আবরণী কলা কাকে বলে ? আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য , কাজ ও শ্রেণীবিভাগ

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

আবরণী কলা কাকে বলে : সুপ্রিয় পাঠকবন্ধুরা আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা আবরণী কলা কাকে বলে এবং আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য ,কাজ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে নিখুঁত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

আবরণী কলা কাকে বলে ? আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য , কাজ ও শ্রেণীবিভাগ

আবরণী কলা :

এপিথেলিয়াম শব্দটি গ্রিক শব্দ epi = upon এবং thelio = grows থেকে সৃষ্টি হয়েছে। ডাচ anatomist Ruysch প্রথম এই কলা পর্যবেক্ষণ করেন। এপিথিলিয়াম কলা কোশের চাদর যা দেহ-পরিধিকে এবং অঙ্গাদির মুক্ত তলকে ঢেকে রাখে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে এপিথেলীয় কলার নিরবচ্ছিন্ন আবরণ থাকে শুধু তাই নয়, দেহের বহিঃতলও এপিথেলীয় কলা দ্বারা আবৃত। এই কলার কোশগুলি এক বা একাধিক স্তরে সজ্জিত থাকে। আন্তঃকোশীয় শূন্যস্থান থাকে না। কোশগুলি অকোশীয় ভিত্তিপর্দার উপর সজ্জিত থাকে। রাসায়নিক ভাবে ভিত্তিপর্দা হলো মিউকোপলিস্যাকারাইড। ব্যাপন পদ্ধতিতে এপিথেলীয় কলার মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর বিনিময় ঘটে। এই কলার কোশগুলি পরপর এক প্রকার খুব অল্প পরিমাণ সংযোজক পদার্থ দ্বারা যুক্ত থাকে। এই কলায় সংবহন তন্ত্র অনুপস্থিত, তবে কিছু স্নায়ুসূত্র এবং সঞ্চারণশীল কোশ থাকে। ধাত্র বস্তু খুবই কম। এই কলায় খাদ্যবস্তু বহন করে আন্তঃকোশ তরলই।

● আবরণী কলা কাকে বলে :

যে কলা প্রাণীদেহের ত্বক ও বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মুক্ত তলে আবরণী বা আচ্ছাদন তৈরি করে, তাকে আবরণী কলা বা এপিথেলীয় কলা বলে।

● আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য :

এই কলার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হলো –

i. এই কলা তিনটি জৈবিক স্তর থেকে অর্থাৎ এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়।

ii. এই কলার কোশগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট থাকে এবং একে অপরকে স্বল্প আন্তঃকোশীয় ধাত্র দ্বারা ধরে রাখে; আবার অনেক ক্ষেত্রে আন্তঃকোশীয় ধাত্র নাও থাকতে পারে।

iii. এপিথেলীয় কোশ স্বচ্ছ অকোশীয় ভিত্তিপর্দার উপর অবস্থান করে। এতে কোলাজেন নামে একপ্রকার বিশেষ ধাত্র-প্রোটিন থাকে।

iv. এই কলার কোশগুলি বিভিন্ন আন্তঃকোশীয় সন্ধি দ্বারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

v. এপিথেলীয় কোশ কোশতলের বিশিষ্টতা প্রদর্শন করে, যথা- মাইক্রোভিল্লি, সিলিয়া, ফ্ল্যাজেলা, স্টিরিওসিলিয়া, কাইনোসিলিয়া ইত্যাদি।

vi. এপিথেলীয় কোশ বিনষ্ট হতে পারে, ছিঁড়ে যেতে পারে, আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।

vii. এর কোশগুলি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোশগুলির স্থানে নতুন কোশ উৎপাদন করে।

viii. কোশগুলি এক বা একাধিক স্তরে সজ্জিত থেকে কোন অঙ্গ বা দেহগহ্বরের গাত্র বা বিভিন্ন অঙ্গের লুমেনকে আবৃত করে।

ix. পাশাপাশি কোশগুলি আন্তঃকোশীয় ফিলামেন্ট দ্বারা পরস্পর সংলগ্ন থাকে।

● আবরণী কলার কাজ :

আবরণী কলা বা এপিথেলীয় কলার কাজগুলি হল-

i. রক্ষণাত্মক : এপিথেলীয় কলা যে কলাকে ঢেকে রাখে তাকে আর্দ্রতা ও শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং জীবাণু প্রবেশে বাধা
দেয়। যান্ত্রিক আঘাত ও রাসায়নিক বস্তুর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকেও রক্ষা করে।

ii. ক্ষরণ : এপিথেলীয় গ্রন্থি বিভিন্ন পদার্থ উৎপাদন ও ক্ষরণ করে। যেমন- মিউকাস, গ্যাসট্রিক জুস, হরমোন, উৎসেচক, মিউসিন ইত্যাদি।

iii. শোষণ : অস্ত্রের এপিথেলীয় কলা খাদ্যের সারাংশ, জল, স্যালাইন ইত্যাদি শোষণ করে।

iv. রেচন : বৃক্কের বৃক্কীয় নালির এপিথেলীয় কলা পরিস্রাবণ, নির্বাচিত পুনঃশোষণ এবং নাইট্রোজেনঘটিত দূষিত পদার্থগুলিকে রেচিত করে।

v. পরিবহণ : জনন নালি ও শ্বাস নালির সিলিয়েটেড এপিথেলিয়াম সিলিয়ার সঞ্চালনের মাধ্যমে জনন একক, তরল ও মিউকাস নির্দিষ্ট অভিমুখে পরিবহণে সাহায্য করে।

vi. শ্বসন : অ্যালভিওলাই পরিবেষ্টিত এপিথেলিয়াম কলার কোশ গ্যাসীয় আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করে।

vii. জনন : যৌনাঙ্গের জার্মিনাল এপিথেলিয়াম গ্যামেট সৃষ্টি করে (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)।

viii. সংবেদন : সংবেদন অঙ্গের সংবেদন এপিথেলিয়াম স্নায়ুসংবেদ পরিবেশ থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে।

ix. বহিঃকঙ্কাল গঠন : প্রাণীদের পরিধিস্থ এপিথেলিয়াম থেকে সিলিয়া, ফ্ল্যাজেলা, আঁশ, রোম, নখ, ক্ষুর, শিং, পালক ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।

● আবরণী কলার প্রকারভেদ :

এপিথেলীয় কলা বা আবরণী কলাকে প্রধানত চারভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

1. সরল এপিথেলিয়াম
2. যৌগিক এপিথেলিয়াম
3. গ্রন্থিময় এপিথেলিয়াম
4. সেনসরি এপিথেলিয়াম

আরও পড়ুন : 

প্রাণীকলা কাকে বলে ?কলার প্রকারভেদ ও উৎস ?