বীজ কাকে বলে ? বীজের প্রকারভেদ ও বিভিন্ন বীজের গঠন

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বীজ কাকে বলে : সুপ্রিয় বন্ধুরা আমাদের এই পর্বটিতে আলোচনার বিষয় বীজবীজ কাকে বলে ? বীজের প্রকারভেদ ? এবং বিভিন্ন বীজের গঠন ? সম্পর্কে।

বীজ কাকে বলে ? বীজের প্রকারভেদ ও বিভিন্ন বীজের গঠন

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেকের পর ডিম্বাশয়টি ফলে পরিণত হয় এবং ডিম্বাশয়ের অন্তর্গত ডিম্বক বীজে পরিণত হয়। বীজের মধ্যে অবস্থিত ভ্রূণ অনুকূল পরিবেশে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি করে। ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বীজ সৃষ্টি হলেও ফল গঠিত হয় না।

বীজ কাকে বলে :

বীজত্বক দ্বারা আবৃত নিষিক্ত, পরিণত এবং পরিপক্ব ডিম্বক, যা নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়, তাকে বীজ বলে।

বীজের প্রকারভেদ :

A. বীজপত্রের সংখ্যা অনুসারে প্রকারভেদ :

বীজপত্রের সংখ্যা অনুযায়ী বীজ তিন প্রকার। যথা – 1. একবীজপত্রী বীজ 2. দ্বিবীজপত্রী বীজ 3. বহুবীজপত্রী বীজ ।

1. একবীজপত্রী বীজ কাকে বলে : যেসব বীজে একটিমাত্র বীজপত্র থাকে, তাদের একবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন-ধান, গম, ভুট্টা, নারকেল ইত্যাদি।

2. দ্বিবীজপত্রী বীজ কাকে বলে : যেসব বীজে দুটি বীজপত্র থাকে, তাদের দ্বিবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন- ছোলা, মটর, কুমড়ো, রেড়ি ইত্যাদি।

3. বহুবীজপত্রী বীজ কাকে বলে : যেসব বীজে দুটির বেশি বীজপত্র থাকে, তাদের বহুবীজপত্রী বীজ বলে। যেমন-পাইন, সাইকাস ইত্যাদি।

B. সস্যের উপস্থিতি অনুসারে প্রকারভেদ :

সস্যের উপস্থিতি অনুসারে বীজ দু-প্রকারের, যথা- 1. সস‍্যল বীজ 2. অসস‍্যল বীজ

1. সস্যল বীজ কাকে বলে : যেসব বীজের বীজপত্রের বাইরে সস্য সঞ্চিত থাকে, তাদের সস্যল বীজ বলে। উদাহরণ- ধান, গম, ভুট্টা প্রভৃতি একবীজপত্রী সস্যল বীজ এবং রেড়ি, শালুক, পাট প্রভৃতি দ্বিবীজপত্রী সস্যল বীজ ।

2. অসস্যল বীজ কাকে বলে : যেসব বীজে সস্য সঞ্চিত থাকে না, তাদের অসস্যল বীজ বলে। উদাহরণ- ছোলা, মটর, আম ইত্যাদি অধিকাংশ দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের বীজ এবং ওল, অ্যালিস্‌মা প্রভৃতি একবীজপত্রী উদ্ভিদের বীজ।

বিভিন্ন বীজের গঠন :

1. ছোলা বীজের গঠন :

ছোলা একটি দ্বিবীজপত্রী ও অসস্যল বীজ। ছোলা বীজের একপ্রান্ত চওড়া এবং অপর প্রান্তটি ছুঁচোলো। ছোলা বীজ নিম্নলিখিত অংশগুলি নিয়ে গঠিত।

A. বীজত্বক : ছোলা বীজে দুটি আবরণী থাকে, যথা- বীজবহিস্ত্বক ও বীজঅন্তস্ত্বক।

i. বীজবহিস্ত্বক : বীজত্বকের বাইরের পুরু, শক্ত ও বাদামি বর্ণের অংশটি হল বীজবহিস্ত্বক বা টেস্টা।

ii. বীজঅন্তস্ত্বক : বহিস্ত্বকের ভিতরের পাতলা, অর্ধস্বচ্ছ এবং সাদা রঙের অংশটি হল বীজঅন্তস্ত্বক বাটেগমেন ।

