্রমূল। কয়েকটি ক্ষেত্রে পত্রমূলসহ পত্রবৃন্ত পক্ষল হয়। এই পক্ষ নীচের পর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এইরূপ পক্ষল পত্রমূলকে ডিকারেন্ট পত্রমূল বলে। উদাহরণ- Laggera sp. Symphytum officinale.অনেক সময় পাতার পত্রমূলের কাছে দুটি ছোটো পাতার মতো অংশ থাকে, তাকে উপপত্র বলে। উপপত্রযুক্ত পাতাকে সোপপত্রিক এবং উপপত্রবিহীন পাতাকে অনুপপত্রী বলে। জবা, মটর, গোলাপ পাতা হল সোপপত্রিক এবং আম, কাঁঠাল, বট পাতা হল অনুপপত্রী । ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের পত্রমূল দ্বিখন্ডিত হয়ে ফলক সংলগ্ন অংশে অবস্থান করে, একে লিগিউল বলে। যৌগিক পত্রের অনুফলক-এর পত্রমূলে উপপত্রের মতো অংশকে স্টিপেল বলে।

কাজ : পাতাকে পর্বের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা পত্রমূলের প্রধান কাজ। কাক্ষিক মুকুলকে রক্ষা করাও পত্রমূলের কাজ।

2. পত্রবৃন্ত : পত্রমূল ও পত্রফলকের মাঝখানের সরু দণ্ডাকার অংশকে পত্রবৃন্ত বা বোঁটা বা পিটিওল বা মেসোপোডিয়াম বলে। যেসব পাতায় বৃত্ত থাকে, তাদের সবৃন্তক এবং যেসব পাতায় বৃত্ত থাকে না, তাদের অবৃন্তক বলে। জবা, বট, আম সবৃত্তক পাতা এবং ধান, গম, রজনিগন্ধা অবৃত্তক পাতা। পত্রবৃত্ত বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। ছোটো ফলকের মতো বৃত্তকে পক্ষল (লেবু), স্ফীত স্পঞ্জের মতো বৃত্তকে স্ফীতবৃন্ত (কচুরিপানা), চ্যাপটা প্রসারিত পাতার মতো বৃত্তকে পর্ণবৃত্ত (আকাশমনি) এবং সরু আকর্ষের মতো বৃত্তকে আকর্ষীবৃন্ত (ছাগলবটি) বলে। পত্রবৃন্ত সাধারণত ফলকের তলদেশের কিনারায় যুক্ত থাকে। অনেকক্ষেত্রে পত্রবৃত্ত পত্রফলকের অঙ্কদেশের কেন্দ্রে সমকোণে যুক্ত থাকে। এরকম পাতাকে ছত্রবদ্ধ বা পেলটেট পত্র বলে। যেমন- শালুক, পদ্ম ইত্যাদি পাতা।

কাজ : পত্রবৃন্ত ফলককে ধারণ করে। পত্রবৃত্তের মাধ্যমে কান্ড থেকে জল ও খনিজ লবণ ফলকে আসে এবং ফলক থেকে খাদ্যবস্তু কান্ডে আসে। সবুজ পত্রবৃন্ত সালোকসংশ্লেষে সহায়তা করে। এ ছাড়া জলজ উদ্ভিদের স্ফীত পত্রবৃন্ত উদ্ভিদকে জলে ভাসতে সাহায্য করে।

3. ফলক : পত্রবৃত্তের শীর্ষে অবস্থিত সবুজবর্ণের চ্যাপটা ও প্রসারিত অংশকে ফলক বা ল্যামিনা বা এপিপোডিয়াম বলে। ফলকের শীর্ষকে পত্রাগ্র, দু-প্রান্তকে পত্রকিনারা এবং নীচের প্রসারিত অংশকে পাদদেশ বলে। ফলকের কিনারা অখন্ড বা মসৃণ (যেমন— আম, বট ইত্যাদি পাতা) বা খন্ডিত (যেমন- মুলো, সরিষা ইত্যাদি পাতা) বা ঢেউখেলানো (যেমন- দেবদারু পাতা) বা কর্তিত (জবা পাতা), বা দন্তুর (যেমন- শালুক পাতা) বা কণ্টকিত (যেমন- শেয়াল কাঁটা পাতা ইত্যাদি) হতে পারে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার ঊর্ধ্বত্বক মসৃণ এবং নিম্নত্বক অমসৃণ ; এরকম পাতাকে বিষমপৃষ্ঠ পাতা বলে। একবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার দুটি তলই সমান দেখতে বলে একে সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতা বলে।

