অঙ্কুরোদগম কাকে বলে ? অঙ্কুরোদগমের প্রকারভেদ ও শর্ত | What is Germination

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

অঙ্কুরোদগম কাকে বলে ? অঙ্কুরোদগমের প্রকারভেদ ও শর্ত | What is Germination

অঙ্কুরোদগম কাকে বলে – What is Germinat ion : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা অঙ্কুরোদগম কাকে বলে এবং অঙ্কুরোদগমের প্রকারভেদঅঙ্কুরোদগমের শর্ত সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

অঙ্কুরোদগম কাকে বলে :

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জল, অক্সিজেন ও উষ্ণতার প্রভাবে বীজের সুপ্তাবস্থা দূরীভূত হয় এবং ভ্রূণটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে বীজের বাইরে নির্গত হয়, তাকে অঙ্কুরোদগম বলে।

বীজের ভ্রূণাক্ষটি বৃদ্ধি পেয়ে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল উৎপন্ন হয় যা থেকে যথাক্রমে মূলতন্ত্র ও বিটপতন্ত্রের সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানী বিউলি ও ব্ল্যাক এর মতে অঙ্কুরোদগম হল এমন একটি পদ্ধতি যা আত্মভূতি বা জলশোষণের মাধ্যমে শুরু হয় এবং বীজ থেকে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল যখন বাইরে থেকে দৃশ্যমান হয় তখনই অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হয়।

নিষেকের পরে ডিম্বাশয়টি ফলে এবং ডিম্বক বীজে পরিণত হয়। একটি বীজে ডিপ্লয়েড ভ্রূণ এবং ট্রিপ্লয়েড সস্য থাকে। একবীজপত্রী বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে এবং সুগঠিত সস্য থাকায় একে সস্যল বীজ বলে। এই বীজপত্রটিকে স্কুটেলাম বলা হয়। এছাড়া সস্যের চারদিকে এক বা দুই কোশস্তর বিশিষ্ট অ্যালুউরোন স্তর থাকে। একবীজপত্রী উদ্ভিদে এই স্তর থেকে নিঃসৃত উৎসেচকগুলি অঙ্কুরোদগমে সহায়তা করে। দ্বিবীজপত্রী বীজ সস্যল বা অসস্যল।প্রকৃতির হতে পারে। অঙ্কুরোদগমের সময় বীজের সস্যটি খাদ্যভান্ডাররূপে কাজ করে। অসস্যল বীজের ক্ষেত্রে বীজপত্রই অঙ্কুরোদগমের সময় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

বীজের বাইরের ত্বকটিকে বহিঃবীজত্বক এবং ভিতরের ত্বক বা আবরণীকে অন্তঃবীজত্বক বলে। বহিঃবীজত্বকটি স্থূল হয় এবং অঙ্কুরোদগমের সময় এই ত্বকটি বিদারিত করেই ভ্রূণটি নির্গত হয়। ভ্রূণাক্ষটির যে অংশ বীজপত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে তার উপরিভাগকে বীজপত্রাধিকান্ড এবং নীচের অংশটিকে বীজপত্রাবকান্ড বলে ।

অঙ্কুরোদগমের প্রকারভেদ :

গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বীজের অঙ্কুরোদগম তিন ধরনের হয় যথা – 1. মৃদগত অঙ্কুরোদগম 2. মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম এবং 3. জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ।

1. মৃদগত অঙ্কুরোদগম কাকে বলে :

যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় বীজ মাটির নীচেই অবস্থান করে অর্থাৎ কখনই মাটির স্তর থেকে ওপর উঠে আসে না, তাকে মৃদগত অঙ্কুরোদ্গাম বলে। এক্ষেত্রে ভ্রূণমূল বীজ থেকে বের হয়ে মাটির নীচে প্রবেশ করে মূলতন্ত্র গঠন করে এবং ভ্রূণমুকুল মাটির ওপরে উঠে বিটপতন্ত্র সৃষ্টি করে। ভ্রূণমুকুলটি মাটির ওপরে বেরিয়ে আসলেও বীজপত্র অঙ্কুরোদগমের পর মাটির নীচে শুকিয়ে যায়। উদাহরণ- ছোলা, ভুট্টা।

2. মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম কাকে বলে :

