সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে ? সুষুস্নাকাণ্ডের কাজ , গঠন ও আবরণ

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে ? সুষুস্নাকাণ্ডের কাজ , গঠন ও আবরণ

সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে – What is Spinal Cord : প্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে এবং সুষুস্নাকাণ্ডের গঠন ? সুষুস্নাকাণ্ডের কাজ ও আবরণ সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে। 

সুষুস্নাকাণ্ড কাকে বলে :

মেরুদণ্ডের গহ্বরে ফোরামেন ম্যাগনাম থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় কটিদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত ফাঁপা গোলাকার রজ্জুর মতো সরু স্নায়ুদণ্ডকে সুষুম্নাকাণ্ড বলে ।

সুষুম্নাকাণ্ডের দৈর্ঘ্য পুরুষের প্রায় 45 সেমি এবং স্ত্রীলোকের প্রায় 43 সেমি এবং এর ওজন প্রায় 35 গ্রাম। সুষুম্নাকাণ্ডের আকৃতি বেলনাকার, সামনে-পিছনে চ্যাপটা। যেহেতু সুষুম্নাকাণ্ড বায়ু ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী স্নায়ুতন্তুর দ্বারা মস্তিস্কের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাই সুষুম্নাকাণ্ড নিম্নদিক থেকে যত ঊর্ধ্বদিকে অগ্রসর হয় তত আকারে মোটা হয়।

সুষুম্নাকাণ্ড মস্তিষ্কের মতো ডুরা ম্যাটার, অ্যারাকনয়েড ম্যাটার এবং পায়া ম্যাটার নামক মস্তিষ্ক আবরণী ঝিল্লি বা মেনিনজেস দ্বারা আবৃত থাকে। এটি অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠীয় স্নায়ু খাঁজ দ্বারা লম্বালম্বিভাবে দুটি প্রতিসম অংশে বিভক্ত থাকে। সুষুম্নাকাণ্ড 31টি খণ্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি খণ্ডক থেকে একজোড়া করে মোট 31 জোড়া সুষুম্না স্নায়ু নির্গত হয়। সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে থাকে কেন্দ্রীয় নালি। কেন্দ্রীয় নালির চারপাশে আছে H আকৃতিবিশিষ্ট ধূসর পদার্থ এবং ধূসর পদার্থকে বেষ্টন করে থাকে শ্বেত পদার্থ। কেন্দ্রীয় নালির মধ্য দিয়ে মস্তিষ্ক মেরুরস বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড প্রবাহিত হয়।

সুষুস্নাকাণ্ডের গঠন :

সুষুম্নাকাণ্ড মেরুদণ্ডের স্পাইনাল ক্যানাল গহ্বরে অবস্থান করে। এটি একটি লম্বা চোঙাকৃতি রজ্জু যা সম্মুখ-পশ্চাতে সামান্য চাপা। সুষুম্নাকাণ্ড ওপরে সুষুম্নাশীর্ষক থেকে শুরু করে নীচে দ্বিতীয় কটিদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত। নীচের দিকে সুষুম্নাকাণ্ডের ছুঁচোলো প্রান্তীয় অংশকে কোনাস মেডুলারিস বলে। কোনাস মেডুলারিস থেকে নিম্নগামী সরু মেনিনজেস রজ্জুকে বলা হয় ফাইলাম টারমিনেলি। ফাইলাম টারমিনেলির দুইপার্শ্বে নীচের দিকে কটি ও শ্রোণিদেশীয় যেসব স্নায়ুতন্তু ঘোড়ার লেজের মতো ছড়িয়ে
থাকে তাদের কড়া ইকুইনা বলে।

সুষুম্নাকাণ্ডের দুটি অংশে দু-পাশ ছুঁচোলো প্রশস্ততা লক্ষ করা যায়। এদের গ্রীবা ও কটিদেশীয় বিস্তৃতি বলা হয়। এই দুটি অংশ প্রধানত হাত ও পায়ে স্নায়ু উদ্দীপনা সরবরাহ করে।

সুষুস্নাকাণ্ডের অন্তগঠন :

সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় নালি। কেন্দ্রীয় নালির চারপাশে H আকৃতিবিশিষ্ট ধূসর পদার্থ এবং ধূসর পদার্থকে ঘিরে থাকে শ্বেত পদার্থ।

1. কেন্দ্রীয় নালি : সুষুম্নাকাণ্ডের মাঝখানে দৈর্ঘ্য বরাবর যে ফাঁকা স্থান থাকে তাকে কেন্দ্রীয় নালি বলে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের গহ্বরগুলিকে নিউরোসিল বলে। যা মস্তিষ্কের নিলয় ও কেন্দ্রীয় নালি দ্বারা গঠিত। এটি ঊর্ধ্বে চতুর্থ মস্তিষ্ক প্রকোষ্ঠের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে এবং নীচের একটি ক্ষুদ্রাকার স্ফীতির মাধ্যমে কোনাস মেডুলারিসে মিশে যায়। কেন্দ্রীয় নালির অভ্যন্তরভাগ ঘনতলীয় রোমশ আবরণী কলা দ্বারা আবৃত থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে মস্তিষ্ক মেরুরস বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) প্রবাহিত হয়।

