শ্বসন কাকে বলে ? শ্বসনের প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও শ্বসনকে অপচিতি বিপাক বলে কেন

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

শ্বসন কাকে বলে ? শ্বসনের প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও শ্বসনকে অপচিতি বিপাক বলে কেন

শ্বসন কাকে বলে – what is respiration : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা শ্বসন কাকে বলে এবং শ্বসনের গুরুত্ব, প্রকারভেদ ও শ্বসনকে অপচিতি বিপাক বলে কেন সেই সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

◆ শ্বসন কি :

জীবের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। জীবকোশে এই শক্তির উৎস খাদ্য। কোশস্থিত খাদ্যবস্তুর অবিরাম ও পর্যায়ক্রমিক জারণের ফলে এই শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি ATP রূপে কোশে সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে এবং যাবতীয় জৈবনিক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য নিয়তই ব্যয় হয়। যে শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতিতে কোশস্থ জৈব যৌগ জারিত হয়ে শক্তিযুক্ত যৌগ উৎপন্ন হয় এবং জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড উপজাত বস্তু হিসেবে নির্গত হয়, তাকে শ্বসন বা রেসপিরেশন বলে

শ্বসনের সময় সাধারণত অক্সিজেনের উপস্থিতি প্রয়োজন এবং উপজাত বস্তু কার্বন ডাইঅক্সাইড সাধারণত কোশের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে জীবদেহের বাইরে নির্গত হয়। সবুজ উদ্ভিদকোশে দিনেরবেলায় CO2 সালোকসংশ্লেষের কাজে লাগে। উৎপন্ন জল কোশের মধ্যে আংশিক পরিমাণে থেকে যায়, ATP উৎসেচক দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে শক্তি মুক্ত হয় এবং জৈবনিক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ব্যয় হয়। শ্বসন প্রতিটি সজীব কোশে অবিরাম সম্পন্ন হয়।

◆ শ্বসন কাকে বলে :

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোশস্থিত জৈব খাদ্যবস্তু জারিত হয়ে খাদ্যস্থ স্থৈতিকশক্তি গতি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয় যা বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয়, তাকে শ্বসন বলে।

◆ শ্বসনের গুরুত্ব :

i. শক্তির মুক্তি : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিকশক্তি রূপে আবদ্ধ হয়। শ্বসনকালে ওই শক্তি তাপশক্তি রূপে মুক্ত হয়। ফলে জীবের যাবতীয় জৈবিক ক্রিয়াগুলি-পুষ্টি, বৃদ্ধি, রেচন, জনন, চলন ও গমন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন 2500-3000 kcal শক্তির প্রয়োজন হয় যা শ্বসন ক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।

ii. শক্তির রূপান্তর : শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি থেকে উষ্ণ শোণিতবিশিষ্ট প্রাণীদের দেহ গরম থাকে। জোনাকি আলো দেয়, ইলেকট্রিক রে মাছের দেহে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এই ঘটনাগুলি শ্বসনে উৎপন্ন শক্তির রূপান্তর মাত্র।

iii. অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় CO 2 গৃহীত হয় এবং O 2 নির্গত হয়। ফলে বায়ুর CO2-এর পরিমাণ কমে যায় এবং O2-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। শ্বসন প্রক্রিয়ার সময় O2 গৃহীত হয়ে এবং CO2 বর্জিত হয়ে পরিবেশে উক্ত গ্যাস দুটির সমতা বজায় থাকে।

◆ শ্বসনকে অপচিতি বিপাক বলে কেন :

শ্বসনের ফলে কোশস্থিত জৈববস্তু জারিত হয়ে শক্তি, জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয় ও জীবদেহের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায়, তাই শ্বসনকে অপচিতি বিপাক বলে।

◆ শ্বসনকে শক্তিমোচী প্রক্রিয়া বলে কেন :

প্রক্রিয়ায় শ্বসনবস্তু জারিত হয়ে উচ্চশক্তি সম্পন্ন ATP যৌগ উৎপন্ন হয় এবং শক্তির মোচন ঘটে। তাই শ্বসনকে শক্তিমোচী বা তাপমোচী প্রক্রিয়া বলে।

