ইথিলিন কাকে বলে এবং ইথিলিনের কাজ | What is Ethylene

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ইথিলিন কাকে বলে এবং ইথিলিনের কাজ | What is Ethylene

ইথিলিন কাকে বলে : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা ইথিলিন কাকে বলে এবং ইথিলিন এর কাজ সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

ইথিলিন কাকে বলে :

ইথিলিন (C2H) হল একটি গ্যাসীয় হরমোন যা দ্রুত ফলকে পাকিয়ে দেয় এবং গাছের বৃদ্ধিতে বাধাদান করে এবং বৃদ্ধির অভিমুখকে পরিবর্তন করে। মিথিওনিন নামক সালফারঘটিত অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে ইয়াং চক্রের মাধ্যমে এই গ্যাসীয় হরমোনটির সংশ্লেষ ঘটে। কাজিনস লক্ষ করেন যে পাকা কমলালেবু থেকে একটি গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয় যা অন্য ফলকেও পাকাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানী গেন্ গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফির মাধ্যমে আবিষ্কার করেন যে এই গ্যাসীয় পদার্থটি হল ইথিলিন।

ইথিলিনের কাজ বা শারীরবৃত্তীয় ভূমিকা :

i. ফলের পরিপক্বতা : যে সব ফল পাকার আগে তাদের শ্বসন ও CO, নির্গমনের হার বেড়ে যায় তাদের ক্লাইমেকটেরিক ফল বলে। কলা, আপেল, কমলালেবু প্রভৃতি ক্লাইমেকটেরিক ফলের ক্ষেত্রে ইথিলিন দ্রুত ফল পাকাতে সাহায্য করে। টম্যাটোর একটি মিউট্যান্ট আছে যা সহজে পাকে না এবং লক্ষ করা গেছে তাদের কোশে ইথিলিন প্রয়োগ করলে সেই ফলগুলি পেকে যায়।

ii. ত্রয়ী প্রভাব : বীজকে অন্ধকারে অঙ্কুরিত করলে যে ক্লোরোফিলবিহীন অঙ্কুরের সৃষ্টি হয় তাকে বিবর্ণ অঙ্কুর বলে। এই ধরনের অঙ্কুরে ইথিলিনের তিনটি প্রভাব লক্ষ করা যায়-

a. এটি কাণ্ডের বৃদ্ধিকে বাধাদান করে।
b. কাণ্ডের অরীয় বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেয়।
c. হরমোনের প্রভাবে কাণ্ডটি মাটির সঙ্গে অনুভূমিকভাবে বৃদ্ধি পায় যাকে ডায়াজিওট্রপিক চলন বলে

এই তিনটি প্রভাবকে একত্রে Triple response’ বা ত্রয়ী প্রভাব বলা হয়।

iii. হুক গঠন : বর্ণহীন অঙ্কুরে ইথিলিন প্রয়োগ করলে ভ্রূণমুকুলটির অসম বৃদ্ধির ফলে হুকের ন্যায় বেঁকে যায়। ইথিলিনের মাত্রা যত বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করা হয় হুকটির বক্রতা ততই বেড়ে যায়।

iv. পাতার এপিন্যাস্টি : ইথিলিনের প্রভাবে পাতার উপরিতলের বৃদ্ধি নিম্নতলের চেয়ে বেশি হয় এবং এই অসম বৃদ্ধির ফলে পাতা নীচের দিকে মুড়ে যায়। এই ধরনের চলনকে এপিন্যাস্টিক চলন বলে। টম্যাটো জাতীয় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে এই ধরনের চলন সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়, কিন্তু একবীজপত্রী উদ্ভিদের ওপর ইথিলিনের এই ধরনের কোনো প্রভাব নেই।

v. লিঙ্গের পরিবর্তন : কুমড়ো, তরমুজ প্রভৃতি সহবাসী উদ্ভিদে ইথিলিন প্রয়োগ করলে স্ত্রীপুষ্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

vi. মোচন: ইথিলিন পত্রমোচন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। Behula গাছের পাতায় 50 ppm ইথিলিন প্রয়োগ করলে কয়েকদিনের মধ্যেই পাতা ঝরে যায়। আবার বার্চ গাছের একটি ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদে ইথিলিনের গ্রাহক না থাকায় ইথিলিনের উপস্থিতিতেও ওই গাছের পাতা সহজে ঝরে পড়ে না।

vii. বার্ধক্য সৃষ্টি : ইথিলিনের প্রভাবে গাছে দ্রুত বার্ধক্য আসে। ফলে ইথিলিন প্রয়োগ করলে ফুলের পাপড়িগুলি দ্রুত বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। সিলভার থায়োসালফেট যৌগটি ইথিলিনের সংশ্লেষে বাধাদান করে। এই যৌগের দ্রবণে ফুলগুলিকে রাখলে ফুলগুলি দীর্ঘদিন সতেজ থাকে যা প্রমাণ করে যে ইথিলিন ফুলের অকাল বার্ধক্য আনয়ন করে।

viii. বীজের অঙ্কুরোদগম : বার্লি জাতীয় দানাশস্যে এবং স্ট্রবেরি, আপেল প্রভৃতি ফলের বীজে ইথিলিনের প্রভাবে বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ হয় এবং দ্রুত অঙ্কুরোদগম ঘটে।

ix. মূলের বৃদ্ধি : ইথিলিনের প্রভাবে মূলের বৃদ্ধি সচরাচর ব্যাহত হয় কিন্তু অনেক গাছে মূলরোম উৎপাদনের হার বেড়ে যায়।

x. রোগ প্রতিরোধ : ক্ষতস্থানে দ্রুত ইথিলিন উৎপাদন হয়। বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে এই হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদে ফাইটোএলিক্সিন উৎপাদন বেড়ে যায় যা ক্ষতস্থানকে ছত্রাকঘটিত রোগ থেকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুন :

জিব্বেরেলিন কাকে বলে এবং কাজ ?

সাইটোকাইনিন কাকে বলে এবং কাজ ? 

Leave a Comment