উভচর প্রাণী কাকে বলে ? উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য | What Are Amphibian

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

উভচর প্রাণী কাকে বলে – What Are Amphibian : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের সাথে আরও একটি বিশেষ পর্ব আলোচনা করতে চলেছি যেটির মূল বিষয়  উভচর প্রাণী কাকে বলে এবং উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

উভচর প্রাণী কাকে বলে ? উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য | What Are Amphibian

উভচর প্রাণী কাকে বলে :

যেসব মেরুদণ্ডী প্রাণীর চামড়া নগ্ন, সিক্ত ও গ্রন্থিময়, শৈশবকাল (লার্ভা দশা) জলে এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থা স্থলে অতিবাহিত হয়, তাদের অ্যাম্ফিবিয়া বা উভচর প্রাণী বলে।

উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য :

i. এদের শৈশবকাল অর্থাৎ লার্ভা দশা জলে অতিবাহিত হয় এবং পূর্ণাঙ্গ দশা স্থলে অতিবাহিত হয় ; তাই এদের উভচর বলে।

ii. কিছু উভচর জলবাসী (নেকচুরাস), কিছু স্থলবাসী (ব্যাং) এবং কিছু উভচর বৃক্ষবাসী (হাইলা)।

iii. এদের চর্ম সিক্ত ও গ্রন্থিময়।

iv. বহিঃকঙ্কাল থাকে না; কিন্তু জিমনোফাওনা বর্গভুক্ত প্রাণীদের চর্মে লুকানো আঁশ আছে।

v. দেহে সাধারণত দু-জোড়া পা থাকে। অগ্রপদে চারটি এবং পশ্চাদ্‌পদে পাঁচটি করে নখরবিহীন আঙুল থাকে। কিছু উভচরের লিপ্তপদ থাকে।

vi. গ্রীবা থাকে না।

vii. অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়। করোটি দুটি অক্সিপিটাল কনডাইলযুক্ত।

viii. এদের অবসারণী ছিদ্র থাকে।

ix. ব্যাঙাচি অবস্থায় ফুলকার সাহায্যে এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় ফুসফুস, ত্বক ও মুখবিবর গলবিলীয় মিউকাস পর্দার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।

x. হৃৎপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠযুক্ত (দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়), হৃৎপিণ্ডে সাইনাস ভেনোসাস ও কোনাস আর্টেরিওসাস নামক সহকারী প্রকোষ্ঠ থাকে। লোহিত রক্তকণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত।

xi. দশ জোড়া করোটিয় স্নায়ু থাকে।

xii. এরা শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। এদের শীতঘুম দেখা যায়।

xiii. এদের রেচন অঙ্গ বৃক্ক।

xiv. এদের বহিঃনিষেক পরিলক্ষিত হয়। ব্যাঙাচি (ব্যাং) ও অ্যাক্সোলোটল (স্যালামান্ডার) লার্ভা দশা দেখা যায়।

বিশেষ তথ্য :

ভার্টিব্রেটদের মধ্যে প্রথম স্থলবাসী টেট্রাপোড জাতীয় প্রাণী উভচর গোষ্ঠী আমাদের নিত্যসঙ্গী এবং প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ প্রাণীরা স্থলবাসী হলেও জলবাসী লার্ভা দশা তাদের জলবাসী পূর্বপুরুষের উপস্থিতি ঘোষণা করে। লার্ভা দশায় জলে থাকার সময় এরা বহিঃ ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অবস্থা প্রাপ্ত হলে এদের ফুসফুস তৈরি হয়ে যায়। তখন এরা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। কিছু কিছু উভচর প্রাণী জলে থাকতে ভালবাসে। তবে এরা জলে থাকলেও ডাঙায় থাকা প্রাণীদের মতো ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বসন ক্রিয়া করে থাকে। এদের ত্বক গ্রন্থিময় ও সাধারণত সিক্ত অবস্থায় থাকার জন্য ত্বক দিয়ে অনেকটা শ্বাসবায়ুর আদানপ্রদান ঘটতে পারে।

