জিব্বেরেলিন কাকে বলে ? জিব্বেরেলিনের কাজ ও রাসায়নিক ধর্ম

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

জিব্বেরেলিন কাকে বলে ? জিব্বেরেলিনের কাজ ও রাসায়নিক ধর্ম

জিব্বেরেলিন কাকে বলে – What is Gibberellin : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা জিব্বেরেলিন কি বা জিব্বেরেলিন কাকে বলে এবং জিব্বেরেলিনের কাজরাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

জিব্বেরেলিন :

ধান গাছে Gibberella fuzikuroi নামে একটি ছত্রাক আক্রমণ করার ফলে পর্বমধ্যগুলি অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও ফলস্বরূপ গাছ অত্যন্ত লম্বা হয়ে যায়। জাপানে এই রোগটিকে ব্যাকেনি রোগ বলা হয়। এই ছত্রাক আক্রান্ত গাছ থেকে বিজ্ঞানী কুরোসোয়া বৃদ্ধি সহায়ক হরমোনটিকে আবিষ্কার করেন এবং পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী ওয়াবুতা ও সুমুকি হরমোনটিকে পরিশোধিত বা বিশুদ্ধ করেন এবং ছত্রাকের নাম অনুসারে এই হরমোনের নাম দেন জিব্বেরেলিক অ্যাসিড বা জিব্বেরেলিন (GA) ।

জিব্বেরেলিন কাকে বলে :

নাইট্রোজেনবিহীন ডাই-টারপিনয়েড জাতীয় যে হরমোন পর্ব- মধ্যের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায় এবং একবীজপত্রী বীজের অঙ্কুরোদগম ও বীজহীন ফল উৎপাদনে সর্বাধিক কার্যকরী হয়, তাকে জিব্বেরেলিন বলা হয়।

পড়ুন : হরমোন কাকে বলে এবং হরমোন সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর ?

রাসায়নিক ধর্ম : এই হরমোনটি একটি ডাই-টারপিন অ্যাসিড এবং রাসায়নিকভাবে GA হল টেট্রাসাইক্লিক ডাই-টারপিনয়েড। বর্তমানে অন্তত 125 টি জিব্বেরেলিক অ্যাসিড আবিষ্কৃত হয়েছে যার মধ্যে GA 1 ও GA 3 সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।

জিব্বেরেলিনের কাজ বা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া :

i. বীজের অঙ্কুরোদগম : GA দানাশস্যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ধান, গম প্রভৃতি বীজের সস্যকে আবৃত করে অ্যালুউরোন স্তর নামক প্রোটিনের একটি বিশেষ কোশস্তর থাকে। GA হরমোনটি এই অ্যালুউরোন স্তরে অ্যামাইলেজ উৎসেচকের সংশ্লেষ ঘটায়। এই উৎসেচকটি আবার সস্যের শ্বেতসারকে আর্দ্র বিশ্লেষিত করে সরল শর্করা বা গ্লুকোজে পরিণত করে। ভ্রূণ এই গ্লুকোজ শোষণ করেই দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটায়। লক্ষ করা গেছে যে GA অ্যামাইলেজ ছাড়াও অন্তত 15 টি আর্দ্রবিশ্লেষক উৎসেচকের ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে যারা সস্যের অভ্যন্তরে উপস্থিত বিভিন্ন জটিল খাদ্যবস্তুকে সরলীকৃত করে ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

লেটুস, তামাক প্রভৃতি আলোক সুবেদি বীজ অন্ধকারে অঙ্কুরিত হয় না কিন্তু অন্ধকারে রেখেও এই ধরনের বীজে GA প্রয়োগ করলে বীজ অঙ্কুরিত হয়।

ii. কান্ডর বৃদ্ধি : GA প্রধানত পর্বমধ্যের কোষগুলির বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদ্ভিদের স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যকে বাড়িয়ে দেয়। কোশ বিভাজন ছাড়াও GA কোশের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটায়। বামন ভুট্টা গাছের খর্বতা জিনগত কারণে হয় এবং পর্বমধ্য অত্যন্ত ছোটো হওয়ার ফলে পাতাগুলি পর্বকে বেষ্টন করে গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতো ঘনভাবে বিন্যস্ত থাকে। এই ধরনের গাছকে ‘রোজেট উদ্ভিদ’ বলে। লক্ষ করা গেছে এই খর্বতার পিছনে দুটি কারণ আছে – a. কোনো কোনো মিউট্যান্টে GA সংশ্লেষকারী উৎসেচক অনুপস্থিত থাকায় GA উৎপন্ন হয় না। b. GA উৎপাদনকারী জিনই অনুপস্থিত। এই ধরনের খর্ব গাছে GA প্রয়োগ করলে জিনগত খর্বতা দূরীভূত হয়ে গাছটি স্বাভাবিক আকৃতি ধারণ করে। এই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে GA উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

iii. পুষ্প প্রস্ফুটন : দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদকে হ্রস্ব দিবায় রাখলে তাদের ফুল ফোটে না কিন্তু ওই অবস্থাতেই GA প্রয়োগ করলে গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই কারণে বলা হয় পুষ্প প্রস্ফুটনের ক্ষেত্রে GA দীর্ঘ দিবা অবস্থাকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে।

iv. বাসন্তীকরণ : সিক্ত বীজ বা অঙ্কুরকে কিছুদিন নিম্ন তাপমাত্রায় রেখে (5-10°C) দিলে সেই গাছের পুষ্প প্রস্ফুটন ত্বরান্বিত হয়। দেখা গেছে যে নিম্ন তাপমাত্রায় বাসন্তীকরণ প্রক্রিয়ার সময় বীজে বা অঙ্কুরে GA-এর সংশ্লেষ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এই হরমোনটি পরবর্তী পর্যায়ে ভার্নালিন ও ফ্লোরিজেন সংশ্লেষে সহায়তা করে গাছে দ্রুত ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।

v. পার্থেনোকার্পি : নিষেকের আগে গর্ভাশয়ে GA প্রয়োগ করলে গর্ভাশয়ের কোশগুলি দ্রুত বিভাজিত হয়ে বীজহীন ফল উৎপন্ন করে-এই প্রক্রিয়াকে পার্থেনোকার্পি বলে। এই ধরনের ফলের বাণিজ্যিক মূল্য বেশি হয়।

vi. পাতার প্রসারণ : মটর, টমেটো, বাঁধাকপি প্রভৃতি গাছে GA প্রয়োগ করলে পাতার আয়তন বৃদ্ধি পায়।

vii. ফল উৎপাদন : আঙুরে GA প্রয়োগ করলে ফলের গুচ্ছটি অনেক দীর্ঘ হয়। এছাড়া মুকুল অবস্থায় GA স্প্রে করলে ফলের অকালপতন রোধ করা যায়।

viii. মূলের বৃদ্ধি : অনেক গাছে উচ্চ ঘনত্বের GA প্রয়োগ করলে মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

2 thoughts on “জিব্বেরেলিন কাকে বলে ? জিব্বেরেলিনের কাজ ও রাসায়নিক ধর্ম”

Leave a Comment