স্মৃতিকথা কাকে বলে ? What is a Memoir | স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, উদাহরণ ও ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

স্মৃতিকথা কাকে বলে ? What is a Memoir | স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, উদাহরণ ও ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব

স্মৃতিকথা কাকে বলে ? এবং স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, উদাহরণ ও ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব: স্মৃতিকথার ধারণাটি মানুষের মধ্যে দুটি আকাঙ্ক্ষাকে সন্তুষ্ট করে পরিচিত হওয়া ও অন্যদের জানা। এখানে আমরা স্মৃতিকথা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করলেন চলুন প্রথমে দেখে নেওয়া যাক স্মৃতিকথা কাকে বলে

স্মৃতিকথা কাকে বলে

স্মৃতিচারণগত ভাবে স্মৃতিকথা কাকে বলে

সাধারণ অর্থে স্মৃতিকথা (Memoir) গুলি হল অতীতের স্মৃতিচারণ । যে অ – উপন্যাসধর্মী সাহিত্যে লেখক অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে থাকেন , তাকে সাধারণ বলা হয় স্মৃতিকথা।

অতীত ঘটনার বিবরণভিত্তিতে স্মৃতিকথা কাকে বলে

যে লিখিত সাহিত্যে লেখক তার অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বা সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন , এমন ঘটনার স্মৃতি বর্ণনা করেন , তাকে স্মৃতিকথা বলা যায় ।

ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণভিত্তিতে স্মৃতিকথা কাকে বলে

পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাকে যখন লেখক তার স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনেন ও তার লিখিত রূপ দেন , তখন তাকে স্মৃতিকথা বলা হয়ে থাকে।

স্মৃতিকথার প্রকৃতি

প্রকৃতিগত বিচারে স্মৃতিকথাকে আমরা লৌকিক জ্ঞানও বলতে পারি । স্মৃতিকথা অনেকসময় কালেকটিভ মেমরি বা যৌথ স্মৃতি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে থাকে।

স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি

1.ব‍্যাবহারিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা : স্মৃতিকথায় যে কাহিনি বর্ণিত বা পরিবেশিত হয় তা কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাস্তব অভিজ্ঞতার বিবরণ বলা চলে।

2. গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপস্থাপন : স্মৃতিকথায় লেখকের কলমে তার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা উঠে আসে না । এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিগত দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ওপরেই আলোকপাত করা হয়।

3. বিশেষ অনুভূতির প্রকাশ : স্মৃতিকথায় লেখকের বিগত দিনের ঘটনাবলি সম্পর্কে বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে । দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা ‘ ছেড়ে আসা গ্রাম ‘ নামে । স্মৃতিকথায় আমরা দেশভাগের ইতিহাস ও যন্ত্রণার বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করে থাকি।

স্মৃতিকথার উদাহরণ

1.ছেড়ে আসা গ্রাম : দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা ‘ ছেড়ে আসা গ্রাম ’ নামে স্মৃতিকথায় দেশভাগের প্রেক্ষাপটের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে । দেশভাগের পরিণতি উদ্বাস্তু শরণার্থীদের মানসিক যন্ত্রণা , বেদনা ধরা পড়েছে এই উপন্যাসের মাধ‍্যামে।

2. সেদিনের কথা : স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে মণিকুন্তলা সেন লেখেন তাঁর স্মৃতিকথা ‘ সেদিনের কথা । এই আত্মকথায় হিন্দু- মুসলিম হানাহানির মর্মান্তিক করুণ চিত্র প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে।

3. জীবনস্মৃতি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অতীত দিনের স্মৃতি নিয়ে লিখেছিলেন ‘ জীবনস্মৃতি ‘ গ্রন্থ । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন , “ জীবনস্মৃতি জীবন কথা নয় , স্মৃতিকথা । ” এই স্মৃতিকথার বিষয়গুলি ছিল কবির শিক্ষারম্ভ , কবিতা রচনারম্ভ , শিক্ষাজীবন , বাড়ির পরিবেশ , গীতচর্চা , স্বদেশ ভাবনা , পিতৃদেবের প্রসঙ্গ , হিমালয় যাত্রা ও প্রত্যাবর্তন – সহ নানা প্রসঙ্গ । ৪৪ টি পরিচ্ছেদে কবি জীবনের শুরুর দিকের বিচিত্র স্মৃতিগুলি এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

4. দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ : দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী জীবনসংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে রচনা করেন ‘ দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ ’ নামে গ্রন্থটি । এই স্মৃতিকথাটিতে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সরকারের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী অপশাসনের বিরুদ্ধে নিজের এবং নিজ দেশবাসীর জীবনসংগ্রামের কাহিনি পরিবেশন করেছেন।

5.অন্যান্য স্মৃতিচারণ : অন্যান্য স্মৃতিকথার মধ্যে মহাত্মা গান্ধির ‘ দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ ’ , মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ‘ ইন্ডিয়া উইন্‌স ফ্রিডম ’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

স্মৃতিকথার গুরুত্ব

1.বাস্তবতার বিচার : বাস্তবতার বিচারে স্মৃতিকথাগুলিতে অতীত দিনের বাস্তব ঘটনা বা কাহিনিগুলি সাধারণত পরিবেশিত হয়।

2. ঐতিহাসিক উপাদান : জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ওপর লেখা বা কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ওপর লেখা স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের মূল্যবান ঘটনাবলির জানান দেয় ।

3. প্রত্যক্ষ বিবরণ : অতীত কাহিনি বা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুণী ব্যক্তিগণ স্মৃতিকথায় তাদের অতীত স্মৃতি পুনবর্ণনা করেন।

ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব

স্মৃতিকথা ( Memoir ) হল ইতিহাস রচনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌখিক উপাদান । কোনো মানুষ অতীতের কোনো ব্যক্তি , পরিবার বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাক্ষী হতে পারেন এবং সেই বিষয়ে তাঁর কাছে অনেক তথ্য বা জ্ঞান থাকতে পারে । সেই ব্যক্তি এই ঘটনাগুলি পরবর্তীকালে স্মরণে এনে তা লিখিত আকারে প্রকাশ করতে পারেন । এই লিখিত তথ্য স্মৃতিকথা নামে পরিচিত । ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে যথা-

1. গুণীজনদের লেখা তথ্য : স্মৃতিকথাগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন শাখার গুণী ব্যক্তিরা রচনা করেন । ফলে তাতে অবান্তর , পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জিত ঘটনার প্রবেশ খুবই হ্রাস পায় বলে কেউ কেউ মনে করেন।

2. বাস্তবতা : স্মৃতিকথাগুলি কাল্পনিক বিষয় নয় । এগুলি থেকে অতীতের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায় । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার দাঙ্গার ঘটনাবলি বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিকথায় পাওয়া যায়।

3. প্রত্যক্ষ দর্শী : বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে ঘটনার বিবরণ তাঁদের স্মৃতিকথাগুলিতে আলোচনা করেন । ফলে উক্ত বিবরণে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা অনেক বেশি থাকে।

4. ঐতিহাসিক উপাদান : বিভিন্ন স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাক – বাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের ওপর যে বর্বর ও নৃশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হল বিভিন্ন স্মৃতিকথাগুলি । কেননা , পাক সামরিক বাহিনী তখন পূর্ববাংলার সমস্ত সংবাদ গোটা বিশ্ব থেকে আড়াল করেছিল।

মূল‍্যায়ন: পরিশেষে বলা যায় যে, স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের মৌখিক উপাদান হিসেবে ব্যক্ত হলেও এগুলিতে অনেকসময় সঠিক বিষয়বস্তুর উপস্থাপনার অভাব ধরা পড়ে।

আরও পড়ুন :

লোককথা কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও প্রকারভেদ

কিংবদন্তি কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

Leave a Comment