2. ধূসর পদার্থ : ধূসর পদার্থ প্রধানত দু-ধরনের উপাদান নিয়ে গঠিত – a. স্নায়ুকোশ b. নিউরোগ্লিয়া

a. স্নায়ুকোশ : ধূসর পদার্থে তিন ধরনের স্নায়ুকোশ থাকে, যথা-

i সম্মুখ শৃঙ্গকোশ : সম্মুখ শৃঙ্গ স্নায়ুকোশ বৃহদাকার বা বহু ডেনড্রাইটযুক্ত হয়। এরা প্রধানত আলফা ও গামা শ্রেণির মোটর নিউরোন বা চেষ্টীয় স্নায়ুকোশ বিশেষ।

ii. পার্শ্ব শৃঙ্গকোশ : পার্শ্বশৃঙ্গের কোশগুলি মধ্যমাকৃতি । এরা স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রাক-স্নায়ুগ্রন্থিজ স্বতন্ত্র স্নায়ুকোশ। এই কোশগুলি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রেরক স্থান হিসেবে কাজ করে। এদের থেকে উৎপন্ন স্নায়ুতন্ত্র অঙ্কমূলের মাধ্যমে সুষুম্নাকাণ্ড থেকে নির্গত হয় এবং শ্বেতশাখার মাধ্যমে স্বতন্ত্র স্নায়ুগ্রন্থিতে প্রবেশ করে। এই কোশগুলি কেবলমাত্র সুষুম্নাকাণ্ডের বক্ষ ও ঊর্ধ্ব লাম্বার অঞ্চলে থাকে।

iii.  পশ্চাৎ শৃঙ্গকোশ : এরা সংজ্ঞাবহ স্নায়ুকোষ এবং এই কোষগুলি পশ্চাৎ স্নায়ুমূলের প্রেরক স্থান হিসেবে কাজ করে। পশ্চাৎ স্নায়ুশৃঙ্গের কোশসমূহ ক্ষুদ্রাকৃতি। এই স্নায়ুকোশগুলি পশ্চাৎ শৃঙ্গের গোড়ার দিকে সম্মিলিতভাবে ক্লার্কের স্তম্ভ গঠন করে।

b. নিউরোগ্লিয়া : নিউরোগ্লিয়া কোষগুলি পশ্চাৎ শৃঙ্গের শীর্ষদেশে এবং কেন্দ্রীয় নালির চারদিকে থাকে। পশ্চাৎ শৃঙ্গের শীর্ষদেশের নিউরোগ্লিয়া কোশসমূহ রোলাল্ডোর জিলাটিনোসা এবং কেন্দ্রীয় নালির চতুষ্পার্শ্বস্থ নিউরোগ্লিয়া কোশসমূহ কেন্দ্রীয় জিলাটিনোসা গঠন করে।

3. শ্বেত পদার্থ : শ্বেত পদার্থ ধূসর পদার্থকে ঘিরে অবস্থান করে। এটি প্রধানত মায়েলিনেটেড স্নায়ুতন্তু দ্বারা গঠিত। তবে সামান্য সংখ্যক অমায়েলিনেটেড স্নায়ুতত্ত্বও থাকে। শ্বেত পদার্থের মধ্যে নিউরোগ্লিয়া কোশগুলি জালকাকারে বিন্যস্ত থাকে এবং এদের অবলম্বন দান করে। শ্বেত পদার্থ অসম্পূর্ণভাবে দুটি পার্শ্বীয় প্রতিসম অংশে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি পার্শ্বীয় অংশ আবার তিনটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, যথা- সম্মুখ শ্বেতস্তম্ভ, পার্শ্বীয় শ্বেতস্তম্ভ এবং পশ্চাৎ শ্বেতস্তম্ভ।

সুষুস্নাকাণ্ডের আবরণ :

মস্তিষ্কের মতো সুষুম্নাকাণ্ড তিনটি পর্দা (মেনিনজেস) দ্বারা আবৃত
থাকে, যথা-

i. ডুরা ম্যাটার : এটি সর্ববহিস্থ দৃঢ় পর্দা যা কশেরুকার সঙ্গে সংলগ্ন অবস্থায় থাকে।

ii. অ্যারাকনয়েড ম্যাটার : এই পর্দা ডুরা ম্যাটার ও পায়া ম্যাটারের মাঝখানে থাকে।

iii. পায়া ম্যাটার : এটি সবচেয়ে ভিতরের পর্দা এবং স্নায়ুকলাকে ঘিরে অবস্থান করে।

সুষুস্নাকাণ্ডের কাজ :

সুষুস্নাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি হল-

i. প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুকেন্দ্র : সুষুম্নাকাণ্ড দেহের বিভিন্ন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

ii. সংযোজী অঙ্গ : সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী স্নায়ুপথ প্রবাহিত হওয়ায় এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে।

iii. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র : স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্বতন্ত্র স্নায়ুগুলি সুষুম্নাকাণ্ডের বক্ষ ও লাম্বার অঞ্চল থেকে এবং পরাস্বতন্ত্র স্নায়ুর স্যাক্রাম বা কটি অঞ্চলের স্নায়ুগুলি কোমর বা কটিদেশীয় অঞ্চলের থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই সুষুম্নাকাণ্ডের এই অঞ্চলগুলি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

iv. অন্যান্য কাজ : সুষুম্নাকাণ্ড পেশিটান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহভঙ্গি বজায় রাখে, রক্তবাহের গহ্বরের ব্যাস নিয়ন্ত্রণ করে এবং এইভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে। তা ছাড়া এটি দেহউয়তা নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন :

শ্বসন কাকে বলে ? শ্বসনের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব ? 

বাস্পমোচন কাকে বলে ? বাস্পমোচনের গুরুত্ব, প্রকারভেদ, স্থান ও সময়কাল ? 

Leave a Comment