অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে ? অগ্ন‍্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে ? অগ্ন‍্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল

অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে ? অগ্ন‍্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে এই পর্বটির মাধ‍্যমে জানাবো অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে এবং অগ্ন‍্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে। আসুন দেখে নিই অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে।

অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে

ভূগর্ভস্থ ম‍্যাগমার নির্গমনকে এককথায় বলে অগ্ন‍্যৎপাত। অর্থাৎ ভূগর্ভের গ‍্যাস, বাষ্প, ছাই, ভস্ম, ম‍্যাগমা ভূপৃষ্ঠের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে নিঃশব্দে বা স্বশব্দে বাইরে বেরিয়ে এলে তাকে বলা হয় অগ্ন‍্যুৎপাত ( Eruption )।

উদাহরণ : 1902 সালে ক্যারিবিয়ান সাগরের একটি দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট পিলির ( Mount Pelee ) অগ্ন্যুৎপাতের দ্বারা সেন্ট পিয়ার ( saint – pierre ) শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় ।

অগ্ন্যুৎপাতের কারণ গুলি হল :

অগ্ন্যুৎপাত বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণের জন‍্য হয়ে থাকে যথা-

1. পাত সঞ্চলনজনিত কারণ : ভূত্বক প্রধানত কতকগুলি ছোটোবড়ো পাতের সমন্বয়ে গঠিত । এই পাতগুলির সঞ্চালনের ফলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে সেগুলি হল –

A. অভিসারী পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : অভিসারী পাত সীমানায় দুটি পাতের পরস্পরমুখী চলনের ফলে দুটি পাতের মধ্যে সংঘর্ষ হলে অগ্ন্যুৎপাত হয় । এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার সৃষ্টি হয়েছে।

B. প্রতিসারী পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : দুটি পাতের বিপরীতমুখী চলনের ফলে দুটি পাতের মাঝখানে যে ফাঁকের সৃষ্টি হয় , সেখানে ভূ – অভ্যন্তর থেকে ম্যাগমা নির্গত হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে । একে বিদার অগ্ন্যুৎপাত বলে । এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা সৃষ্টি হয়েছে।

C. নিরপেক্ষ পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : নিরপেক্ষ পাত সীমানায় অর্থাৎ দুটি পাতের পাশাপাশি সংঘর্ষবিরোধী চলনের অনেক সময় ফাটল বা চ্যুতি সৃষ্টি হয় । সেই চ্যুতি বরাবর অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

2. ভূত্বকের গঠন : ভূত্বকের গঠন সর্বত্র সমান নয় । কোথাও বেশি পুরু আবার কোথাও খুব কম পুরু । যার ফলে বিভিন্ন আলোড়নকালে যে চ্যুতি বা ফাটলের সৃষ্টি হয় , তার মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায় ।

3. ভূ – অভ্যন্তরস্ত চাপ : ভূ – অভ্যন্তরে গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নতা বৃদ্ধি পায় । যার ফলে পদার্থসমূহ কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না । তরল অবস্থায় পদার্থের আয়তন তথা চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এই চাপের অসাম্যতার দরুন অগ্ন্যুৎপাত হয়।

4. ভূগর্ভের তেজস্ক্রিয় পদার্থ : ভূগর্ভে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ , যেমন — ইউরেনিয়াম , রেডিয়াম থাকে । এরা তাপ বিকিরণ করে , ফলে ভূ – অভ্যন্তরে তাপের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

5. ভূগর্ভের গ্যাসীয় চাপ : ভূপৃষ্ঠের ফাটল বরাবর জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে অধিক উন্নতায় বাষ্পে পরিণত হয় । সেই বাষ্প বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ঊর্ধ্বমুখী চাপ দেয় । যার ফলে ভূত্বকে ফাটল ধরে এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

6. প্লিউম প্রবাহ : ম্যাগমার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহকে প্লিউম বলে । যার ফলে ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো অংশে চাপের সৃষ্টি করে এবং এই চাপের ফলেই ক্রমে সেই অংশে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে অগ্ন‍্যুৎপাত ঘটে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ

অগ্ন‍্যুৎপাতের ফলাফল গুলি হল

অগ্ন‍্যুৎপাতের ফলাফল কে সাধারণত দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় যথা – প্রাকৃতিক ফলাফল এবং মানবীয় ফলাফল ।

  1. প্রাকৃতিক ফলাফল :

1. ভূমিরূপ গঠন : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ , যেমন – ক্যালডেরা , সিন্ডার শঙ্কু , ল্যাকোলিথ , ডাইক , সিল প্রভৃতি ভূমিরূপ গঠিত হয়।

2. বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন : ব্যাপক হারে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সেই এলাকার বিভিন্ন জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে । বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটে।

3. মৃত্তিকার গঠন পরিবর্তন : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে ম্যাগমা প্রবাহের সৃষ্টি হয় , তার ফলে মৃত্তিকার গঠনের পরিবর্তন ঘটে থাকে।

4. স্থানীয় পরিবেশের পরিবর্তন : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উত্থিত বিষাক্ত , দূষিত গ্যাস বাতাসে মেশে । যার ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি সংঘটিত হয় এবং স্থানীয় পরিবেশের ব্যাপক হারে পরিবর্তন ঘটে।

5. ভূমিকম্প : অগ্ন্যুৎপাতের সময় ব্যাপক হারে ম্যাগমা নির্গমনকালে বিস্ফোরণ ঘটলে কখনো কখনো ভূত্বক আন্দোলিত হয়ে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

6. বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রার পরিবর্তন : অগ্ন্যুৎপাতের সময় ম্যাগমা নির্গমনের ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

মানবীয় ফলাফল :

1. জীবনহানি : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ব্যাপক হারে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের জীবনহানি ঘটে । যেমন –1883 সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় বিস্ফোরণে জাভার উপকূলে প্রায় 3600 মানুষের মৃত্যু হয়।

2. ধনসম্পদের বিনাশ : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বাড়িঘর , যোগাযোগ ব্যবস্থা , শিল্প তথা কোনো এলাকার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে ব্যাপক ধনসম্পদের ক্ষতি করে।

3. কৃষির ক্ষতি : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় উত্তপ্ত ম্যাগমা ছড়িয়ে পড়লে সেই অঞ্চলের কৃষি ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উদাহরণ : ভারতের সুবিশাল আগ্নেয়গিরি হল আন্দামান-নিকোবর-দ্বীপপুঞ্জের ব‍্যারেন । এ ছাড়া নারকোনডাম হল উল্লখযোগ‍্য আগ্নেয়গিরি।

মূল‍্যায়ন : অগ্ন‍্যুৎপাতের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তাই ম‍্যাগমার গতিবেগ পর্যবেক্ষণের সাহায্য অগ্ন‍্যুৎগম সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া গেলে ও নিরাপত্তামূলক ব‍্যবস্থা নেওয়া হলে অনেকাংশে তা ক্ষতির মান কমায়।

আরও পড়ুন :

পর্বত কাকে বলে ? শ্রেণীবিভাগ এবং বৈশিষ্ট্য 

আবহবিকারের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য

মালভূমির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, কারণ, বৈশিষ্ট্য

1 thought on “অগ্ন‍্যুৎপাত কাকে বলে ? অগ্ন‍্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল”

Leave a Comment