সাইটোকাইনিন কাকে বলে ? সাইটোকাইনিনের কাজ ও রাসায়নিক প্রকৃতি | What is Cytokinin

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সাইটোকাইনিন কাকে বলে ? সাইটোকাইনিনের কাজ ও রাসায়নিক প্রকৃতি | What is Cytokinin

সাইটোকাইনিন কাকে বলে : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা সাইটোকাইনিন কাকে বলে এবং সাইটোকাইনিনের কাজ ও রাসায়নিক প্রকৃতি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

নীচে সাইটোকাইনিন কাকে বলে এবং সাইটোকাইনিন এর কাজ গুলো দেখে নিন একনজরে।

সাইটোকাইনিন কাকে বলে :

অ্যামাইনো পিউরিন অথবা ফিনাইল ইউরিয়াঘটিত যে হরমোন কোশ বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তাদের সাইটোকাইনিন বলে।

পড়ুন : জিব্বেরেলিন কাকে বলে এবং কাজ ?

রাসায়নিক প্রকৃতি :

মিলার ও তাঁর সহকর্মীরা তামাকের মজ্জার ক্যালাস কালচার করার সময় কৃষ্টি মাধ্যমে অটোক্লেভ করা DNA ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করেন যে ক্যালাস দ্রুত বিভাজিত হতে শুরু করে। রাসায়নিকভাবে এই কোশ বিভাজনের সহায়ক যৌগটি DNA অণু অ্যাডেনিন মূলকের একটি উপজাত যৌগ যার রাসায়নিক নাম
6-ফারফুরাইল অ্যামাইনো পিউরিন যা হরমোন হিসেবে কাইনেটিন নামে পরিচিত। কাইনেটিন একটি কৃত্রিম সাইটোকাইনিন।

ভ্যান ওভারবিক ও সহকারীরা নারকেলের তরল সস্য থেকে সাইটোকাইনিন হরমোনের সন্ধান পান। বিজ্ঞানী লেথাম অপরিণত ভুট্টাবীজ থেকে জিয়াটিন নামক একটি প্রাকৃতিক সাইটোকাইনিন আবিষ্কার করেন। এটি রাসায়নিক সংকেত হল ট্রান্স-6 (4-হাইড্রক্সি-3-মিথাইলবিউট-2-ইনাইল অ্যামাইনো) পিউরিন।

বর্তমানে যে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সাইটোকাইনিন উদ্ভিদ হরমোনরূপে ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

i. কাইনেটিন : 6-ফারফুরাইল অ্যামাইনো পিউরিন (কৃত্রিম)।
ii. জিয়াটিন ঃ ট্রান্স-6-(4-হাইড্রক্সি-3-মিথাইলবিউট-2-ইনাইল অ্যামাইনো) পিউরিন (প্রাকৃতিক)।
iii. 6-বেনজাইল অ্যামাইনো পিউরিন (কৃত্রিম)।
iv. আইসোপেন্টাইল অ্যাডেনিন (প্রাকৃতিক)।
v. 6-বেনজাইল অ্যাডেনিন (কৃত্রিম)।
vi. ডাইহাইড্রো জিয়াটিন (প্রাকৃতিক)।

সাইটোকাইনিনের কাজ বা  শারীরবৃত্তীয় ভূমিকা :

i. কোশ বিভাজন : সাইটোকাইনিনের প্রভাবে DNA সংশ্লেষ ও মাইটোসিসের হার বৃদ্ধি পায়। লক্ষ করা গেছে যে অক্সিনের সঙ্গে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

ii. প্রোটিন সংশ্লেষ : সাইটোকাইনিনের প্রভাবে কোশে প্রোটিন সংশ্লেষের হার বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। ট্রান্সফার RNA বা t-RNA অ্যামাইনো অ্যাসিডকে বহন করে রাইবোজোমে নিয়ে এসে প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়তা করে। t-RNA অণুর সঙ্গে সাইটোকাইনিন যুক্ত অবস্থায় থাকে যার ফলে t-RNA অণুর অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবহণের ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়।

iii. কোশের আয়তন বৃদ্ধি : পাতাকে যন্ত্রের সাহায্যে কেটে গোলাকার চাকতি তৈরি করলে তাকে ‘Leaf disc বলে। এই ধরনের Leaf disc-গুলিকে সাইটোকাইনিন দ্রবণে রাখলে দেখা যায় যে পাতার কোশের আয়তন বৃদ্ধি পায়।

