সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে ? What are reptiles | সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে – What are reptiles : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীর আজকের এই পর্বটিতে আরো একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করলাম যেটি হলো সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে বা সরীসৃপ কাকে বলে এবং সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে ? What are reptiles | সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য

◆ সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে :

যেসব মেরুদণ্ডী প্রাণীর চর্ম শুষ্ক ও এপিডারমাল আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত, যারা বুকে হেঁটে চলে এবং যাদের অবসারণী ছিদ্র আড়াআড়িভাবে অবস্থিত ও পায়ে নখরযুক্ত আঙুল থাকে, তাদের রেপ্টিলিয়া বা সরীসৃপ বলে।

◆ সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য :

সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-

১. এরা স্থলবাসী। কিছু সরীসৃপ অর্ধ-স্থলবাসী (কচ্ছপ)।

২. চর্ম শুষ্ক এবং জল নিরোধক এপিডারমাল আঁশ (সাপ) বা শক্ত প্লেট (কুমির) দিয়ে আচ্ছাদিত, একে স্কুটস বলে। কচ্ছপের ক্যারাপেস নামক খোলক থাকে।

৩. দু-জোড়া পা আছে (সাপ পা-বিহীন)। প্রতিটি পায়ে পাঁচটি নখরযুক্ত আঙুল (ব্যাতিক্রম : সাপ) থাকে।

৪. অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়। করোটিতে একটিমাত্র অক্সিপিটাল কন্ডাইল থাকে।

৫. অবসারণী ছিদ্র আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। অবসারণী তিনটি প্রকোষ্ঠযুক্ত।

৬. এদের শ্বাসঅঙ্গ ফুসফুস।

৭. হৃৎপিণ্ড অসম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠযুক্ত (দুটি অলিন্দ এবং একটি অর্ধবিভক্ত নিলয়)। হূৎপিণ্ডে সাইনাস ভেনোসাস থাকে কিন্তু কোনাস আর্টেরিওসাস থাকে না। কুমিরের হূৎপিণ্ড সম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠযুক্ত। লোহিত রক্তকণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত।

৮. এদের করোটিয় স্নায়ু 12 জোড়া।

৯. এদের রেচন অঙ্গ বৃক্ক।

১০. শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। শীতঘুম দেখা যায়।

১১. স্ফেনোডন ছাড়া পুরুষ প্রাণীদের সংগম অঙ্গ শিশ্ন উপস্থিত।

১২. এরা ডিম পাড়ে, অর্থাৎ ওভিপেরাস।

১৩. ভ্রূণ অ্যামনিয়ন ও অ্যালানটয়েস পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে।

◆ শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য :

১. দেহত্বক : ত্বক শুষ্ক ও আঁশযুক্ত।

২. আঙুল : প্রতিপদে চটি করে নখরবিশিষ্ট আঙুল থাকে।

৩. শ্বাসঅঙ্গ : এদের শ্বাসঅঙ্গ ফুসফুস।

৪. হূৎপিণ্ড : এদের হূৎপিণ্ডটি দুটি অলিন্দ এবং একটি অসম্পূর্ণ বিভক্ত নিলয় (ব্যতিক্রম—কুমির) নিয়ে গঠিত।

৫. অবসারণী ছিদ্র : এদের অবসারণী ছিদ্র আড়াআড়িভাবে অবস্থিত।

◆ বিশেষ তথ্য :

রেপ্টিলিয়া ও অ্যাম্ফিবিয়া সম্বন্ধে আলোচনাকে হারপেটোলজি বলে। তবে শুধু লিজার্ড বা গিরগিটি জাতীয় প্রাণীদের আলোচনাকে সাউরোলজি ও সাপদের নিয়ে আলোচনাকে অফিওলজি বা সাপেন্টোলজি বলে। বহু প্রাচীন যুগে রেপ্টিলিয়াদের আবির্ভাব ঘটলেও মেসোজোয়িক এরা -কে সরীসৃপদের সুবর্ণ যুগ বলে। অতিকায় ও ভয়ংকর ডাইনোসর জাতীয় জীবগুলিও প্রাচীন সরীসৃপ। আজ থেকে প্রায় 200 মিলিয়ন বছর আগে এরা পৃথিবীতে বিরাজ করত। কিন্তু আজ তারা সবাই অবলুপ্ত।

অধুনা জীবিত সরীসৃপদের মোট চারটি বর্গের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চারটি বর্গ আবার তিনটি উপশ্রেণির অন্তর্গত। তিনটি উপশ্রেণির নাম যথাক্রমে অ্যানাপসিডা , লেপিডোসাউরিয়া ও আর্কোসাউরিয়া। অ্যানাপসিডার অধীন একটি বর্গ চিলোনিয়া নামে খ্যাত। লেপিডোসাউরিয়ার অধীন দুটি বর্গ আছে। যাদের নাম রিঙ্কোকেফালিয়া ও স্কোয়ামাটা। অপরদিকে আর্কোসাউরিয়ার মধ্যে একটি বর্গ হল ক্রোকোডিলিয়া।

চারটি বর্গ হিসেবে গোষ্ঠীর উদাহরণ হল-

1. কেলোনিয়া—Tryonix gangeticus, Testudo sp. ও Chelonia sp
2. রিঙ্কোকেফালিয়া- Sphenodon punctatum (তুয়াতারা)।
3. স্কোয়ামাটা—সমস্ত গিরগিটি ও সাপ (Calotes versicolor, Varanus bengalensis, Draco volans, Naja naja)।
4. ক্রোকোডিলিয়া—Crocodylus porosus, Gavialis gangeticus ।

বৃহত্তম সাপ হল– Eunectes murinus (অ্যানাকোন্ডা), ভারতীয় ক্ষুদ্রতম সাপ হল—Jyphlina brahmina, বৃহত্তম লিজার্ড হল – Komodo dragon, ক্ষুদ্রতম লিজার্ড হল—Dwarf gecko, বৃহত্তম জীবন্ত লিজার্ড হল – Varanus homodensis (3 মি. দীর্ঘ), একমাত্র বিষাক্ত লিজার্ড হল— Heloderma suspectum।

সব সরীসৃপই ডিম পাড়ে ও এদের নিষেক দেহের মধ্যে ঘটে। সরীসৃপদের মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। নানা কারণে এদের বৈচিত্র্য লোপ পেতে চলেছে। এজন্য এদের প্রজাতি সংরক্ষণে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন :

উভচর প্রাণী কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য ?

1 thought on “সরীসৃপ প্রাণী কাকে বলে ? What are reptiles | সরীসৃপ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য”

Leave a Comment