জননের সময় স্ত্রী উভচর প্রাণী জলে ডিম পাড়ে। পুরুষ প্রাণীও জলে শুক্রাণু ছাড়ে। ফলে বহিঃনিষেকের মাধ্যমে জাইগোট সৃষ্টি হয়ে নতুন প্রাণী জন্মলাভ করে।কোনো কোনো ক্ষেত্রে লার্ভা দশায় একটি প্রাণী গোনাডের পরিণতি দেখায় ও জননে সক্ষম হয়। এই ঘটনাকে বলে পিডোজেনেসিস। Ambystoma tigrinum স্যালামান্ডারের লার্ভাকে অ্যাক্সলোটল লার্ভা বলে। অনেক সময় এই লার্ভা দশাতেই এদের জনন ক্ষমতা এসে যায়। অপরদিকে পরিণত কোনো প্রাণীতে লার্ভার বৈশিষ্ট্য থেকে গেলে সেই ঘটনাকে বলে নিওটেনি। শুধু আপোডা জাতীয় অ্যাম্ফিবিয়া ছাড়া সকলের দু-জোড়া পা থাকে। আপোডাদের সিসিলিয়া বলে। উদাহরণ হল Ichthyophis ও Uraeotypllus-এদের চোখ কোনো কাজ করে না বলে এদের ব্লাইন্ড ওয়ার্ম ও বলে। এদের যেমন পা থাকে না, তেমনি থাকে না মধ্য কর্ণ, ভোকাল কর্ড ও জিভ।

সোনা ব্যাং, কুনো ব্যাং, হাইলা প্রভৃতিদের লেজ থাকে না। এদের বলে অ্যানুরা বা স্যালিয়েনসিয়া । অপরদিকে স্যালাম্যান্ডার, অ্যাম্বাইস্টোমা, নেকচুরাস প্রভৃতিদের যেমন পা থাকে, এদের একটি বড়ো লেজও থাকে। তাই এদের নাম ইউরোডেলা বা কর্ডাটা। সোনা ব্যাং ও কুনো ব্যাং ছাড়া অন্যান্য ছোটো ছোটো ব্যাং পোকামাকড় ধরে খায় ও ফসলের উপর পেস্ট জাতীয় পোকাদের বংশ বৃদ্ধি রোধ করে। এদিক দিয়ে এরা আমাদের কাছে উপকারী। কুনো ব্যাঙের চামড়ার গুটি থেকে বিউফোটেনিন, বিউফোনিন ও বিউফোটক্সিন,পাওয়া যায়। এগুলি ঘা সারানোর ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী রাসায়নিক পদার্থ। এ ছাড়া এদের কর্ণপটহের পেছনের দিকে একজোড়া প্যারোটিড গ্ল্যান্ড থাকে। এর থেকে মৃদু বিষাক্ত পদার্থ ক্ষরণ করে।

বর্ষাকালে জননের সময় পুরুষ ব্যাং জোরে জোরে ডাকে। উন্নত ভোকাল কর্ড থাকায় এরা এমন কাজ করতে পারে। ব্যাঙেরা সুদৃশ্য না হলেও আমাদের কাছে উপকারী। এদের দ্বারা আমাদের ক্ষতি হয় না বললেই চলে। অনেকের কাছে সোনা ব্যাং সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। শীতের সময় ব্যাং ও অন্যান্য উভচর প্রাণীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তখন এরা নিভৃতে লুকিয়ে পড়ে। একে উভচরদের শীত ঘুম বা হাইবারনেশন বলে

আরও পড়ুন : শৈবাল কাকে বলে ? শৈবালের শ্রেণীবিভাগ বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ?

2 thoughts on “উভচর প্রাণী কাকে বলে ? উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্য | What Are Amphibian”

Leave a Comment