বীজবহিস্ত্বকের ছুঁচোলো প্রান্তে একটি ক্ষতচিহ্ন থাকে, যার সাহায্যে বীজটি অমরার সঙ্গে যুক্ত থাকে, একে ডিম্বকনাভি বলে। ডিম্বকনাভির নীচে বীজের ছুঁচোলো অগ্রভাগে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র বর্তমান, একে ডিম্বক রন্ধ্র বা মাইক্রোপাইল বলে। অঙ্কুরোদ্‌গমের সময় এই রন্ধ্র দিয়ে ভ্রূণমূল নির্গত হয়। ডিম্বকনাভির নিকট বীজের মাঝবরাবর স্থানে অবস্থিত ছোটো দাগটিকে র‍্যাফি বলে।

বীজত্বকের কাজ : বীজত্বক অন্তর্বীর্জকে রক্ষা করে।

B. অন্তর্বীজ : এটি বীজত্বকের ভিতরের সম্পূর্ণ অংশ। ছোলা বীজের অন্তর্বীজ কেবল ভ্রূণ নিয়ে গঠিত। ভ্রুণ বীজপত্র ও ভূণাক্ষ নিয়ে গঠিত।

i. বীজপত্র : ছোলা বীজে দুটি বীজপত্র থাকে। বীজপত্রে খাদ্য সঙ্কিত থাকায় এটি স্থূল হয়।

কাজ: খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং অঙ্কুরোদ্‌গমের সময় শিশু উদ্ভিদকে খাদ্য সরবরাহ করা।

ii. ভ্ৰূণাক্ষ : বীজপত্র দুটি পরস্পর যে ক্ষুদ্র দন্ডাকার অক্ষের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে, তাকে ভ্রূণাক্ষ বলে। ভ্রূণাক্ষের অংশগুলি হল-

a. পর্বসন্ধি : ভ্রূণাক্ষের যে বিন্দুতে বীজপত্র দুটি সংযুক্ত থাকে তাকে পর্বসন্ধি বলে।

b. ভ্রূণমূল : ভ্রূণাক্ষের নিম্নপ্রান্তটিকে ভ্রূণমূল বলে। ভ্রূণমূল থেকে শিশু উদ্ভিদের মূল সৃষ্টি হয়।

c. ভ্রূণমুকুল : ভ্রূণাক্ষের শীর্ষপ্রান্তটিকে ভ্রূণমুকুল বলে। এটি শিশু উদ্ভিদের বিটপ গঠন করে।

d. বীজপত্রাধিকান্ড : ভ্রূণাক্ষের পর্বসন্ধি ও ভ্রূণমুকুলের মাঝখানের স্থানকে বীজপত্রাধিকাণ্ড বলে।

e. বীজপত্রাবকান্ড : ভ্রূণাক্ষের ভ্রূণমূল ও পর্বসন্ধির মাঝখানের স্থানকে বীজপত্রাবকান্ড বলে।

কাজ : ভ্রূণাক্ষের ভ্রূণমূল শিশু উদ্ভিদের প্রাথমিক মূল এবং ভ্রূণমুকুল শিশু উদ্ভিদের বিটপ অংশ গঠন করে।

2. রেডি বীজের গঠন :

রেড়ি একটি দ্বিবীজপত্রী ও সস্যল বীজ। বীজটি দেখতে ডিম্বাকার ও চ্যাপটা। রেড়ি বীজ নিম্নলিখিত অংশগুলি নিয়ে গঠিত।

A. বীজত্বক : রেড়ি বীজে কেবল বীজবহিস্ত্বক থাকে, বীজঅন্তস্ত্বক থাকে না। বীজত্বকটি বেশ শক্ত, পুরু এবং বাদামি বা কালো বর্ণের হয়। বীজত্বকে নানারকম নকশা থাকে।

বীজের অপেক্ষাকৃত সরু অংশের দিকে অবস্থিত সাদা ও মাংসল অংশটিকে কারাঙ্কল বলে । বীজত্বকের মাঝবরাবর লম্বাদাগটিকে রাফি বলে। ডিম্বকনাভি ও ডিম্বকরন্ধ্র কারাঙ্কল দ্বারা আবৃত থাকায় বাইরে থেকে এদের দেখা যায় না। কারাঙ্কল ছাড়ালে রেড়ি বীজের ডিম্বক রন্ধ্র ও ডিম্বক নাভি দেখা যায়।