◆ শ্বসন ও শ্বাসকার্য :

শ্বসন একটি অন্তঃকোশীয় প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কোশের খাদ্যবস্তু জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। শ্বাসকার্য হল একটি ভৌত প্রক্রিয়া যা কোশের বাইরে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় কোনোপ্রকার শক্তি উৎপন্ন হয় না। শ্বাসকার্য বলতে কেবল শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস এবং শ্বাসত্যাগ বা নিশ্বাস এই দুটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন গৃহীত হয় এবং নিশ্বাসের সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড বর্জিত হয়।

◆ শ্বসনের প্রকারভেদ :

জীবদেহে প্রধানত দু-রকমের শ্বসন দেখা যায়, যথা- 1. মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে শ্বসন বা সবাত শ্বসন এবং 2. অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসন বা অবাত শ্বসন

1. সবাত শ্বসন কাকে বলে :

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বায়ুজীবী কোশে শ্বসন বস্তু অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জল উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির সম্পূর্ণ মুক্তি ঘটে, তাকে সবাত শ্বসন বলে।

স্থান : সমস্ত বায়ুজীবী জীবকোশে সবাত শ্বসন সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়টি অর্থাৎ গ্লাইকোলাইসিস সাইটোপ্লাজমে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় দুটি অর্থাৎ ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন পরিবহণ তন্ত্র মাইটোকন্ড্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

উৎপন্ন পদার্থ : 1 অণু গ্লুকোজ 6 অণু O2 দ্বারা জারিত হয়ে 6 অণু CO2 এবং 6 অণু H2O উৎপন্ন করে। বিক্রিয়ার ফলে 686 kcal তাপশক্তি নির্গত হয়। প্রকৃতপক্ষে এই শক্তির একাংশ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে 38 অণু ATP সৃষ্টি করে।

2. অবাত শ্বসন কাকে বলে :

যে পদ্ধতিতে জীবকোশের শ্বসন বস্তু মুক্ত অক্সিজেন ছাড়াই অক্সিজেনযুক্ত অজৈব যৌগের অক্সিজেন দ্বারা অসম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জল ও অক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির আংশিক মুক্তি ঘটায়, তাকে অবাত শ্বসন বলে।

অন্যভাবে অবাত শ্বসন কাকে বলে বলতে গেলে, যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেন অণু ব্যবহৃত হয় না এবং সর্বশেষ ইলেকট্রন গ্রাহকরূপে অক্সিজেন ছাড়া অন্য যৌগ কার্যকরী হয়, তাকে অবাত শ্বসন বলে।

স্থান : অবাত শ্বসন অবায়ুজীবী পরজীবী প্রাণী (Monocystis নামক আদ্যপ্রাণী, Ascaris নামক কৃমি), ছত্রাক ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় সম্পন্ন হয়। উন্নত প্রাণীর পেশিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে যে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় তাও সাময়িকভাবে অবাত শ্বসনের ফলে সৃষ্টি হয়। এই ল্যাকটিক অ্যাসিড পেশিকোশে সজ্জিত হয়ে পেশির ক্লান্তি সৃষ্টি করে। পরিণত RBC পেশিকোশে অবাত শ্বসন দেখা যায়।

উৎপন্ন পদার্থ : বিভিন্ন ধরনের অবাত শ্বসনে জল, CO2, নাইট্রাইট যৌগ, ল্যাকটিক অ্যাসিড ও স্বল্প পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়।

আরও পড়ুন :

ব‍্যাপন কাকে বলে এবং ব‍্যাপনের ব‍্যাখ‍্যা ও চাপ ?

অভিস্রবণ কাকে বলে এবং প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও শর্তাবলি ?

বাষ্পমোচন কাকে বলে এবং বাষ্পমোচনের স্থান, সময়কাল, গুরুত্ব, প্রভাবক ও প্রকারভেদ ?