ফলকের মধ্যরেখা বরাবর বৃত্ত থেকে শুরু করে পত্রাগ্র পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা শিরাকে মধ্যশিরা বলে। মধ্যশিরা থেকে অনেকগুলি শিরা এবং শিরা থেকে অসংখ্য উপশিরা উৎপন্ন হয়ে ফলকের ওপর বিন্যস্ত হয়ে শিরাবিন্যাস গঠন করে। ফলকের মধ্যে শিরা এবং উপশিরার সজ্জারীতিকে শিরাবিন্যাস বলে । দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতার শিরা-উপশিরাগুলি জালকের মতো বিন্যস্ত থাকায় একে জালকাকার শিরাবিন্যাস বলে। একবীজপত্রী পাতার শিরা-উপশিরাগুলি পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থান করায় এদের শিরাবিন্যাসকে সমান্তরাল শিরাবিন্যাস বলে। পত্রফলক বিভিন্ন আকৃতির এবং পত্রকিনারা ও পত্রাগ্র বিভিন্ন পাতায় বিভিন্ন রকমের-

i. পত্রফলকের আকৃতি : পত্রফলকের আকৃতি অনুযায়ী পাতা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন- রেখাকার (ঘাস, রজনীগন্ধার ফলক), ডিম্বাকার (জবা), সূচ্যাকার (পাইন), বিডিম্বাকার (কাজুবাদাম), বৃত্তাকার (পদ্ম), অর্ধচন্দ্রাকার (ঝুমকোলতা), মূলক পত্রাকার (মূলো), কীলকাকার (পিসটিয়া), ভল্লাকার (দেবদারু, বাঁশ), বিষমপত্রাকার (বিগোনিয়া), উপবৃত্তাকার (নয়নতারা), আয়তাকার (কলার ফলক), কাস্তে আকার (ইউক্যালিপটাস), মানকপত্রাকার (মানকচু), তাম্বুলাকার (পান), বিতাম্বুলাকার (কাঞ্চন), বৃক্কাকার (থানকুনি), চমসাকার (দুরন্ত), কলম্বপত্রাকার (কলশপত্রী)।

ii. পত্রফলকের কিনারা : পত্রফলকের কিনারা অনুযায়ী পাতা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন- তরঙ্গায়িত (পিপুল), অখন্ড (আম),কণ্টকিত (শেয়ালকাঁটা), ক্রকচ (জবা), প্রতীপ ক্রকচ (কুরাসী), দ্বিক্রকচ (উননাস), সভঙ্গ (থানকুনি), দ্বিসভঙ্গ (সঙ্কাস), খন্ডিত (চন্দ্রমল্লিকা), দন্ডুর (শালুক)।

iii. পত্রফলকের শীর্ষ : পত্রফলকের শীর্ষ অনুযায়ী পাতা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন- সূক্ষ্মাগ্র (আম), স্থূলাগ্র (বট), সূতাগ্র (কলাপাতা), খন্ডিতাগ্র (অপরাজিতা), আকর্ষাগ্র (উলটচণ্ডাল), দীর্ঘাগ্র (মেপল), খাতাগ্র (কাঞ্চন), তীক্ষ্ণাগ্র (আনারস), লাঙ্গুলাগ্র (অশ্বত্থ), কর্তিতাগ্র (লিরিওডেনড্রন ), সূক্ষ্মখর্বাগ্র (রঙ্গন, নয়নতারা)।

iv. পত্রফলকের তল : পত্রফলকের তল অনুযায়ী পাতা বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন- চকচকে (কচু), অমসৃণ (ডুমুর), মসৃণ (আম), রোমশ (রক্তদ্রোণ), আঠালো (তামাক), কণ্টকিত (বেগুন) ইত্যাদি।

কাজ : সালোকংসশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করা, সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় পদার্থের আদান-প্রদান করা এবং বাষ্পমোচনে সাহায্য করা।

আরও পড়ুন :

মূল কাকে বলে ? মূলের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও কাজ ? 

কান্ড কাকে বলে ? কান্ডের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও অঙ্গসংস্থান ?

মুকুল কাকে বলে ? মুকুলের প্রকারভেদ ?