iv. রূপান্তর : কোশে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে শুধু কোশ বিভাজনই বৃদ্ধি পায় না, কলা কর্ষণের সময় কোশপুঞ্জ বা ক্যালাস থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সৃষ্টি হয়। কলা কর্ষণের সময় লক্ষ করা গেছে অতিরিক্ত মাত্রায় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে মুকুল উৎপন্ন হয় কিন্তু সাইটোকাইনিনের তুলনায় অক্সিনের পরিমাণ বেশি থাকলে মূলের সৃষ্টি হয়। মূল থেকে কলা কর্ষণ করার সময় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে কোশপুর থেকে অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত বিটপ অংশের সৃষ্টি হয়।

v. অগ্রস্থ প্রকটতা : সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করে অগ্রস্থ প্রকটতা প্রতিরোধ করা যায় অর্থাৎ এই হরমোন প্রভাবে অগ্রমুকুল থাকা সত্ত্বেও পার্শ্বমুকুলের বৃদ্ধি হয়। স্বাভাবিক তামাক গাছে অগ্রস্থ প্রকটতা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় কিন্তু তামাকের যে মিউট্যান্ট অতিরিক্ত মাত্রায় সাইটোকাইনিন উৎপন্ন করে সেটিতে অগ্রস্থ প্রকটতা দেখা যায় না। এই ধরনের গাছ অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখা উৎপন্ন করে ঝোপের ন্যায় দেখতে হয়।

vi. বার্ধক্যের বিলম্বতা : বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাতার ক্লোরোফিল বিনষ্ট হয় ও পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এটি গাছের বার্ধক্যপ্রাপ্তির একটি বিশেষ লক্ষণ। রিচমন্ড ও ল্যাং Xanthium গাছের পাতার চাকতিকে পাতিত জল ও সাইটোকাইনিন দ্রবণে রেখে লক্ষ করেন যে প্রথম ক্ষেত্রে পাতার ক্লোরোফিল দ্রুত বিনষ্ট হয় কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পাতা অনেকদিন সতেজ থাকে এবং ক্লোরোফিলও অনেক পরে বিনষ্ট হয়। বার্ধক্যের বিলম্বতার এই প্রক্রিয়াকে রিচমন্ড-ল্যাং-প্রতিক্রিয়া বলে। সাইটোকাইনিনের প্রভাবে ক্লোরোফিল সংশ্লেষের হার বাড়ে এবং ক্লোরোফাইলেজ উৎসেচাকের ক্রিয়া ব্যাহত হয়।

vii. বীজের অঙ্কুরোদগম : সাইটোকাইনিনের প্রভাবে ভ্রুণাক্ষের কোশ বিভাজন বৃদ্ধি পায় ও এর ফলে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়। অ্যাবসিসিক অ্যাসিড বীজের সুপ্তাবস্থা আনয়ন করে কিন্তু সাইটোকাইনিন এই হরমোনের ক্রিয়াকে বাধাদান করে। লেটুস, তামাক প্রভৃতি গাছে সুদূর লাল আলো অঙ্কুরোদগম সহায়ক বা বৃদ্ধিকারক উপাদান বলে ।

viii. ক্লোরোফিল উৎপাদন : সাইটোকাইনিনের প্রভাবে বর্ণহীন ইটিওপ্লাস্ট ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। এই সময় ওই অঙ্গাণুতে দ্রুত ক্লোরোফিল সংশ্লেষ ঘটে। এছাড়াও এই হরমোনটি প্রোপ্লাস্টিডকে দ্রুত প্লাস্টিডে রূপান্তরিত করে।

ix. পত্ররন্ধ্রের উন্মোচন : কয়েকটি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সাইটোকাইনিনের প্রভাবে পত্ররন্দ্রের উন্মোচন ও বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।

x. তাপমাত্রা সহনশীলতা ও রোগ প্রতিরোধ : এই হরমোনটি উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্ৰাজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর প্রভাবে উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

xi. পার্থেনোকার্পি : নিষেকের পূর্বে গর্ভাশয়ে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে কোশগুলি দ্রুত বিভাজিত হয়ে বীজহীন ফলে পরিণত হয়।

xii. পুষ্প প্রস্ফুটন : সাইটোকাইনিন পুষ্প প্রস্ফুটন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং কুমড়ো জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে স্ত্রীপুষ্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুন : 

হরমোন কাকে বলে এবং হরমোন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর ? 

Leave a Comment