যে অঙ্কুরোদগমে বীজপত্রাবকান্ডটি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বীজপত্রটি বীজত্বক থেকে নির্গত হয়ে মাটির ওপরে উঠে আসে তাকে মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম বলে। এক্ষেত্রে বীজপত্র সবুজ বর্ণের হয় এবং কিছুদিন পাতার মতো সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। উদাহরণ- তেঁতুল, কুমড়ো।

3. জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম কাকে বলে :

যে প্রক্রিয়ায় বীজ ফল থেকে নির্গত না হয়ে মাতৃ উদ্ভিদে সংযুক্ত থাকাকালীনই অঙ্কুরিত হয়, তাকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। এক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগমের সময় ভ্রূণমূলটি ফলত্বক ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং বৃদ্ধিলাভ করে গোঁজের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে। অঙ্কুরিত বীজটি কিছুদিন পর গাছ থেকে পড়ার সময় ভ্রূণমূলটি মাটিতে গেঁথে যায়। লবণাক্ত মৃত্তিকায় বীজ সরাসরি অঙ্কুরিত হতে পারে না বলে মাতৃদেহে থাকাকালীনই বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে। তাই একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। অঙ্কুরিত বীজ কিছুটা পরিণত অবস্থায় মাটির সংস্পর্শে আসে বলে তা মাটির লবণাক্ততাকে সহ্য করতে পারে। জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম লবণাম্বু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য। উদাহরণ- গেঁওয়া, গরান প্রভৃতি।

অঙ্কুরোদগমের শর্তাবলি :

i. জল : অঙ্কুরোদগমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জল, কারণ জলের অনুপস্থিতিতে কখনই এই প্রক্রিয়া সম্ভব হয় না। এই প্রক্রিয়ায় জলের ভূমিকা হল- a. জল শোষণ করার ফলে বীজে যে উদ্‌স্থৈতিক চাপের সৃষ্টি হয় তা বীজত্বকের বিদারণ ঘটিয়ে ভ্রূণকে নির্গত হতে সাহায্য করে। b. বিদারিত বীজত্বক থেকে নির্গত ভ্রূণ সহজেই সবাত শ্বসন করতে পারে। c. জলের উপস্থিতিতে আর্দ্রবিশ্লেষক উৎসেচগুলি সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন জটিল খাদ্য উপাদানকে সরলীকৃত করে ভ্রূণে সরবরাহ করে।

ii. অক্সিজেন : অঙ্কুরোদগমের জন্য অক্সিজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সবাত শ্বসনের মাধ্যমে অঙ্কুরিত বীজ ATP উৎপাদন করে যা বিভিন্ন উপচিতিমূলক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।

iii. উষ্ণতা : অধিকাংশ বীজই 25°C-35°C তাপমাত্রার মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে অঙ্কুরিত হয়, কারণ এই তাপমাত্রার মধ্যেই প্রয়োজনীয় উৎসেচকগুলি সর্বাধিক সক্রিয় হয়।

iv. আলো : আলো অঙ্কুরোদগমের অত্যাবশ্যক উপাদান নয়। যে সব বীজ আলোর উপস্থিতিতে অঙ্কুরিত হয় তাদের ফোটোব্লাস্টিক বীজ বলে। অপরদিকে অন্ধকারের উপস্থিতিতে যে বীজগুলির অঙ্কুরোদগম ঘটে তাদের স্কোটোব্লাস্টিক বা ঋণাত্মক ফোটোব্লাস্টিক
বীজ বলা হয়।

বীজের অঙ্কুরোদগমে ফাইটোক্রোম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। Pfr (সুদূর লাল আলো শোষণকারী ফাইটোক্রোম) পর্যাপ্ত পরিমাণে সঞ্জিত হলে ফটোব্লাস্টিক বীজের অঙ্কুরোদগমকে ত্বরান্বিত করে। লক্ষ করা গেছে যে সুদূর লাল আলো, নীল আলো ও অতিবেগুনি রশ্মি বীজপত্রাধিকাণ্ডের বৃদ্ধিতে বাধাদান করে, কিন্তু লাল আলোর উপস্থিতিতে বীজপত্রাধিকাণ্ড দ্রুত বেড়ে গিয়ে অঙ্কুরোদগমে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন :

বীজ কাকে বলে, বীজের প্রকারভেদ ও গঠন ? 

পাতা কাকে বলে, পাতার বৈশিষ্ট্য, কার্যাবলি ও অঙ্গসংস্থান ?

মূল কাকে বলে, মূলের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও কাজ ?

Leave a Comment