কাজ : এটি অন্তবীর্জকে রক্ষা করে।

B. অন্তর্বীজ : এটি বীজত্বকের ভিতরের সম্পূর্ণ অংশ। এর অংশগুলি হল –

i. পরিভ্রূণ : এটি বীজত্বকের পরবর্তী সাদা ও পাতলা পর্দার মতো আবরণী যা সস্যকে আবৃত করে রাখে।

ii. সস্য : এটি পরিভ্রূণের পরবর্তী চ্যাপটা, সাদা ও স্থূল অংশ। এটি ভ্রূণকে আবৃত করে রাখে এবং খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে।

iii. ভ্রূণ : এটি সস্যের মধ্যে অবস্থিত অংশ। এটি দুটি-বীজপত্র ও একটি ভ্রূণাক্ষ নিয়ে গঠিত।

a. বীজপত্র : রেড়ি বীজের বীজপত্র দুটি খুব পাতলা, পাতার মতো এবং শিরা-উপশিরা যুক্ত। বীজপত্রে খাদ্য সঞ্চিত থাকে না।

b. ভ্ৰূণাক্ষ : বীজপত্র দুটি যে ক্ষুদ্র দন্ডাকার অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে ভ্রূণাক্ষ বলে। ভ্রূণাক্ষের ওপরের অগ্রভাগটিকে ভ্রূণমুকুল এবং নীচের অগ্রভাগটিকে ভ্রূণমূল বলে। বীজপত্রাধিকান্ড এবং বীজপত্রাবকান্ড খুব সংক্ষিপ্ত।

3. ভুট্টা বীজের গঠন :

ভুট্টার প্রতিটি বীজ বা দানা এক-একটি ফল। ভুট্টাদানার ফলত্বক ও বীজত্বক আলাদা থাকে না ; এই কারণে ভুট্টা বীজকে বীজ না বলে দানা বলে। ভুট্টা বীজ একবীজপত্রী ও সস্যল। ভুট্টাদানা আয়তাকার, চ্যাপটা ও ওপরের দিক চওড়া এবং নীচের দিক কিছুটা সরু। ভুট্টা দানার চ্যাপটা দিকের সামান্য উঁচু লম্বালম্বি অঞ্চলকে ডেল্টয়েড অঞ্চল বলে।

ভুট্টা বীজ দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত, যথা- A. সংযুক্ত ফলত্বক ও বীজত্বক এবং B. অন্তবীজ।

A. সংযুক্ত ফলত্বক ও বীজত্বক : ভুট্টাদানা প্রকৃতপক্ষে একটি একবীজপত্রী ফল। এদের ফলত্বক ও বীজত্বক একত্রে সংযুক্তভাবে অবস্থিত। উভয় ত্বক একত্রে সোনালি রঙের আবরণ সৃষ্টি করেছে।

কাজ : অন্তবীর্জকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।

B. অন্তর্বীজ : এটি সংযুক্ত ফলত্বক ও বীজত্বকে ঢাকা ভুট্টাদানার সমগ্র অংশ। এটি সস্য ও ভ্রূণ নিয়ে গঠিত।

i. সস্য : ভুট্টাদানার ডেল্টয়েড অঞ্চল বরাবর দানাটিকে দু-ভাগে ভাগ করলে একপাশে ছোট্ট ভ্রূণ এবং ভ্রূণের বাইরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সস্য অবস্থিত। সস্য ও ভ্রূণ পরস্পর এপিথিলিয়াম স্তর দিয়ে আলাদা থাকে। সস্য থাকায় ভুট্টা বীজ সস্যল বীজ ।

কাজ : সস্যে সঞ্চিত খাদ্য (শ্বেতসার) অঙ্কুরোদ্‌গমের সময় শিশু উদ্ভিদকে সরবরাহ করে।

ii. ভ্রূণ : ভুট্টার ভ্রূণ বীজপত্র ও ভ্রূণাক্ষ নিয়ে গঠিত।

a. বীজপত্র : ভুট্টার বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে। বীজপত্রটি দেখতে বর্মের মতো। তাই বীজপত্রটিকে স্কুটেলাম বলে।

কাজ : বীজপত্র সস্য থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে শিশু উদ্ভিদকে সরবরাহ করে।

b. ভ্ৰূণাক্ষ : এটি স্কুটেলামের একপাশে সংলগ্ন থাকে। এর ওপরের অংশকে ভ্রূণমুকুল এবং নীচের অংশকে ভ্রূণমূল বলে। ভ্ৰূণমূল ভ্রূণমূলাবরণী বা কোলিওরাইজা দিয়ে ঢাকা থাকে এবং ভ্রূণমুকুল ভ্রূণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল দিয়ে ঢাকা থাকে

কাজ : ভ্রূণাক্ষের ভ্রূণমূল শিশু উদ্ভিদের প্রাথমিক মূল এবং ভ্রূণমুকুল শিশু উদ্ভিদের বিটপ গঠন করে।

আরও পড়ুন :

ফুল কাকে বলে ? ফুলের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও বিভিন্ন ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম ?

ফল কাকে বলে ? ফলের প্রকারভেদ ও গঠন ? 

2 thoughts on “বীজ কাকে বলে ? বীজের প্রকারভেদ ও বিভিন্ন বীজের গঠন”

Leave a Comment